যাদুবিদ্যার ভুলে মানুষ থেকে কুমির হলেন নদের চাঁদ

in Incredible India4 days ago
Screenshot (2014).png

Hello,

Everyone,

কেমন আছেন আপনারা সবাই?
আশা করি সকলেই ভাল আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের দিনটি ভালো কেটেছে।

আজ আমি আপনাদের নদের চাঁদের গল্প শুনাবো ।আজ থেকে ৪০০ বছর আগে যাদুবিদ্যার ভুলে মানুষ থেকে কুমির হয়ে যাওয়া নদের চাঁদের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি।মাগুরা জেলা হতে মোহাম্মদপুরের উপজেলা দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার এই অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে গেছে গড়াই,মধুমতি,নবগঙ্গা ও নির্বিষখালি নদী ।রূপ বৈচিত্র্য ও ইতিহাসের কোন কমতি নেই এই অত্র অঞ্চলটিতে।

মাগুরা জেলা হতে নদের চাঁদের ঘাটের দূরত্ব 30 কিলোমিটার।মধুমতি নদীর একটি ঘাটের নাম নদের চাঁদ এই নদীর তীরে ঘটেছিল একটি গল্প। এই গল্পটি তৈরি হয়েছিল মানুষ থেকে কুমির হয়ে যাওয়া একটি ঘটনা নিয়ে।এই গল্পটিকে,এই গ্রামের মানুষ দিনের আলোর মতো বিশ্বাস করে।

আজ থেকে চার শত বছর আগে এই গ্রামের এই অঞ্চলে স্বাধীন, নিবৃতি রাজা হলেন সীতারাম রায়। তিনি বাংলার একজন স্বশ্বাসিত রাজা ছিলেন।তিনি ছিলেন ইতিহাসের একজন নায়ক। বাংলার যে সমস্ত খ্যাতনামা জমিদার দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে ইতিহাসের পাতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে, মোহাম্মদপুরের সীতারাম রায় ছিলেন অন্যতম। রাজ্য শাসনকালীন সময়ে তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে কৃষি কাজে পারদর্শী পাহাড়ি জনগোষ্ঠী লোকদের নিয়ে আসেন নিজ শাসনাধীন অঞ্চলে। এই পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আজকের গল্পের নায়ক নদের চাঁদ।

Screenshot (2023).png

বিবাহের অনেক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও নিঃসন্তান ছিলেন চাঁদের বাবা-মা ।মন্ত্র সিদ্ধ তান্ত্রিকের তন্ত্র বলে জন্ম হয়এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের ।পিতা মাতা তার নাম রাখেন চাঁদ।পিতার মৃত্যুর পর চাঁদ তার পিতার পেশাকেই জীবন জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় ।ছোটবেলা থেকেই সে শুনেছে মন্ত্র বলে তার জন্ম হয়েছে ।তাই ছোটবেলা থেকেই মন্ত্র তন্ত্র শিক্ষার দিকে জোক ছিল তার !এই ইচ্ছা পূরণের জন্য তার মা ও স্ত্রীকে রেখে তন্ত্র-মন্ত্র শেখার জন্য পারি জমান ভারতের আসাম রাজ্যের কামরূক কামাখ্যায়। সেখানে প্রায় এক যুগ কঠোর সাধনার পর মন্ত্র সিদ্ধ হয়ে নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন চাঁদ। মানুষের বিভিন্ন উপকার ও ঝাড়পোক ছাড়াও তিনি মন্ত্র বলে বিভিন্ন পশু পাখির রূপ ধারণ করতে পারতেন। উপকারী তকদীর ছাড়া ,ম্যাজিক জাতীয় কোন কিছু দেখাতেন না তিনি। এ নিয়ে পাড়াপড়শিরা অনেক ঠাট্টা মশকরা করতো ।কিন্তু এসব কিছুকে কোন পাত্তা দিতেন না তিনি!

