ফাইবার মিউরাল আর্ট ( স্টেপ বাই স্টেপ )- আদিবাসী নৃত্য

in Incredible India24 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি একটা নতুন জিনিস নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আমি আপনাদের সামনে আজকে আমার পেইন্টিং দেখাতে চলেছি। আমার পেন্টিং করতে তো খুব ভালো লাগে। সবথেকে বেশি ভালো লাগে জল রং করতে। কিন্তু যেখানে কাজের প্রশ্ন সেখানে কাজে যেটা লাগবে সেটাই করতে হবে।

আসলে আমাদের যে শোরুম আছে সেই শোরুমে আমাদের কারখানা থেকে সমস্ত প্রকার মূর্তি, ছোট মূর্তি কিংবা পেইন্টিং রাখা হয়। এবার কিছু কিছু তার মধ্যে পেন্টিং একেবারেই নিজেদের করতে হয়। কারিগর কে দিয়ে সেগুলো হয় না। তার মধ্যে এমন একটি পেইন্টিং হল যেটা আমি আপনাদের সাথে আজকে শেয়ার করছি ।

20240904_193340.jpg

এটা অ্যাকচুয়ালি থ্রিডি একটা আর্ট। এটাকে ছোট মিউরাল আর্ট বলে। এটা পুরো ফাইবারের ।এটা একটা ওয়াল হ্যাংগিং। একটা ফাইবারের ওয়াল হ্যাংগিং। যেখানে দেখানো হচ্ছে আদিবাসীদের নৃত্য। আমরা দেখে থাকি বিভিন্ন জায়গায় আদিবাসী এলাকায় বিশেষ করে আমাদের গ্রাম বাংলার অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া ,বাঁকুড়ার সাইডে আদিবাসীরা সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম এর পর সন্ধ্যাবেলায় আগুন জ্বালিয়ে নাচ-গান করে থাকে।

এই থিমটাকে মাথায় রেখে আমার বাবা প্রথমে মাটি দিয়ে একটা থ্রিডি ওয়ালার্ট করে, যেখানে দেখানো হয় চাঁদনী রাতে আদিবাসীরা আগুন জ্বালিয়ে নৃত্য করছে।কাজটা এতটা পরিমাণে মানুষের পছন্দ হয়েছিল, যে মানুষের চাহিদা বাড়তে থাকে। সেই কারণেই আমাদের প্রোডাকশন আরো বাড়তে থাকে। অবশেষে আমরা মাটির থেকে সেটাকে ফাইবার এ কনভার্ট করতে বাধ্য হই। মাটির জিনিসের থেকে ফাইবারের জিনিস প্রচুর লং লাস্টিং হয়।

20240903_215510.jpg

এখন কারখানায় অন্যান্য মূর্তির সাথেই এরকম অনেক ওয়াল আর্ট তৈরি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারখানায় বড় মূর্তির কাজ এত পরিমাণে থাকে ছোট ছোট কাজগুলো করার সময় হয়ে ওঠেনা। তাই কারিগরকে দিয়ে প্রোডাকশন টা বাড়িয়ে নেওয়ার পর। ওরা যখন একটা ওয়াল আর্ট এ বেস পেন্ট করে দেয়, তারপর আমি আর বাবা মিলে অবসর সময় সেগুলোর ওপর রং বসাতে থাকি।
আমি কি বলতে চাইলাম, আশা করছি আপনারা ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন।

প্রথম ধাপ

এই যে প্রথম ধাপেই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি একটা কালো রংয়ের বোর্ডের ওপর একটা আর্ট। এই আর্ট প্রথমে মাটি দিয়ে তৈরি হয়েছিল ,তারপর এটা ফাইবারে তৈরি করা হয় এবং একটা থেকে অনেক প্রোডাকশন হয়। তারপর আমাদের কারিগররাই প্রত্যেকটা বোর্ডে কালো রং করে আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। এবার এই বোর্ডের ওপর আমরা কেমন রং করব সেটা একেবারেই আমাদের মন মত ব্যাপার।

