হঠাৎ করেই মায়াপুর
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। কিছুদিন আগেই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম আমি আর আমার এক দিদি মিলে হঠাৎ করে বেরিয়ে নার্সারি ঘুরে এসেছিলাম। সেদিনকেই প্ল্যান করে বিকেল বেলায় আবার ঘুরতে বেরোনো হয়েছিল। আপনাদেরকে দেখাবো বলে আমি সেদিন অনেকগুলো ছবি তুলে রেখেছিলাম। আজকে সেটাই শেয়ার করছি।
আসলে আমাদের শহর কৃষ্ণনগর থেকে মায়াপুর যেতে খুব কম সময় লাগে। আমাদের গাড়ি করে যেতে মোটামুটি ৩০ মিনিট অথবা তার কিছুটা কম সময় লাগে। তাই মাঝেমধ্যেই আমরা সময়ে পেলে অবসরে মায়াপুরের দিকে ঘুরে আসি। বাড়িতে অতিথি আসলে প্রথমে আগে মায়াপুর যাওয়ার টার্গেট থাকে। এছাড়াও আমাদের সময় সুযোগে আমরা ওই জায়গাটাই বেছে নিই।
মায়াপুর সম্পর্কে আপনারা তো অনেকেই জানেন। তাও কিছুটা আপনাদের ইনফরমেশন জানাই। প্রাচীন মায়াপুর অর্থাৎ নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বৈষ্ণব ধর্মের আদি প্রবর্তক। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধার সম্মিলিত রূপ হিসাবে অনেক জায়গায় বলা হয়ে থাকে। বিশেষ করে বৈষ্ণব পদাবলীতে এর কথা বহুবার বলা হয়েছে। বৈষ্ণব কবি গোবিন্দ দাসের লেখায় বর্ণনা পাওয়া গেছে অনেকবার।
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু হরিনাম সংকীর্তনের প্রচার করে গেছেন এবং প্রেম ধর্মের কথা বলে গেছেন। এ কারণে আমাদের নবদ্বীপ এবং মায়াপুর ভীষণ পরিমাণে বিখ্যাত। পরবর্তীকালে যখন শ্রীল প্রভুপাদ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সনাতন ধর্মের প্রতিষ্ঠান তৈরির সূচনা করেছিলেন এই মায়াপুরে, যা আজ ইস্কন টেম্পেল নামে বিশ্ব বিখ্যাত,এরপর থেকেই মায়াপুর প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বজুড়ে।
মায়াপুরকে এবং নবদ্বীপকে এখন আমাদের হিন্দু সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় পিঠস্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এখনও পর্যন্ত মায়াপুরের ইস্কন টেম্পেলের উদ্যোগে অনেক বড় প্রজেক্টের কাজ চলছে। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ এই ধর্মে দীক্ষিত হয়ে মায়াপুরে হরিনাম সংকীর্তন এ লিপ্ত থাকে এবং তারা নিজের জীবনকে এই নামেই উৎসর্গ করে দিয়েছেন।
এই মায়াপুরে যবে থেকে মন্দির স্থাপনা হয়েছে তবে থেকে অখন্ড হরিনাম সংকীর্তন চলতে থাকে সারা বছর ধরে এবং সকলে হরি নামে বিভোর হয়ে কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে যায়।
মায়াপুরে যারা পর্যটক সারা পৃথিবী থেকে আসেন ,তাদের থাকা খাওয়া এবং প্রতিদিন প্রসাদের ব্যবস্থা এবং সব রকম ব্যবস্থা এখানে অ্যাভেলেবেল। বিশ্বের কোণায় কোণায় ইস্কন টেম্পেলের শিষ্যরা ছড়িয়ে আছেন।
যাইহোক সেদিন হঠাৎ সুযোগ পেয়ে আমি, মা, দিদি এবং আমার জেঠি মিলে চলে গিয়েছিলাম আমাদের গাড়ি করে মায়াপুর দর্শন করতে। বাড়ির কাছে থাকায় আমরা যখন মন চায় সন্ধ্যা আরতিতে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করি। সারাদিন সকাল থেকে মন্দিরে মন্দিরে পুজো চলতে থাকে মায়াপুরে, কিন্তু আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দের সময় হল এই সন্ধ্যার সময় ,কারণ এই সময় ইস্কন টেম্পেলের মেন মন্দিরে খুব সুন্দর ধুমধাম করে সন্ধ্যা আরতি হয়।
সেই মুহূর্তে প্রত্যেকটি মানুষ প্রত্যেক ভক্তরা কৃষ্ণ নাম সংকীর্তনে চারিপাশের পরিবেশ ভরিয়ে তোলে। মেন মন্দিরের প্রবেশ করার সময় দর্শনার্থীদের কাছ থেকে সমস্ত রকম গ্যাজেট জাতীয় জিনিস নিয়ে নেওয়া হয়, এ কারণে আমি মেন মন্দিরের কোন রকম ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম না।
তবে মেন মন্দিরের দুটো আলাদা পোর্শনে ভাগ করা রয়েছে একটিতে রাধা কৃষ্ণ এবং তার অষ্টসখী বিরাজমান এবং মূর্তিগুলি পাথরের তৈরি। প্রত্যেকদিন নানান নতুন নতুন শয্যায় তাদের সজ্জিত করা হয় এবং সন্ধ্যা আরতির পর তাদের শয়নের ব্যবস্থা করা হয়।
এবং আরেকটি ভাগে রয়েছে পঞ্চতত্ত্ব অর্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, নিত্যানন্দ মহাপ্রভু, অদ্বৈত মহাপ্রভু, শ্রীনিবাস মহাপ্রভু, গদাধর পন্ডিত। মূর্তি গুলি অষ্টধাতুর তৈরি। এছাড়াও আরেকটি ভাগে নৃসিংহদেবের মূর্তি সুসজ্জিত।
যাইহোক আজ এখানেই শেষ করছি, পরের আরোও কথা আগামীকাল শেয়ার করব।
খুব সুন্দর দৃশ্য। আমার কাছে খুবই ভালো লাগলো আপনার এই সুন্দর সুর। ঘোরাফেরা করলে আমাদের মন ভালো হয়ে যায়। কিছু সময় ঘোরাফেরা করলে আমাদের শরীর ভালো থাকে। সুন্দর লেখাটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
হঠাৎ করে মায়াপুর যাবার গল্পটা খুব ভালোভাবেই শেষ করছেন আর এর মধ্য দিয়ে আমরা অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম যেমন,
হিন্দু সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় পিঠস্থান হিসাবে চিহ্নিত করা হয় মায়াপুরকে। দিদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মায়াপুর সম্পর্কে খুব সুন্দর একটি আর্টিকেল আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য।
হঠাৎ করে ঘোরাঘুরি করার আনন্দ টি অন্যরকম হয়। মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে কিছুটা আনন্দ চলে আসে যে আনন্দ গুলো আমাদের স্মৃতি হয়ে থাকে। আপনি আজ হঠাৎ করে মায়াপুর ঘোরাঘুরি করার মুহূর্ত আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। এবং সেখানে গিয়ে অবশ্যই আপনি অনেক আনন্দ অনুভব করেছেন।