"নতুন বছরের প্রথম দিন- একটু অন্যরকম"
|
---|
Hello,
Everyone,
জিন্সের পকেটে থাকা ফোনটা হঠাৎ ভাইব্রেট হতে শুরু করলো। তখনও হসপিটালের গ্রাউন্ড ফ্লোরে বসে আছি। শুভ তখন পাঁচ তলায় শশুর মশাইয়ের কাছে বসে আছে। কিছুক্ষণ বাদে ওনাকে নিয়ে আল্টাসনোগ্রাফি করতে যেতে হবে সেই কারণে।
ফোনটা বের করে দেখলাম কোনো নাম্বার দেখা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ বাদে বুঝলাম ওটা whatsapp কল। তারপর গিয়ে দেখলাম আমার বান্ধবীদের যে গ্রুপ আছে, সেখানেই সকলে ভিডিও কলে যুক্ত হয়েছে।
একবার ভাবছিলাম কলটা রিসিভ করি, তারপরে আবার কি ভেবে যেন রিসিভ না করে শুধু ওদেরকে মেসেজ করে দিলাম আমি হসপিটালে আছি।
"নতুন বছরের প্রথম সকাল, হসপিটালে ঢোকার সময় তোলা ছবি"
আসলে নতুন বছর শুর দিন নিয়ে একটা প্ল্যানিং চলছিল আমাদের। প্ল্যান ছিলো সেদিন সকলে একত্রিত হয়ে পিকনিক করবো এবং নতুন বছরটা একসাথে শুরু করবো, যাতে সকলের সারা বছর সুন্দর কাটে। কিন্তু তেমনটা হওয়ার নয়, সেটা বুঝতেই পেরেই ওদেরকে জানিয়েছিলাম, যদি ওরা চায় যেন নিজেদের মত প্ল্যান করে নেয়। আমার একার জন্য ওদের নতুন বছর খারাপ হোক, এটা কখনোই আমার কাম্য ছিলো না।
"ভীষন ঠান্ডা হাওয়া চলছিল তখন"
"সামনে আমার ননদ"
বছর শেষের খারাপ লাগা হোক বা নতুন বছর আসার আনন্দ, জীবনের এই প্রথমবার কোনোটাই উপভোগ করতে পারিনি। জীবন যেন বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাচ্ছে। বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সেদিন বুঝেছিলাম, জীবনে আনন্দ উপভোগ করার জন্য পরিকল্পনা করা যেমন জরুরী, ঠিক তেমনি পরিকল্পনা গুলো সফল না ও হতে পারে, তার জন্য মানসিকভাবে তৈরিও থাকা উচিত।
"৩১ তারিখ হসপিটাল থেকে বেড়োনোর সময় তোলা ছবি"
৩১ তারিখ সারাটা দিন অনেক বেশি টেনশনের মধ্যে কেটেছিলো। হসপিটালের নিচেই সারাদিন অপেক্ষারত অবস্থায় ছিলাম আমরা। আরও বেশ কিছু আত্মীয়-স্বজন এসেছিলেন যারা শ্বশুরমশাইয়ের সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। তবে সেদিন তেমন একটা সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
শ্বশুর মশাইকে যে দুই ইউনিট ব্লাড দেওয়া হয়েছিলো, তার পরিবর্তে আমার দুই মামা শশুর সেদিন ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে রক্ত দিয়ে এসেছিলেন। এখানে একজন মানুষের থেকে ওরা মাত্র এক ইউনিট রক্ত নিয়ে থাকে।
প্রথমে ঠিক ছিলো আমি এবং শুভ ব্লাড দেবো। তবে কয়েকদিন আগে শুভকে কুকুরে কামড়েছিল, ফলতো ও ভ্যাকসিন নিয়েছিলো বলে আগামী এক বছরের মধ্যে ও কোথাও ব্লাড ডোনেট করতে পারবে না।
অন্যদিকে আমার ননদ নিয়মিত ভাবে থাইরয়েডের মেডিসিন খান, তাই তার রক্তটা নিতেও ব্লাড ব্যাংক থেকে খুব একটা রাজি ছিল না। মামা শ্বশুরেরা উপস্থিত থাকায় আমাকেও দিতে বারণ করলো, কারণ হসপিটালে যাতায়াত, সেখানে দৌড়াদৌড়ি এই সমস্ত গুলো করতে হচ্ছে তাই।
"গ্রাউন্ড ফ্লোরের সামানেই কাঠতো আম আমাদের সারাদিন"
এই সমস্ত কাজ মিটিয়ে রাতে মামাশ্বশুরবাড়িতে ফিরে, স্নান করে খাওয়া দাওয়া সেরে দুটো পোস্ট ভেরিফিকেশন করে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। ঘুম থেকে উঠে আবার পুনরায় রওনা করছিলাম হসপিটালে উদ্দেশ্যে।
নতুন বছর এভাবেই শুরু হয়েছে। তবে সত্যি কথা বলতে খুব বেশি আফসোস হয়নি। হাসপাতালে থাকার কারণেই বুঝতে পেরেছি, আরও কত মানুষের পরিস্থিতি আমার থেকেও বেশি খারাপ। সুস্থতার অপেক্ষায় কত হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই হসপিটালে যাতায়াত করে। কত মানুষ কত দিন ধরে একই জায়গায় পড়ে আছে, শুধু আপন জনকে সুস্থ করার জন্য।
"এই ফ্লোরের একেবারে শেষ রুমে আলট্রাসনোগ্রাফি করে"
তাদের জীবনে না ছিলো ক্রিসমাসের, না নতুন বছরের আগমনের অনুভূতি। আমরাই একমাত্র নই যারা কঠিন সময় পার করছিলাম। আমাদের মতনই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন মানুষ, এমন ভাবেই নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে। নাই বা হলো এই বছর পরিকল্পনা মাফিক নতুন বছরের উদযাপন। তবে আগামী বছর নিশ্চয়ই হবে এ অপেক্ষা করতে দোষ কোথায়?
