"চার মূর্তির দিনযাপন- প্রথম পর্ব"

in Incredible India17 days ago (edited)
IMG_20241202_210048.jpg
"আজকের কিছু আনন্দঘন মুহুর্ত "

Hello,

Everyone,

আজকাল জীবনটা যেন ঠিক কেমন হয়ে গেছে, একটা সময় ছিলো যখন বাড়ি থেকে না বেরোতে পারলে ভালো লাগতো না। কিছুদিন পর পর হয় মামা বাড়ি, না হলে বাপের বাড়ি, না হলে দিদি বাড়ি, অথবা বান্ধবীদের সাথে কোথাও না কোথাও না বেরোতে পারলে বড্ড বিরক্তি কাজ করতে ভিতরে ভিতরে।

তবে আজকাল বাইরে বেড়ানোর কথা শুনলে বিরক্ত হয়ে যাই। হয়তো বাড়িতে থাকাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, অথবা বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাইরের খোলামেলা পরিবেশের থেকে ঘরের কোণটাই বড্ড প্রিয় হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে।

আগে বিনা প্রয়োজনে বাইরে বেরোতে কোনো কষ্টই হতো না। আর আজ প্রয়োজনে বাইরে বেরোতেও কষ্ট হয়। তাই অনেকগুলো প্রয়োজন এক জায়গায় জমলে, একদিনে সেগুলোকে শেষ করার প্ল্যান করি। তারপর একদিন বেশ কিছু কাজ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোই, যাতে সব কাজগুলো একদিনে শেষ করে ফিরতে পারি।

আজও ঠিক তেমনি প্রয়োজনে বেরিয়েছিলাম। নভেম্বর মাসে কোনো একটা পোস্টে আমি শেয়ার করেছিলাম যে, কোমরে ব্যথার কারণে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাওয়া শুরু করছি। এলোপ্যাথিক ওষুধ খেলে এতো বেশি সাইডএফেক্ট হয় যে, আমি কোনোদিনই এলোপ্যাথিক ঔষধ খেতে পছন্দ করি না।

IMG_20241202_203617.jpg
"পুরোনো প্রেসক্রিপশন"

তবে পড়ে যাওয়ার পরের এক সপ্তাহ তীব্র ব্যথা থাকায়, তখন আর না খেয়ে উপায় ছিলো না। তবে নভেম্বর মাসে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ আনার পর, পনেরো দিন বাদে আবার ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা ছিলো। তবে সেই দিনই দাদার অপারেশনের কারণে, আমাকে দিদির বাড়িতে থাকতে হচ্ছিলো বলে, ওই ডেটে ডাক্তার দেখানো হয়ে ওঠেনি। এরপর বাড়িতে ফিরে আবার সেই শুধুমাত্র ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার জন্য আলিস্য কাজ করছিলো। তার ওপর আবার ডাক্তার সোম, বুধ, শুক্রবার ছাড়া বসেন না।

আজ যেহেতু সোমবার, তাই আজ ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। তার সাথে ব্যাংকেও সামান্য কাজ ছিলো। আর প্ল্যান ছিলো বান্ধবীদের সাথে কিছু সুন্দর সময় কাটাবো। সেই মাফিক প্ল্যান করে আজ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম দুপুরের দিকে।

IMG-20241202-WA0031.jpg
"চারমূর্তি- রাখী, আমি, পিয়ালী ও সঙ্গীতা"

সারাজীবন আমার খুব কাছের বান্ধবী একজনই ছিলো তার নাম রাখি। ওর কথা বহুবার আমার পোস্টে পড়েছেন। এরপর জীবনে অনেক বান্ধবী তৈরি হয়েছে ঠিকই, তবে আজ আর কারো সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। বর্তমানে বান্ধবী বলতে রাখি এবং ওর দুটো বান্ধবী। যারা আজকে আমার বান্ধবী হয়ে উঠেছে। ওদের সাথেই তো মায়াপুরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তাই বলা যায় সব কিছু মিলিয়ে আমাদের চারজনের একটা টিম তৈরি হয়েছে।

তার মধ্যে একজনের জন্মদিন ছিলো গত মাসের ২৭ তারিখ। ওরা অবশ্য আমাকে ফোন করেছিল ওখানে যাওয়ার জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র জন্মদিন সেলিব্রেট করতে যেতে ইচ্ছে করেনি। তাই ওরা অপেক্ষা করছিলো, যেদিন আমি যাবো একসাথে সকলেই সেলিব্রেট করবো। তাই আজকের দিনটি বেছে নিয়েছিলাম সব কাজ সম্পন্ন করার জন্য। সোমবার যেহেতু ডাক্তার দেখানোর কাজ হবে, পাশাপাশি ব্যাংক খোলা থাকবে। তাই এই দুটো কাজের পাশাপাশি, সবাই এক জায়গায় হয়ে বেশ কিছুটা সময়ও পার করা যাবে।

