ধান শুকানোর গল্প
আসসালামু আলাইকুম
- কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি গত পোস্টে আমি ধান সিদ্ধ করার অনুভূতি বা কিভাবে করে এই ধান সিদ্ধ সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি আজকে আমি এই ধান সিদ্ধ করার পরে যে কাজ ধান শুকানো এইটা আপনাদের সাথে আজকে শেয়ার করব।চলুন তাহলে আর দেরি না করে শুরু করি আজকে গল্প।
ধান সিদ্ধ করার কাজ শেষ হতেই শুরু হলো নতুন আরেকটি পর্ব ধান শুকানো। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই কাজটিকে সহজ বলার কোনো উপায় নেই। বরং এর প্রতিটি ধাপে রয়েছে শ্রম, যত্ন আর ধৈর্যের পরীক্ষা। আমি আর আমার শাশুড়ি প্রতিদিন সকালে নেটের উপর ধান বিছিয়ে রোদের জন্য জমিতে নিয়ে যাই। কিন্তু আমার এই কাজকে আরো রঙিন করে তোলে আমার দুই বছরের ছোট্ট মেয়ে মিরা। গত পোস্টে আমি আপনাদের জানাইছি যে আমি ধান সিদ্ধ করেছি সেই দান আজকে আমি রোদে শুকাতে দিয়েছি।
আজ ভোর থেকেই বেশ ঠাণ্ডা ছিল। মিষ্টি রোদ উঠতেই শাশুড়ি আমাকে ডাকলেন, চল মা, ধান নিয়ে চলি।প্রথমে আমি জমির ভিতরে নেট বিছিয়ে দিয়ে আসলাম। আমিও আমার মেয়ে সকালের নাস্তা আগেই শেষ করেছি । তাই আমি আমার শাশুড়িকে বললাম যে আপনি তাহলে তাড়াতাড়ি সকালে নাস্তাটা শেষ করেন।
বাড়ির উঠানে রাখা ধানের বস্তা তুলে নিলাম কাঁধে। আমার শাশুড়ি তাঁর মাথায় তুললেন আরেকটা বস্তা। আর পেছনে পেছনে আমার ছোট্ট মেয়েটা খুদে পায়ে হাঁটতে হাঁটতে, মাঝে মাঝে কাঁধে থাকা ওড়না দিয়ে ধানের বস্তা স্পর্শ করার চেষ্টা করে। যেন সেও আমাদের মতো কাজ করছে!
জমিতে পৌঁছে নেটে ধান ছড়িয়ে দিলাম। রোদটা বেশ ঝলমলে, দেখে মনে হলো ধান তাড়াতাড়ি শুকাবে। আমি আর শাশুড়ি নেটের কোণগুলো ঠিকঠাক করে বসিয়ে দিলাম। এমন সময় দেখি, মেয়েটা ধানের মধ্যে বসে পড়েছে। ধানের মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর হাসছে। আমি তাকে ডেকে বললাম, আম্মু এসো এদিকে, ধান নষ্ট হবে। শরীর চুলকাবে তোমার এদিকে আসো আম্মু। কিন্তু কে শোনে কার কথা! একবার ধানের মুঠো নিয়ে মাথায় ঢেলে, আবার দুই হাতে লাফিয়ে ধান ছিটিয়ে দিচ্ছে।
আমি তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করি, আর শাশুড়ি হাসতে হাসতে বলেন, ও ধান ছিটিয়ে দিক, এতে কিছু হবে না। মেয়েটা যে এত আনন্দে আছে!আমিও শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে মেয়ের দুষ্টুমিগুলো উপভোগ করতে থাকি। ধান শুকানোর এই দৃশ্য যেন গ্রামবাংলার জীবনেরই এক ছোট্ট প্রতিচ্ছবি।বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের তেজও বেড়ে গেল। ধান নাড়াচাড়া করতে করতে দেখি, বেশ দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি আর শাশুড়ি মিলে ধানের মধ্যে হালকা করে কিছুক্ষণ পরপর পা চালিয়ে দিলাম যেন সব দিক সমানভাবে রোদ পায়। আর পাশেই আমার মেয়ে তখন ধানের এক কোণে বসে মাটিতে আঁকিবুঁকি করছে।
শেষ বিকেলে ধান গুছিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় হলো। প্রতিদিনের মতো আজও বস্তায় ভরার পালা। বস্তা ভরতে গিয়ে দেখি, আমার মেয়ে ছোট্ট একটা পাত্র হাতে নিয়ে ধান তুলে তুলে আমাদের মতো করেই বস্তায় ঢালছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, তুমি কি করছো আম্মু? সে গম্ভীর মুখে উত্তর দিলো, আম্মু, আমিও কাজ করছি! তার এই কাণ্ডে আমি আর শাশুড়ি হেসে ফেললাম।ধানের বস্তাগুলো কাঁধে তুলে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করলাম। মেয়েটা আমাদের পাশে পাশে দৌড়ে যাচ্ছে। কখনো হাত ধরে টানছে, কখনো বলছে, আমি সাহায্য করবো। মনে হলো, এই কাজের মাঝেই যেন সে নিজের এক টুকরো আনন্দ খুঁজে পেয়েছে।
তিন-চার দিনের এই ধান শুকানোর কাজ যেমন শ্রমসাধ্য, তেমনই আনন্দময়। রোদ, মাটির ঘ্রাণ আর আমার মেয়ের দুষ্টুমিতে প্রতিদিন নতুন কিছু যোগ হয়। ধান শুকানোর সময় যত ভালো রোদ পাওয়া যায়, ধান তত তাড়াতাড়ি শুকায় আর মানও ভালো হয়। আর সেই ধান যখন উঠানে মাড়াই করা হবে, তখন হয়তো আমার মেয়ের আবার নতুন দুষ্টুমির গল্প তৈরি হবে।
এভাবেই দিন শেষ হয়, কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তের মধ্যে থেকে যায় ভালোবাসা, পরিশ্রম আর এক টুকরো সুখ। এই ধান শুধু খাদ্য নয়, এর সঙ্গে মিশে থাকে আমাদের পরিবারের প্রতিদিনের গল্প।
- যাইহোক,আজ এই পর্যন্তই আপনাদের কেমন লেগেছে আমার ধান শুকানোর গল্পটা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন ধন্যবাদ সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.