"সুস্থতার অপেক্ষায় দিন গোনা"
|
---|
Hello,
Everyone,
দুপুরের পর সিদ্ধান্ত হলো দাদাকে দেখতে আজ হসপিটালে যাবো। অপারেশনের পর আর দেখতে যাওয়া হয়নি। যদিও ঠিকঠাক জ্ঞান ফিরে এসেছে, সকলকে চিনতে পারছে, তবে এতো বড় একটা অপারেশনের পরে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও অনেকটা সময় প্রয়োজন। তবে দিদির কাছে সকালে যখন শুনলাম দাদার চোখ অনেক ফুলে গেছে। তখন খুব ইচ্ছে হলো বিকেলে গিয়ে একবার দেখে আসি।
|
---|
দুপুরবেলায় খাওয়া দাওয়ার পর রওনা করলাম। বাইরে তখন হালকা রোদের আলো থাকলেও, হালকা শীতের অনুভূতি হচ্ছিলো। আমি, দিদি, মামা, আর একটা দিদি একসাথে রওনা করলাম। লোকাল ট্রেন থেকে নেমে মেট্রো করে গেলে সময় অনেকটাই কম লাগে, তাই আমরা সবাই মেট্রো ধরেই পৌঁছে গেলাম। আমাদের আগে দাদার বোন ও বোনের হাজব্যান্ড দেখা করে গেছে। এরপর এক এক করে আমরা গেলাম।
|
---|
আমি যখন রুমে ঢুকেছি, তখন দাদা উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে ছিলো। প্রথমে ভেবেছিলাম ঘুমাচ্ছে, তবে দিদি ডাকতেই যখন দাদা উঠে বসলো, হঠাৎ করে চমকে উঠলাম। মুখের বাম পাশ এতোটাই ফুলে আছে যে, সামনে থেকে দেখে আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছি।
হয়তো দিদি এই প্রফেশনে আছে বলে এই বিষয়টা ওর কাছে তেমন ভয়ঙ্কর না হলেও, খারাপ লাগা তো নিশ্চয়ই আছে। কারণ আমরা আমাদের কাছের মানুষদেরকে কখনোই কষ্ট পেতে দেখতে অভ্যস্ত নই। আর দাদার ক্ষেত্রে দিদি অনেক বেশি সহ্য করেছে।
দাদা আমার সাথে নরমাল কথাই বলছিলো। কিন্তু আমি ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে কোনো উত্তর করতে পারিনি। কারণ ওনার চোখের দিকে তাকালেই আমার খারাপ লাগা, ভয় সবটাই হয়তো বুঝতে পেরে যেতো। খুব বেশিক্ষণ আমি ভিতরে থাকতে পারিনি। দিদি আমাকে নামিয়ে দিয়ে সাথে করে আবার মামাকে নিয়ে গিয়েছিলো। কারণ ভিজিটিং আওয়ার শেষ হলে অন্য কাউকে যেতে দেবে না।
|
---|
এরপর আরেক জন দিদি তাকেও দাদার সাথে দেখা করিয়ে নিচে নামিয়ে দিলো। আমি আর ঐ দিদিটা হসপিটালে চত্বর একটু ঘুরে দেখলাম। আমার দিদি কোন বিল্ডিং এ ডিউটি করে সেই বিল্ডিংটা দিদিকে দেখালাম। তার পাশাপাশি গত বছর দাদার অপারেশন কোথায় হয়েছিল সেই বিল্ডিংটাও দেখিয়েছি। ততক্ষণ সময় দিদি দাদার সাথে ছিল। ওনাকে খাবার, ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছিলো।
ভিজিটিং আওয়ার শেষ হতেই দিদি নিচে নেমে দাদার জন্য আরও কিছু ওষুধ, ইনজেকশন কিনে ওপরে পাঠিয়ে দিলো। এরপর মামা, ও দুই দিদি চা খাবে বলে আমরা হসপিটালে পাশেই একটা ছোট্ট একটা দোকানে বসলাম।
|
---|
