পরিশ্রমের মাঝে প্রশান্তি

in Incredible India11 days ago

আসসালামু আলাইকুম,

  • কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ আপনাদের শেয়ার করতে চলেছি আমার এক বিশেষ দিন কাটানোর অভিজ্ঞতা। শহরের ব্যস্ততা আর কোলাহল থেকে দূরে গ্রামে এসে কাটানো এই দিনগুলো যেন এক অন্যরকম প্রশান্তি দেয়। গ্রামের পরিবেশ, একের পর এক কাজ, শীতের সকাল, আর প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো যে কতটা প্রাণের, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। তবে চেষ্টা করছি, সেই দিনের গল্প আপনাদের কাছে তুলে ধরতে।

IMG_20241212_161104.jpg

আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনই যেন একটা নতুন গল্প। সেই গল্প কখনো কর্মব্যস্ততায় ভরা, আবার কখনো মনের প্রশান্তিতে। আজকের গল্পটিও তেমনই এক কর্মমুখর দিনের ছোট ছোট মুহূর্তের সুখ। আশা করি, এই লেখাটি আপনাদের মন ছুঁয়ে যাবে এবং গ্রামের জীবনের একটি ছোট্ট অংশের ছোঁয়া আপনাদের অনুভব করাবে।
চলুন, শুরুর থেকে সেই দিনের কথা জানাই...

শীতের সকালে ঘুম ভাঙতেই জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি, বাইরের পুরো দুনিয়া যেন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে। চারদিক সাদা ধোঁয়াশায় মাখামাখি। গ্রামের শীতের এমন পরিবেশে সবকিছুই যেন এক অন্যরকম রূপ নেয়। শহরের বিশাল বাড়ি থেকে গ্রামের এই ছোট্ট বাড়িতে আসার পর থেকেই মনটা বেশ ফুরফুরে। তবে আজকের দিনটা যে এত ব্যস্ততায় কাটবে, তা ভাবিনি।
সকালে উঠে পুকুরপাড়ে গিয়ে মুখ ধুয়ে আসতেই শাশুড়ি আমায় বললেন, বউমা, ধান সিদ্ধ করতে হবে। কাজ অনেক, সকাল থেকেই লেগে পড়।

IMG_20241212_161012.jpg

আমি আর আমার ননাস মিলে ধান সিদ্ধ করার কাজে লেগে গেলাম। পাত্রে ধান ঢেলে অগ্নিকুণ্ডে বড় বড় লাকড়ি জ্বালিয়ে দিলাম। একদিকে ধান সিদ্ধ করছি, আরেকদিকে আমার শাশুড়ি ধান শুকানোর জায়গা ঠিক করে দিচ্ছেন। শীতের দিনে রোদ না থাকলে ধান শুকানো যে কত কঠিন, তা আজ বুঝতে পারলাম। রোদের অভাবে ধানগুলো কেমন যেন হয়ে গেছে, কিন্তু তবুও চেষ্টা থামাইনি।

বেলা গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল। কাজ করতে করতে কখন যে সন্ধ্যা লেগে গেল, বুঝতেই পারিনি।গ্রামের বাড়িতে একের পর এক লেগেই থাকে।সারাটা দিন কাজ করার পর সন্ধ্যায় রান্নাঘরে ঢুকে দেখি, ঘরে একটাও বাজার নেই। আমাদের গ্রামে বাজার দূরে,আমার শ্বশুর সবজির দোকান করে তাই শ্বশুরকে গিয়ে বললাম, বাবা, ঘরে কিছুই নেই। একটু বাজার পাঠিয়ে দিন, প্লিজ।আমার শ্বশুর মৃদু হেসে বললেন, তুমি চিন্তা কোরো না, আমি যাচ্ছি নিজেদের দোকান না বললে কি হয় । বাবার সঙ্গে আমার হাজবেন্ড আর ভাগ্নেকেও নিয়ে গেলো।

IMG_20241212_161114.jpg

কিছুক্ষণ পর বাজার থেকে ফিরে আসলেন তাঁরা। হাতে থলে ভর্তি নতুন সবজি। আমি আর আমার ননাস তখন আমার মেয়ের সাথে খেলা করছিলাম এবং অনেক রকমের গল্প করছিলাম। বাজারের থলে দেখে তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে নামলাম আমি। থলেটা নিয়ে সোজা রান্নাঘরে পৌঁছালাম।একটা বড় গাবলাই সবগুলো সবজি ঢাললাম। পেঁয়াজ, ফুলকপি, বেগুন, মুলা, পালং শাক লাউ আরও কত কিছু! গ্রামের এই টাটকা সবজিগুলো শহরে পাওয়া যায় না।

