Better life with steem || The Diary Game || 08th November, 2024 ||

in Incredible India7 days ago
IMG_20241109_004534.jpg
"আজকের দিনের কিছু মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

আবারও একটা নতুন মানসিক লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে শুরু হয়েছে আজকের দিনটা। গতকাল বেশ রাতের দিকে হঠাৎ খবর পেলাম আজ আমার দিদির হাসবেন্ডকে হসপিটালে ভর্তি হতে বলেছে। গতকাল রাতেই একটা কেবিন ফাঁকা হয়েছে, ফলত যদি আজ ভর্তি না হয় তাহলে অন্য কোনো পেশেন্টকে সেই কেবিনে ভর্তি করলে, দাদার অপারেশনের জন্য আবারো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।

তাই রাতেই দিদি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ দাদাকে ভর্তি করিয়ে দেবে। অপারেশন কবে হবে সেই ডেট এখনও পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ ব্রেইন সার্জারির পূর্বে অনেক কিছু প্রস্তুতি নিতে হয়, সেই প্রস্তুতি পর্বই আজ থেকে শুরু হলো। আজ দিনটা কিভাবে কাটালাম সেই গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। চলুন তাহলে শুরু করি, -

1672344690977_010726.jpg

"সকালবেলা"

IMG_20241109_001500.jpg
"জানলা দিয়ে সকাল দেখতে দেখতে কত ভাবনা যে আজ মাথায় এলো তার হিসাব নেই"

যেহেতু গতকাল রাতেই জেনেছিলাম আজ সকালে আমাকে বেরোতে হবে, তাই রাতে খুব একটা ভালোভাবে ঘুম হয়নি। শারীরিক দিক থেকে নিজে যথেষ্ট অসুস্থ, তার ওপর মানসিক একটা প্রেসার চলছে দীর্ঘদিন ধরেই।

মাঝে বেশ কয়েকদিন বাড়ি থেকে কোথাও বেরোনো হয়নি। তাই বাড়ি থেকে বেরিয়ে দিদি বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো কিনা এই বিষয়টা নিয়ে যথেষ্ট ভয় ছিল মনের ভিতর। কোমরে ব্যথার কারণে ট্রেনে ওঠা নামা কিভাবে করবো, সেটা নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলাম।

যাইহোক ঘুম ভেঙে উঠে বেশ কিছুক্ষণ জানলার দিকে তাকিয়ে আনমনে কিছু চিন্তাভাবনা করলাম। তারপর দেখলাম ঘড়ির কাঁটা ছুটে চলেছে আপন বেগে, তাই আমিও ধীরে ধীরে রেডি হতে শুরু করলাম।

IMG_20241108_001136.jpg
"আমার সকালের চা"

বেরোনোর আগে শাশুড়ি মা চা করে দিলেন, তাই চা খেয়ে বেরোবো সেই মুহূর্তে কমিউনিটির কিছু বিষয় সম্পর্কে জানলাম। তাই গাড়িতে উঠে সেই কাজগুলো সম্পন্ন করতে শুরু করলাম।

ট্রেনে উঠতে খুব একটা সমস্যা হয়নি। কারণ ট্রেনটি দত্তপুকুর লোকাল ছিলো, যেখানে খুব একটা ভিড় হয়নি। সৌভাগ্যবশত আজ ট্রেনটি ফাঁকা ছিলো, পরে অবশ্যই জানলাম ছট পুজোর কারণে সমস্ত সরকারি অফিস ছুটি। আর সেই কারণেই আজ আমার অনেক সুবিধা হয়েছে।

দাদারা পূর্বেই রেডি হয়েছিলো, শুধু আমার আসার অপেক্ষা করছিলো। যেহেতু বাচ্চাদুটোর মন খারাপ হয়ে গেছে বাবাকে ছেড়ে আবার এতদিন থাকতে হবে ভেবে। তাই ওদের কাছে আমি থাকবো, কারণ আমার পক্ষে হসপিটালে গিয়ে সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করা সম্ভব ছিল না।

