"ননদের বিবাহবার্ষিকী উদযাপনের কিছু সুন্দর মুহুর্ত "
Hello,
Everyone,
সময় কত তাড়াতাড়ি বয়ে যায় তাই না?
আর জীবনের কিছু কিছু তারিখ সেগুলো মনে করিয়ে দেয় বারংবার। বিগত দিনের একটা পোস্টে আমি আপনাদের সাথে আমার শ্বশুর মশাই ও শাশুড়ি মায়ের ৪২ বছরের বিবাহ বার্ষিকীর কিছু মুহূর্ত তুলে ধরেছিলাম।
ঠিক তার একদিন বাদে অর্থাৎ ১৬ই ডিসেম্বর ছিল আমার ননদের বিবাহ বার্ষিকী। তবে আমরা একদিন আগেই পালন করেছিলাম। কারন রবিবার ছিলো সকলের ছুটির দিন। অনেকেই হয়তো শুনে থাকবেন বাবা মায়ের বিয়ের মাসে সন্তানদের বিয়ে হয় না।
তবে ভালোবাসা কবে এত নিয়ম কানুন মেনেছে বলুন তো? তবে এই বিষয়ে একটি কথা আমি অবশ্যই বলতে চাই, আজকালকার দিনের ভালবাসার সাথে তখনকার ভালোবাসার তুলনা করা নিতান্তই বোকামি। কারণ আমার ননদের বিয়ে হয়েছে ২৪ বছর আগে।
আজ থেকে ২৪ বছর আগে এই ১৬ই ডিসেম্বর আমার ননদ তার জীবনের সবথেকে বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল। সেই সময় আমার ননদের বয়স অনেকটাই কম ছিলো। আর যুগের সাথে তাল মিলানোতে আমার শ্বশুর-শাশুড়িও কম অভ্যস্ত ছিলেন। ফলতো পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছিল যে সেই সময় দাড়িয়ে আমার ননদকে পালিয়ে বিয়ে করা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিলো।
যদিও পালিয়ে বিয়ে করার কথাটা আজকালকার দিনে খুবই সাধারণ একটা বিষয়। তবে ২৪ বছর আগের সমাজে এটিই ছিল এক প্রকার অন্যায়। তাও আবার নিজের থেকে ১২ বছরের বড় গৃহ শিক্ষকের সাথে। হ্যাঁ আমার ননদের হাজব্যন্ড সেই সময় আমার ননদকে পড়াতে আসতেন এবং সেই সূত্রেই তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো।
এটা জানা জানি হওয়ার পর পারিবারিক অনেক অশান্তি আমার ননদ সহ্য করেছিলো। তবে সবকিছু সহ্য করেও তারা কিন্তু তাদের ভালোবাসা সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রেখেছিলো। শেষ পর্যন্ত এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, ওই সময় দাঁড়িয়ে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে এক প্রকার আমার ননদকে বাধ্য করা হয়েছিলো। আমার বিয়ের পর এই গল্পগুলো আমি আমার ননদের কাছ থেকেই শুনেছি।
যাইহোক জীবনের অনেক বাধা-বিপত্তি পার করেছে দুজনে মিলে, কিন্তু দুজন দুজনকে ছেড়ে যাওয়া সিদ্ধান্ত কখনোই নেয়নি। আর এখানেই হয়তো তৎকালীন ভালোবাসার সাথে আজকের ভালোবাসার আকাশ পাতাল তফাৎ।আজকালকার দিনে আত্মত্যাগ করতে পারার মতন ভালোবাসা দেখা যায় না বললেই চলে।
যাক এরপরে জীবন নিজের গতিতে এগিয়েছে। আর তার সাথে মানিয়ে নিয়ে এগিয়েছে আমার ননদের বিবাহিত জীবন। আমার বিয়ের পর থেকে প্রতিবছরই দেখেছি আমার ননদের হাজব্যন্ড প্রতি বছর এইদিনে ননদের জন্য রজনীগন্ধা ফুল নিয়ে আসে, কারণ সেই ফুলটি আমার ননদের বড্ড প্রিয়। প্রতিবছর এই দিনটিতেই হয়তো আমি আপনাদের সাথে পোস্টের মাধ্যমে সেকথা শেয়ারও করেছি।
যাইহোক এই বছরের আয়োজন সম্পর্কে আগের পোস্টে কিছুটা আলোচনা করেছিলাম। সন্ধ্যার দিকে ননদের বাড়িতে গিয়ে, আয়োজন দেখে আমি তো অবাক। আসলে আশে পাশের বাড়িতে যারা ননদের বিবাহ বার্ষিকী সম্পর্কে জানেন, তারা সবাই মিলে ননদকে কাছে আবদার করে বাধ্য করেছে ছোটখাটো আয়োজন করতে। সেই কারণেই ছিল অতো প্রস্তুতি।
