ফুলের ভালোবাসা
- আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে এত সুন্দর একটি আমার জীবনের মুহূর্ত শেয়ার করব আমার মনে হয় প্রত্যেকটা মেয়েরই এরকম কাটানো মুহূর্ত নিজের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তো চলুন দেরি না করে আজকে এত সুন্দর একটি মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
আজকে আমার দিনটা একটু আলাদা ছিল । সকালটা বেশ ঠান্ডা , আজকাল মনে হচ্ছে ভালোই ঠান্ডা পড়েছে। আমার প্রতিদিনের মতোই কাজ শুরু হলো। রান্নাঘরে গিয়ে সকালের নাশতার ব্যবস্থা করতে করতেই মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে পড়ল। তার ছোট ছোট পায়ে খুটখুট শব্দ শুনেই বুঝলাম, সে এসে হাজির। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, আম্মু আমাকে কোলে নাও। দিও আমার মেয়ের কথা অন্য কেউ খুব সহজে বুঝতে পারবে না কিন্তু আমি এক নিমিষে ওর কথা বুঝতে পারি। আমি সোনা পাখি কে কোলে তুলে নিয়ে বললাম, তুমি কি জানো, আজকের দিনটা একটু স্পেশাল?
আমার মেয়ে শুধু ছোট্ট মাথাটা নাড়ল। তার মিষ্টি হাসি দেখে মন ভরে গেল। ঠিক এই মুহূর্তে আমার হাজবেন্ড ঘুম থেকে উঠে এলেন। প্রতিদিনের মতো তিনিও নাশতার টেবিলে বসে কাজের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমি তাকে বললাম, এই আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে আসতে পারবা,আমার হাজব্যান্ড আমাকে বলল ঠিক আছে? আচ্ছা দেখি, চেষ্টা করব।এই বলে আমার হাজব্যান্ড অফিসে চলে গেল। এদিকে আমার সব কাজ সেরে সকল ব্যস্ততা সেরে মেয়েকে সময় দিতে লাগলাম।
সকালের ব্যস্ততা শেষে আমার মেয়েটা আর আমি মিলে ছাদে গেলাম। আমাদের ছোট্ট বাগানটা এখন বেশ গোছানো হয়েছে। গোলাপ, জুঁই, গাঁদা অনেক রকম ফুল ফুটেছে। মেয়েটা গাছের দিকে আঙুল দিয়ে বলে, আম্মু এই ফুল আমার! আমি হেসে বলি, তুমি বড় হলে আরও সুন্দর বাগান করবে, তাই না?এই কথা শোনার পর থেকে আমার মেয়ে হেসে হেসে গলে কখন পড়ে এমন অবস্থা।ছাদ থেকে মা মেয়ে দুজনেই আমরা বাসায় চলে আসলাম। আমি মেয়েটাকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুম পাড়ালাম। কিন্তু দুপুরটা যেন একটু অদ্ভুত লাগছিল। মন কেমন যেন করছে, কারণ আমি জানি না, কেন আজকের দিনটাকে স্পেশাল মনে হচ্ছে আমার।
বিকেলে যখন মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিল, তখন আমি নিজের জন্য একটু সময় বের করলাম। নিজের চুল আঁচড়ালাম, খুব একটা এরকম আমি সময় বের করি না কিন্তু আজ কেন জানি আমাকে অন্যরকম লাগছে তাই ভাবলাম একটু সুন্দর করে শাড়ি পরি। যেই ভাবা সেই কাজ সুন্দর একট শাড়ি পরলাম। যেন নিজের সঙ্গে একটু ভালো লাগার মুহূর্ত কাটাই। রান্নাঘরে গিয়ে রাতের খাবারের প্রস্তুতি শুরু করলাম।
ঠিক তখনই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। সবচেয়ে বিরক্তিকর মনে হয় আমার কাছে এই কলিং বেল বেজে ওঠাটা। কিন্তু আজ আমি একটুও বিরক্ত হইলাম না তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুললাম। দরজা খুলতেই দেখি, তিনি হাতে একটা বড় তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। এতগুলো ফুল একসঙ্গে দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। লাল, সাদা, গোলাপিরঙের বাহার দেখে আমি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে রইলাম।
তিনি মুচকি হেসে বললেন, এই তোড়াটা তোমার জন্য। আজ তোমাকে একটু আলাদা মনে হলো। তাই ভাবলাম, তোমার পছন্দের ফুল দিয়ে তোমাকে খুশি করি।আমি তো একেবারে অবাক। এত বছর একসঙ্গে থেকেও তিনি এখনও আমাকে চমকে দিতে পারেন, এটাই যেন মনের গভীরে এক অন্যরকম ভালোবাসার অনুভূতি এনে দিল। মেয়েটা তখনো ঘুমিয়ে ছিল। আমি ফুলের তোড়াটা টেবিলে রাখলাম আর হাসি মুখে বললাম, এত সুন্দর ফুল! কিন্তু এত কষ্ট করে আনলে কেন?