সেই দোকানে মধ্যে চায়ের পাশাপাশি কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, কলা সব কিছুই বিক্রি হচ্ছিলো। দিদি আমাকে খেতে বলেছিল তবে আমি কিছুই খাইনি, কারণ আমার ভিতরে তখন একটা অদ্ভুত রকমের অনুভূতি চলছিল দাদাকে দেখে।
রাস্তায় বড় বড় অ্যাক্সিডেন্ট হলেও অনেক সময় মানুষের এমন অবস্থা হয় না, আর সেখানে ঘরের মেঝেতে পড়ে গিয়ে একজন মানুষের এই অবস্থা হতে পারে, এটা ভাবতেই অবাক লাগছিলো। তবে পরে গিয়ে ততখানি ক্ষতি হয়নি, যতটা ক্ষতি সেই সময় দাদার ডেঙ্গু জ্বরের কারণে হয়েছিলো। আমরা হয়তো অনেক সময় ছোট ছোট বিষয় গুলোকে গুরুত্ব দিই না, কিন্তু এই ছোট ছোট বিষয়গুলি আমাদের জীবনকে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে দেয়।
|
---|
তবে দাদা নিজে ভিতর থেকে অনেক বেশি সাহসী। এই কারণেই বোধহয় এই পরিস্থিতি গুলো, এত শারীরিক কষ্ট, সহ্য করতে পারে। দিদির কাছে শুনেছি প্রথম অপারেশনের পরে দাদার যে অবস্থা হয়েছিলো, তাতে আমাদের মতো যে কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সেখান থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়।
তবে দাদা একজন আর্মি ছিলেন বলেই কোথাও না কোথাও নিজের ভিতরে এতো বেশি পজেটিভ এনার্জি ধরে রাখতে পেরেছিলেন। আর তাই এতো তাড়াতাড়ি রিকভার করতে পেরেছেন। আর এই অপারেশনেও যে তীব্র ব্যথা, তা দাদা চুপচাপ সহ্য করছে। আর চেষ্টা করছে কিভাবে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নিজের বাড়িতে, আপনজনদের কাছে ফিরবে।
সকলে হয়তো ঠিকই বলে, আমাদের জীবনে যা কিছু ঘটেছে, যা কিছু ঘটছে, বা আগামীতে যা কিছু ঘটবে, সবটাই পূর্বনির্ধারিত। আমরা সেগুলো চাইলেও পরিবর্তন করতে পারি না। তা না হলে যে এক্সিডেন্টের ভয়ে দিদি কখনো দাদাকে বাইক কেনার পারমিশন দেয়নি, সেই এক্সিডেন্ট ঘরে বসে হয়ে গেলো।
|
---|
দাদাকে দেখে অনেকখানি মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে ফিরলাম প্রায় নটা নাগাদ। ফেরার পথে একটি গুরুদুয়ারা শিখ মন্দির দেখলাম। মেট্রো ধরার তাড়া ছিলো, তাই সময়ের অভাবে ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনি। তবে পরে সুযোগ হলে একবার অবশ্যই যাবো। কি সুন্দর লাগলো বাইরে থেকে। ভিতরটা নিশ্চয়ই আরও সুন্দর, আরও স্নিগ্ধ। রাস্তার অপরপ্রান্তে দাড়িয়ে ছবি তুললাম একটি।
যাইহোক বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে তারপর বুমিং এর কাজ শেষ করে নিজের পোস্ট লিখতে বসলাম। আশা করি আপনাদের দিনটা সকলের ভালো কেটেছে। আমার দাদার জন্যে সকলে একটু প্রার্থনা করবেন। সকলে ভালো থাকুন, সাবধানে থাকুন, আর ঈশ্বরকে ডাকুন, তিনি যেন সকলকে সুস্থ রাখেন। ভালো থাকবেন সকলে।
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
@tipu curate
;) Holisss...
--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.
