আমার দীপাবলি
|
---|
Hello,
Everyone,
দূর্গাপূজোর মতো চার-পাঁচ দিনের আয়োজন না হলেও কালীপুজোর কিন্তু অন্যরকম মজা। দুর্গাপূজার শেষ হওয়া মাত্রই সকলেই বোধহয় এই পুজোর জন্যই দিন গোনা শুরু করে।
আমার শ্বশুর বাড়ির এলাকায় দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয়। তবে কালীপুজোর ঠিক ততখানি জমজমাট আয়োজন হয় না এ কথা ঠিক, তবে ব্যক্তিগতভাবে এই কালীপূজাটাই আমি বেশি উপভোগ করি।
|
---|
আমাদের ঠিক সামনের বাড়িতে কালীপুজো হয় প্রতিবছর। এই দিনটিতে সেই বাড়ির পূজো যেন আমাদের আশেপাশে কয়েকটি বাড়ির পুজো হয়ে ওঠে। ওই বাড়ির জ্যেঠিমা বিধবা হয়েছেন বছর তিনেক আগে। তাই পূজোর দায়িত্ব কিয়দাংশে আশেপাশের সকলের উপরেই পড়েছে।
কারণ কালীপুজোর জোগাড় করাটা আসলেও সহজ কাজ নয়। যদিও ঐ বাড়ির বৌদি আছে, তবে একার পক্ষে সমস্ত দিক সময় দেওয়া কঠিন। তাই সকলেই চেষ্টা করি তাকে সাহায্য করার। আর ঠিক এই চেষ্টার মাধ্যমে ওই বাড়ির পুজো হয়ে ওঠে আমাদের সকলের।
এই বছর কোমরে ব্যথার কারণে আমি এবছর পুজোয় তেমনভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারিনি ঠিকই, কিন্তু মনের মধ্যে সেই নিজের বাড়ির পুজোর অনুভূতি একইরকম ছিলো।
|
---|
|
---|
সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে পূজোর তেমন তোড়জোড় ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, তবে কিছুক্ষণ বাদে এসে জ্যেঠিমা জানালো তিনটের সময় ঠাকুর আনতে যাবে। এর আগে শ্বশুর মশাই প্রতিবার ঠাকুর আনতে যেতেন।
কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার কারণে গত দুই বছর তা সম্ভব না। আর শুভও অফিসে ছিল, তাই আমাদের বাড়ি থেকে ঠাকুর আনতে যাওয়ার মতোই কেউই ছিল না। তাই জ্যেঠিমা অন্য বাড়িতে কথা বলে লোক ঠিক করেছিলেন।
গতকাল সবেমাত্র লাঞ্চ শেষ হয়েছে, ঠিক এরকম সময় ঢাকের আওয়াজ পেলাম, বুঝলাম এবার শুরু হল পুজোর আসল আমেজ। যদিও একবারে পাশে বাড়ি হওয়ায় সারারাত ঢাকের আওয়াজ শুনতে হয়, তবে এরও অন্যরকম ভালো লাগা আছে।
|
---|
তবে কালীপুজোর আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে আমার জন্য সবথেকে বড় বাধা হলো পিকলুর ভয়। সত্যি কথা বলতে পিকলু আমাদের বাড়িতে আসার আগে আমার এটা জানা ছিল না যে, কুকুরেরা বাজির শব্দে এতটা ভয় পায়।
বর্ষাকালে বা ঝড়ের সময় যতো জোরেই মেঘ ডাকুক না কেন সেই আওয়াজে পিকলু বিন্দুমাত্র ভয় পায় না, কিন্তু যতদূর থেকেই বাজির শব্দ ওর কানে আসুক না কেন, ওর শরীর ভয়ে কাঁপতে থাকে। যেটা দেখলে সত্যিই অনেক বেশি খারাপ লাগে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের করনীয় কিছুই নেই। দরজা জানলা আটকে ওকে নিয়ে ঘরে বসে ছিলাম সন্ধ্যা থেকে, তবুও ওর ভয় কমে না।
|
---|
|
---|
|
---|
|
---|
আশেপাশের সব বাড়িতেই সুন্দর করে লাইট লাগিয়েছে দেখে, আমাদের রুমের একটা জানালায় আমিও শুভকে একটু লাইট লাগাতে বলেছিলাম। আর সন্ধ্যার পর শাশুড়ি মা ছাদে মোমবাতি লাগিয়েছেন।
তারপর শশুর মশাইকে নিয়ে শাশুড়ি মা পাশের বাড়িতে ঘুরে এলেন, যাতে ওনার মনটাও একটু ভালো থাকে। ওনরা ঘুরে আসার পর, আমি যাবো এমনটাই কথা ছিলো। তাই যতক্ষণ বাড়িতে ছিলাম, আমি বসে কমিউনিটির কিছু কাজ গুছিয়ে নিলাম। তারপর শাশুড়ি মা ও শ্বশুরমশাই ফিরে এলে আমি ধীরে ধীরে রেডি হয়ে, প্রায় সাড়ে নটা নাগাদ পাশের বাড়ি গেলাম।
