গল্পঃ লাশের গাড়ি (প্রথম পর্ব)
হ্যালো বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আপনারা সকলেই অনেক ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভাল আছি।
আমার নাম ফরহাদ পড়াশোনার জন্য সোনাতলীতে থাকি আমি, আমার বাসা পিরোজপুরে। সোনাতলী থেকে পিরোজপুর মোটামুটি অনেকটা দূরের পথ, যেতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা। পিরোজপুর শহরে গিয়ে আমাদের বাড়ি যেতে আরো সময় লাগে এক ঘন্টার মত গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা তাই সময়টা একটু বেশিই লাগে।
পিরোজপুর থেকে সোনাতলীর রাস্তা খুব একটা যে ভালো সেটা আমি বলবো না। সোনাতলী থেকে পিরোজপুর যাওয়ার সময় কিছুটা রাস্তা ভালো পাওয়া গেলেও মাঝ পথটা খুবই দুর্গম। বেশিরভাগ সময়ই এই পথটা বাসেই পার হই তাই খুব একটা খারাপ মনে হয় না।
তবে একবার ভেঙ্গে ভেঙ্গে সোনাতলী থেকে পিরোজপুর এসেছিলাম তখন দেখেছিলাম এই রাস্তার বাজে রূপ। খারাপ রাস্তাটুকু আমাকে পার হতে হয়েছিল সিএনজিতে করে তাই আরো অসুবিধে হয়েছিল।
বছরের শুরুতে ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদার আমি সোনাতলীতেই ছিলাম, পাশের বাড়ির লুৎফর ভাইয়ের বাবা হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে আমার কাছেই প্রথম ফোন এলো তাকে সোনাতলী মেডিকেলে ভর্তি করতে হবে।
লুৎফর ভাই দেশে থাকে না তাই সাথে করে তেমন কেউ এলো না আমাকে সব কিছু করতে হবে লুৎফর ভাই আমাকে ফোনেই বলে দিয়েছিল। আমিও দৌড়াদৌড়ি করে সেদিন মেডিকেলে ভর্তি করে দিলাম সব ওষুধ পত্র কিনে দিলাম। তারপর রাতে মেডিকেলে আর না থেকে মেছে চলে গিয়েছিলাম।
পরের দিন গিয়ে দেখি লুৎফর ভাইয়ের বাবার অবস্থা আগের দিনের থেকে আরো খারাপ হয়ে গিয়েছে। মেডিকেল থেকে বলেছে তার অপারেশন করাতে হবে। আমিও ঠিক সেভাবেই লুৎফর ভাইকে কল দিয়ে সবকিছু খুলে বললাম। লুৎফর ভাই ও কথা অনুযায়ী টাকা পাঠিয়ে দিলেন আমিও মেডিকেলে টাকা জমা করে দিলাম অপারেশন করানোর জন্য।
অপারেশন করার টাকা জমা দিয়েছিলাম দুপুরের দিকে তার অপারেশন হবে বিকেলে তাই আমি আমার অন্য কিছু কাজের জন্য মেডিকেল থেকে একটু দূরে গিয়েছিলাম। লুৎফর ভাইয়ের এক দুঃসম্পর্কের চাচা এসেছিলেন মেডিকেলে থাকার জন্য তার বাসা সোনাতলীতেই।
তারপর আমি রাতের দিকে বাসায় ফেরার আগে চিন্তা করলাম একবার মেডিকেলের দিকে যাওয়া যাক। তথ্যর ভাইয়ের বাবাকে দেখে মেছে ফিরব। এই চিন্তা করে একটি সিএনজি নিয়ে মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কয়েকবার লুৎফর ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম ব্যস্ততার কারণে সে হয়তো ফোন রিসিভ করতে পারেনি।
মেডিকেলে যেতেই যে খবরটি আমার কানে এলো সেই খবরটি শোনার জন্য আমি একটুও প্রস্তুত ছিলাম না। লুৎফর ভাইয়ের বাবা নাকি অপারেশনের বেডেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এটা শুনে যেন আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।
তারপর লুৎফর ভাইকে খবরটি জানানোর জন্য কয়েকবার ফোন দিলাম কিন্তু তখনও তিনি ফোন রিসিভ করলেন না। তারপর লুৎফরের চাচার কাছে জানতে পারলাম এখনো লুৎফর ভাইয়ের কাছে খবর দেয়া হয়নি।
লুৎফর ভাইকে তাড়াতাড়ি খবরটি দিতে হবে, কারণ তাকে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসতে হবে। আসতে পারবে কিনা এটারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই। তবু আমাকে চেষ্টা তো করতে হবে। তারপর বাবার লাশ পিরোজপুরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে কথা।
পিরোজপুর থেকে লুৎফর ভাইয়ের ছোট চাচা আমাকে ফোন দিয়েছিলেন তিনি বললেন রাতে আর দেরি করে লাভ নেই মেডিকেল থেকে থেকে একটা লাশ নেয়ার গাড়ি ঠিক করে আজকেই লাশকে পিরোজপুর নিয়ে যেতে বলছেন তিনি। এদিকে লুৎফর ভাইয়ের কেন খবরটি চলে গিয়েছে তিনি আমাকে ফোন দিয়ে অনেকক্ষণ কান্নাকাটি করে কথা বললেন আর বললেন তার বাবার লাশটাকে যেন আমি পিরোজপুরে নিয়ে যাই।
তখন অনেকটা রাত হয়ে গিয়েছে বাহিরে গিয়ে লাশের গাড়ির ড্রাইভারকে খোঁজাখুঁজি করছিলাম। কিন্তু চারিদিকে খুঁজে কোথাও তাকে পেলাম না। শেষমেষ সামনে একটু এগোতেই একটি চায়ের দোকানে তাকে পেলাম। পাগলের মতো দেখতে হ্যাংলা পাতলা একজন লোক তিনি এই লাশের গাড়ি চালান। রাত হয়েছে তাই প্রথমে তিনি রাজি হয়নি কিন্তু পরক্ষণেই একটু বেশি টাকার দাবি করে রাজি হয়ে যায়।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
চলবে ভাই পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম আশা করি আপনি বাকি পর্ব গুলো দিবেন আর আমরা মনোযোগ সহকারে পরবো ৷ গল্প পড়তে ভালোই লাগে ৷
ধন্যবাদ মাহির ভাই ৷
অবশ্যই, খুব শীঘ্রই পরবর্তী পর্ব পোস্ট করব। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
গল্পের নামটা শুনে একটু চমকে গেলাম, নিশ্চয়ই কোন ভৌতিক গল্প হবে। গল্পের এই অংশ তো ঠিকঠাক ছিল। জানিনা আগামী অংশে কি হবে। তবে অপেক্ষায় রইলাম নিশ্চয়ই খুব তাড়াতাড়ি পাব। অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা গল্পের প্রথম পাঠ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আপু খুব শীঘ্রই পোস্ট করে দেব।