নিজের আর্নিং থেকে ডায়মন্ড রিং
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে এক অবান্তর ঘটনা শেয়ার করতে চলেছি, প্রথমত বলতে চাই আজকে যে এরকম কিছু একটা ঘটবে আমার ধারনার বাইরে ছিল। আমার মনে হয় আমাদের প্রত্যেকদিনের জীবনে কি হতে চলেছে তা আমরা এক সেকেন্ড আগেও টের পাইনা ,কিছু কিছু জিনিস আমার সাথে মাঝেমধ্যে এরকম হয় যে আমি সত্যিই অবাক হয়ে যাই, সেগুলো হওয়ার পর ,কালকের এই ঘটনাটাও তার মধ্যে একটা।
গতকাল রবিবার ছিল। রবিবারের দিন ছুটি থাকে। আর আমাদের শোরুমে রবিবার ,শনিবার নাগাদ বেশি ভিড় হয়। তাও যবে থেকে কুম্ভ মেলা শুরু হয়েছে, তবে থেকে ভিড় কম। সকালবেলা থেকেই ভেবে রেখেছিলাম আজকে একটু রিলাক্সে সময়টা কাটাবো। সেইমতো ভেবেই সকাল থেকে স্নান করে খাওয়া দাওয়া করে শোরুমে গিয়ে কিছু কাজ সেরে নিলাম। তারপরের কিছু মুহূর্ত নিয়ে পরে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
দুপুরের দিকে যেখানে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ফেরার পথে আমি ঢুকেছিলাম একটা জুয়েলারির দোকানে। সকাল থেকে ভেবে রেখেছিলাম যে একবার সময় করে জুয়েলারির দোকানে যাব।যেহেতু এখন ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল উইক চলছে, তাই একবার জুয়েলারির দোকানগুলোতে ভিজিট করব ,কোথায় কি অফার চলছে সেটা দেখব এবং দরকার পড়লে স্কীম করে নেব কোনরকম। গত মাসে যেভাবে টাকা পয়সা খরচ হয়েছে,আমার পক্ষে কোন জিনিস কেনা এখন একেবারেই সম্ভব নয়।
তাই ভেবেই রেখেছিলাম গিয়ে কোনরকম স্কিম করবো। তবে জিনিস কিনব না ।কারণ সত্যি বলতে ভারী সোনা কেনার মত টাকা একদম নেই বললেই চলে এখন আমার হাতে।আর বাবা মায়ের থেকে টাকা নিয়ে নিজের সখ মেটানোর পাবলিক আমি একেবারেই নই । নিজের আর্নিং থেকে সব সময় সখ পূরণ করার চেষ্টা করি ।
যাইহোক প্রথমেই দোটানাতে ভুগছিলাম যে কোথায় ঢুকবো, কারণ একই জায়গায় পরপর দুটো জুয়েলারি শপ- একটা রিলায়েন্স জুয়েল, আরেকটা হল তানিস্ক।পাশাপাশি দোকান দুটো দেখলেই এই দোটানা হয়ে থাকে যে কোথায় ঢুকবো, প্রথমেই ঢুকলাম রিলায়েন্সে, ইচ্ছা ছিল প্রথম থেকেই হীরের আংটি দেখার।
এর আগেও এখানে অনেকবার এসেছি, তবে আমার জীবনে আমার বেশিরভাগটাই সোনা কিনেছি ।তবে কোনদিনও হীরের জিনিস কেনা হয়নি। নোস পিন ছাড়া।আমাদের বাড়ির লোক হীরে নিয়ে অত মাতামাতি করেনা। কারণ সোনার যেভাবে দাম বাড়ছে ,তাতে সোনা কিনতেই সবাই ভালোবাসে। সোনার জিনিস -এ ইনভেস্ট করে রাখাও ভালো বলে ।
