বাড়ির বাইরে অতিবাহিত করা কিছু মূহূর্ত।
নমস্কার,
হঠাৎ শনি দেবের পুজো দেখার সুযোগ হলো। এটা আমার এক কাকুর বাড়িতে হয়েছে। সাধারণত, শনিদেবের পূজো বৈশাখ মাসে হয়, এই প্রথম ব্যতিক্রম সময় হতে দেখলাম। তবে পুরোহিত দাদুর কাছে বিষয়টা জেনে ভালো লাগলো।
কারণ পঞ্জিকার রীতিনীতি অনুসরণ করে তবেই পুজোটা করা হয়েছে। এই কাকুর ছেলেই কিছুদিন পূর্বে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। হয়তো সেইটার পরেই এই সিদ্ধান্ত আমার ঐ কাকু ও কাকিমা নিয়েছেন।
আমি বিকেলে একটু ঘুমিয়ে ছিলাম এবং অস্পষ্ট একটা আওয়াজ কোথাও যেন পূজো। ঐটা আমার মা আমাকে বলেছিল কিন্তু ঘুমের কারণে সেইটা আর মনে ছিল না। সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠেই উলুধ্বনির আওয়াজ এবং চোখে জল দেওয়ার সময় মা বললো যেন আমি কাকুদের বাড়িতে যাই।
যেতে যেতে প্রায় রাত আটটা, তবে পুরোহিত দাদুর মন্ত্রোচ্চারণ ছিল অসাধারণ। বংশ পরম্পরায় আমাদের পাড়াতে যে দাদু পুজো করেন সেই দাদুর বয়স অনেক যে কারণে তিনি এখন আর সচরাচর আসতে পারেন না। অন্যদিকে সেই দাদুর বড় ছেলে এখন পলাতক বিষয়টা আর প্রকাশ করছি না। ছোট ছেলে জাতীয় স্বাকৃতি পাওয়া পুরোহিত কিন্তু সময়ের অভাবে পুজোর কাজে আসার সুযোগ নেই।
যাইহোক, কাকু ও পরিবারের সকলের সাথে পূজোতে অংশগ্রহণ করলাম। যদিও কিছুটা রাত তবে পাড়ার ছোট ছোট শিশুদের আগমন যেটা অনেক দিন দেখি। গ্রামের পূজোতে এভাবে সকলের অংশগ্রহণটা বেশ আকর্ষণীয়। পাশাপাশি একটা তথ্য দিই সেইটা হলো আমাদের বলা হয়ে থাকে বারো মাসে তেরো পার্বণ যদিও সকল পূজোতে পাড়ার প্রতি ঘরে পৌঁছে নিমন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু এই শনিদেবের পূজোতে কাউকে নিমন্ত্রণ করা হয় না।
কথিত আছে নিমন্ত্রণের প্রয়োজন নেই, তবে শনিদেবের প্রসাদ নিতে যেতে হবে। তাই এটা ব্যতিক্রম হলেও বেশ ভালোই থাকে। এখনো কিন্তু মানুষের মনে ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ জীবিত আছে আর এটা থাকবে।
পূজো সম্পন্ন হতেই আমি প্রসাদ নিয়ে আমাদের মন্দিরের কাছে গিয়েছিলাম। অন্যান্য দিন রাতে রাস্তায় প্রচুর পরিমাণে বাইক চলাচলের আওয়াজ পাওয়া যায় কিন্তু আজ যেন ব্যতিক্রম মনে হচ্ছিল। কিছুটা জনমানবহীন ভূতুড়ে পরিবেশ মনে হচ্ছিল।
কিছুক্ষণ পরে ছোটভাইয়ের আগমণ এবং গতকাল অসুস্থ জ্যাঠাবাবুর একটু সমস্যা হয়েছিল যে কারণে হাসপাতালে এক রাত রাখতে হয়েছে সেইটা নিয়ে কথা বলার ছিল। প্রকৃতপক্ষে, আমরা কেউই ভালো নেই। কোনো না কোনো সমস্যা আমাদের সাথে লেগেই রয়েছে।
আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার পছন্দের না এবং জ্যাঠাবাবুর যে অবস্থা ওখানে রাখাটা একদমই নিরাপদ না। যেহেতু, খুলনা সিটি মেডিকেলে আমার মোটামুটি যোগাযোগ আছে তাই ছোটভাইকে সেখানে যোগাযোগ করিয়ে দিতেই ছোটভাই বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল।
মন্দিরের মাঠে সর্বদাই লোকজন থাকে কিন্তু আজ আর কারো উপস্থিতি দেখলাম না। তবে বাড়িতে ও খারাপ লাগছে থাকতে তাই কিছুক্ষণ মন্দিরের মাঠে ঘাসের ওপর বসেছিলাম। বড়'দির আগামীকাল অফিস, মোংলাতে যাবে যে কারণে বড়'দির কাছেও যেতে ইচ্ছে করছিল না।
এটা ভাবতে ভাবতেই বড়'দি কল করে বললো কিছু টাকা যেন বাবুর - বড়'দির বাবার থেকে নিয়ে বড়'দির কাছে যাই। অনেকটা রাত হয়েছে তাই বিলম্ব না করে টাকা গুলো বড়'দির কাছে পৌঁছে দিলাম।
রাত প্রায় এগারো, অধিকাংশ ঘরেই বৈদ্যুতিক বাতির আলোর দেখা যাচ্ছে না। অর্থাৎ প্রায় ঘরের লোকজন সম্ভবত ঘুমানোর প্রস্তুতি এবং অনেকেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমিও বাড়িতে ফিরে আসছি। এভাবেই আজকের রাতে কিছু সময় অতিবাহিত করলাম।
আমার আজকের লেখাটি এখানেই সমাপ্ত করছি। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।