IMG_20241202_110308.jpg
"প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করার সময় তোলা ছবি"

এমনটাই প্ল্যান করেছিলাম। তবে সকালের কাজ শেষ করে, স্নান সেরে, পুজো দিয়ে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে টিকিট কাউন্টারে পৌঁছে দেখি অনেক ভিড়। টিকিট কেটে যতক্ষণে ট্রেন ধরতে প্লাটফর্মে পৌঁছালাম, চোখের সামনে দিয়ে ট্রেনটি বেরিয়ে গেলো। আর দৌড়ে ট্রেন ধরার পক্ষপাতী আমি একদমই নই। তাই প্রায় ঘন্টাখানেক বসে রইলাম প্লাটফর্মে, পরে ট্রেনের অপেক্ষায়। ওখানে একটা ঘন্টা পিছিয়ে গেলাম। যাইহোক ওদেরকে জানিয়ে দিলাম আমার যেতে একটু লেট হচ্ছে কারণ ট্রেন মিস করেছি।

IMG_20241202_132601.jpg
"পিয়ালীর জন্মদিনের কেক"

পরের ট্রেন ধরে মসলন্দপুর নেবে, সেখান থেকে পৌছালাম কেকের দোকানে। আমরা তিনজন মিলে একটা কেক নিয়ে পিয়ালীর জন্মদিন পালন করবো এমনটাই প্ল্যান হয়েছিলো। যেহেতু আমি স্টেশন থেকে যাবো, তাই কেকটা নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল আমার উপরে।

IMG_20241202_120445.jpg
"টোটোতে যাওয়ার সময় টোটোতে বসে তোলা ছবি"

সেই মতে ভিডিও কলের মাধ্যমে সকলের মতামত অনুযায়ী একটা কেক কিনে, টোটো ধরে পৌঁছে গেলাম সঙ্গীতাদের বাড়ি। ওখানেই ছিল আজকের আয়োজন। আমি যেখানে ডাক্তার দেখাই এবং যে ব্যাংকে আমার কাজ ছিলো, দুটোই ওর বাড়ির একদম পাশে।

IMG_20241202_192145.jpg
"আজকের দেওয়া ওষুধ"

তাই ওর বাড়িতে ব্যাগ রেখে, আমি সবার প্রথমে ব্যাংকের কাজটা সেরে নিলাম। তারপর এসে ডাক্তারের কাছে লাইনে দাড়ালাম। ততক্ষণে ভিড়ও অনেকটা কমে গেছে। কারণ অনেকটাই ভিড় কমে গিয়েছিলো। ২০-২৫ মিনিট বাদে আমি ডাক্তার দেখিয়ে সেখান থেকে ওষুধ নিয়েছি। সাত দিনের ওষুধ দিয়েছেন, সেই ওষুধ শেষ হলে ৭ দিন পর আবার গিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা বলেছেন।

IMG_20241202_132552.jpg
"কেক ও সঙ্গীতার গাছের গোলাপ"
IMG_20241202_132838.jpg
"আয়োজন সম্পূর্ণ করার পর"
IMG_20241202_133021.jpg
"বার্ড থে গার্ল ছবি তুলতে ব্যস্ত""
IMG_20241202_133109.jpg
"কেক কাটার মুহুর্ত"

IMG_20241202_133327.jpg
"আমরা চারজন একত্রে"

তারপর পৌঁছে গেলাম সঙ্গীতাদের বাড়ি। ততক্ষণে রাখি এবং পিয়ালীও চলে এসেছিলো। আমি যাওয়ার পর সকলে মিলে পিয়ালির জন্মদিনের কাটার জন্য আয়োজন করলাম। বেশ কিছু ছবিও তুলেছি। জন্মদিনের ট্রিটটা যদিও বাকি রয়েছে। তবে আজকের জন্য ও আমাদেরকে ফুচকা পার্টি দিয়েছিলো।

আসলে সঙ্গীতাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আমাদের গার্লস স্কুল। এখানের ফুচকা খেতে আমরা সকলে পছন্দ করি। পছন্দের থেকেও বড় কথা, সেখানকার ফুচকার সাথে আমাদের স্কুল জীবনের বহু স্মৃতি জড়িত। আর সেই কাকুটাই এখনো পর্যন্ত স্কুলের সামনে ফুচকা বিক্রি করেন। তাই সুযোগ হলে সেখানকার ফুচকা খেয়ে, স্মৃতির রোমন্থন করতে আমরা সকলেই পছন্দ করি।