Upvoted 👌 (Mana: 7/8) Get profit votes with @tipU :)
Thank you so much for your support @shiftitamanna. 🙏
আসলে অপারেশনের পরে এরকম সমস্যা অনেক দেখা দিয়ে থাকেন। আমার মনে হয় এটা কোন ভয়ের বিষয় না। এটা ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে তবুও আপনি প্রথম দেখেছেন তাই হয়তোবা আপনার একটু ভয় এবং খারাপ লাগা কাজ করেছিল। এটা শুনে অনেক ভালো লাগছে যে আপনার জামাই বাবু এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আছে। অপারেশন হয়েছে এখন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা রাখতে হবে তিনি যেনো খুবই দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়। সুস্থ হওয়ার জন্য দিন গুনা ছাড়া আর কোন উপায় আমাদের কাছে নেই। আশা করি আপনার জামাই বাবু খুবই দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন।
শরীরে অস্ত্র চালিয়ে অপারেশনের যে যন্ত্রনা সেটা সেই বুঝতে পারে যে কিরে রোগী । এখান থেকে এক বছর আগে আমার আঙ্গুল কেটে গিয়েছিল তারপর অপারেশন মাধ্যমে সেটা যখন পুনরায় ঠিক করা হয় তখন যে যন্ত্রনা আমার হয়েছিল সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
তবে এটা জেনে ভালো লাগছে যে দাদার অপারেশন খুব ভালোভাবেই হয়েছে দোয়া রইল দাদা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। আমার মা একা কথা বলে মোটরসাইকেল নয় এর নাম মরণ সাইকেল দেওয়া উচিত।। এই মোটরসাইকেলে এক সেকেন্ড হলেই বড় ধরনের ক্ষতি হবেই মানুষের।
@sampabiswas মাঝেমধ্যে মনে হয় কিছু মানুষের কপালে কেবল ভোগান্তি লেখা থাকে!
কে অসুস্থ্য হয় তাকে যেমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তেমনি তার আশেপাশের মানুষগুলোর মানসিক পরিস্থিতি নেহাত কম কঠিন নয়!
যবে থেকে পরিচয় হয়েছে তোর সাথে এক্ একটা দুর্ঘটনা আর বিপদের মধ্যে দিয়েই যেতে দেখছি, তবে আমি সবসময় বিশ্বাস করি জীবন সবচাইতে কঠিন এবং কঠোর শিক্ষক।
হয়তো, এই ঘটনা তোকে অনেকদিক্ থেকে মানসিক ভাবে শক্ত তৈরি করতেই তিনি দিচ্ছেন!
সময় আর ঈশ্বর জানেন কারোর জন্য আগামীতে কি নির্ধারণ করে রাখা আছে।
আমি সত্যি তোর জামাইবাবু কে দেখে হতভম্ব হয়ে গেছি, একটি মানুষ যিনি সবসময় নিয়ম নিষ্ঠায় নিজেকে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন, তারমত মানুষের এরকম পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, এটা অকল্পনীয়!
যার দুটো ছোটো সন্তান আছে, এবং তাদের গোটা ভবিষ্যত পড়ে রয়েছে, এমন একটি অবস্থায় পিতার উপস্থিত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে, পরীক্ষায় উনি সফল হয়ে সুস্থতার সাথে ফিরে আসবেন সেই বিশ্বাস রাখি। পারিপার্শ্বিক মানুষগুলো তারজন্য যা করছে, তার ফলস্বরূপ তিনি নিশ্চই পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসবেন।
সবার জন্য সব করতে গিয়ে নিজের দিকে তাকাতে ভুলে যাস না, আমার আবার তোকে কবে দরকার পড়বে বলা যায় না!
তুই তো মোমবাতি, যে নিজে জ্বলে, অন্যের আঁধার দুর করে। ঈশ্বরের প্রিয় সন্তান না হলে এই কপাল সকলের হয় না।
তাই, কখনও মন খারাপ করবি না, জানবি ঈশ্বর এই সুযোগ সবাইকে দেন না। ভালো থাক, আলো থাক সবসময়।