"অব্যক্ত ভালোবাসা"

in Incredible India3 days ago
IMG_20240926_021237.jpg
"ক্যামেরাবন্দী কিছু প্রিয় মুহুর্ত"

Hello,

Everyone,

ভালোবাসা শব্দটির সাথে আমরা প্রত্যেকেই পরিচিত। তবে এর অনুভূতি ও সংজ্ঞা হয়তো সকলের কাছে ভিন্ন হয়ে থাকে। খুব কাছের মানুষদের প্রতি আমাদের যে অনুভূতি সেগুলো আমরা বিভিন্নভাবে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করি।

তবে এই পৃথিবীতে অব্যক্ত ভালোবাসাও রয়েছে। আমরা আমাদের ভালোবাসা ব্যক্ত করতে পারি ঠিকই, তবে সেই ভালোবাসায় কোনো না কোনো স্বার্থ থাকে। তবে পশুদের ভালোবাসা শুধু অব্যক্ত নয়, নিঃস্বার্থও বটে। আজ খুব ইচ্ছা করছে এই বিষয়েই কিছু কথা শেয়ার করি।

ব্যক্তিগতভাবে পশুদের প্রতি ভালবাসাকে আমার মত করে কতজন উপলব্ধি করতে পেরেছেন, সত্যিই আমার জানা নেই। প্রথমেই বলি আমি কোনো কালেই পশুপ্রেমী ছিলাম না। তবে বর্তমানে আমার চিন্তাভাবনার পরিবর্তন হয়েছে। আজ দুপুরে যখন পিকলুকে ওষুধ খাওয়াচ্ছিলাম, তখনই ভেবেছি আজকের পোস্টটা ওকে নিয়েই লিখব।

IMG_20240926_011718.jpg
"পিকলুর প্রিয় বসার জায়গা"

যারা আমার পোস্ট নিয়মিত পড়েন, মাঝেমধ্যে দেখবেন আমি ওর শরীর খারাপের বিষয়টি পোস্টের মধ্যে উল্লেখ করি। গত প্রায় এক বছর ওর শরীর খারাপ চলছে, কখনো ভালো হয় কখনো খারাপ। মোটামুটি দুদিন পরপরই ওকে ওষুধ খাওয়াতে হয়, ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যেতে হয়। আসলে ওর শরীরের এই সমস্যাটা ওর জন্ম থেকেই।

প্রথম প্রথম ভীষণ বিরক্ত হতাম। তবে আজকাল আর বিরক্তি আসে না। এখন বুঝতে পারি যখন কেউ প্রথম প্রথম মা হয়, তখন সন্তানদের কিছু কিছু জিনিস নিয়ে বিরক্তবোধ হলেও, পরে অদ্ভুত ভাবে মায়েরা সেই জিনিসগুলোতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কিভাবে বাচ্চাকে একটু সুস্থ রাখবেন, যত্ন করবেন সেটা নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকে।

IMG_20240926_012533.jpg
"তখনও পিকলু বেশ ছোটো"

বাড়িতে কুকুর, বিড়াল পোষা আমার বড্ড বেশি অপছন্দের ছিলো। কারণ ছোটবেলা থেকে আমাদের বাড়িতে কোনো পোষ্য ছিলো না। শুভ ছোটবেলা থেকেই কুকুর পছন্দ করতো। ছোটো থেকে আমার শাশুড়ি মাকে বহুবার বলেছে, বাড়িতে একটা কুকুর আনার কথা। তিনি কখনোই রাজি হননি। আজ ছেলে বড় হয়েছে, তাই ছেলের মতে সম্মতি জানাতে তিনি বাধ্য হয়েছেন।

পিকলুকে যখন থেকে আমাদের বাড়িতে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলাম আমার কাছাকাছি যেন ও না আসে। ওর জন্য কোনো কিছু আমি করতে পারবো না। সেই শর্তেই পিকলু আমাদের বাড়িতে আসে।

IMG_20240926_012332.jpg
"ছোটোবেলায় পশমের কারনে ওর চোখ দেখা যেতো না"
IMG_20240926_012509.jpg
"ওরজন্যে কেনা প্রথম উপহার-গলার ঘন্টা"

তখন আমি অফিসে জব করতাম সুতরাং সকালে বেরিয়ে গিয়ে সেই রাতে ফেরা। ফিরেও সংসারের কিছু কাজ গুছিয়ে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুমিয়ে পড়া, এই ছিল আমার রুটিন। তাই সেই সময় পিকলুর সাথে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার ছিল না। তবে ঈশ্বরের বোধহয় অন্য কিছু ইচ্ছে ছিলো, কারণ কয়েকদিন যেতে না যেতেই শুরু হলো লকডাউন।

IMG_20240926_014030.jpg
"আমার সাথে ছাদে ঘুরতে খুব ভালোবাসে পিকলু"

