হঠাৎ ছুটির গল্প

in Incredible India18 days ago

আসসালামু আলাইকুম

  • প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে যে পোস্টটি নিয়ে এসেছি আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আজকের পোস্টটে আপনাদের স্বাগতম।

IMG_20241205_202858.jpg

হঠাৎ করেই গত কালকের দিনটা একদম অন্যরকম হয়ে গেল। আমার হাজবেন্ড প্রতিদিনের মতো সকালে নাস্তা করে অফিসে চলে গেল। হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি করে দরজাটা খুললাম।দেখি দরজার এপাশে আমার হাজব্যান্ড।আমি আমার হাজব্যান্ড কে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে এত তাড়াতাড়ি তুমি অফিস থেকে আসলা যে, শরীর খারাপ নাকি? আমার হাজব্যান্ড আমাকে বলল আজ তার ছুটি হয়েছে। এমন অপ্রত্যাশিত ছুটি পাওয়ার আনন্দে, আমি আর আমার হাসবেন্ড তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম, গ্রামের বাড়ি যাওয়া যাক। ঢাকার ব্যস্ত জীবন থেকে একটু দূরে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ এলো যেন।

তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ গোছানো শুরু করলাম। তিনটা ব্যাগে ছিল আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মেয়ের জন্য কিছু কাপড়, আমাদের নিজেদের কিছু পোশাক, আর গ্রামের বাড়ির লোকজনের জন্য ছোটখাটো উপহার। এর মধ্যেই মনে পড়ল, আমাদের প্রিয় কবুতর জোড়ার কথা। গত পোস্টে আমি আপনাদের জানাই ছিলাম যে আমি কবুতর পাখি দুটোকে বিক্রি করে দেব। বিক্রি করার কারণটাও জানাইছিলাম ওরা বারবার ওদের ডিম নষ্ট করে ফেলছে। তাই কয়েকদিন আগেই মোবাইলের মাধ্যমে বগুড়ার এক লোকের সাথে ওদের বিক্রির কথা পাকা করেছিলাম।

IMG_20241205_202913.jpg

আমাদের যাত্রার পরিকল্পনা এবার একটু পাল্টাতে হলো। সেই লোককে সাহায্য করার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, কবুতর দুটো নিজের হাতেই পৌঁছে দেব। কারণ তার বাড়ি আমাদের পথের মধ্যেই পড়বে। এই পরিকল্পনা সাজিয়ে আমরা দুপুরের দিকে ঢাকা থেকে রওনা দিলাম।
গাড়িতে উঠতেই মেয়েটা খুশিতে চিৎকার শুরু করল। ওর ছোট ছোট হাত দিয়ে আমাদের দিকে দেখিয়ে দেখিয়ে অজস্র কথা বলছিল, যদিও আমরা অনেক কথারই অর্থ বুঝতে পারছিলাম না। খাঁচার ভেতর থাকা কবুতরগুলোর দিকে বারবার তাকিয়ে ও বলছিল, আম্মু আম্মু কাখি কাখি, মনে হলো, ওরাও বুঝতে পারছে যে কোথাও যাচ্ছে। আমারও একটু কষ্ট হচ্ছিল।

এতদিন ধরে তাদের সাথে যে ভালোবাসা গড়ে উঠেছে, তা এক মুহূর্তে ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়।
যাত্রাপথটা মোটামুটি মসৃণ ছিল। মাঝে মাঝে মেয়ে বায়না করছিল গায়ে গা লাগিয়ে বসার জন্য। খাঁচার কবুতর দুটো কখনো শান্ত, কখনো একটু অস্থির হয়ে উঠছিল। আমরা যখন বগুড়ার কাছাকাছি পৌঁছালাম, তখন বেলা গড়িয়ে হয়ে এসেছে। লোকটা আগে থেকেই আমাদের অপেক্ষায় ছিল।

IMG_20241205_202939.jpg

কবুতরগুলো যখন লোকটার হাতে তুলে দিচ্ছিলো আমার হাজব্যান্ড, তখন আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এল। মনে হলো, নিজের খুব কাছের কিছু হারিয়ে ফেলছি। লোকটা খুব যত্ন করে খাঁচা হাতে নিল। বলল, আপনারা চিন্তা করবেন না, আমি ঠিক যত্ন নেব। আমরা সব মিলিয়ে কবুতর পাখি দুটোকে ১৯০০ টাকা বিক্রি করে দিলাম। তার কথায় একটু সান্ত্বনা পেলাম। আমার হাজবেন্ড পাশে দাঁড়িয়ে হেসে বলল, তোমার এত মন খারাপ করার কিছু নেই। ওরা ভালো থাকবে।

এমনটা তো আমার হাজব্যান্ড আমার মুখে বলল কিন্তু তার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি তার চোখেও পানি। তো মনে হল আমার হাজবেন্ডের ও ঠিক এরকমই কষ্ট হচ্ছে কারণ সে প্রতিদিন পাখির দুটোকে গোসল করায়া দিছে যত্ন নিয়েছে আমার সাথে সাথে। হাফ মিলিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছিল আমার মেয়েটা পাখির দুটোর দিকে এক নজরে তাকিয়ে ছিল আর বলছিল আম্মু কাখি আম্মু কাখি।