কিন্তু আমার অনেকদিন আগে থেকেই সখ যে নিজের জন্য নিজের টাকা পয়সা থেকে হীরের একটা আংটি কিনব ,কিন্তু বেশ ভালো দেখে। সেইমতো হীরের সেকশানে গিয়ে হীরের আংটি দেখতে লাগলাম। প্রথম থেকে ইচ্ছা ছিল সলিটার অর্থাৎ একটা হীরে দেওয়া আংটি কিনব। কিন্তু ক্লাস্টার ডিজাইনগুলো এত সুন্দর লাগছিল যে,সেগুলোও দেখছিলাম।
ঘাটতে ঘাটতে এমনই হল যে পছন্দ হতে লাগলো। অবশেষে যে আংটিটা পছন্দ করলাম , সেটা একদম আমার মন মত নয়। আমার হাতে গোল জাতীয় আংটি বেশি মানায়, এটা যেহেতু চৌকো ছিল, তাই কিছুতেই আমার নিতে ইচ্ছা হচ্ছিল না ।
এদিকে টাকা পয়সার সমস্যা রয়েছে। স্কিম করতে এসে কি করে কিনি। কি থেকে কি হল ,ওই মুহূর্তগুলোতে আমি নিজেও এখনও ভেবে ঠিক ঠিকানা পাচ্ছি না। আমি আংটিটা বুক করে ফেললাম ১১ হাজার টাকা দিয়ে। তারপরে আমার মাথায় বাঁশটা চাপল ,যে কিভাবে বাকি টাকাটা শোধ করবো।
এদিকে বিল ৪০ হাজারের ওপরে । হীরেটা যেমন সুন্দর দেখতে, এর কালার ও ক্লিয়ারিটিও অনেক বেটার ছিল। টোটাল ৩৩ টা ছোট ছোট ডায়মন্ড ক্লাস্টার করা রয়েছে। ১৮ ক্যারেটের সোনার সাথে হীরে বসানো। হীরের ওয়েট - 0.300 ক্যারেট।
বুক করে বাড়ি চলে এলাম আর তারপরে আবার টাকা-পয়সা গুছিয়ে নিয়ে খানিক বাদে আবার ছুটলাম আংটিটাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে। আংটিটা ওরা খুব সুন্দর করে প্যাক করে দিল । ডায়মন্ডের জন্য সার্টিফিকেট দিল এবং খুব সুন্দর করে বিল করে দিল।
এর মাঝে আমার যেটা ভুল হয়েছে, আমি একবারও মাকে বা বাবাকে ফোন করিনি। আমি জানতাম ওদের বললে ওরা কিছুতেই রাজি হতো না। প্রথমেই বলতো তুই সোনা কেন। তাই এই কারণে আমি ফোন করিনি। তবে আমার উচিত ছিল ওই মুহূর্তে দাঁড়িয়েই মাকে একটা ফোন করা। সেটা এখন বুঝতে পারছি।
এই প্লাটফর্মে স্টিম কয়েনের দাম যেভাবে কমে রয়েছে ,এই অবস্থায় স্টিম বিক্রি করে ইন্ডিয়ান মানিতে কনভার্ট করা একদম বোকামির কাজ। কিন্তু আমি কিছুতেই চাইছিলাম না যে, মা-বাবার কাছ থেকে টাকা নেব। তাই আমার উপায় ওই একটাই ছিল। যাই হোক টাকার বন্দোবস্ত করে আংটিটা বাড়িতে তো এনেছি। নিজের সখ মিটেছে ,তবে অনেক অনেক আফসোসও আছে সাথে।
একটা ভালো জিনিসের পিছনে যখন ইনভেস্ট করছি ,তখন পুরোপুরি ১০০% পছন্দ হলেই সেটা কেনা উচিত ছিল। তখন যাকে সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম সে এতবার জোর করছিল ,এটা নেওয়ার জন্য, তাই আমি নিয়ে নিলাম। নাহলে আরো কিছু টাকা বেশি দিয়ে যদি একটা সলিটরি স্টোন দেখা যেত ,ভালো হতো। ভগবান যেটা চেয়েছে সেটাই দিয়েছে যেটা আমার হওয়ার ছিল ,সেটাই হয়তো হয়েছে।
কিন্তু পরবর্তীকালে এক্সচেঞ্জ করে আমি আমার পছন্দমত আরো অনেক কিছু দেখতে পারি। ওই সময় ডায়মন্ড ভ্যালু সেম থাকবে, তাই আপাতত এটা দিয়েই কাজ চালিয়ে নিই।