অন্যদিকে ওনরা সকলে মিলেও বেশ ভালো প্রস্তুতি নিয়েছিলো, যেগুলো সম্পর্কে আমি ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম। যাইহোক রান্না শেষে ননদকে শাড়ি পড়ানো হলো সাথে ননদের বরকে বলা হলো ধুতি পাঞ্জাবি পড়ার জন্য। কারণ ২৪ বছর আগের সেই দিনটিকে আমরা আরও একবার নতুন করে উদযাপন করবো। একটু লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে দুজনেই রেডি হয়ে সামনে আসলো। এরপর শুরু হলো আসল মজা।
প্রথমেই দুইজনকে মালা পরানো হলো। আর মালা দুটো দেখে দুজন বেশ কিছুক্ষণ হেসে নিলো। কিছুতেই মালা বদল করবে না। তবে আমাদের সকলের কথায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই একে অপরকে মালা পরালো। হয়তো মনে মনে ইচ্ছে করছিলো, কিন্তু লজ্জায় বহিঃপ্রকাশ করতে পারেনি। মালা বদল করার সময় সকলে মিলে অনেক মজা করেছিলাম।
যাইহোক মালা বদলের পর্ব শেষ হলে সামনে আনা হলো সিঁদুর কৌটা, যেটা খুব সুন্দর করে গোলাপ ফুলের পাপড়ি ও প্রদীপ দিয়ে সাজানো হয়েছিলো, সাথে ধান দূর্বাও ছিলো, যাতে বড়রা আশীর্বাদ করতে পারে।
এরপর শুরু হল সিঁদুর দান পর্ব। আর এই মুহূর্তটি বোধহয় প্রতিটি মেয়ের জীবনে একটি আবেগঘন মুহূর্ত, কারণ এই সিঁদুর দানের পরেই প্রত্যেকটা মেয়ের জীবন কিছুটা হলেও বদলে যায়। আর যারা এতো গুলো বছর ধরে একসাথে সংসার করছে, তাদের জীবনের না জানি কত স্মৃতি এই একটা রীতির মাধ্যমে মনে পড়ে যায়। ছবিগুলো তুলতে গিয়ে খানিকটা আবেগপ্রবণ আমিও পড়েছিলাম।
সবশেষে এবার আসলো কেক কাটার পর্ব। আমরা বাঙালি নিয়ম গুলো শুরুতে পালন করেছিলাম। তবে আধুনিক যুগের নিয়মগুলোকেও নিজেদের জীবন থেকে বাদ দিতে পারিনি।তবে আপনারা জানলে খুশি হবেন এই কেকটি ননদের বড় ছেলে নিয়ে এসেছিলো, তার বাবা-মায়ের বিবাহ বার্ষিকী পালন করবে তাই। যুগ কত এগিয়ে গেছে তাই না? ভাবতেও ভালো লাগে বাচ্চারা জানে আজকাল কোন কোন দিন আমাদের জীবনে বিশেষ এবং সেগুলোকে উদযাপন করা উচিত।
কেক কাটার পর্ব শেষ হতেই চোখ পরল ঘড়ির দিকে। তখন রাত প্রায় ১২.৩০ টার কাছাকাছি। যদিও এই অনুষ্ঠানগুলো রাত বারোটার পরেই করার ইচ্ছে ছিল সকলের, কিন্তু যেহেতু আমাকে ও শুভকে বাড়িতে ফিরতে হবে, তাই ওরা আমাদের জন্যই একটু আগেই সমস্ত জিনিস আয়োজন করেছিলো।এরপর আমরা খেতে বসলাম। মেনু ছিলো সম্পূর্ণ বাঙালী -
১. সাদা ভাত
২. বেগুন ভাজা
৩. মাছের মাথা দিয়ে মুগ ডাল
৪. কাতলা মাছের কালিয়া
৫. চিকেন কষা
৬. চাটনি
৭. পাপড়
৮. রসগোল্লা
দুঃখের বিষয় তাড়াহুড়োতে আমি সব কটি পদের আলাদা করে ছবি তুলতে পারিনি, বা বলতে পারেন সমস্ত কিছু আয়োজনের মধ্যে সেটা খেয়ালও ছিল না।
যাইহোক খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে আমরা বেরিয়ে পড়ি। সেদিন প্রচন্ড ঠান্ডা ছিলো, আর বাইকে করে আসা একপ্রকার শাস্তি ছিল বলতে পারেন। তবুও বাড়িতে ফিরতেই হতো।
তবে এই বছরের বিবাহ বার্ষিকী গুলো যে এমন ভাবে কাটবে সে আশা আমরা কেউই করিনি। প্রথমত শ্বশুর শাশুড়ির বিবাহ বার্ষিকী অদ্ভুত রকম ভাবে সকলের উপস্থিতিতে সুন্দরভাবে কাটলো এবং তার একজন বাদেই ননদের বিবাহবার্ষিকীও সকলের উপস্থিতিতে খুব ভালো ভাবে কাটানো হয়েছে।
এমন ভাবেই জীবনের বিশেষ দিনগুলো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকুক প্রত্যেকের জীবনে। ভালো থাকুক প্রত্যেকটি ভালোবাসার সম্পর্ক। অটুট থাকুক একে অপরের প্রতি বিশ্বাস, এইটুকুই প্রার্থনা। যাইহোক আপনাদের কেমন লাগলো আমার ননদের বিবাহ বার্ষিকীর আয়োজন, অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আজকের দিনটি ভালো কাটুক সকলের।
Great family celebration.. wishing them happy anniversary... happy healthy and long life...
Thank you for your support. @aviral123.