শৈশবের আমেজ

in Incredible Indiayesterday

নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আশা করি সকলেরই ভালো লাগবে।

আমার বয়স তখন ছয় কি সাত বছর হবে। দুর্গাপুজোর আমেজ নেওয়ার অনুভূতি তখন সবে আমার মধ্যে এসেছে। ওই সময় প্রত্যেক বছর দুর্গাপুজো এলে বাতাসে পুজোর গন্ধে ম ম করত। আমার মনে পড়ে সেই প্রাইমারি স্কুলে কিছু বন্ধুদের কথা। এক এক জন শিল্পী কি অপার্থিব শৈল্পিক দক্ষতাই একা করে ফুটিয়ে তোলা হতো দুর্গা মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তিকে। মামার বাড়ির সামনেই ছিল রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত সুবীর পালের কারখানা ।সেখানেই বিভিন্ন রকম মা দুর্গার মূর্তি তৈরি করতে দেখতাম।এই যে পুজো আসছে এক একটা করে দিন গোনা আর অফুরন্ত আনন্দের দিনগুলোকে প্রাণভরে অনুভব করার প্রহর গোনা হতো। সে যেন ছিল এক অনন্য অনুভূতি। আমাদের বাড়ি যেহেতু গ্ৰামে। কিন্তু আমি ছোট থেকেই মামার বাড়ি থাকি। তাই ছোট থেকেই শহরের পুজো দেখে অভ্যস্ত।

IMG20240922155818.jpg

আমাদের পুরো শহর প্রাণবন্ত সজ্জায় সজীব হয়ে উঠতো এবং তাজা ফুলের ঘ্রাণে ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির সুবাসে মিশে যেত। মামা একটা খেলার বন্দুক আর কয়েকটা গুলির ক্যাপ কিনে দিত। পাশের দোকান গুলোর ওই বন্দুক আর গুলি ক্যাপ কিনতে যাওয়ার মধ্যে অনাবিল আনন্দ খুঁজে পাওয়া যেত। মনে হতো যেন বছরে সবচেয়ে বড় উপহার ।মহালয়ার দিন সাতেক আগে থেকেই বাড়িতে ঘর পরিষ্কার করা শুরু হতো। আনলা, খাট আরও কিছু আসবাব পত্র প্রতিবছর তাদের নিজের স্থান পরিবর্তন করত। এই দিনটি আমার কাছে একটা আলাদা উৎসব মনে হতো। এছাড়াও আলমারির সমস্ত জামাকাপড় বের করে রৌদ্রে দেওয়া। আবার সেগুলোকে গুছিয়ে তোলা এর মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ খুঁজে পাওয়া যেত।

IMG20240922155822.jpg

শরতের আকাশে পেঁজা তুলোর মত সাদা মেঘ আর দিগন্ত জোড়া কাশফুল শারদীয়ার নিখুঁত আগমনীর বার্তা নিয়ে আসতো। মহালয়ার দিন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সেই নস্যি নেওয়া বিদগ্ধ কন্ঠ বুঝিয়ে দিত মা চলে এসেছেন। সেই ভোরবেলা তে রেডিওর সামনে বসে পড়া সে কি অনাবিল আবেশ মহিষাসুর মধ্যে নেই প্রতিবার ওই একই কন্ঠ শুনতে অধীর আগ্রহে আগের রাতে চোখে ঘুম আসতো না। বলতে গেলে রাত জেগেই বসে থাকতাম। যত বড় হয়েছি সেই পুজোর গন্ধ যেন একটু একটু করে আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে গেছে, ধরে রাখার চেষ্টা করেছি মনের প্রাণে বুক দিয়ে আঁকড়ে ধরে নিতে চেয়েছি সেই গন্ধ কিন্তু কেন যেন আর আগের মত কিছুই পায় না হয়তো বয়সের ধর্ম।

IMG20240831122239.jpg

আমার মামার বাড়ি কৃষ্ণনগরে বাড়ির ঠিক পাশে বারোয়ারি তে দুর্গাপূজা হত এখনো হয় । আমার মনে আছে সারাদিন ঢাকের শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে যেন সবাইকে উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হত। নবমীর দিন এক রাতে মামা আমাকে বলেছিল ওই দেখ শোন 'ঢাক বাজছে' যে বলছে "ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ" 'ঠাকুর যাবে বিসর্জন'। এখন আর সেই আবেগগুলো কাজ করে না। কিন্তু ইচ্ছে হয় আবার সেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে ।কি অপার্থিব ভালো লাগা ছিল। বাড়িতে কত লোকজনের যাওয়া আসা হতো। অমলিন সেই স্মৃতি এক একটা করে দিন কাটতো ষষ্ঠী, সপ্তমী ,অষ্টমী ,নবমী আর এক এক করে মন খারাপের পালাও বাড়তো। একেবারে হাফ ইয়ারলি পরীক্ষা শেষ হতো পুজোর ঠিক এক সপ্তাহ আগে।

সেই পরীক্ষার পরে মামারা নিয়ে যেত জামা কিনে দেওয়ার জন্য। নতুন জামা কিনে আমি তো ভীষণ খুশি হতাম। সেই যে আমার পুজো শুরু হয়ে যেত জগদ্ধাত্রি পুজোর পর আবার থামতো। মামা,দাদু, দিদা প্রত্যেককে নিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে দিনগুলো কেটে যেত। প্রত্যেকেরই খুব আদরের ছিলাম।সেই প্রত্যেককে আমি খুব মিস করি। মাঝে মাঝে নিজের অজান্তেই চোখে জল চলে আসে ।দিনগুলোর কথা মনে পড়লে।দশমীর পরের দিন সকলকে প্রণাম করা। এইসব জিনিসগুলো তো এখন দিন দিন সবকিছুই উঠে গেছে। কেউ আর বড়দের সম্মান করতে জানে না। সেই পূজোর আবেশ রোদ্দুর আর পায় না। হয়তো জীবন জটিলতার মধ্যে সেই সারল্যের মন আজ এত জটিলতার সে যে আমায় অনুভব করতে দেয় না। শারদীয়ার সেই শৈশবের আমেজ।

ফিরে আসুক আমার সেই আবেগ । ফিরে আসুক সেই মিষ্টি গন্ধ। ফিরুক সেই নীল আকাশের মেঘ। আর আবেশ মাখা রোদ ।হারিয়ে যাওয়া এই দিন গুলো নিয়ে শৈশবকে খুঁজে চলি আমি। সেই দিন গুলোতে ফিরে যাওয়ার নেশায়।

আজ এইখানেই শেষ করছি।আবার পরবর্তী কোনো গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 60704.11
ETH 2452.38
USDT 1.00
SBD 2.62