কোন একদিন প্রভাতে তার স্ত্রীর অনুরোধে তিনি মন্ত্র বলে কুমিরের রূপ ধারণ করেন।কুমিরের রূপ ধারণ করার আগে দুই কলস জল মন্ত্র পড়ে স্ত্রীকে বলেছিল ।,আমি কুমির হওয়ার পর পাড়া-প্রতিবেশীকে দেখিয়ে মন্ত্র পড়া জল আমার উপর ছিটিয়ে দিলেই আমি মানুষের রূপ ধারণ করব ।।কিন্তু দুর্ভাগ্য চাঁদের! আকস্মিক মানুষ থেকে কুমির হওয়া দেখে ভয়ে তার স্ত্রী চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ।তার স্ত্রীর আত্মচিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। উঠানের মধ্যে মস্ত বড় এক কুমির দেখে প্রতিবেশীরা অস্ত্র দিয়ে কুমিরকে আঘাত করতে লাগে। তাড়িয়ে দিলেন কুমির টাকে ।কুমিরটি অস্ত্রের আঘাত সহ্য করতে না পেরে ছোটাছুটি করার সময় মন্ত্র পড়ে রাখা জলেরকলস দুটি ভেঙ্গে গেল। এই মন্ত্র পরা জল কুমিরের শরীরের যে যে অংশে সেটা পড়েছিল,সেখানে বেরিয়ে আসে মানুষের রূপ ।এসব দেখে গ্রামবাসীরা হয়ে গেল স্তম্বিত।

Screenshot (2011).png

যখন তার স্ত্রীর জ্ঞান ফিরলো তখন সব কথা সবাইকে খুলে বলল।শুকে দুঃখে নেমে আসে এক হৃদয়বিদারক সকাল।গ্রামবাসী এবং চাঁদের মা চেষ্টা চালিয়েছিল চাঁদকে পুনরায় মানুষের রূপে ফিরিয়ে আনার জন্য।যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব নাজুক থাকায় চাঁদের ওস্তাদকে আনতে খুব দেরি হয়ে গিয়েছিল।ওস্তাদকে আনা হয়েছিল নদের চাঁদকে আবার পুনরায় মানুষের রূপে ফিরিয়ে আনার জন্য।ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কুমিরটি মধুমতি নদীতে চলে যায় ।কথিত আছে জলে নেমে জলজ প্রাণী আহার করায়, আর মানুষ হতে পারেনি নদের চাঁদ

একটি কথা অবাক হলেও সত্য, চাঁদের দুখিনি মা খাবার নিয়ে ঘাটে বসে চাঁদ বলে ডাক দিলে,মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ডাঙায় এসে চাঁদ খাবার খেয়ে যেত তখন খরস্রোতা মধুমতি নদীতে বড় বড় স্টিমার চলত বাণিজ্যিক কাজে ইংরেজ বণিকরা এই অঞ্চলে আসতোএকদিন ইংরেজ বনিকরা স্টিমার থেকে মধুমতির জলে কুমিরটিকে ভেসে থাকতে দেখে গুলি করা হত্যা করেন ইংরেজ বণিকরাগুলি খেয়ে মধুমতির অতলে নিমজ্জিত হয় চাঁদের মৃতদেহ আবারো সুখের অন্ধকার নেমে আসে কামার হেলা ও হরিহর নগর গ্রামে

ইতিহাসের এই ঘটনা অবলম্বনে দুই বাংলায় নির্মিত হয়েছে নাটক ,যাত্রাপালা ও সিনেমা আজ ও সেই স্থানটি চাঁদের স্মরণেমধুমতি নদের নামের সাথে মিলিয়ে নদের চাঁদ ঘাট হিসেবে পরিচিত।

Screenshot (2009).png

এই সেই বিল ,যে বিলের ধারে এসে নদের চাঁদের মা কিংবা তার পরিবারবর্গ এসে ডাক দিলে মানুষ থেকেকুমির হয়ে যাওয়া চাঁদ বিল থেকে উঠে এসে মায়ের দেওয়া খাবার খেতো ।নদের চাঁদ কুমির হয়ে যাওয়া পর থেকে এই বিলেই অধিকাংশ সময় অবস্থান করতো।নদের চাঁদ কুমির হয়ে
অত্র অঞ্চলের সকল ধর্মের সকল বর্ণের মানুষ বিশ্বাস করেন এই গল্পটি ।এই গল্পটি কোন কিংবদন্তি কিংবা রূপকথার গল্প নয় এটি একটি বাস্তব ঘটনা।

তো বন্ধুরা আমার গল্পটি আজ এখানে সমাপ্ত করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।

image.png

Thank You So Much For Reading My Blog 📖
Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 61098.42
ETH 2470.86
USDT 1.00
SBD 2.64