রাধাষ্টমী
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজ ছিল রাধা অষ্টমী অর্থাৎ শ্রীরাধিকার জন্ম তিথি বা জন্মদিন। আমরা হিন্দু ধর্মে যেমন কৃষ্ণের জন্মদিন পালন করি। যেটাকে জন্মাষ্টমী বলে ।তেমন আমাদের রাধা অষ্টমী পালন করা হয়। এ দিনকে শ্রীরাধার জন্ম হয়েছিল তাই শ্রী রাধিকাকে আরাধনা করে আমরা এই রাধা অষ্টমী পালন করে থাকি ।এক একজন বাড়িতে এক এক রকম ভাবে নিজেদের মন মতন সাজিয়ে গুছিয়ে যতটা সাধ্য তাদের মতন ভোগ রান্না করে রাধারানীর পুজো করে। শ্রী রাধিকাকে লক্ষী বলা হয়। কারণ কৃষ্ণ হলেন নারায়ণের রূপ এবং শ্রী রাধিকা হলেন তারই অঙ্গ।
আমার বাড়িতে ছোট্ট একটি গোপাল ঠাকুর আছে। আপনাদের সাথে তার অনেকদিন আগেই পরিচয় করিয়েছি। জন্মাষ্টমীর সময় আপনাদের অনেক অনেক পোষ্টের মাধ্যমে সমস্ত কিছু শেয়ার করেছি। কিন্তু আমার আফসোস আমার বাড়িতে রাধা কৃষ্ণ যুগল কোন মূর্তি রাখা হয়নি এখনো অব্দি অথবা কোন বিগ্রহ রাখা হয়নি।
আসলে মূর্তি রাখলেই হয় না। তার অনেক নিয়ম কানুন থাকে। পূজা অর্চনার নানান রকম নিয়ম রয়েছে। ভোগ নিবেদনেরও অনেক ধরনের নিয়ম রয়েছে। আর যেহেতু আমাদের ঠাকুর ঘর এখনো ফিনিশ হয়নি, তাই এখনই বিগ্রহ কিংবা রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তির কথা আমরা চিন্তা করিনি।
তবে আমার বাবার ভীষণ ইচ্ছা পাথরের রাধাকৃষ্ণের একটি মূর্তি বাড়ির মন্দিরে স্থাপন করবেন। যাই হোক আসলে রাধা কৃষ্ণের মূর্তি থাকলে দেখতেও অনেক সুন্দর লাগে ।সবাই বলে এই কলিযুগে হরি সবকিছু ।হরিছাড়া এই কলিযুগ উদ্ধার হবে না ।অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণের নাম নিলেই সমস্ত কিছু উদ্ধার হবে। তাই সবকিছু আগে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি নিজেকে নিবেদন করা অত্যন্ত জরুরী ।
বাড়িতে আমার ঠাকুমা এতগুলো ঠাকুর রেখে গেছে, প্রত্যেকটা ঠাকুরকে ভাগে ভাগে ভোগ নিবেদন করতে হয়। আর এ যে কি পরিশ্রমের কাজ ,তা আপনাদের বলে বোঝাবার নয়। পুজো শুধু তো করলেই নয়। নিয়ম-কানুন মেনে ধীরে সুস্থে ভক্তিভরে পূজা করতে হয়। তাই এখন অব্দি বাড়িতে বিগ্রহ কিংবা পাথরের মূর্তি আনা হয়নি।
তাই আমাদের রাধাষ্টমীর সময় আমরা রাধা কৃষ্ণের একটি যুগল ছবিতেই পুজো করে থাকি। জন্মাষ্টমীতে যেমন ছোট্ট গোপালকে পুজো করা হয়। ঠিক সেইভাবে আজকে সকাল থেকেই আমি সেই কাজে ব্যস্ত ছিলাম ।সকালবেলায় স্নান সেরে উঠেই পূজোর ঘরে ঢুকেছি ।তারপর শুরু করে দিয়েছি রান্না।রাধারানীর জন্য আমাদের বাড়িতে আজকে কলার বড়া, পায়েস ,লুচি, নিমকি ,পাঁচ রকম ভাজা, নানা ধরনের মিষ্টি এবং ফল নিবেদন করা হয়েছে। এর সাথেই মা শখ করে বাদাম ভাজা ,ছোলা ভাজা, চালভাজা ,চিরেভাজা সমস্ত কিছুই দিয়েছে।
সকাল থেকে রান্না গুলো মিটিয়ে নিয়ে তারপরে ঠাকুরকে অভিষেক করিয়ে ঠাকুরের আসন সুন্দর করে সাজিয়ে পুজো করতে বসলাম। আমি, সাথে ছিল আমার মা এবং পাশের বাড়ির কাকিমা। আমরা রাধারানী কে স্মরণ করে তার প্রণাম মন্ত্র জপ করলাম, এর সাথে তার ১০৮ টা নাম পাঠ করলাম, এর সাথেই আমরা কৃষ্ণ নাম সংকীর্তন গাইলাম। সবাই মিলে হরিনাম গাইতে সত্যিই খুব ভালো লাগে।
সবকিছু শেষ করে যখন উঠলাম তখন দুপুর দুটো বাজে, তারপরে সমস্ত প্রসাদ ভাগ করে নিলাম এবং সকলকে প্রসাদ বিতরণ করলাম। এভাবে আমার আজকের সকালে রাধাষ্টমী সুন্দরভাবে কেটেছে। আপনাদের সকলের সাথে আমার এই সুন্দর দিনটি শেয়ার করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগলো। আমার ইচ্ছা আছে রাধার জন্ম বৃত্তান্ত সংক্রান্ত ব্যাপারে আপনাদের সাথে কাহিনী গুলোকে শেয়ার করার। আজকে এখানেই শেষ করছি। সকলে সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন। রাধে রাধে।