"আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ- দ্বিতীয় পর্ব (অহনার ‌অন্নপ্রাশন)"

in Incredible India3 days ago
IMG_20250218_203358.jpg
"অন্নপ্রাশনের কিছু ‌সুন্দর মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

অহনার অন্নপ্রাশনের প্রথম পর্ব ইতিমধ্যে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আজ পরবর্তী অংশের গল্প শেয়ার করতে চলেছি এই পোস্টের মাধ্যমে। তিতলি বুনুকে পেয়ে খুবই আনন্দিত ছিলো। তবে যেহেতু নিজেই ছোটো, তাই খুব ভালোভাবে যে ওকে কোলে নিতে পারছিলো এমনটা নয়, স্বভাবতই ও একটু অস্বস্তি অনুভব করছিলো এবং কান্না করছিলো।

পরে অবশ্য মাসির কাছ থেকে জানতে পারি, অন্নপ্রাশনের আগের দিন ওর যথেষ্ট শরীর খারাপ ছিলো। এমনকি বিকেল বেলায় ওকে ডাক্তারের কাছেও নিয়ে যেতে হয়েছিলো। কারণ ওর কান্না কিছুতেই থামছিল না। ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ খেয়ে রাতের দিকে কান্না কিছুটা কমেছিল। পরের দিনই ছিলো বাড়িতে অনুষ্ঠান, সুতরাং লোকজনের ভিড় দেখে ও একটু অবাক দৃষ্টিতে সকলের দিকে তাকাচ্ছিলো। অচেনা মুখের ভিড়ে শুধুমাত্র চেনা মুখগুলোকেই খুঁজছিলো।

IMG_20250211_133809.jpg

"এখানে অহনার মা অর্থাৎ মাসীর ছোট মেয়েও আমাদের সঙ্গে রয়েছে"

IMG_20250211_132052.jpg

"বাঁদিক‌ থেকে মাসির বড় মেয়ে, আমার দিদি, মাসি‌‌, আর আমি"

মা,বাবা, দিদা, মামা মাসি যাদেরকে এতোদিন ধরে ও ওর চারপাশে দেখছে তাদেরকে দেখেই ওর মুখে হাসি ফুট ছিলো। তবে অচেনা মুখগুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল হা করে। এই অচেনা মুখের দলে আমিও শামিল ছিলাম। যাইহোক মাসি ওকে নিয়ে কিছুক্ষণ বসেছিলো। সেই ফাঁকে আমার বোনও আমার মাথায় ফুল লাগিয়ে দিলো। যদিও চুরিদারের সাথে ফুলটা কতটা মানাচ্ছিলো জানিনা, তবে ও অনেক শখ করে ফুলের মালা গুলো এনেছিলো, তাই ওকে আর মানা করতে পারিনি।

IMG_20250218_174830.jpg

"মা বাবার সাথে আমাদের ছোট্ট অহনা"

এরপর মাসি এবং বোনেদের সাথে নিজের একটা ছবি তুললাম, যাতে এটা একটা স্মৃতি হিসেবে জমা থাকে। ততক্ষণে অবশ্য বাইরে অন্নপ্রাশনের তোরজোর শুরু হয়ে গিয়েছিলো। উঠনে বেলুন দিয়ে সামান্য একটু ডেকোরেশন করেছিলো, যাতে সেখানে বসে আমার মাসির ছেলে অর্থাৎ অহনার মামা ওর মুখে ভাত তুলে দিতে পারে।

IMG_20250218_174734.jpg

"অন্নপ্রাশনের জন্য অহনার খাবারের থালা রেডি"

পাশের বাড়ির একটি মেয়ে খুব সুন্দর করে অন্নপ্রাশনের থালাটা সাজিয়েছিল এবং ফুল দিয়ে ডেকোরেশন করেছিল জায়গাটা, যেখানে রান্না করা বিভিন্ন পদ দিয়ে অহনার জন্য সাজানো হয়েছিলো। যদিও ও সবটা খেতে পারবে না তবে নিয়ম রক্ষার্থে সবকিছু থেকে একটু একটু খাবার তুলে, ওর মুখে ছোঁয়াতে হবে। কারণ এই দিন প্রথম অন্ন ওর মুখে দেবে আর নিয়মটা মামা থাকলে মামাকেই পালন করতে হয়। সেই কারণে ভাই ও কাজে জায়গা থেকে ছুটি নিয়ে এসেছিলো, এই নিয়ম পালন করতে।

IMG_20250216_113413.jpg

"বেনারসি ‌শাড়ি‌ পরে তৈরি"

IMG_20250218_174758.jpg

"অহনা তৈরি হয়ে মামার কোলে বসে পড়েছে প্রথমবার ভাত খাওয়ার জন্য"

আমার বোনের হাজবেন্ড একজন ক্যামেরাম্যানকেও বলে রেখেছিলো, যাতে এই মুহূর্তগুলোকে ওরা ক্যামেরাবন্দি করতে পারে। এরপর সব থেকে কঠিন যে কাজটা ছিল সেটি হল অহনাকে শাড়ি পড়ানো। যদিও আলাদা ভাবে আমি ওর ড্রেসের ছবিটা তুলতে পারিনি, তুলতে পারলে আপনাদেরকে দেখাতে পারতাম যে কি ছোট্ট একটা ব্লাউজ জন্য কেনা হয়েছিলো। তার সাথে বেনারসি শাড়ি। যদিও শাড়ির কুচি এবং আঁচল তৈরি করাই ছিলো। কিন্তু যেহেতু ও খুবই ছোট কিছুতেই ওকে শাড়িটা পড়ানো সম্ভব হচ্ছিল না। তবুও যেহেতু দিনটাকে উপলক্ষ্য করে শাড়িটা আনা হয়েছে, তাই বহু কষ্টে কোনো রকমে শাড়িটা পরিয়ে মাথায় টোপর দিয়ে ওকে অন্নপ্রাশনের জায়গায় বসানো হলো।