দিদি সকাল সাড়ে সাতটায় পৌঁছে গেছে হসপিটালে। সেখানে বাকি ফরমালিটিগুলো ও পূরণ করেছে এবং আমার বড় জামাইবাবু দাদাকে নিয়ে সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে রওনা হয়েছে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।

IMG_20241108_001907.jpg
"ঠান্ডা ঠান্ডা রসমালাই"

এরপর আমি কিছুক্ষণ শুয়ে বিশ্রাম করেছি, কারণ অনেকক্ষণ ট্রেনে আসাতে আমার শরীরটাও বেশ খারাপ লাগছিলো। কিছুই খেয়ে আসিনি তাই ফ্রিজে রসমালাই ছিল দেখে একটু খেয়ে নিয়েছিলাম। এরপর বাচ্চাদের কিছু সময় কাটালাম।

1672344690977_010726.jpg

"দুপুরবেলা"

এর মাঝে মামা, মাসি, আমার বড়দি সকলেই ফোন করে জেনেছে দাদার বিষয়ে। সকলের সাথে ফোনে কথা বলার মাঝে মাঝে কমিউনিটির কিছু কাজ শেষ করেছি। দাদার অপারেশনটা নিয়ে আমরা সকলেই কমবেশি চিন্তিত। তবে এই অপারেশনটা না করা হলেও স্বাভাবিক জীবন যাপন দাদার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

পূর্বের অপারেশনটা এর থেকে অনেক বেশি ভয়ের ছিলো। সেটা যখন কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, আশাকরি এই সময়ও খুব বেশি সমস্যা হবে না। তবে যেহেতু সার্জারিটা ব্রেনের, তাই একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।

দুপুরে রান্নার দিদি এসে রান্না শেষ করে চলে যাওয়ার পর, তিতলি ও তাতানকে খাওয়ানোর জন্য আমি ভাত রেডি করে দিলাম। তাতান আমার বাবার কাছেই খায়। তিতলিকে ভাত মেখে দিলে এখন একাই খেয়ে নেয়। ওদের খাওয়ানোর পর্ব শেষ করে আমি ও বাবা একে একে স্নান শেষ করে, তারপর লাঞ্চ করে নিলাম।

IMG_20241109_002644.jpg
"আজকের লাঞ্চ- ডিমের কারী, পুঁইশাক, কুমড়ো ভাজা ও ডাল"

আমি লাঞ্চ করার আগেই তিতলি তাতানকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম। লাঞ্চ শেষ করে এসো দেখলাম তাতান ঘুমিয়ে পড়েছে, কিন্তু তিতলি জেগে আছে। ওর আবদারে ওর পাশে একটু শুলাম। ও আমাকে জড়িয়ে কিছুক্ষণ শুলো তারপর ঘুমিয়ে পড়ল।

ও ঘুমিয়ে পড়ার পর আমি ওষুধ খেয়ে নিলাম। তারপর আবার দিদির কাছে ফোন করে হসপিটালের খবর নিলাম। জানতে পারলাম কেবিনে দাদাকে শিফট করার পূর্বে, আজ এক্সরে ও সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। বাকি ব্লাড কালকে সকাল থেকে টেস্টের জন্য যাবে। যাইহোক এরপর কমিউনিটির কিছু কাজ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে এলো।

1672344690977_010726.jpg

"সন্ধ্যাবেলা"

আজ সন্ধ্যেবেলায় তিতলির ম্যাডাম ওকে পড়াতে এলেন। তাই তিতলিকে ঘুম থেকে তুলে ফ্রেশ করিয়ে অন্য রুমে পাঠিয়ে দিলাম পড়তে বসার জন্য। কারণ তাতান ঘুম থেকে ওঠার পর একটু সময় টিভি দেখবে এটাও ডেইলি রুটিন।

IMG_20241109_001935.jpg
"আমার সন্ধ্যাবেলার চা"