IMG_20241205_202953.jpg

লোকটার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আমরা আবার রওনা হলাম। এবার গন্তব্য আমাদের গ্রামের বাড়ি। মেয়েটা তখন ক্লান্ত হয়ে আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার নিষ্পাপ মুখ দেখে আমার মনে হলো, এই ছোট জীবনে ও কত কিছু দেখছে, কত কিছু শিখছে।
গ্রামের বাড়িতে পৌঁছানোর পর মনে হলো, সব ক্লান্তি উড়ে গেল। উঠানে পা রাখতেই শ্বশুর-শাশুড়ি আর ননদ এগিয়ে এলেন। বাড়ির পরিবেশে যেন এক অন্যরকম শান্তি। মাটির গন্ধ, পাখির ডাক, আর মানুষের সরল হাসি সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি। শাশুড়ি জিজ্ঞেস করলেন, কবুতর বিক্রি হলো? আমি মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ, নতুন জায়গায় ওরা ভালো থাকবে।

রাতে একসাথে খেতে বসার সময় মনে হলো, শহুরে জীবনের ব্যস্ততা আর সীমাবদ্ধতার মাঝে এমন একটা দিন সত্যিই বিরল। শুয়ে থাকতে থাকতে ভাবছিলাম, হয়তো এইসব ছোট ছোট সিদ্ধান্ত আর অনুভূতির মধ্যেই জীবনের আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে থাকে। আমাদের কবুতরদের বিদায়, গ্রামের বাড়ির পথচলা, আর দিনের শেষে এই প্রশান্তি সবকিছু মিলে আজকের দিনটা ছিল একেবারে মনে রাখার মতো।
এটাই হয়তো জীবন। কষ্ট, ভালো লাগা, আর নতুন শুরুর মিশেলে তৈরি এক অনন্য গল্প।

  • জীবনটা হয়তো আমাদের এরকমই কখনো এখানে কখনো ওখানে এভাবেই হয়তো জীবনটা কেটে যায়।
    যাইহোক আজ আর লিখব না সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...
 16 days ago 

@samima1 মনটা খারাপ হয়ে গেলো আপনার লেখা পড়ে! কতবার ভেবেছি একা থাকি একটা সারমেয় ছানা নিয়ে আসি, কিন্তু তারপর তার অযত্নের একলা সামলানোর কথা ভেবে আর সেই প্রয়াস করিনি।

আমি পশুদের কষ্ট দেবার পক্ষপাতী নই, তেমনি আপনি পায়রাগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন এটা মেনে নিতেও কষ্ট হলো, তারা কেমন পণ্যে সামিল হয়ে গেলো, তাই না?

জানিনা, তবে যদি কাউকে দিতেই হতো এমনি দিয়ে দিতেন, অর্থের বিনিময়ে পোষা প্রাণীকে বিক্রয় করে, কষ্ট পেয়ে কি লাভ, সে তো যাবার সময় কথাটা বলে যেতে পারেনি, তবে আমার মনে হয় কথা বলতে পারলে হয়তো ঠিক এটাই বলতো!

 14 days ago 

প্রথমেই জানাই দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টে এত সুন্দর একটা কমেন্ট করার জন্য। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত জানাই এত দেরিতে আপনার পোস্টের রিপ্লে করার জন্য। আসলে আমি অনেক ব্যস্ততার মাঝে ছিলাম ।

আমিও পশুদের কষ্ট দেওয়ার পক্ষে নই,কিন্তু বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে।আমি পায়রা গুলো বিক্রি করে দিয়েছি ঠিকই কিন্তু এর পরিবর্তে অর্থ নিয়েছি কারণ পরবর্তীতে আমি আমার মেয়ের জন্য আরো পাখি কিনব ।

আমারও মনটা খুব খারাপ লাগছে এই বিষয়টা নিয়ে। আসলে পোষা প্রাণীদের আমরা যেমন ভালোবাসি, ওরাও আমাদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ওদের থেকে আলাদা হওয়া কখনোই সহজ নয়। কিন্তু কখনো কখনো এমন কিছু পরিস্থিতি আসে, যেখানে হয়তো নিজের মনের কষ্টকে পাশ কাটিয়ে বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়।

পায়রাগুলো বিক্রি করতে হয়েছিল কারণ সেগুলো বারবার তাদের ডিমগুলো নষ্ট করে ফেলছিল। তবুও, মনে হয় যদি এমন কাউকে দেওয়া যেত যে সেগুলোর প্রতি মমতা দেখাবে, তাহলে হয়তো অন্তত একটা স্বস্তি পাওয়া যেত। অর্থের বিনিময়ে দেওয়া ঠিক কি ভুল, সেটার জবাব হয়তো ওরাই দিতে পারতো, যদি কথা বলতে পারত। এই চিন্তাগুলোই আমাকে বারবার পিছু টানে।

 12 days ago 

ঢাকায় ব্যস্ত জীবন পার করছেন আপনারা অবশ্যই এটা একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছুটি হওয়ার কারণে আপনারা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছেন। মাঝেমধ্য ছুটি পেলে ছুটে যেতে চাই নিজের জন্মভূমিতে ঠিক আপনারাও তাই করেছেন। ভালো লাগলো আপনার পোস্ট পড়ে ধন্যবাদ আপনাকে।

 12 days ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া,আপনার কমেন্টটি পড়ে আমার মন ছুয়ে গেল। আসলে ছোট থেকে বড় হয়েছি গ্রামেই। তাই গ্রামের মায়ের টা খুব সহজে ভুলতে পারিনা। যত ব্যস্ততার মাঝেই থাকি না কেন মনে হয় ছুটি পেলেই ছুটে যায় গ্রামে।

Coin Marketplace

STEEM 0.26
TRX 0.25
JST 0.040
BTC 92903.81
ETH 3331.70
USDT 1.00
SBD 3.29