"অন্যরকম দিনযাপনের গল্প- দ্বিতীয় পর্ব"
|
---|
Hello,
Everyone,
গত দুদিন ধরে নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলো শশুর মশাই। আজ সকালে সেখান থেকে ট্রান্সফার করে পুনরায় এইমসে ভর্তি করা হলো। আর কতোদিন এইভাবে হসপিটালের বাইরে বসে থাকতে হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। যাইহোক এসব কথা অন্য কোনো পোস্টে জানাবো, আজ এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, নতুন অভিজ্ঞতার দ্বিতীয় পর্ব।
"ক্লাবের ভিতরে লাগানো ফুলগাছ"
"বিখ্যাত ক্যারাটে ম্যান"
যারা আমার প্রথম পর্ব পড়েনি, চাইলে পড়ে নিতে পারেন, তাহলে এই পর্বটি বুঝতে সুবিধা হবে। যাইহোক এবার শুরু করি, এই রকম ভাবে বেশ কিছুক্ষন ওদের প্র্যাকটিস দেখলাম। তারপর আমরা ক্লাবের আশপাশটা একটু ঘুরে দেখলাম। যেহেতু ওখানে ক্যারাটে এক্সাম ছিলো, তাই বেশ কিছু নামকরা ক্যারাটে ম্যানদের ছবি ওখানে রাখা ছিলো। যদিও আমি জানিনা এদেরকে অন্য কোনো নামে ডাকা হয় কিনা।
যাইহোক এরপর পরীক্ষা শুরু হলো। বেল্টের ব্যাপারে অনেকেই হয়তো জানেন, আবার অনেকেই জানেন না। আগের দিনের পোস্টে আমি লিখেছিলাম তিতলির ইয়েলো ব্লেট। আবার ওর থেকে বয়সে বড় অনেকেরই হোয়াইট বেল্ট।
"ইনি এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে"
আসলে যখন আপনি ক্যারাটে ক্লাসে ভর্তি হবেন, শুরুতে আপনাকে হোয়াইট বেল্ট দেওয়া হবে। এরপর প্রতিবছর এক্সাম হবে, সেই এক্সামে পাস করলে আপনার বেল্টের রং পরিবর্তন হয়। এই পর্যায়ক্রম অনুসরণ করে, প্রথমে হোয়াইট বেল্টের সকল বাচ্চাদের এক্সাম হবে, তারপরে ইয়েলো বেল্টের। এই অনুযায়ী বেশ কয়েকজন স্টুডেন্ট এর পরে তিতলির মতো যারা ইয়েলো ব্লেট তাদের এক্সাম শুরু হবে।।
তবে এক্সাম শুরুর আগে সকল বাচ্চাদেরকে একসাথে স্যার ভেতরে ডেকে নিয়েছিলেন। ততক্ষণ সকল অভিভাবকেরা বাইরেই অপেক্ষা করলো। এরপর এক এক করে বাচ্চারা বাইরে বেরোতে শুরু করলো, যাদের এক্সাম দেওয়া হয়ে গেছে। তিতলি প্রচন্ড টেনশনে ছিলো, তবে যখন ও বেরোলো বেশ হাসিমুখ নিয়ে বেরিয়েছে, দেখে বুঝলাম পরীক্ষা ভালোই হয়েছে।
পরীক্ষা দিয়ে বেড়ানোর পর প্রথমেই সে দিদির সাথে কথা বলে, নিজে মাকে জানালো তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে।এরপর বেশ খানিকক্ষণ ওরা বাইরে খেলাধুলা করলো। বাড়ি থেকে দিদি পাস্তা করে দিয়েছিলো, সেটাই ওকে খাইয়ে দিলাম এবং আমরাও খেয়ে নিলাম।
"গাড়ি থেকে সবে নেমেছেন"
"অতিথি আগমনের প্রস্তুতি পর্ব"
এরপর দেখি বয়েসে বড়ো বেশকিছু ছেলেমেয়েরা বাইরে এসে সকল বাচ্চাদের একত্রিত করে, দুপাশে লম্বা লাইন করে দাঁড়াতে বললো। লাইনটা এমন ভাবে করতে হবে যাতে, মাঝখান থেকে বেশ কিছু লোক হেঁটে আসতে পারে। তারপর সব বাচ্চাদের হাতে গাঁদা ফুল ছিড়ে পাপড়িগুলো দেওয়া হলো। তখনই বুঝলাম নিশ্চয়ই কোনো গেস্ট আসতে চলেছে।
সকল অভিভাবকেরা বেশ উৎসাহ সহকারে বাচ্চাদের পেছনে এসে দাঁড়ালো, আমিই বা বাদ যাই কেন? আমিও সরাসরি তিতলির পিছনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ পর সেখানে একটা গাড়ি থামলো এবং গাড়ির থেকে একজন ব্যক্তি বেরোলো, যে সুদূর ইউএসএ থেকে এসেছিলেন।
"ভিডিওর স্ক্রিনশট থেকে নেওয়া"
বেশ কিছু ছেলেমেয়েরা ওনাকে ফুলের মালা পরালেন। এরপর উনি দুটো লাইনের মাঝ বরাবর ভিতর প্রবেশ করবেন এবং দুপাশ থেকে বাচ্চারা ওনার দিকে ফুলের পাপড়ি গুলো ছুড়ে মারলো। যেটা দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো। আমি ভিডিও করেছিলাম। তবে ভিডিও দেওয়া সম্ভব নয় বলে, সেখান থেকে একটা স্ক্রিনশট আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