এরপর যে দিদিটি রান্না করেন, তিনি বিকেলের দিকে আবার এসে সমস্ত ধোয়া জামা কাপড় গুলো ভাঁজ করে, সন্ধ্যার চা করলেন। আমরা সকলে মিলে চা খেলাম। তিতলি টিচার চলে যাওয়ার পর তিতলি ও তাতানকে দুধ দেওয়া হলো।

IMG_20241108_001722.jpg
"দুধ খাওয়ার সময় তোলা ছবি"

ওরা দুধ খাওয়া শেষ করে নিজের মতো করে একটু টিভি দেখতে বসে গেল। একটু বাদে দিদিকে আরো একবার ফোন করলাম, রাতে কখন ফিরবে সেই বিষয়ে জানার জন্য।

তবে ফোনের মধ্যে অন্য গুরুত্বপূর্ণ কথা আলোচনা হচ্ছে শুনতে পেলাম, সেই কারণে আমি ফোনটা রেখে দিয়ে অপেক্ষা করলাম দিদির ফোনের জন্য। সেই মুহূর্তে ডিসকর্ডে কিছু কাজের জন্য আবার যুক্ত হলাম এবং কথা বলা কালীন সময়ে এই দিদির প্রায় তিন থেকে চার বার ফোন করেছে। এরপর ফোন তুলে জানতে পারলাম ওরা অর্থাৎ আমার দিদি ও বড় জামাইবাবু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেছে।

1672344690977_010726.jpg

"রাত্রিবেলা"

রাতের দিকে অন্য কিছু রান্না করার ছিল না, তাই দিদি এলে ওকে এক কাপ চা করে দিলাম। ও ফ্রেশ হয়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম করলো। ততক্ষণে আমি তিতলিদের জন্য ভাত রেডি করে দিলাম। ওদেরকে আগে খাইয়ে দিলে দিদি একটু শান্তিতে খেতে পারবে। বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে বসলেও বিশ্রাম নেওয়া হয়ে ওঠেনি। কারণ সব একের পর এক ফোন করে দাদার খবর নিচ্ছিলো।

IMG_20241109_002019.jpg
"দিদির ছোটো ব্যলকনিতে কিছুক্ষণ আগে তোলা ছবি"

যাইহোক শেষমেষ কিছুক্ষন বাদে দিদিকে খেতে দিলাম এবং সাথে সাথে নিজেরাও খেয়ে নিলাম। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত একই রকম ভাবে সারাদিন ছুটেছে দিদি। আবার আগামীকাল ভোরবেলা দিদিকে ছুটতে হবে। কখন বাড়িতে ফিরবে তার কোনো ঠিক নেই। তাই কিছুক্ষণ আগে তিতলি ও তাতানকে নিয়ে ও রুমে গেলো। আর আমি নিজের কাজ নিয়ে বসলাম। কাজ শেষ করে আমি নিজেও শুয়ে পড়বো।

দাদাকে ছাড়া বাড়িটা অসম্পূর্ণ লাগছে। সবথেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে তাতান। ঘুরতে ফিরতে সব সময় বাবাকে ডাকে, আজ বাবা বাড়ি নেই সেটা ভুলে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ডেকে ফেলেছে। আবার নিজেই বলছে, "বাবা তো বাড়ি নেই"।

যাইহোক দাদার এই সার্জারিটা ভালোভাবে শেষ হওয়া পর্যন্ত একটা ভয় কাজ করছে মনের ভিতর। অন্যদিকে শশুর মশাইয়ের অবস্থা ভীষণ খারাপ। তাই সবকিছু মিলিয়ে কেমন দোটানোর মধ্যে আছে আশাকরি আপনারা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছি।

এভাবে আজকের দিনটি কাটালাম বটে, তবে আগামীকাল আবার কি অপেক্ষা করছে সত্যিই জানিনা। যাইহোক আজকের পোস্ট এখানে শেষ করছি, ভালো থাকবেন সকলে।শুভরাত্রি।

9vWp6aU4y8kwSZ9Gw15LFL3aMdhmgmBBFMpDJregpdP328TqCvhjhspw5NBPbWMShaDD4yjYoZFwyWS9XH9YcrMyqTMGHiWpaGrwDGkXYMbDHgxptYZq3ueRpXapEAPkAuu3vPaZSXJ2USdTC.png

"কয়েকটি ছবি ক্রপ করার কারনে তারিখ পরিবর্তিত হয়ে গেছে"
Sort:  
Loading...

