আমাদের ছোট্ট মিরা এখন ভালো আছে

in Incredible India6 hours ago

আসসালামুয়ালাইকুম

কেমন আছেন সবাই? আমি আজ আপনাদের সঙ্গে আমার মেয়ে মিরার অসুস্থতার একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই, যা গত কয়েকদিনে আমাদের পরিবারের জন্য অনেক বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আলহামদুলিল্লাহ, এখন মীরা সুস্থ। তবে এই কয়েকটি দিন ছিল অনেক কঠিন, যেগুলো আমাদের জন্য শিক্ষা, ধৈর্য এবং ভালোবাসার গভীর উপলব্ধি নিয়ে এসেছে।

IMG_20241219_165408.jpg

মিরা আমাদের পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য। মাত্র দুই বছর বয়স, তবু সে যেন পুরো বাসাটার প্রাণ। তার হাসি, তার দুষ্টুমি, আর তার ছোট ছোট কান্ডকারখানায় আমাদের দিনগুলো রঙিন হয়ে ওঠে। কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎ করেই আমাদের এই আনন্দময় পরিবেশ বিষণ্ণ হয়ে গেল।সেদিন সকালে মিরা একদম স্বাভাবিক ছিল। খেলছিল, মজা করছিল, আর সব সময়ের মতো আমাদের সবার মন ভরিয়ে দিচ্ছিল। রাতে ঘুমানোর আগে দেখলাম ওর মাথাটা বেশ গরম কিন্তু হাত-পা শরীর ঠান্ডা।আমার একবার মনে হচ্ছিল যে জ্বর আসতে চলেছে আরেকবার মনে ছিল যে এমনিতেই মাথা গরম অনেকেই বলে বাচ্চাদের নাকি মাথা গরম থাকে।

জ্বর আছে কি নাই এই নিয়ে মনের ভিতর এক রকম যুদ্ধ চলছিল তাই আমি আমার হাজব্যান্ড কে বললাম তুমি একটু দেখো মিরার এর জ্বর এসেছে কিনা।যেহেতু বাসায় থার্মোমিটার ছিলোনা ভেঙ্গে ফেলছে মেয়ে কিছুদিন আগে তাই আমাদের জ্বর মাপা টা একটু কঠিন হয়ে পড়েছিল। বেশ কিছুক্ষণ পর আবারও মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেখি যে মাথা এতটা গরম হয়ে গেছে আমি তো রীতিমত ভয় পেয়ে গেছি। সেই সাথে হাত-পা সারা শরীর সব জ্বরে পুড়ে যাচ্ছিল।

IMG_20241219_165959.jpg

আমি কিন্তু ওষুধও খাওয়াইছিলাম সন্ধ্যার সময় একটু মাথা গরম দেখে কিন্তু কোন কাজ হলো না সেই জ্বর এসেই পড়েছে।সারাটা রাত মিরার এত করুন অবস্থা দেখে আমি আমার হাজব্যান্ড খুব ভয় পেয়ে গেছি এবং আমাদেরও এত কষ্ট হচ্ছিল বলে বোঝানোর মত না।আমার ছোট্ট মেয়েটা শুধু আম্মু আম্মু করছিল।আর শুধু মাম মাম খেতে চাইছিল আমার সোনা পানিকে মাম মাম বলতো।আমি তাড়াতাড়ি করে আমার মেয়েকে তার বাবার কাছে দিলাম। তার বাবার কাছে দিলাম কারণ পানি গরম করে নিয়ে আসতে হবে মিরাকে তো আর ঠান্ডা পানি খাওয়ানো যাবে না। এই শীতকালে ঠান্ডা পানি খেলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে, তাড়াতাড়ি করে আমি পানি গরম করে নিয়ে এসে মিরাকে খাওয়ালাম।

একটি ফ্লাক্সে ভরে নিজের কাছেই রাখলাম।সারাটা রাত গেল আমার মেয়েটা দুচোখের পাতা এক করেনি। এমনকি বিছানায় থাকতে চাইনি শুধু ঘুরে নিয়ে বেড়াতে বলছে এত রাতে আমি কোথায় যাবো।বাইরে এত পরিমান ঠান্ডা বলে বোঝানোর মত না আমরা দুইজন মিলেই আমি একবার মিরের বাবা একবার দুজন মিলে এই মেয়েকে নিয়ে একটু একটু করে ঘুরে বেড়ে কোন রকম এ সময়টা কাটিয়ে দিচ্ছিলাম। সকালের দিকে শরীর থেকে তীব্র জ্বর নামলো মিরা একটু ঘুমাইলো। এত পরিমাণ জ্বর হওয়ার পরও আমি মিরাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাইনি।এর পিছনে একটা কারণ আছে চলুন আপনাদের সাথে কারণটা শেয়ার করি। আমি জানি আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং আমরা যে গ্রামে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ফিরে আসার ফলে এই অসুস্থতা হওয়ার কারণ।