"সকলের সাথে"
"অভিভাবকদের নজরও ঐদিকে"
বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর সকলের সাথে তিনি বেশকিছু ছবি তুললেন। তবে ততক্ষণে অনেক ভিড় জমে গেছে তাই আর সামনে যাওয়া হয়নি। তবে তার ছবি দেখেই বুঝতে পারবেন, ক্লাবে যেসকল ছবি আগে থেকেই রাখা ছিলো, তার মধ্যে থেকেউ একজন এসেছেন। নামটা আসলে পড়া সম্ভব নয় তবে ছবিটার নিচে তার নামটা দেওয়া আছে।
বুঝলাম তিনি ছিলেন আজকের প্রধান অতিথি। তারপর তিনি ভিতরে ঢুকলে সমস্ত বাচ্চাদেরকে ভেতরে ডাকা হলো। বেশ কিছুক্ষণ কথা হলো, তারপর ভিতরে সেমিনার শুরু হলো। সেখানে অংশ নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের যেতে বলা হয়েছিলো, তবে একজন যেতে পারবে।
"ভিতরের দৃশ্য"
"ভিতরের দৃশ্য"
"ভিতরের দৃশ্য"
"ভিতরের দৃশ্য"
"ভিতরের দৃশ্য"
"ভিতরের দৃশ্য"
সেই কারণে আমি দাদাকে ভিতরে পাঠিয়েছিলাম। বাবা হয়ে সন্তানের আনন্দের দৃশ্যগুলো উপভোগ করার জন্য এতো কষ্ট করে তিনি বাইরে বসেছিলেন। তবে দাদাকে বলে রেখেছিলাম ভিতরে ছবি তোলার অনুমতি যদি থাকে, তাহলে যাতে তুলে আনে। পরে অবশ্য ছবিগুলো আমি whatsapp এর মাধ্যমে নিয়েছিলাম।
সেমিনার চলাকালীন বাচ্চারা একসাথে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। সেই কারণে মাঝেমধ্যে কেউ না কেউ বেরিয়ে আসছিলো তবে তিতলি একবারও বেরোয়নি, জানিনা ভেতরে ও কি আনন্দ পাচ্ছিলো। এরপর এক এক সবাইকে বিরিয়ানি প্যাকেট দেওয়া হলো। সেগুলো নিয়ে বাচ্চারা বাইরে বেরিয়ে এলো, খাওয়া দাওয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আবার ওদেরকে ভেতরে ডাকলো।
যিনি বাইরে থেকে এসেছিলেন তিনিও ক্যারাটের ড্রেস পরে বেশ কিছু পারফরমেন্স করেছেন এটা অবশ্যই তিতলির মুখে শোনা। কারণ সেই সময় কোনো অভিভাবককে ভেতরে থাকতে দেওয়া হয়নি।
"রেস্টুরেন্ট"
আমি ও দাদা বাইরের দিকে একটা খাবারের জায়গা খোঁজ করছিলাম, দেখলাম ক্লাবের একদম পাশেই একটা ছোট রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে দিদি বাড়ি থেকে যে খাবার পাঠিয়েছিল সেটা খাওয়ার পর আমাদের খিদে পায়নি, তবে রেস্টুরেন্টের খোঁজ নিয়ে রেখেছিলাম। যদি আরও লেট হয় তাহলে ওখানেই কিছু খেয়ে নেবো। তবে সৌভাগ্যবশত বেশ কিছুক্ষণ বাদে যায় জানালেন মিনিট দশকের মধ্যে তিতলিদের সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হবে।
"আমরা দুজন"
"সিটি সেন্টার"
এরপর এক এক করে ওরা বেরিয়ে এলে, আমরা আবার ক্যাব বুক করলাম। ক্যাব আসতে বেশ কিছুটা দেরি করছিল ততক্ষণ দাঁড়িয়ে বেশ বিরক্তই লাগছিলো। সেই ফাঁকে আমি আর তিতলি একটা সেলফি তুললাম। তাছাড়া দূরে সিটি সেন্টারের লোগো দেখতে পাচ্ছিলাম। তখন আবার দাদাকে বললাম এতক্ষণ এখানে বসে না থেকে, সিটি সেন্টার থেকে ঘুরে আসতেই ভালো হতো।
"মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম"
"শঙ্করা জ্যোতি চক্ষু হসপিটাল"
যাইহোক একথা ও কথায় টাইম হয়ে গেলো, আমরাও ক্যাবে উঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। পথে আসতে আসতে মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম চোখে পড়ল, তার সাথে শঙ্করা জ্যোতি নামক একটা বড় হসপিটালস। ক্যাবে বসে যতটুকু ছবি তোলা যায় সেটুকু চেষ্টা করেছি বলতে পারেন। তবে ইচ্ছে আছে মাদার ওয়াক্স মিউজিয়ামটা একবার ঘুরে দেখার।
যাইহোক এরপর বাড়ি পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম আমরা। সকলে এভাবে একটা সুন্দর দিন অতিবাহিত হয়েছে। পাশাপাশি সুন্দর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চাদের মধ্যে ক্যারাটে খেলার যে ইচ্ছে শক্তি, তা বেশ অবাক করেছে আমাকে। সবকিছু মিলিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা।
