কুড়িয়ে পাওয়া ব্যাগ, প্রকৃত মালিকের সন্ধান ও আমার দুশ্চিন্তা - পর্ব-২
শুভ সকাল। কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আজকে আবারো আরেকটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম। অবশ্য গতকালই আপনাদের জানিয়েছিলাম ২য় পর্ব নিয়ে হাজির হবো। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ২য় পর্ব শেয়ার করতে চলেছি। যারা প্রথম পর্ব কোন কারণে মিস করেছেন তারা - কুড়িয়ে পাওয়া ব্যাগ, প্রকৃত মালিকের সন্ধান ও আমার দুশ্চিন্তা - পর্ব-১ এই পর্ব দেখে আস্তে পারেন।
ব্যাগ কুড়িয়ে পাবার পর তা তার মালিকের কাছে হস্তান্তর করার অনেক রকম চেষ্টা করেও যখন সফল হতে পারলাম না, পরে তার কলেজ আইডি কার্ড থেকে কলেজের নাম দিয়ে ফেসবুকে সার্চ দিলাম। বেশ কিছু গ্রুপ খুজে পেলাম। এবার গ্রুপের এডমিন ,মডারেটরদের বিস্তারিত লিখে ব্যাগের ভেতরে পাওয়া ডকুমেন্ট ও ছবি পাঠালাম। এর পর শুত্রু হলো অপেক্ষা, কখন ওপাশ থেকে রিপ্লাই আসে।
রিপ্লাই আসছে না দেখে ব্যাগে থাকা ব্ডিযাংকের কেডিট কার্ড নিয়ে ব্যাংকে যোগাযোগ করলাম। কিন্তু ব্যাংক থেকে আমাকে ক্রেডিট কার্ড এর মালিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার নিয়মের কারণে কোন রকম যোগাযোগ নাম্বার দেয়া হলো না। শেষ ভরসা হিসেবে আবারো ব্যাগ হাতে নিয়ে সব কিছু চেক করতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও কোন নাম্বার নেই। অবশেষে কার্ড হোল্ডারের পেছন পাশে একটা নাম্বার পেলাম যার মাঝের তিন ডিজিট অস্পষ্ট। অনেক আগে হয়তো নাম্বারটা লিখেছিল। এর পর এক এক করে নাম্বার বসিয়ে কল দিতে লাগলাম, ৩ টা নাম্বারের যোগাযোগের পর চতুর্থ বারে এক মেয়ে কন্ঠ পেলাম। জিগেস করলাম উনি অদিথি কি না। ওপাশ থেকে হ্যাঁ, উত্তর এলো আর আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। চিন্তামুক্ত হলাম যে যাক উনি জীবিত আছে।
উনার বাসা আফতাবনগর, উনি ফোনে এতটুকু জানালেন যে ব্যাগটা রাস্তা পার হবার সময় মিসিং হয়েছে। আমি ব্যাগে থাকা জিনিস গুলোর ছবি উনাকে পাঠালাম, উনি জানালেন যে এগুলো উনারই। আমার অফিসের ঠিকানা দিলে উনি জানালো এক ঘন্টার মধ্যেই উনি আসবেন।
এদিকে উনার কলেজ থেকে সাড়া দিল, জানালো যে ব্যাগের মালিককে তারা চিনতে পেরেছে। আমিও জানালাম যে আমিও তাকে খুজে পেয়েছি। অবশেষে ১ ঘন্টার কিছু সময় পর উনি ব্যাগ নিতে আমার অফিসে এলেন। সামনা সামনি জিগেস করলাম কিভাবে ব্যাগ টা মিসিং হলো। উনি যা জানালেন তা শুনে রীতিমত অবাক হলাম। উনি আফতাব নগর গেইট দিয়ে পার হবে এমন সময় এক বোরখা পরা মহিলা উনাকে ডেকে রিকুয়েস্ট করলো, যে রাস্তাটা যেন পার করে দেয়। উনিও সরল মনে মহিলাকে সাহায্য করতে গিয়ে রাস্তা পার করালেন, মাঝ পথে এসে মহিলা রাস্তায় পড়ে যাবার ভান করে ওনার গায়ে এসে পড়লো, এই সেকেন্ডের মধ্যেই উনার এই ছোট ব্যাগ হাওয়া। রাস্তা পার করিয়ে দেবার পর বোরখা পরা মহিলা দ্রুত বাসে ঊঠে চলে গেল। এদিকে ব্যাগের মালিক দেখে তার ব্যাগ মিসিং।