আমার হাজব্যান্ড আমাকে বললেন, তোমার হাসি দেখার জন্য। সংসারের কাজ আর আমাদের নিয়ে তুমি এত ব্যস্ত থাকো, তোমার নিজের জন্য সময়ই থাকে না। এটা তোমার জন্য একটু ভালোবাসার স্মৃতি। এই কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখে অশ্রু চলে আসলো। আসলে এই চোখের অশ্রু কোন কষ্টের জন্য না বরং আনন্দের। আমি তো কথাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ফুলগুলোকে ছুঁয়ে দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এই তো, জীবনের ছোট ছোট আনন্দই তো আসল সুখ।
ঠিক তখনই মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে এলো। তার ছোট্ট চোখ দুটি ঘুমে বুজে ছিল। টেবিলের ওপর ফুলের তোড়াটা দেখে সে দৌড়ে এসে বলল, আম্মু ফুল দাও! আমি একটা ছোট্ট গোলাপ খুলে তার হাতে দিলাম। সে খুশিতে লাফিয়ে উঠল।রাতের খাবারটা একটু স্পেশাল করার জন্য আমি চটজলদি প্রিয় কিছু রান্না করে ফেললাম। টেবিলে বসে আমরা সবাই মিলে গল্প করতে করতে খেতে শুরু করলাম। মেয়েটা তার বাবার কোলে বসে বলল, বাবা, এই ফুল আমার জন্য এনেছো? আমার হাজব্যান্ড একটু হেসে বলল তোমার আম্মুর জন্য এনেছি মা । কিন্তু তুমি যদি চাও, তোমার জন্যও থাকবে।
রাতে ঘরে এক অন্যরকম পরিবেশ ছিল। ফুলের সুবাসে ঘর ভরে গেছে। আমি যখন ফুলগুলোকে একটা বড় ফুলদানি সাজাচ্ছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল, সংসারের প্রতিদিনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই তো আমাদের জীবনের আসল রঙ। আমার হাজব্যান্ড এসে বললেন, তোমার ভালো লেগেছে? আমি বললাম, ভীষণ। এই ছোট ছোট ভালোবাসাই তো আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করে।
এইভাবে দিনটা শেষ হলো। কিন্তু আমার মন যেন ফুলের সুবাসে ভরে রইল। সংসারের ব্যস্ততা আর দায়িত্বের মাঝেও, ভালোবাসা আর যত্ন যদি ঠিকমতো থাকে, তবে জীবন সত্যিই সুন্দর।
- যাইহোক আমার মনে হয় প্রত্যেকটি গৃহিণীরে এরকম স্বপ্ন থাকে তার হাজবেন্ডের থেকে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য,একটু আদর যত্ন পাওয়ার জন্য, সত্যি আমি ভাগ্যবতী আমি এমন একটা হাসবেন্ডকে পেয়েছি আমার জীবনে। সবাই আমার হাজব্যান্ড ও মেয়ের জন্য দোয়া করবেন আমার যেন এভাবে সুখে শান্তিতে থাকতে পারি সারা জীবন। আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
স্বামী স্ত্রীর মধ্য এই ভালোবাসা প্রত্যেকটি সংসারে থাকা উচিত। আজ আপনার হাসবেন্ড আপনার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছে। এটা জানতে পেরে আমার কাছেও অনেক ভালো লাগছে। এবং আমি অনুভব করতে পারি আপনি কতটা খুশি হয়েছেন। যাই হোক আপনার হাজব্যান্ড আপনার হাসি দেখার জন্য এই সারপ্রাইজ দিয়েছে। আপনার এই সুন্দর লেখা পরিদর্শন করতে পেরে আনন্দিত ধন্যবাদ আপনাকে।