নতুন একজন নামী ব্যক্তিত্বকে সামনে থেকে দর্শন করার সুযোগ হয়েছে, যাকে হয়তো অন্য কোনোভাবে কখনোই সামনাসামনি দেখার সুযোগ হতো না, তবে তিতলির এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে দেখার সুযোগ হলো। সবকিছু মিলিয়ে একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা, যা আপনাদের সাথে দুটো পর্বের মাধ্যমে শেয়ার করলাম। কেমন লাগলো মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। ভালো থাকবেন সকলে।
আঙ্কেল অনেকদিন ধরেই অসুস্থ রয়েছেন, শুনে খুব খারাপ লাগছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা থাকবে তিনি যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন।
তিতলির ক্যারাটে প্রশিক্ষণ ক্লাবের ছবিগুলো দেখে আমার নিজের ক্লাবের কথা মনে পড়ে গেল। একটা সময় কতইনা ডেডিকেশন নিয়ে ক্লবে গিয়ে ছিলাম, ছোট্ট একটা এক্সিডেন্টে মন ভেঙে গিয়ে ক্যারাটে ছেড়ে দিয়েছিলাম।
এখনো আমি আমার ক্লাবকে অনেক বেশি মিস করি, শুধু সময়ের অভাবে শখের এই ক্লাবে আর যুক্ত হতে পারিনি।
0.00 SBD,
1.09 STEEM,
1.09 SP
প্রথম পোস্টেই আপনি বলেছিলেন, তিতলির ক্যারাটে পরীক্ষার এই অনুষ্ঠানে! একজন অতিথি আসবে ইউএস থেকে, আজকের পোস্টে মাধ্যমে তাকে দেখতে পারলাম। তেতলির ক্যারাটে স্কুলের বেল্ট গুলো দেওয়া হয়, তাদের লেভেল ভাগ করার জন্য। আজকের পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম তিতলির পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে। এত সুন্দর একটি আনন্দ মুহূর্ত আমাদের সাথে ভাগ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আবার অপরদিকে এটাও শুনে খারাপ লাগছে আপনার শ্বশুর মশাই আবার হসপিটালে ভর্তি হয়েছে। তার জন্য দোয়া রইল! ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আপনার জন্য সব সময় দোয়া রইল দিদি।
Hola que tal amiga, tu dia fue muy entretenido, todo lo que paso en el Karate me parecion fascinante, me imagino lo contento que estaban todos los padres de sus hijos, las fotografias que hiciste fueron geniales, exitos.
আজকে আপনি তিতলি র ক্যারাটে স্কুলের পরীক্ষার বিষয়ের দ্বিতীয় পর্ব শেয়ার করেছেন আসলে আপনি এমন একজন মানুষকে দেখতে পেয়েছেন যার সাথে নাকি অন্য কোনভাবে দেখা হতো না জীবনে এমন কিছু মানুষের সাথে আমাদের দেখা হয় যেটা আমরা কল্পনাও করি না।
এটা আপনারা ঠিক কাজ করেছেন যদি অতিরিক্ত লেট হয়ে যায় তাহলে খাবার-দাবারের অসুবিধা হতে পারে তাই আগে থেকেই রেস্টুরেন্টের খোঁজ করে নিয়েছিলেন অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার অন্য রকম ভাবে কাটানো আরেকটা দিনের গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।
আপু আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। সত্যিই, ক্লাবের ভেতরে ক্যারাটে পরীক্ষার এমন সুন্দর মুহূর্তগুলো খুবই প্রাণবন্ত এবং আকর্ষণীয়! তিতলির পরীক্ষা, ফুলের মালা পরানো, প্রধান অতিথির আগমন এবং ক্যারাটে পারফরম্যান্স সব কিছু মিলিয়ে এক অসাধারণ দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা। আপনি যেভাবে ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে বিশ্লেষণ করেছেন, তা খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। বিশেষ করে নতুন একজন পরিচিত ব্যক্তিকে সামনে থেকে দেখা এবং সেই অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করা সত্যিই একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করছি।