IMG_20241202_135402.jpg
"ফুচকা পার্টি- পিয়ালীর তরফ থেকে"

এই কারণে পিয়ালের কাছ থেকে আজকের ট্রিট হিসেবে আমরা সকলে ফুচকা খেয়েছি। প্ল্যান করেছিলাম সকলে মিলে সেখানে গিয়ে ফুচকা খাবো, কিন্তু রান্নাবান্না শেষ করার পর সঙ্গীতার আর বেরোতে ইচ্ছা করছিল না। আর আমিও এতো জায়গা ঘুরে গিয়ে সবেমাত্র বসেছিলাম। তাই আমারও খুব একটা ইচ্ছে করছিল না। এই কারণে রাখি ও পিয়ালী গিয়ে ফুচকা নিয়ে এলো। যেটা আমরা সঙ্গীতদের বাড়িতে বসে সকলে মিলে খেয়েছি।

এরপরে ছিলো দুপুরের লাঞ্চ ও ছাদে বসে অনেকখানি সময় কাটানো। সেখানে আমরা কি কি করেছি সেটা এই পোস্টে লিখলে অনেকখানি বড় হয়ে যাবে, তাই বাদ বাকি অংশটা পরবর্তী পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। সবশেষে বলতে পারি, অনেকদিন বাদে জমজমাট আড্ডায় মনটা অনেকখানি ভালো হয়েছে।

বলতে পারেন আবার কিছুদিন একাকীত্ব কাটানোর রসদ যোগাড় করে এনেছি আজ। এমন কিছু মুহূর্ত উপভোগ করার মত সুযোগ সকলের জীবনেই আসুক। নিজের বন্ধু বান্ধবীদের সাথে ভালো সময় উপভোগ করুন, এ প্রার্থনা করে আজকের পর্ব এখানে শেষ করছি। বাদ বাকি গল্প আগামী পর্বে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। ভালো থাকবেন সকলে।

Sort:  
Loading...

TEAM 6
Congratulations!

Your post has been supported by THE QUEST TEAM. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags


banner post.JPG

Curated by : @sduttaskitchen

 16 days ago 

Thank you @sduttaskitchen ma'am. 🙏

 13 days ago 

সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। হয়তোবা এখন সংসারের বিভিন্ন দায়িত্বের মধ্যে থেকে বাহিরে বের হতে আর ভালো লাগেনা। তবে বাহিরে গিয়ে কিছুটা সুন্দর সময় কাটালে প্রত্যেকটি মানুষের মন অনেক ভালো থাকে। ঘরের মধ্যে বন্দী জীবন একঘেয়েমি লাগে অবশ্যই বাহিরে গিয়ে একটু ঘোরাফেরা করে আসবেন মনটা অনেক ভালো থাকবে। যাই হোক আপনার বান্ধবীর জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল এবং সেখানে গিয়ে আপনারা অনেক আনন্দ উপভোগ করেছেন দেখে ভালো লাগলো তার কিছু মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 12 days ago 

দায়িত্ব শব্দটি শুনতে ছোট হলেও এর ভার অনেক বেশি। তবে এই কথাটা বুঝতে অনেকগুলো বয়স পার করতে হবে। ছোটবেলায় মনে হতো জীবন বড্ড বেশি সহজ, কোনো রকম জটিলতা নেই, এইভাবেই বুঝি বা আজীবন কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব। তবে এখন বুঝি জীবনের থেকে কঠিন অংক আর কিছুই নেই। সত্যি বলতে এমন সময় কাটাতে ভালো লাগে ঠিকই, তবে ইচ্ছে করলে সেটা সম্ভব হয় না, এখানেই সমস্যা। মন খারাপের সময় গুলোতে যখন তখন বেরিয়ে, বান্ধবীদের সাথে সময় কাটানো একটা মেয়ের জন্য সম্ভব হয় না। অনেক কিছু ভাবনা চিন্তা করে, অনেক দায়িত্ব পালন করে তবে নিজের জন্য সময় বের করতে হয়। যাইহোক আমার ভালো লেগেছে এই মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে এবং আপনার যে সেই মুহূর্তগুলো দেখে ভালো লেগেছে, সেটা জেনে খুশি হলাম। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.25
JST 0.037
BTC 97089.33
ETH 3426.60
USDT 1.00
SBD 2.95