গ্রামীণ সুখের ছায়া
আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই অনেক বেশি ভাল আছেন। আমি আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো আছি। আমি কয়েকদিন হচ্ছে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। এখানকার পরিবেশ সব মিলে অপূর্ব এক দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এই সবকিছুই আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
|
---|
শহরের ব্যস্ততা আর কোলাহল থেকে মুক্তি পেয়ে কয়েকদিন আগে শ্বশুরবাড়ি গ্রামে এসে উঠেছি। আমার মনে হয়, এখানকার পরিবেশে কিছুটা সময় কাটালে যেন প্রাণটা শান্ত হয়। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই উঠোনে এসে দাঁড়ালাম। আমার দুই বছরের মেয়ে মিরা তখনো ঘুমাচ্ছে। চারপাশে পাখির ডাক, কুকুরের ঘেউ ঘেউ, আর গ্রামের শীতল বাতাস যেন আমাকে এক অন্য জগতে নিয়ে গেল।
উঠোনের কোণায় চোখ পড়তেই দেখি, একপাশে একটা বড় মাচা। পুরো মাচা সিম গাছে ঢাকা। মাচার গা বেয়ে ওঠা লতাগুল্মে ছোট ছোট সাদা ফুল ফুটে আছে। এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে মনটা ভরে গেল। আমার শৈশবের গ্রামের দিনগুলো মনে পড়ল। তখন এমন মাচায় সিম পাড়ার আনন্দ ছিল অসীম।
আরেকপাশে দেখি পেঁপে গাছ। গাছভর্তি পেঁপে ধরে আছে। সেই গাছের পাশেই একটা লাউ গাছ ছড়িয়ে পড়েছে। গাছের ডালপালার নিচে লাউ ধরে আছে, এমন সুন্দর লাউ আমি অনেকদিন দেখিনি।
শ্বাশুড়ি মা তখন উঠোনে ধান শুকানোর জন্য পাটাতন তৈরি করছিলেন। কাছে যেতেই বললেন, এই তো এলি। দেখ, ধান কাটা শেষ হয়েছে। এখন শুকাতে হবে। তুইও আয়, একটু সাহায্য কর। আমি শাশুড়ির সাথে চলে গেলাম।
|
---|
সকালবেলার খাওয়াদাওয়া সেরে মেয়েকে কোলে নিয়ে উঠোনে এলাম। মিরা চারপাশ দেখে বেশ মুগ্ধ। সে তো শহরে থেকে এমন কিছু দেখে না। তার ছোট্ট হাত দিয়ে সিমের মাচার দিকে ইশারা করে বলল, আম্মু, এইটা কী? আমি হেসে বললাম, ওগুলো সিম গাছ। এগুলো আমরা খাই।
শ্বশুর তখন ধানের মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন। উঠোনজুড়ে ধানের স্তূপ। শ্বাশুড়ি মা আমাকে দেখিয়ে বললেন, এই কাজগুলো করতে অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু এই ধানেই তো সবার খাওয়ার ব্যবস্থা হয়। আমি ধানের গন্ধ নিতেই সেই পুরোনো দিনগুলো মনে পড়ে গেল, যখন আমরা সবাই মিলে ধান শুকাতে সাহায্য করতাম।
আমি ধানের আটি খুলতে সাহায্য করছিলাম। পাশেই মিরা মাটিতে বসে ছোট ছোট ধানের শীষ নিয়ে খেলছে। আমার শাশুড়ি তাকে দেখে হেসে বললেন, তোর মেয়ে তো গ্রামের কাজগুলো ভালোই পছন্দ করছে!