ঢাকা শহরে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটে, তাই রাস্তায় যখন কেউ গায়ে পরে কথা বলে, বা এরকম সাহায্যের জন্য আবেদন করে, তখন আমাদের বাড়তি সতর্ক থাকা উচিৎ। আমাদের সরলতার সুযোগেই এরকম প্রতারক চক্র ব্যাগ ও মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নেয়। শুনেছি একটা প্রতারক চক্র আছে, যারা ছোট কাগজের টুকরা পত্থচারীকে ধরিয়ে দেয়, আর বলে এই ঠিকানা কোথায়? ওই কাগজ হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলেই মুহরতেই অচেতন। এর পর বুঝতেই পারছেন।
যাই হোক অবশেষে আমি ব্যাগের মালিককে তার সবকিছু বুঝিয়ে দিলাম, যদিও ব্যাগে থাকা ২ হাজার টাকা ছিল, যেটি চোর নিয়ে ব্যাগটা ছুরে ফেলে দেয়। হয়তো চোর মহিলা অশিক্ষিত ছিল, তাই সে জানতো না যে ক্রেডিট কার্ড ভাংগিয়ে চাইলে সে আরো কিছু টাকা জিনিস সুপারশপে গিয়ে নিতে পারতো, তবে সেক্ষেত্রে তার ধরা পরার একটা সম্ভাবনা থাকত।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু শিক্ষা নিলাম। প্রথমত, আমাদের সকলের উচিৎ পারটস ব্যাগ, আইডি কার্ডে জরুরি মোবাইল নাম্বার রাখা, সাথে রক্তের গ্রুপ লিখে রাখা। রাস্তায় ব্যাগ জাতীয় কিছু জিনিস পেলেই তা সাথে সাথে তুলে না নিইয়ে আশেপাশের মানুষের সহায়তা নেয়া অথবা মোবাইল ফোন বের করে ভিডিও ফুটেজ রাখা, যেটা আমি করিনি, করলে এতটা ভয় কাজ করতো না। আমাদের ব্যাগ হারিয়ে গেলে, ব্যাগের ভেতরে যদি ব্যাংকের কার্ড থাকে তাহলে সবার আগে ব্যাংকের হেল্পলাইনে কল দিয়ে কার্ড গুলো বন্ধ করতে হবে। রাস্তাইয় অপরিচিত মানুষের ডাকে সাড়া দেবার সময় সরবোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। রাস্তায় একা একা চলাচলের সময় সাবধানতা অবল্মবন করুন, সম্ভব হলে পরিচিত ২-৩ জন গ্রুপ করে চলাফেরা করুন। সবাই অনেক অনেক ভালো থাকুন। অনাকাঙ্ক্ষিত যে কোন পরিস্থিতিতে পরলে পুলিশি সহায়তা নিন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
প্রথম পর্ব টা পড়েছিলাম এবং দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় ছিলাম অবশেষে আপনি আপনার ব্যাগের মালিক কে খুঁজে পেয়েছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো,,
তবে আপনি যা করেছেন তা সত্যি প্রশংসার দাবিদার, একটা কথা মনে হল এই দুনিয়াতে এখনো ভালো মানুষ আছে বলেই এই পৃথিবীটা এখনো সুন্দর।। আপনি আপনার জায়গা থেকে অনেক চেষ্টা করেছেন এবং ধৈর্য ধরে করেছেন তাই ধৈর্যের ফলটা অনেক সুন্দর হয়েছে।।