গোকুল পিঠে তৈরির রেসিপি

in Incredible India12 hours ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। শীতকাল মানেই নানান ধরনের মজার মজার খাওয়া দাওয়া। কারণ মানুষ শীতকালে আর বর্ষাকালে ঠিকভাবে একটু খাওয়া দাওয়া করতে পারে। বেশিরভাগ সময় যেহেতু আমাদের এখানে গরম বেশি থাকে , আর এটা খুব স্বাভাবিক যে গরমের মধ্যে খাওয়া-দাওয়া করে শান্তি পাওয়া যায় না। নানান রকম সমস্যা হতে থাকে। আমার তো এই কারণেই মনে হয় যে মানুষ শীতকালে আর বর্ষাকালে খাওয়া দাওয়া করে শান্তি পায়।

শীতকাল মানেই পিঠে। ছোটবেলা থেকে আমরা বাঙালিরা দেখে বড় হয়েছি যে শীতকাল এর পৌষ পার্বণের দিন কিভাবে পিঠে উৎসব পালন করা হয় আমাদের বাঙালির ঘরে ঘরে।। শীতকাল এলো মানে পিঠে তৈরি হওয়া শুরু হয়ে যায়, প্রত্যেকটা বাড়িতে। পৌষ পার্বণ পালন করার জন্যই আমাদের মায়েরা,দিদা ,ঠাকুমারা নানান ধরনের পিঠে তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। তাদের কাছ থেকে এই শিখে শিখে বড় হয়েছি আমিও।

এখন রান্নাঘর ছেড়ে দিলে কত রকমের যে পিঠে করে দেখাতে পারব তার ঠিক নেই। তার ওপর এখন অনলাইনের যুগ। মানুষ এখন নিত্যনতুন রেসিপি ইউটিউবে দেখে নিচ্ছে। তাই যারা পিঠে করতে জানেনা তারাও শিখে গিয়েছে। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে আমার খুব পছন্দের একটি পিঠের রেসিপি শেয়ার করতে চলেছি।

20250114_174505.jpg

আমি সাধারণত ছোটবেলা থেকে পাটিসাপটা পিঠে খেতে বেশি ভালোবাসি। এছাড়া আমার মায়ের হাতের তেলের পিঠে আমার বেশ ভালো লাগে। এই তেলের পিঠা কেই যদি চিনির শিরাতে ডুবানো যায় তাহলে সেটা হয়ে যায় মালপোয়া। যাই হোক আমি পাটিসাপটা আর তেলের পিঠে পেলে আর কিছু চিনি না। কিন্তু এর সাথেই আমার নিজের হাতের বানানো গোকুল পিঠে আমার খুব পছন্দের।

আমার মাকে আমি কখনো গোকুল পিঠে বানাতে দেখিনি। এমনকি আমার বাড়িতে ও কখনো গোকুল পিঠে হয়নি। তবে কিছু বছর আগে এক কাকিমার কাছ থেকে আমি এই পিঠে সম্পর্কে জানতে পারি এবং একটা অনুষ্ঠানেও শীতকালের দিকে আমি এই পিঠে খেয়েছিলাম, তারপর থেকেই আমার এই পিঠের প্রতি লোভ। সেখান থেকেই আমার রেসিপি সম্পর্কে আগ্রহ এবং আমি সেই রেসিপি শিখে নিই। তারপর থেকে আমি নিজেই সেভাবেই শীতকাল আসলে বাড়িতে গোকুল পিঠে বানাই । আমার বাবা আমার হাতের এই পিঠে খেতে খুবই ভালোবাসে। তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে এই পিঠে তৈরি করতে হয়। প্রথমেই আগে উপকরণগুলো দেখে নিই।

উপকরণ
নংসামগ্রীপরিমাণ
ময়দাএক কাপ
চালের গুঁড়াহাফ কাপ
খেজুরের গুড়ছোটো হাফ কাপ
দুধপরিমাণ মত
নারকেল কোরাদেড় কাপ
মাখা সন্দেশহাফ কাপ
খেজুরের গুড়ছোট হাফ কাপ
চিনিএক কাপ
জলপরিমাণ মতো
১০এলাচ৪ টে
১১সাদা তেলপরিমাণ মতো

প্রথম ধাপ

প্রথমেই গ্যাসে কড়াই বসিয়ে দিলাম। তার মধ্যে দিয়ে দিলাম মাখা সন্দেশ। আর তাতে দিয়ে দিলাম নারকেলকোরা। ভালোভাবে সবকিছু মিশিয়ে নেওয়ার পরে, দিয়ে দিলাম খেজুরের গুড়। এবার গ্যাসের ফ্লেম মিডিয়াম থেকে হাইয়ে রেখে নাড়াচাড়া করতে থাকবো।

20250211_181710.jpg

দ্বিতীয় ধাপ

নাড়াচাড়া করতে করতে সমস্ত জিনিস যখন ভালোভাবে মিশে যাবে বেশ সুন্দরভাবে জমাট বাঁধতে থাকবে মিশ্রণটা। যেহেতু এখানে খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হবে তাই আখের গুড়ের মতন অতটা টাইট না হলেও কিছুটা টাইট হয়ে যাবে।