|
---|
বিকেলের দিকে সিম গাছ থেকে কিছু সিম পাড়ার সময় হলো। শাশুড়ি বললেন, “তুই নিজেই পেড়ে আন, শহরে গেলে তো এমন গাছ পাবি না।” আমি সিম গাছের মাচার নিচে দাঁড়িয়ে সিমগুলো পাড়তে শুরু করলাম। সিমগুলো দেখে মনটা ভরে গেল। পাশেই পেঁপে গাছের দিকে তাকিয়ে দেখি, বেশ কয়েকটা পেঁপে পাকতে শুরু করেছে। একটা পাকা পেঁপে ছিঁড়ে আনলাম।
লাউ গাছের কাছে গিয়ে দেখি, একটা বড় লাউ ঝুলে আছে। শাশুড়ি মা বললেন, এটাও নিয়ে আয়। আজ রাতে লাউ দিয়ে মাছের ঝোল রান্না করব। আমি লাউটা পেড়ে আনতে গিয়ে বুঝলাম, এমন কাজ শহরে করার সুযোগ কই!
|
---|
উঠোনে কাজ চলছিল। শ্বশুরজি ধানের মাড়াই শেষ করে ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত। আমি ধানগুলো পাটাতনের উপর গুছিয়ে রাখছি। মিরা পাশেই মাটিতে বসে ধানের শীষ নিয়ে খেলছে। আমার মামাতো দেবর এসে বলল, ভাবি, তুমি তো গ্রামের কাজে ভালোই হাত লাগাচ্ছ।আমি তো মনে করলাম শহরে যাওয়ার পর বাড়িতে এসে এই কাজ গুলোতে হাতই দিবা না।আমি হেসে বললাম, গ্রামে জন্মানো মেয়ের রক্তে তো এসব কাজ থেকেই যায়।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এল। উঠোনে ধান শুকানোর কাজ শেষ করে সবাই একটু বিশ্রাম নিতে বসলাম। শাশুড়ি মা বললেন, তোর মেয়ে তো গ্রামের পরিবেশ খুব পছন্দ করছে। সে হয়তো তোর মতোই গ্রামের প্রতি টান অনুভব করবে।
|
---|
সন্ধ্যার সময় উঠোনে আলো জ্বেলে সবাই একসঙ্গে গল্প করছিলাম। পাশেই ধানের স্তূপ রাখা। ধানের গন্ধ আর পেঁপে গাছ, সিম গাছ, লাউ গাছের ছায়া মিলিয়ে উঠোনটা যেন এক স্বপ্নপুরী। মিরা তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি তাকিয়ে ভাবছিলাম, এই সরল জীবন কত সুন্দর।
শহরের বিল্ডিং, গাড়ির শব্দ, আর ব্যস্ততার মাঝে গ্রামের এই সরলতা কতটা শান্তি এনে দেয়। কাজের মাঝে যেমন ক্লান্তি আছে, তেমনি আছে একধরনের আনন্দ।
|
---|
কয়েকদিন পর শহরে ফিরে যাব, কিন্তু এখানকার প্রতিটা মুহূর্ত আমার স্মৃতিতে থাকবে। ধানের মাড়াইয়ের ঘ্রাণ, সিমের মাচার সবুজ শীতলতা, পেঁপে গাছের রঙ, আর লাউয়ের স্বাদ সবকিছু আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।মিরা একদিন হয়তো এই গ্রামটাকে ভালোবাসবে, যেমন আমি ভালোবাসি।
আমার শাশুড়ি মা বললেন, শহরে গিয়ে এসব খাবার কিন্তু খুব মনে পড়বে।আমি হাসলাম, কারণ জানি, এই গ্রামের শিকড় থেকে দূরে গেলেও এর মায়া কখনো ফুরাবে না।
যাইহোক, আমার গল্পটা কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন, আজ এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
আমরা আমাদের জন্মভূমি থেকে যতই দূরে থাকি না কেনো তার টান সব সময় আমাদের মনের মধ্য থেকে থাকে। যাইহোক আপনি আজ আপনার শ্বশুরবাড়ির গ্রামের কিছু অংশ তুলে ধরেছেন যেটা দেখতে সত্যিই অসাধারণ ছিলো। গ্রামের বাড়িতে মানুষেরা অল্প কিছু শাক সবজি নিজের ভিটা বাড়ির উপরে রোপন করে থাকে। যাই হোক একটি অসাধারন লেখা আপনি আমাদের উপহার দিয়েছেন যেটা দেখে মন ছুঁয়ে গেলো। শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভালো এবং সুস্থ থাকবেন।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।