গ্রাম থেকে শহরে ফেরা: এক অন্যরকম যাত্রা

in Incredible India5 days ago

আসসালামু আলাইকুম

  • কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জন্য নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে। কখনো শহরের ব্যস্ততা আমাদের ক্লান্ত করে তোলে, আবার কখনো গ্রামের শান্ত পরিবেশ মনকে সজীব করে দেয়। গ্রামে ছুটি কাটানোর দিনগুলো আমাদের জীবনের এক অনন্য অধ্যায়, যা হৃদয়ে বিশেষ জায়গা করে নেয়।

IMG_20241213_160600.jpg

আমি, আমার হাজব্যান্ড আর আমাদের ছোট্ট মেয়েটি মিলে সম্প্রতি কিছুদিন গ্রামে কাটিয়ে এলাম। সেসব দিন এতটাই সুন্দর ছিল যে, ফিরে আসার সময় মন যেন ভারী হয়ে গিয়েছিল। গ্রাম থেকে শহরে ফেরার এই যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল এক অন্যরকম অনুভূতির মিশেল। সেই স্মৃতিময় দিনগুলোকে মনে রেখে আজকের এই গল্প।

" গ্রাম থেকে শহরে ফেরা"

ছুটির দিনগুলো গ্রামে কাটানোর মজাই আলাদা। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, খোলা মাঠ, পুকুরের ঠান্ডা পানি, আর চেনা মানুষের আন্তরিকতা যেন আমাদের শহরের সব ব্যস্ততা ভুলিয়ে দিয়েছিল। আমি, আমার হাজব্যান্ড আর আমাদের ছোট্ট মেয়েটি মিলে গ্রামে গিয়েছিলাম এক সপ্তাহের ছুটি কাটাতে। আমাদের গ্রামটা খুবই সুন্দর, সবুজে ঘেরা, যেখানে প্রকৃতির প্রতিটি স্পর্শ অনুভব করা যায়। কিন্তু ছুটি শেষ, তাই শহরের জীবনে ফিরে আসতেই হবে।

"গ্রামের দিনগুলো"

IMG_20241213_160724.jpg

গ্রামে কাটানো প্রতিটি দিনই ছিল আনন্দময়। ভোরবেলা উঠেই পাখির ডাক শোনা, মেয়েটিকে নিয়ে পুকুরপাড়ে হাঁটা, ধান সিদ্ধ করা, ধান শুকানো শাশুড়ির সঙ্গে পিঠা বানানো,চারপাশে সরিষার ক্ষেত, নানা রকম ফুলে ভরা গ্রাম আর সন্ধ্যায় সবাই মিলে আড্ডা এসবই ছিল গ্রামে থাকার সৌন্দর্য। আমার ছোট্ট মেয়েটি পুকুরে হাঁস দেখতে গিয়ে কতবার যে উচ্ছ্বাসে চিৎকার করেছে, তার কোনো হিসাব নেই। ওর ছোট্ট পায়ে গ্রাম ঘুরে বেড়ানো দেখে মনে হয়েছিল, যেন প্রকৃতির মাঝেই ওর আসল জায়গা।

আমার হাজব্যান্ড বেশ কয়েকদিন ছুটি নিয়েছিল অফিস থেকে। তার জন্য গ্রামের নিরিবিলি পরিবেশ যেন এক বিশাল আশীর্বাদ। সারাদিন কাজের চাপ আর শহরের ধুলোবালি থেকে মুক্তি পেয়ে সে যেন প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছিল। সে সকালে বাবার সঙ্গে জমিতে গিয়েছে, আর বিকেলে গ্রামবাসীর সঙ্গে আড্ডা দিয়েছে। আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই তাকে নিয়ে খুব খুশি।

"ফেরার প্রস্তুতি "

IMG_20241213_161119.jpg

কিন্তু প্রতিটি সুন্দর সময়েরই শেষ হয়। শহরে আমাদের দায়িত্ব আর কাজের টানাপোড়েনে আবারও ফিরে যেতে হবে। ফেরার আগের দিন থেকেই যেন এক অদ্ভুত মনখারাপ আমাদের ঘিরে ধরল। আমি ভাবছিলাম, আবার সেই ব্যস্ততা, যানজট আর নির্ঘুম রাত। মেয়েটি ছোট, ও কি এই মুক্ত পরিবেশ থেকে বিদায় নিতে পারবে?

আমার শাশুড়ি ও আমার মা আমাদের জন্য অনেক কিছু গুছিয়ে দিলেন। নতুন চাল, গ্রাম থেকে বানানো আচার, আর শাক সবজি, দুধ আরো অনেক কিছু । আমি বললাম, এত কিছু নিয়ে গেলে আমরা তো বাসায় গিয়ে পুরো বাজার খুলতে বসব!শাশুড়ি ও আমার মা হাসিমুখে বললেন, তোমরা শহরে থাকো, গ্রামের এই স্বাদটা যেন ভুলে না যাও।

"যাত্রার দিন "

IMG_20241213_155454.jpg

সকালবেলা সবাই বিদায় দিতে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছে। আমার মেয়েটি কিছু বুঝতে না পেরে কখনো আমার কোলে আসছে, কখনো শাশুড়ির কোলে। ও বুঝতে পারছিল, কিছু একটা বদল আসতে চলেছে। শ্বশুর মেয়েটিকে মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন। আমি তখন নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারছিলাম না।