|
---|
প্রথমে গিয়ে মায়ের মুখ দর্শন করলাম। নিচু হয়ে প্রণাম করতে পারছিলাম না কোমরের কারণে, তাই সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে পূজো দেখে, সেখান থেকে গিয়ে জ্যেঠিমার সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি উপরে বাকি সকলের খাবারের জায়গায় দেখাশোনা করছিলেন। সেখানে গিয়ে জ্যেঠিমার সাথে বসে কিছুক্ষণ কথা বললাম, তারপর বাড়িতে ফিরে আবার রেস্ট করলাম।
শুভর এক বন্ধুর বাড়িতেও প্রতিবছর এই কালীপুজো হয়। প্রতিবারই আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে যায়, গত দু বছর যাওয়া হয়নি। কারণ আমি তখন আমার বাপের বাড়িতে যেতাম। এই বছর যেহেতু এই বাড়িতে ছিলাম তাই শুভ বারবার বলছিলে যাওয়ার জন্য।
|
---|
|
---|
আমাদের বাড়ি থেকে ওদের বাড়ি চার-পাঁচটা বাড়ির পর। ওদের বাড়িতে যেতে হলে একটু গলির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যে গলিটা এই পুজোর সময় খুব সুন্দর লাইট দিয়ে সাজায়, তাই যাওয়ার সময় আমি কিছু ছবিও তুলেছিলাম।
|
---|
ওখানে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বসলাম। মায়ের মুখ দর্শন করলাম। ওদের বাড়িতে মূলত পিতলের প্রতিষ্ঠিত মায়ের পূজো হয়। যেটা আমি এ বছর প্রথম দেখলাম। যাইহোক সেখানে সকলের সঙ্গে অনেক দিন বাদে দেখা হলো, তাই সবাই এসে কথা বলছিলো। একটা ভালো সময় কাটালাম।
এরপর কাকিমা জোর করে খাবারের জায়গায় নিয়ে গেলেন। সেখানে সকলে মিলে ডিনার করলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে কারেন্ট চলে গেলো। খাওয়া শেষ করে কাকিমাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন শুনলাম পুজো প্রায় শেষের দিকে, কিছুক্ষণের মধ্যেই অঞ্জলি শুরু হবে।
|
---|
শুভ ততক্ষণ ওর ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো। তাই আমিও পুজোর ওখানেই বসেছিলাম। ঘড়িতে তখন প্রায় দেড়টা বাজে। আমি বাড়ি আসার জন্য শুভকে ফোন করলাম, কারণ বেশিক্ষণ বসে থাকলেও তখন আমার কষ্ট হচ্ছিলো।
|
---|
আমরা যখন ওখান থেকে বেরিয়ে আসবো, সেই মুহূর্তের অঞ্জলি শুরু হলো। এরপর বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে আমি আগে আমার সপ্তাহিক রিপোর্ট শেয়ার করলাম। রিপোর্টটা আমি সন্ধ্যা বেলাতেই লিখে রেখেছিলাম, যেহেতু আমি জানতাম রাতের দিকে আমার একটু অন্যদিকে সময় ব্যয় হবে।
তার পরেই শুয়ে পড়লাম। এই ভাবেই আমি আমার এই বছরের দীপাবলির দিনটি কাটিয়েছিলাম।
দুর্গাপূজার আনন্দ যেতে না যেতেই শুরু হয় কালী পূজার আনন্দ একই মাসে দুইটা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় আপনাদের। লেখা পড়ে যেটা বুঝলাম আপনাদের বাড়ির সামনেই যেহেতু কালী পূজা হয় আর সেই পূজার উৎসবের আনন্দ আশেপাশে কয়েকটি ঘরে ছড়িয়ে যায়।
প্রতিটা উৎসবের ভেতরে নতুন কিছু না কিছু আনন্দের ভিতরেই আমরা সময় পার করি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ উৎসবের আনন্দ গুলো আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য ভালো থাকবেন।
Thank you for your support @shiftitamanna. 🙏