একটি বুনোফুলের গল্প
বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম।
আসসালামু আলাইকুম,
কেমন আছেন সবাই? আশা করি, আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন। আজ আপনাদের জন্য একটি গল্প লিখতে বসেছি, যা পড়ে হয়তো আপনাদের মনে হবে, এমন গল্প তো আমি কখনো পড়িনি।গল্পটি সম্পূর্ণ মনগড়া, তবে এতে অনুভূতির এমন কিছু রঙ আছে যা আপনাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।চলুন দেরি না করে শুরু করি আজকের গল্পটি।
একটা নির্জন পাহাড়ি গ্রাম। নাম শালবনপুর। এখানকার লোকসংখ্যা বেশি নয়, আর তেমন কোনো চাঞ্চল্যও নেই। দিনের পর দিন এখানকার মানুষজন নিজেদের মতো জীবন কাটিয়ে দেয়। তবে গ্রামের শেষ প্রান্তে ছিল এক বুনো ফুলের বাগান। সেই বাগান নিয়ে গ্রামে নানা গল্প শোনা যেত। লোকজন বলত, বাগানে কেউ ঢুকলে ফিরে আসতে পারে না। কেউ বলত, রাতের বেলা সেই বাগান থেকে কান্নার শব্দ শোনা যায়।
এ সবকিছুর মধ্যে গ্রামের একটা ছেলে, নাম মাসুদ মাসুদ ছিল খুবই কৌতূহলী স্বভাবের। ছোটবেলা থেকেই সে শুনে এসেছে বুনো ফুলের বাগানের গল্প। কিন্তু সেসব গল্প বিশ্বাস করত না। তার মনে হতো, এগুলো কেবলই গাঁজাখুরি কাহিনি। কিন্তু একদিন এক ঘটনা ঘটে, যা মাসুদের জীবন সম্পূর্ণ বদলে দেয়।
|
---|
একদিন বিকেলের দিকে মাসুদ ও তার বন্ধুরা মিলে বুনো ফুলের বাগানের কাছে ঘুরতে যায়। তারা সবাই মজা করছিল, গল্প করছিল। হঠাৎ করেই মাসুদ বাগানের ভেতর একটা আলোর ঝলক দেখতে পায়। সে বন্ধুদের ডেকে বলে, দেখেছো? ভেতরে যেন কিছু জ্বলজ্বল করছে!
বন্ধুরা প্রথমে বিশ্বাস করেনি। কিন্তু আলোর ঝলক বারবার দেখা দেওয়ায় তারা সবাই অবাক হয়ে যায়। মাসুদের বন্ধুরা বাগানে ঢোকার সাহস দেখায়নি। তারা মাসুদকে নিষেধ করে,মাসুদ, বাগানের ভেতরে যেও না! সবাই বলে, ওখানে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না!
কিন্তু মাসুদ ছিল খুবই জেদি। সে বলল, এতদিন তো শুনে আসছি এই সব ভূতের গল্প। আজ আমি নিজের চোখে দেখে আসব।
|
---|
মাসুদ একা বাগানের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তার বন্ধুরা দূরে দাঁড়িয়ে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে থাকে। বাগানের ভেতরে ঢুকে মাসুদ একটা জিনিস খেয়াল করেযত গভীরে যাচ্ছে, ততই বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। চারপাশে শুধু অদ্ভুত সব বুনো ফুল। ফুলগুলোর গন্ধে তার মাথা একটু ঘুরে যায়।একসময় সে দেখতে পায় বাগানের মাঝখানে একটা পুরনো পাথরের ঝরনা। ঝরনার পাশেই জ্বলজ্বল করছে একটা সাদা ফুল। ফুলটা এত সুন্দর যে, মাসুদ এমন কিছু জীবনে দেখেনি। কিন্তু যখন সে ফুলটার কাছে যায়, তখনই হঠাৎ করে ঝরনার পাশ থেকে একটা মেয়ের ছায়া দেখা যায়।
|
---|
মেয়েটি ধীরে ধীরে ঝরনার পাশ থেকে এগিয়ে আসে। তার গায়ে ছিল সাদা পোশাক, আর তার চোখ যেন পুরো আকাশের মতো গভীর। মেয়েটি মাসুদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে, তুমি জানো, এই বাগানে কেন কেউ ফিরে আসতে পারে না?মাসুদ কিছুটা ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আমি কেবল দেখতে এসেছি। এখানে কি কোনো রহস্য আছে?
মেয়েটি একটু হেসে বলল, এই ফুলগুলো সাধারণ ফুল নয়। এরা মানুষকে বন্দি করে রাখে। যারা একবার এই ফুলের গন্ধ পায়, তারা এই বাগান ছেড়ে যেতে পারে না। আমি নিজেও এই বাগানের বন্দি।
|
---|
মাসুদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি এখানে বন্দি কেন? কীভাবে মুক্তি পাবে?
মেয়েটি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, অনেক বছর আগে, আমি এই বাগানের রক্ষক ছিলাম। কিন্তু একদিন এক ভুল করে ফেলি। বাগানের প্রধান ফুলটি ছিঁড়ে ফেলি। সেই ফুলের অভিশাপ আমাকে এই বাগানে বেঁধে রেখেছে। যতদিন কেউ সৎ মনে এই ফুল ছিঁড়ে মুক্তি চাইবে না, ততদিন আমি এখানেই বন্দি।
|
---|
মাসুদ মেয়েটির কথায় মুগ্ধ হয়ে যায়। সে বলে, আমি কীভাবে তোমাকে মুক্ত করতে পারি?
মেয়েটি বলল, তোমাকে সৎ মনে প্রধান ফুলটি ছিঁড়ে নিতে হবে। কিন্তু সাবধান, যদি তোমার মনে এক ফোঁটাও লোভ থাকে, তবে তুমিও এই বাগানের বন্দি হয়ে যাবে।মাসুদ সাহস নিয়ে প্রধান ফুলের কাছে গেল। তার মনে কোনো লোভ নেই, কেবল মেয়েটিকে মুক্ত করার ইচ্ছা। সে আলতো করে ফুলটি ছিঁড়ে নিল।
|
---|
ফুলটি ছিঁড়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো বাগান আলোকিত হয়ে গেল। ঝরনা থেকে পানি বের হতে শুরু করল। মেয়েটি ধীরে ধীরে বাতাসের সঙ্গে মিশে গেল। যাওয়ার আগে সে মাসুদকে বলল, তুমি সৎ মানুষ, তাই এই অভিশাপ শেষ হয়েছে। এবার তুমি এই বাগান ছেড়ে যেতে পারবে।
|
---|
মাসুদ বাগান থেকে বেরিয়ে এলো। তার বন্ধুরা তখনো বাইরে অপেক্ষা করছিল। মাসুদ তাদের সব কিছু বলল। প্রথমে তারা বিশ্বাস করেনি, কিন্তু মাসুদের মুখের প্রশান্তি আর সাহস দেখে তারা বুঝতে পারল, মাসুদ সত্যি একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে।
|
---|
এই গল্পে একটা গভীর বার্তা আছে আমাদের সৎ মন আর সাহসই যে কোনো অভিশাপ বা বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারে। মাসুদের মতো আমাদেরও উচিত সাহস নিয়ে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা।
আশা করি, গল্পটি আপনাদের ভালো লেগেছে। আপনাদের মন্তব্য জানাবেন। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।আল্লাহ হাফেজ।