অফিস বন্ধ, সারাদিন বাড়িতে থাকতে হতো, তাই পিকলুর সামনাসামনি না এসে আর উপায় রইলো না। ১০ থেকে ১২ দিন যেতে না যেতেই এটা অনুভব করলাম, আমার পিছু পিছু সে সর্বদাই ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বকা দিলেও সে আমার পাশে, আমি আদর করলেও আমার পাশে, অর্থাৎ আমাকে ছাড়া কোথাও থাকবে না। শুভ ওকে এতো যত্ন করে এনেছে, অথচ শুভর কাছেও থাকে না, ওর যত কিছু সব আমার সাথে।

IMG_20240926_005905.jpg
"আমার সাথেই ওর যতো দুষ্টুমি "

বাড়ির আশেপাশের সকলে যখন আমাকে পিকলুর মা বলতো ভীষণ বিরক্ত হতাম আমি। ভাবতাম আমি কেন কুকুরের বাচ্চার মা হবো? তবে এখন ভালো লাগে। কারণ আমি জানি আমার বাচ্চা কোনোদিনও আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসতে পারবে না, যতটা পিকলু আমাকে ভালোবাসে।

IMG_20240926_005252.jpg
"আদরের মুহুর্ত"

আমি যদি আমার বাচ্চাকে বকা দিই। সে হয়তো এক বেলা আমার সাথে কথা না বলেই কাটিয়ে দেবে। ঠাম্মা, দাদু, বাবা অন্য আরও সকলকে খুঁজে নেবে, মায়ের বিরুদ্ধে নালিশ করার জন্য। কিন্তু পিকলু কোথাও যায় না। ওকে বকা দিয়ে যদি বাইরে বের করে দিই, ও দরজা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কখন আমি ওকে ডাকবো, আর ওই ছুটে আমার কাছে চলে আসবে, সেই অপেক্ষা করে।

এটাই হলো পশুদের ভালোবাসা। এমন ভালো মানুষ কি করে বাসবে বলুন তো? আমরা মানুষেরা একটু বেশি স্বার্থপর হয়ে থাকি। কাউকে ভালোবাসলে তার পিছনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হলেও স্বার্থ লুকানো থাকে। তবে পশুদের ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ থাকেনা।

IMG_20240926_005213.jpg
"এই ছবিটি ভীষন প্রিয় আমার। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,পিকলু আমার হাতের উপরেই শুয়ে পড়েছে।"

যখন পরিবারের কারো প্রতি অনেক বেশি বিরক্ত হই, সমস্ত রাগ গিয়ে পরে পিকলুর উপরে। তবুও কি নির্দ্বিধায় আমার রাগ সহ্য করে আপনারা বিশ্বাস করবেন না। যখন কোনো কারনে অনেক কষ্টে চুপচাপ শুয়ে থাকি, কি সুন্দর বুঝতে পারে আমার মন খারাপ। এতটুকুও বিরক্ত করে না আমাকে। শুধু আমার পাশে শুয়ে আমার পিঠের সাথে হেলান দিয়ে থাকে। যেন বোঝাতে চায় মন খারাপ করো না, আমি আছি তোমার পাশে। ওর দিকে ঘুরে যখন ওকে জড়িয়ে ধরি, কি অদ্ভুত শান্তি পাই, তা সত্যি আমি বর্ণনা করতে পারবো না।

IMG_20240926_005742.jpg
"সুগার ফ্রি বিস্কুট পিকলুর পছন্দ নয়"

পিকলুর প্রতি আমার যে ঠিক কতখানি টান, সেটা আমি খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি যেদিন ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছি এবং তিনি কিছু ব্লাড টেস্ট দিয়েছিলেন। আর বাড়িতে বসে ৫ দিন স্যালাইন দেওয়ার কথাও বলেছিলেন।

পাশাপাশি জানিয়েছিলেন ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট যদি পজিটিভ আসে, তাহলে এটা খুব খারাপ। পজিটিভ হলে পিকলুকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যাবে।

IMG_20240926_013841.jpg
"নিজের বালিশ নিয়ে আমার খাটে পিকলু বাবু"

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে অনুভব করলাম, আমার চোখের কোণে জল। আমার কোলে তখন পিকলু, ঘাড়ের উপরে মাথা দিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে। সেই বোধহয় প্রথম ওকে হারানোর ভয়ে বুক কেঁপে উঠেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত রিপোর্ট নেগেটিভ ছিলো।


কয়েকদিন আগে হয়তো আপনারা শুনেছিলেন শুভকে একটা কুকুরে কামড়েছে। আসলে অফিসের একটি কুকুরকে প্রতিদিনই শুভ খেতে দিতো। বাড়ি থেকে ওর জন্য আলাদা টিফিন বক্সে আমি ভাত দিয়ে দিতাম।