IMG_20250211_142744.jpg

"প্রথমবার ভাত খাওয়ার মুহূর্ত"

IMG_20250211_143144.jpg

"দিদার কোলে অহনা"

তুমি একটু কান্না করছিলো, তবে সামনে ক্যামেরা আসতেই কান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কি অদ্ভুত ভাবে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে থাকে সে হয়তো আপনারা ছবি দেখলে খানিকটা বুঝতে পারবেন। যাইহোক এরপর ভাই নিয়ম মতন ওকে খাইয়ে দেওয়ার পর, এক এক করে সকলের সাথে ওর ছবি তোলা হলো যাতে, এই স্মৃতিগুলো বড় হয়েও দেখতে পারে।

এইসব পর্ব শেষ হতেই আমরা সকলে খাবারের ওখানে চলে গেলাম, তবে দুঃখের বিষয় মেনুগুলো আপনাদের সাথে নামের মাধ্যমে শেয়ার করতে পারলেও, ছবির মাধ্যমে শেয়ার করা সম্ভব হবে না। কারণ ফোনটা সেই মুহূর্তে চার্জে বসিয়ে আমরা খেতে গিয়েছিলাম। রান্নাবান্না খুব সুন্দর হয়েছিলো।‌ এই বছরের প্রথম ইঁচোর চিংড়ি অহনার অন্নপ্রাশনেই খেয়েছি, রান্নাটা দারুন হয়েছে।

IMG_20250211_143952.jpg

"শুভর সাথে তাতান"

IMG_20250211_143750.jpg

"আমার‌ সাথে তাতান"

IMG_20250211_143912.jpg

"আমি আর শুভ"

IMG_20250211_143531.jpg

"দিদি আর দাদা"

IMG_20250211_143648.jpg

"আমি আর দিদি"

IMG_20250211_143624.jpg

"দিদির ফ্যামিলি পিকচার"

খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা সকলে নিজেদের মধ্যে কিছু ছবি তুললাম। এই দিন তাতান শুভর কাছ থেকে একেবারেই নড়ছিল না, মেসোর সাথে কিভাবে যেন একটা সুন্দর বন্ডিং তৈরি হয়ে গেছে। নিজেরা বেশ কিছু ছবি তুলে বাড়ি ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, সেই মুহূর্তে অহনা ঘুমিয়ে পড়েছিলো, তাই আর ওকে বিরক্ত করা হয়নি।

একদম শেষ ব্যাচে ভাই, বোন, মাসিরা সকলে খেতে বসেছিলো, অন্যদিকে আমাদের ট্রেন টাইম হয়ে যাচ্ছিলো, তাই খাবারের ওখানে গিয়ে মাসিদেরকে বিদায় জানিয়ে আমরা স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। স্টেশনে এসে ফুল মার্কেট থেকে আমরা কতগুলো ফুল কিনে, ট্রেন ধরে বাড়ির পথে ফিরেছি।

কয়েক ঘন্টার জন্য গেলেও বেশ আনন্দ করেই কাটিয়েছিলাম দিনটা, তাই সেই গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। প্রত্যেকে ভালো থাকবেন। জীবনের শত ব্যস্ততায় পারিবারিক এই অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিতে ভুলবেন না, কারণ এই মুহূর্তগুলো একবার চলে গেলে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হয় না। ধন্যবাদ সবাইকে।

"এডিট করার কারণে কিছু ছবির তারিখ পরিবর্তিত দেখাচ্ছে"

1737773973212.gif

Sort:  
 3 days ago 

Thank you for your support @ngoenyi ma'am. 🙏

 3 days ago (edited)

আহানার অন্নপ্রাশনের প্রথম পর্ব দেখার পরে ইচ্ছা হচ্ছিল যদি দ্বিতীয় পর্ব থাকে। আজকের দিদি অহনার অন্নপ্রাশনের দ্বিতীয় পর্ব দিয়েছেন। আহানার অন্নপ্রাশনের দ্বিতীয় পর্বের কথা পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। সকলের কাছে মামা ,মাসি ,দাদু, দিদা খুব আদরের হয়। আপনার দিদা মাসি ও বোনদের কথা পড়েও খুব ভালো লাগলো। মাসি দিদা ও বোনদের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলির ছবি আপনি এত সুন্দর করে প্রতিস্থাপন করেছেন যেটি খুব সুন্দর। আপনার এই পোস্টটি পড়েও দেখে অনেক কিছু শেখা গেল দিদি।

Loading...
 2 days ago 

আপনার পোস্ট পড়তে মনে হয়েছে, অন্নপ্রাশনের মতো ছোট-ছোট অনুষ্ঠানগুলো আমাদের জীবনের অনেক বড় মুহূর্ত হয়ে ওঠে। অহনার ছোট্ট শাড়ি আর তার চেহারা দেখে তো যেন হৃদয় ভরে গেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.25
JST 0.035
BTC 99392.00
ETH 2839.96
SBD 0.64