তবে গতকাল নিজেকে নিজে এইভাবে একটা গিফট করব ,আমি ভাবতেই পারিনি। এসব কিছুর পেছনে এই প্লাটফর্মের সাপোর্ট অনেক অনেক দায়ী। কারণ এই প্ল্যাটফর্ম সাপোর্ট দিয়েছে বলেই আমি আমার সখগুলো মেটাতে পারি এবং শখ করে কাছের মানুষদের কিছু কিনেও দিতে পারি। তাই আপনাদের সকলকে এবং এই প্ল্যাটফর্মকে আমার তরফ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা।
আমার জীবনে আমার নিজের আর্নিং থেকে নিজের জন্য প্রথম হীরের আংটি আমি কোনদিনও ভুলবো না। এটা আমার কাছে অনেক অনেক দামী।
The ring looks perfect and beautiful on your finger.
আসলে নিজের জন্য নিজে কিছু করতে পারাটা অনেক আনন্দের। নিজের কষ্টের অর্থ দিয়ে নিজের সখ গুলো পূরণ করাটাও একটা চ্যালেন্স। এই মুহূর্ত গুলো সারা জীবন নিজের কাছে স্বরণীয় হয়ে থাকে।
আমি নিজেও স্টিমিট প্লাটফর্মের কাজের টাকা দিয়ে নিজের পড়াশুনা চাচ্ছি,,গত বছর নিজের বোনের বিয়ে দিয়েছি, টিউশনির টাকা দিয়ে মা কে একটা সোনার রিং উপহার দিয়েছি এরকরম অনেক কিছু করছি৷ যা আমার কাছে সব সময় আনন্দের।
আপনার পোষ্টটা পরে আমার অনেক ভালো লাগল। এভাবেই নিজের সখ পূরণ করে যান, পরিবারকে সাহায্য করেন।
আংটিটা দেখতে অনেক সুন্দর লাগতেছে। ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা আনন্দ ময় মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই গল্পটি সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক,একজন ব্যক্তির নিজের পরিশ্রম এবং আয়ের মাধ্যমে নিজের শখ পূরণ করার অনুভূতি একেবারে আলাদা। এই ধরনের মুহূর্তে যে আত্মবিশ্বাস এবং আনন্দ পাওয়া যায়, তা অনেক মূল্যবান। অনেকেই নিজেদের পরিবারের জন্য কিছু করতে চান, এবং আপনি যে নিজের আয় থেকে নিজে কিছু অর্জন করেছেন, তা খুবই গর্বের বিষয়। আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনার আকস্মিক ঘটনা টা অনেক সুন্দর ছিল।আসলে ভালো কিছু হঠাৎ করে পাওয়ার আলাদা একটা মজা আছে।
আপনার অভিজ্ঞতা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। নিজের আনিং থেকে হীরের আংটি কেনার সিদ্ধান্ত এবং সেটি নিজের জন্য উপহার হিসেবে গ্রহণ করা সত্যি একটি অসাধারণ অনুভূতি। আপনার সখ পূরণের জন্য আপনি যে পরিশ্রম করেছেন এবং নিজের সম্মান ধরে রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সত্যি প্রশংসনীয়।যদিও আপনি আন্টিটি পুরোপুরি পছন্দ না করেছেন তবু এটা আপনার জীবনে একটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে। আশা করি ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু খুঁজে পাবেন এবং আরো সফল্যতা অর্জন করবেন।