IMG_20240926_012305.jpg
"ভালোভাবে দেখলে বুঝবেন কুকুরটির একপাশের চামড়া সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল"

বেশ কিছু মাস আগে কুকুরটিকে কেউ গরম জল ছুড়ে মেরেছিলো। গায়ের সম্পূর্ণ চামড়া পুড়ে গিয়েছিলো। তারপর থেকে ওদের অফিসে গাড়ির নিচে কুকুরটি শুয়ে থাকতো। একদিন, দুইদিন খাবার দিতে দিতে ও রোজই সময় মত খাওয়ার জন্য চলে আসতো ওদের ফ্রন্ট অফিসের সামনে।

ভুলবশতই সেদিন শুভর হাতে কামড়টা লেগেছিলো। আসলে খাবারের বাটির পাশে ওর জন্য জলের আলাদা বাটি রেখেছিলো। খাবার দেওয়ার পর শুভ জল বদলে দেওয়ার জন্য, বাটিটা নিতে যাচ্ছিলো। ও হয়তো ভেবেছিল যে খাবারের বাটিটা নিয়ে নেবে। তখনই হাতে কামড়ে দিয়েছিলো।

যখন সকলে তাড়াহুড়ো করে একজায়গায় হলো, শুভকে নিয়ে হসপিটালে ছুটলো, তখন ও বুঝেছে যে ও অনেক অন্যায় করেছে। শুভ যখন ইনজেকশন দিয়ে অফিসে ফিরে এসেছিলো, ও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কিছুটা দূর থেকে ওর দিকে তাকিয়েই ছিল।

IMG_20240926_014354.jpg
"এখনও কুকুরটা ভীত হয়ে থাকে"

ও হয়তো কাছাকাছি আসতে চাইছিলো, কিন্তু আবার ভয়ও পাচ্ছিলো। কারণ ও বুঝেছিল ও একটা অন্যায় করে ফেলেছে, এছাড়াও পূর্বে যেহেতু ওর গায়ে গরম জল ছুড়ে মারা হয়েছিলো, তাই হয়তো ওর মনে কিছুটা ভয়ও কাজ করছিলো।

তবে শুভ বা আমার কারোরই ওই কুকুরটির ওপরে রাগ হয়নি। কারণ আমরা এটুকু এখন বুঝে গেছি যে, যে কুকুরটিকে আপনি ভালোবেসে প্রতিদিন খেতে দেবেন, সে কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে আঘাত করবে না। সে বাড়ির পোষ্য কুকুর হোক বা বাইরের।

ওই দিনের পর থেকে অফিসের বেশ কিছুজন আপত্তি জানালেও, শুভ কিন্তু এখনও প্রতিদিন ওর জন্য খাবার নিয়ে যায় এবং আমিও ওর জন্য খাবার দিয়ে দিই। কারণ আমি বুঝতে পারি শুভর প্রতি মায়া জন্মেছে। আর সত্যি কথা বলতে পিকলুর সাথে থেকে থেকে, আমারও কেন জানি না কুকুরদের প্রতি একটা অন্যরকম দুর্বলতা কাজ করে।

IMG_20240926_010249.jpg
"শীতকালের ছবি,তখন সে কম্বলে ভিতরে নয়, কম্বলের উপরে বসে"

আমার ভাবতেও ভয় করে একটা সময় পিকলু আমার জীবনে থাকবে না। কারন জীবনের বাস্তবতা এটাই। একদম সুস্থ ভাবে, খুব যত্ন করলেও একটি কুকুর ১৫ বছরের বেশি বাঁচে না। পিকলুর সাথে সাড়ে চার বছরে আমার যে বন্ডিং তৈরি হয়েছে, তাতে একটা সময়ের পর আমার দিনগুলো আমি পিকলুকে ছাড়া কিভাবে কাটাবো, সেই ভয়টা এখন থেকেই কখনো কখনো ভিতরে কাজ করে।

IMG_20240926_012413.jpg
"আমার প্রিয় ড্রেস-পিকলু সত্যিই আমাদের সাথে থাকে,আর থাকবেও ☺"

যাইহোক পরবর্তী একটি পোস্টে আমি অবশ্যই পিকলুর ডাক্তার দেখানো এবং ওর ওষুধগুলো সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। পাশাপাশি বাড়িতে কোনো পোষ্য থাকলে, তাদের কিভাবে আপনি যত্ন করতে পারবেন, কি কি খাবার খাওয়াতে পারবেন, সে বিষয়ে কিছু তথ্য শেয়ার করবো।। আপনাদের কার কার পোষ্য পছন্দ অবশ্যই জানাবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65970.26
ETH 2696.32
USDT 1.00
SBD 2.88