আমার শাশুড়ি নতুন সবজি দেখে বললেন, আজ তাহলে রান্না জমবে ভালো।এদিকে অনেক রাত হয়ে গেছে দুইটা গ্রাম তাই সন্ধ্যার পরেই এখানে গভীর রাত হয়। শহরে যেটা আমাদের কাছে মাত্র সন্ধ্যা সেটা গ্রামে গভীর রাত। যাইহোক, আমি আর আমার ননাস মিলে একসঙ্গে তাড়াতাড়ি রান্নার কাজ শুরু করলাম। গরম গরম ভাত,পালং শাকের ঝোল রান্নার তোরজোর শুরু করলাম। একদিকে আমার ননাস মাটির চুলায় ভাত তুলে দিল অন্যদিকে আমি পালং শাকগুলো সুন্দর করে কেটে নিলাম। মাটির চুলায় রান্না করার স্বাদই আলাদা।

IMG_20241212_161146.jpg

রান্না শেষ করে এ যেতে পাটি বিছিয়ে সবাই একসঙ্গে বসে খেতে শুরু করলাম। আমার মেয়ে আর ভাগ্নে খেলতে খেলতে খাওয়ার ফাঁকে মজা করছিল। শ্বশুর বললেন, এর মধ্যে বাজার থেকে আমার শ্বশুর ও বাড়িতে চলে আসলো। গ্রামের পরিবেশে দিন কাটানোর মজাই আলাদা। কাজের মাঝে যেটুকু শান্তি পাই, তা শহরে পাওয়া সম্ভব নয়। আমিও মনে মনে একমত হলাম। সত্যিই, এমন ব্যস্ততায় ভরা দিনগুলোও গ্রামে অন্যরকম সুন্দর।

রাতের শীতের হাওয়া বইছে, আকাশে মিটমিট তারা। ঘুমানোর আগে জানালার পাশে বসে ভাবলাম, আজকের দিনটা কতটা কর্মমুখর ছিল, কিন্তু তাতে একটুও ক্লান্ত লাগছে না। এই ছোট ছোট কাজ আর পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাটানো সময়ই জীবনের বড় পাওয়া।গ্রামে এত কাজ তবুও শান্তি। শীতের রাতের হিমেল বাতাস বইছে। আকাশে অসংখ্য তারা। পায়ের তলায় ঘাসের ওপর কুয়াশার জমাট ভাব। এত পরিশ্রমের দিন হলেও মনে ক্লান্তি নেই। বরং এক অদ্ভুত সুখের অনুভূতি। মনে হলো, জীবনের এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোই তো আসলে বেঁচে থাকার প্রকৃত আনন্দ।

IMG_20241212_161026.jpg

  • যাইহোক, এভাবে আমার সারাটা দিন হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কেটে গেল একের পর এক কাজএ। সব মিলিয়ে সবকিছু ভাবতে ভাবতে বিছানায় গা হেলিয়ে দিলাম।গল্পটা আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আর সবসময় পাশে থাকবেন।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনাই করি আল্লাহ হাফেজ।
Sort:  
Loading...
 11 days ago 

এটা সত্য কথা শহরের মানুষ থেকে গ্রামের মানুষ অনেক পরিশ্রমী। গ্রামের মানুষের অনেক কাজ থাকে যা তারা সকাল পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করে আবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কাজ শেষ করে। আমি গ্রামের পরিবেশ অনেক পছন্দ করি,আপনি সত্যিই বলছেন গ্রামের যেই প্রাকৃতিক দৃশ্য মানুষের মনকে ফুরফুরা করে ফেলে। আপনার পোস্টটি পড়ে একটা বিষয় খুব হাসি ও পেল আবার ভালো লাগলো আপনার শ্বশুরকে বাজার আনার জন্য প্লিজ বলছেন। যাই হোক আপনার গ্রামের কাজ করার দৃশ্যটা অনেক সুন্দর ভাবে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আমাদের কাছে শেয়ার করেছেন আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

 11 days ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.25
JST 0.040
BTC 92903.81
ETH 3331.70
USDT 1.00
SBD 3.29