আমাদের ব্যাগ, স্যুটকেস আর আমার মা ও শাশুড়ির দেওয়া বিভিন্ন জিনিস গাড়িতে তুলতে তুলতে মেয়েটি হঠাৎ বলল, আমরা কথায় যাচ্ছি সবাই হেসে উঠলাম, কিন্তু হাসির মধ্যে একটা চাপা বিষণ্ণতাও ছিল।
গাড়ি ছাড়ার পর গ্রামের মাটির রাস্তা ধরে এগোতে থাকলাম। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম, সেই চেনা খেতখামার,খড়ের গাদা পুকুর, আর গ্রামের মানুষগুলো। মনে হচ্ছিল, এই পরিবেশ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।

IMG_20241213_160551.jpg

কিন্তু শহরের জীবনের তাগিদ তো এড়ানো যায় না। আমার হাজব্যান্ড বলল, এই জায়গাটা ছেড়ে যেতে যতই কষ্ট হোক, ফিরে আসার আনন্দও তো আছে। আবার ছুটিতে আসব।আমাদের সাথে আমার মা রওনা হইলো,কারন আমাদের বাস এ তুলে দিয়ে বাড়িতে চলে যাবে। আমরা যখন বাসে উঠলাম ততক্ষণ মা আমার এক নজরে তাকিয়েই ছিল। সেই মুহূর্তে এত খারাপ লাগছিল আসলে বলে বোঝানোর মতো না। মনে হচ্ছিল যে মায়ের কাছে থেকে যাই।

"শহরের পথে "

IMG_20241213_160621.jpg

গ্রামের মেঠোপথ পেরিয়ে যখন পাকা রাস্তা শুরু হলো, তখনই মনে হলো, শহরের ব্যস্ত জীবনের ছোঁয়া লেগে গেছে। রাস্তার পাশে চা-স্টল, ছোট ছোট দোকান, আর মোটরবাইকের শব্দ যেন গ্রামকে পেছনে ফেলে আসার সংকেত দিল। আমাদের মেয়েটি তখনও জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ সে বলল, আম্মু গাছগুলো কোথায় গেল? আমি হেসে বললাম, শহরে গাছ কম, তুমি গেলে আবার গ্রামের গাছগুলো দেখতে পাবে।
গাড়ি যখন হাইওয়ে ধরল, তখন শহরের যানজটের আভাস পেতে শুরু করলাম। রাস্তার ধুলো, গাড়ির হর্ন সবই যেন গ্রাম থেকে একেবারেই ভিন্ন।

"শহরে ফেরা "

IMG_20241213_161053.jpg

অবশেষে আমরা বাসায় পৌঁছালাম। ছুটির সময় শহরের বাড়িটা একদম ফাঁকা হয়ে ছিল। দরজা খুলতেই ভেতরের শান্ত পরিবেশটা যেন আমাদের স্বাগত জানাল। তবে সেই শান্তির মধ্যেও একটা শূন্যতা ছিল। মনে হচ্ছিল, গ্রামের প্রাণবন্ত পরিবেশটা এখানে এনে ফেলতে পারলে ভালো হতো।
আমার হাজব্যান্ড বলল, তুমি একটু মেয়েটার জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও, আমি চা বানাই।সে জানত, আমি মনের মধ্যে এখনো গ্রামের দিনগুলো নিয়ে ভাবছি।

চা বানাতে বানাতে সে বলল, শহরে কাজের চাপ থাকলেও এই বাড়িটাই আমাদের ঠিকানা। এখানে থেকেও আমরা গ্রামকে বাঁচিয়ে রাখব। মেয়েকে গ্রামের গল্প শোনাব। ও বড় হয়ে গ্রামকেও ভালোবাসবে।
মেয়েটি তখন খেলনা নিয়ে খেলছিল। তার খেলার মধ্যেও যেন গ্রামে দেখা গাছপালা আর পুকুরের গল্প ফুটে উঠছিল।

"শেষ কথা "

IMG_20241213_161332.jpg

গ্রাম থেকে শহরে ফেরা এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। গ্রামের শান্তি আর প্রকৃতির ছোঁয়া ছেড়ে শহরের যান্ত্রিক জীবনে ফিরে আসতে কষ্ট হলেও, শহরের কাজ আর দায়িত্বগুলোও আমাদের জীবনের অংশ। তবে গ্রামে কাটানো দিনগুলো স্মৃতিতে রেখে, আবারও ব্যস্ত জীবনের চাকা ঘুরিয়ে দিতে হলো।

আমি জানি, কিছুদিন পর আবার ছুটি আসবে। আবার আমরা ফিরে যাব গ্রামে, সেই চেনা পরিবেশে, যেখানে প্রকৃতির সান্নিধ্য আর আত্মীয়তার উষ্ণতা আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়গুলো গড়ে তোলে।

  • কেমন লাগলো আমার লেখা গল্পটা অবশ্যই জানাবেন আজ এই পর্যন্তই সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.27
JST 0.041
BTC 104060.88
ETH 3871.70
SBD 3.28