"অপারেশন থিয়েটারে বন্ড সাইন করতে যাওয়ার সময় শুভ লুকিয়ে এই ছবিটি তুলেছিল এটি প্রি অপারেশন এরিয়া"
জীবনে হঠাৎ করে পাওয়া আনন্দে গুলো যেমন আমাদেরকে উচ্ছ্বসিত করে, তেমনি হঠাৎ করে আসা এমন কঠিন সময় আমাদেরকে মানসিকভাবে অনেকটা শক্ত করে। ভালো মন্দ সময়ের যাতায়াত আসলেই জীবনকে চিনতে শেখায়। ২০২৫ এর শুরুর দিন থেকে আরও কিছুটা ম্যাচিওর হলাম। জীবনের বাস্তবতা আরও খানিকটা অনুভব করলাম।
এই ভাবেই বোধহয় বয়স বাড়ার সাথে সাথে জীবন সম্পর্কে ধারণা বদলাতে থাকবে। তবে যাইহোক না কেন ভালো সময়ের অপেক্ষায় সবসময়ই থাকবো। কারণ খারাপ সময় দীর্ঘস্থায়ী হলেও তা কখনোই চিরস্থায়ী হয় না।
যাইহোক প্রত্যেকের নতুন বছর খুব ভালো কাটুক, ভালো থাকুন, সর্বোপরি সুস্থ থাকুন এটাই কামনা করি।
|
---|
আপনার বেশ কয়েকটি পোস্ট পড়ে জানতে পেরেছি। আপনি ৫-৬ দিন ধরে হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করছেন, আপনার শ্বশুরমশাইয়ের শরীর খুব অসুস্থ। নতুন বছর হয়তো খুব ভালোভাবে উদযাপন করতে পারেন নি। আপনার পোস্টটি পরে জানতে পারলাম। আপনি নতুন বছরে আপনার বান্ধবীদের সাথে পিকনিক করতে পারেন নাই। আপনার জন্য দোয়া করি, সৃষ্টিকর্তা যেন সবকিছু ঠিক করে দেয় অতি শীঘ্রই। এরকম মানসিক অশান্তি থেকেও আমাদের সাথে সময় দেন। এর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দিদি, ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন।
আপু আপনার পোস্টটা পড়ে মন ছুঁয়ে গেল। জীবনের বাস্তবতা আর কঠিন সময়গুলোকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা সত্যিই হৃদয়গ্রাহী। নতুন বছরের শুরুটা যেমনই হোক না কেন, আপনার মানসিক শক্তি আর ইতিবাচক মনোভাব প্রশংসনীয়। দুঃসময় মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে যায়, আর আপনিও সেটাই প্রমাণ করেছেন। আশা করি, সামনের দিনগুলো আপনার জন্য অনেক সুন্দর ও সুখময় হবে। আপনার শ্বশুরমশাইয়ের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ।
আপনার কথা যদিও আগেও শুনেছি এখন আপনার পোস্ট পড়ে বুঝতে পারলাম, আসলে আমাদের জীবনের প্রতিটা সময় কখনো একরকম থাকে না, হয়তোবা আমাদের জীবন খানিকটা কষ্টকর হয়ে থাকে। কিন্তু সব সময় কষ্ট থাকেনা সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়।
বর্তমান সময় যেহেতু শীতের সময় তাই ঠান্ডা হাওয়া বইবে এটা স্বাভাবিক। তবে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, আপনার শ্বশুরমশাই এর অপারেশন যেটা নিয়ে আপনারা অনেক বেশি টেনশন ছিলেন, সেটা সম্পূর্ণ হবে এটা জেনেই বেশ ভালো লেগেছে। নিশ্চয়ই আশা করি তিনি এখন বর্তমানে ভাল আছেন, ধন্যবাদ এত ব্যস্ততার মাঝেও আপনার দিনটা আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন। আপনার আগামী দিনের পথ চলা অনেক বেশি সুন্দর হোক ভালো থাকবেন। ভালো থাকবেন।