20250114_160733.jpg

তৃতীয় ধাপ

এরকম হয়ে যাওয়ার পরে একটা থালাতে মিশ্রণটা তুলে নিয়ে হাতের তালু সাহায্যে ছোট ছোট করে এরকম লেচি করে রাখব। এটাই আসলে গোকুল পিঠের পুর। গরম অবস্থাতে হাতে তেল মাখিয়ে নিয়ে করে ফেলতে হবে। আর না হলে পরে ঠিকঠাক সেপ দেওয়া যাবে না। হাতে সরষের তেল মাখিয়ে নিয়ে হাতের তালু সাহায্যে প্রেস করে এরকম পাতলা পাতলা গোল বানিয়ে নেব।

20250211_181751.jpg

চতুর্থ ধাপ

একটা পাত্রে ময়দা আর চালের গুঁড়ো নিয়ে নিলাম। সবকিছুর পরিমাণ উপকরণের লিস্ট দেয়া রয়েছে। তাই অসুবিধা হলে লিস্ট একবার দেখে নেবেন।

20250211_181824.jpg

পঞ্চম ধাপ

তাতে দিয়ে দেব পরিমাণ মতো গুড়। এরপর ভালোভাবে মিশিয়ে নেব। এবার পরিমাণ মতো দুধ দিয়ে একটা পাতলা ব্যাটার তৈরি করে নেব। ব্যাটারটা পাটিসাপটার ব্যাটার এর মতনই অনেকটা হবে। খুব বেশি গাঢ় হবে না, আবার খুব বেশি পাতলাও হবে না।

20250211_181856.jpg

ষষ্ঠ ধাপ

এবার কড়াই বসিয়ে তাতে দিয়ে দেব সাদা তেল। ডুবো তেলে যেহেতু ভাজতে হবে। তেল গরম হওয়ার জন্য রেখে দেব। এই সময় গ্যাসের ফ্লেম মিডিয়াম থেকে হাইয়ে থাকবে।

20250114_170057.jpg

সপ্তম ধাপ

নারকেলের যে পুর আমরা তৈরি করেছিলাম সেগুলো একটা একটা করে এই পাতলা বেটারের মধ্যে ডুবিয়ে সেটাকে তেলের মধ্যে ছেড়ে দেব। যেভাবে ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন ঠিক সেভাবে। এক একটা ব্যাচে অনেকগুলো করেই আপনারা ছাড়তে পারবেন।

20250211_182005.jpg

অষ্টম ধাপ

গ্যাসের ফ্লেম এবারে একদম মিডিয়ামে রাখুন। তারপর ভালোভাবে প্রত্যেকটা পিঠে ভেজে নিন। আর ভাজা হয়ে গেলে তেল থেকে একদম ছেঁকে তুলে রাখুন।

20250211_182039.jpg

নবম ধাপ

যেহেতু চিনির শিরা তৈরি করতে হবে তাই একটা কড়াই এ দিয়ে দিচ্ছি চিনি আর জল। মিডিয়াম থেকে হাই ফ্লেমে রেখে চিনিটাকে পুরো জলের সাথে মিশতে দেব। হাই ফ্লেমে এবার দিয়ে আরো ভালোভাবে ফুটতে দেব। দেখতে দেখতে চ্যাট চ্যাটে শিরা তৈরি হয়ে যাবে। গোকুল পিঠের জন্য শিরা কিন্তু অতিরিক্ত টাইট হয় না। জিলিপির জন্য যে শিরা তৈরি হয় তার থেকেও পাতলা হয়।এটা মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। তৈরি হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দেব।

20250211_181926.jpg

দশম ধাপ

এবারে প্রত্যেকটা পিঠে চিনির শিরার মধ্যে ডুবিয়ে রাখব। প্রথম একটা পাঁচ মিনিট রাখার পরে পুনরায় উল্টে দেব। আর এভাবে রসটা যেন পিঠের মধ্যে চলে যায়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

20250114_170553.jpg

একাদশ ধাপ

তারপরে সবকটা পিঠেই চিনির রসের মধ্যে দিয়ে মোটামুটি এক ঘন্টার জন্য রেখে দেবো।

20250114_171143.jpg

রেডি

আর এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু গোকুল পিঠে। এবার আপনারা রস থেকে একটা একটা করে পিঠে তুলে সকলকে সার্ভ করতে পারেন।

20250211_181454.jpg


আশা করছি আপনাদের সকলের এই রেসিপি অনেক অনেক ভালো লেগেছে। আমার কাছে এই পিঠের স্বাদ আমার মুখে সারা বছর লেগে থাকে। কারন আমি এই পিঠে অস্বাভাবিক ভালোবাসি। একবার খেলে বারে বারে আর একটা খেতে ইচ্ছা করবে। আপনারাও আপনাদের বাড়িতে ঠিক এইভাবে পিঠে তৈরি করে দেখুন। আপনাদের বাড়ির লোকজন অবশ্যই পিঠে খেয়ে প্রশংসা করবে। আজ তবে এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 95355.51
ETH 2588.03
USDT 1.00
SBD 1.64