IMG_20241219_165430.jpg

ডাক্তারের কাছে জ্বরের কথা বললেই ডাক্তার প্রথমেই বলবে যে ডেঙ্গু টেস্ট করে আসো। আমি চাইনি আমার এত ছোট্ট মেয়েটাকে ডেঙ্গু টেস্টের জন্য রক্ত পরীক্ষা করুক।কারণ এই ছোট্ট বাচ্চার থেকে রক্ত নেওয়াটা আসলে অনেক মুশকিল। এ কারণে আমার বাচ্চাটা অনেক কষ্ট পাবে এটা আমি চাইনি। আমার মন বলছিল যে আমার মেয়ের ডেঙ্গু জ্বর হয়নি সাধারণ জ্বর হয়েছে তাই আমি
সেদিন রাতেই ডাক্তারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করি। তিনি কিছু ওষুধের পরামর্শ দিলেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেই ওষুধ শুরু করলাম। কিন্তু মীরার অসুস্থতা আমাদের জন্য কেবল শারীরিক পরিশ্রম নয়, মানসিক দুশ্চিন্তারও কারণ হয়ে দাঁড়াল।

সেদিন রাতে আমরা কেউই ঘুমাতে পারিনি। মিরা খুব অস্বস্তি অনুভব করছিল, বারবার কান্না করছিল। তাকে শান্ত রাখার জন্য আমি একবার কোলে নিচ্ছি, একবার শুইয়ে দিচ্ছি। তার বাবা পাশে বসে কখনো তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, কখনো কুসুম পানির কাপড় দিয়ে তার শরীর মুছছে।এভাবেই মিরার অসুস্থতা নিয়ে প্রথম রাত কাটল। কিন্তু পরের দুই রাতেও অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। দিনেও মিরা ক্লান্ত হয়ে থাকত, আর রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করলেও বারবার জেগে উঠত। আমাদের ঘুম বলতে কিছু ছিল না। আমি একদিকে মিরার খাওয়াদাওয়ার দিকে খেয়াল রাখছিলাম, অন্যদিকে তার বাবা সবসময় তাপমাত্রা পরীক্ষা করছিলেন।

IMG_20241219_165420.jpg

মিরার খাবার খেতে চাইত না, আর তার মতো চঞ্চল একটি শিশুকে এতটা শান্ত ও ক্লান্ত অবস্থায় দেখতে আমাদের জন্য ছিল ভীষণ কষ্টকর। তার সেই মিষ্টি হাসি যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল। আমি আর তার বাবা দুজনেই চেষ্টা করছিলাম তাকে যতটা সম্ভব আরামদায়ক পরিবেশ দিতে। এই সময়টাতে আমি উপলব্ধি করেছি, সন্তানকে সুস্থ করতে মা-বাবার ভালোবাসা আর ত্যাগের কোনো বিকল্প নেই। মা হিসেবে আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল শক্ত থাকা এবং তাকে সাহস যোগানো। মিরার প্রতি মুহূর্তের পরিবর্তন আমরা খেয়াল করছিলাম এবং আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করছিলাম।

আলহামদুলিল্লাহ, তৃতীয় দিন শেষে আমরা দেখতে পাই মিরার তাপমাত্রা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। তার কান্না কমে আসে, আর সে আবার একটু একটু করে হাসতে শুরু করে। তখন আমাদের মনে হলো, আল্লাহ আমাদের দোয়া শুনেছেন। মিরার সেই চঞ্চলতা ফিরে আসতে দেখে আমরা সবাই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি।
যাই হোক অবশেষে মিরার এই সুস্থতার পেছনে আল্লাহর রহমতের পাশাপাশি আমাদের পারিবারিক ঐক্য আর ভালোবাসা কাজ করেছে। আমি আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ, তিনি আমাদের সন্তানকে সুস্থ করেছেন। সেই সঙ্গে যারা আমাদের পাশে থেকেছেন, তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ।

এই সময়টা আমাকে শিখিয়েছে, জীবন কখনো কখনো পরীক্ষা নেয়। তবে ভালোবাসা, ধৈর্য, আর আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে সব পরীক্ষাই জয় করা সম্ভব।
আজ মিরা সুস্থ। সে আবার তার চঞ্চলতা দিয়ে আমাদের দিনগুলো রাঙিয়ে তুলছে। তার সেই মিষ্টি হাসি দেখে মনে হচ্ছে, এই কয়েকদিনের সব দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই, তিনি আমাদের এই কঠিন সময় থেকে মুক্তি দিয়েছেন।আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য্য ধরার শক্তি দেন।সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহাফেজ

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 6 hours ago 

Thank you❤️

Loading...
 4 hours ago 

মিরাকে এইভাবে হাসিখুশি দেখে অনেক ভালো লাগলো। সত্য আমিও চেয়েছিলাম মিরাকে নিয়ে আপনি আরেকটি পোস্ট করুন। দোয়া করি মিরা যেনো খুব দ্রুতভাবে সুস্থ হয়। আপনার পোস্টটি পড়ে মিরা সম্পর্কে আরো অনেক কিছু জানতে পারলাম। এত সুন্দর একটি পোষ্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

 4 hours ago 

সত্যি আপনার কমেন্টটি পড়ে মন ভরে গেল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মিরাকে নিয়ে এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.26
JST 0.040
BTC 101158.43
ETH 3649.74
USDT 1.00
SBD 3.20