TEAM 1

Congratulations! Your post has been upvoted through @steemcurator03. Good post here should be..

image.png

Curated by : @dasudi
 5 days ago 

Thank you for your support @dasudi. 🙏

 6 days ago 

দিদি প্রথমে আপনার জন্য দোয়া রইল মানসিক ও শারীরিক ভাবে যেন আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আরেকটি কথা আপনিও বলেন সেটা অনেকবার শুনেছি আপনার রাতে ভালো ঘুম হয় না দ্বিতীয় কথা আপনি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন।

রাত জাগলে আমার মনে হয় কোন ঔষধে কাজ করে না । তাই এই অভ্যাসটা কিছুটা হলো ও পরিবর্তন করতে হবে। এটি সংসারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজের উপরেই থাকতে হয়। আপনার দিদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক কাজ করছে।

যদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার একটি দিনের কার্যক্রম খুব ভালোভাবে আমাদের কাছে উপস্থাপনা করার জন্য ভালো থাকবেন।

 3 days ago 

হ্যাঁ রাত জাগা এখন যেন অভ্যাস হয়ে গেছে, যেটা পরিবর্তন করা উচিৎ বুঝতে পারি, কিন্তু কিছুতেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না কাজের কারণে। আমার দিদির পরিশ্রমের কাছে আমার পরিশ্রম একেবারেই সামান্য। তবে দাদার এইবার অপারেশন সঠিক ভাবে হয়ে গেলে অনেক খানি নিশ্চিত হবে আমার দিদি। আমরা সকলেই সেই দিনের অপেক্ষায় রয়েছি। আমার পোস্ট পড়ার জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

 3 days ago 

এখান থেকে বেশ কিছু দিন আগে আপনার সাথে কথা বলে জানতে পেরে ছিলাম আপনি মানসিক এবং শারীরিক ভাবে অসুস্থ আছেন প্রথম সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি আপনি খুবই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন তার পাশা পাশি নিজের পরিবারের মানুষের সাথে সমস্যা হলে নিজের মানসিক চাপ আরো বেশি হয়ে যায় যেহেতু আপনার জামাই বাবু অসুস্থ এটা আপনার কাছ থেকেও শুনে ছিলাম এবং আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম তাতে করে আরো মানসিক চাপ অনেক বেড়েছে এটা আমরা সবাই বুঝতে পারি।

যাই হোক গতকাল রাতে আপনি জানতে পারেন একটি কেবিন থাকা হয়েছে সেখানে যদি দ্রুত ভর্তি না হওয়া যায় তাহলে অন্য রোগী ভর্তি হলে আপনার জামাই বাবুর অপারেশন পিছিয়ে যাবে যেহেতু এটি প্রয়োজন তাই এটা দ্রুত করাই ভালো এবং তাই আপনি সকাল বেলা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে নিজের সংসারের কাজ গুছিয়ে সেখানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

যাই হোক আপনার এত ব্যস্ততার মধ্যে এবং অসুস্থ থাকার পরেও সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে সাজিয়ে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 days ago 

মাঝে মধ্যে সবটা গুছিয়ে নিয়ে চলতে চলতে মানসিক ভাবে অনেক বেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ি, একথা অনস্বীকার্য। তবে এর মাঝে শরীরও খারাপ হয়েছিল। সবকিছু মিলিয়ে বেশ হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতিতে ছিলাম। তার উপরে দাদার হসপিটালে ভর্তি হওয়ার খবর পেলাম। এই সবটাই দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। অপেক্ষায় আছি এই স্বপ্নভঙ্গের। যাইহোক আপনি আমার পোস্ট সাজানো পছন্দ করেছেন জেনে খুশি হলাম। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.18
JST 0.033
BTC 88380.57
ETH 3082.21
USDT 1.00
SBD 2.72