এই কাজগুলো যারা শুধুমাত্র আলো ছায়ার খেলাটা পেন্টিং করে দেখাতে পারবে, তাদের পক্ষে সম্ভব। সেই কারণেই আমরা কারিগরকে দিয়ে এই কাজগুলো করাই না। গত চারদিন ধরে আমি আর আমার বাবা মিলে মোটামুটি পনেরো এই মিউড়াল শেষ করেছি। সারাদিন সময় থাকেনা। রাতে দুই/ এক ঘন্টা বসে কাজ করি ।সমস্ত কাজ শেষ হয়ে গেলে এগুলো আবার শোরুমে চলে যাবে বিক্রি করার জন্য।

20240829_201418.jpg

দ্বিতীয় ধাপ

যাইহোক প্রথমেই আমি এখানে নিয়ে নিচ্ছি ডিপ নীল রং। আমি অবশ্যই এখানে ফেব্রিক রং ব্যবহার করছি।

20240831_211422.jpg

তারপর আপনারা দেখতে পাচ্ছেন গাছের তলা এবং চারিদিক দিয়েই ধীরে ধীরে আমি নীল রংটাকে কিভাবে স্প্রেড করছি।

IMG-20240904-WA0028.jpg

1000123114.jpg

তৃতীয় ধাপ

এর পরেই চলে আসবে বেগুনি ।কারণ রাতের আকাশকে বোঝাতে নীল আর বেগুনি রংটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি যেমন ধরনের একটা ছবি চাইছিলাম তা বোঝাতে আমি নীল এবং বেগুনি রংয়ের সামঞ্জস্য টা উপযুক্ত বলে মনে করেছি।

1000123120.jpg

আদিবাসীদের গায়ের সাথে সাথে একটা বেগুনি আভা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন ।কিভাবে আমি রং গুলোকে সুন্দর ভাবে মেশাতে থাকছি।

1000123123.jpg

20240831_213353.jpg

চতুর্থ ধাপ

চতুর্থ ধাপে সাদা রং দিয়ে চাঁদটাকে ঠিকভাবে এঁকে নিয়ে ,আমি চাঁদের ওপর দিয়ে হালকা করে নীল রংটাকে মিশিয়ে দিচ্ছি যাতে মেঘে ঢাকা চাঁদ মনে হয়।।

20240831_215012.jpg

পঞ্চম ধাপ

এবার চলে যাব পোশাকের দিকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আদিবাসীরা খুব ডিপ রঙের জামাকাপড় পড়ে থাকে। মেয়েদের শাড়ির জন্য লাল রং ব্যবহার করছি। যেটা আমাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

20240901_082703.jpg

আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন লাল রংয়ের সাথে বেশ যে কালোর ভাগটা ছিল ,তা কতটা সুন্দরভাবে সামঞ্জস্য রেখে আমাকে মেশাতে হয়েছে। পুরোপুরি কালো ঢেকে দিলে আসল মজাটাই চলে যাবে এই পেইন্টিংয়ের। তারপরেই শাড়ির পাড় গুলো হাইলাইট করে দিয়েছি হালকা হালকা হলুদ দিয়ে।

20240901_083141.jpg

20240901_083515.jpg

ষষ্ঠ ধাপ

যেহেতু আমি টোটাল চারটে ওয়াল আর্ট নিয়ে বসে ছিলাম তাই প্রত্যেকটার এক একটা করে কাজ ফিনিশ করছিলাম। প্রত্যেকটার ক্ষেত্রেই আকাশ আগে ফিনিশ করে নিয়ে তারপরে তাদের ড্রেস এবং তারপরে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডের গাছপালা রং করছিলাম। ঠিক সেরকমই গাছের রং করতে গিয়ে আমি এই ছবিটি তুলেছি। এখানে আমি তিনটে রং এর সেড ব্যবহার করেছি। একটা ডিপ সবুজ ,একটা হালকা সবুজ ,এর সাথে হলুদ এবং আকাশি রংয়ের আভা।

20240901_214033.jpg

সপ্তম ধাপ

সপ্তম ধাপে ছেলেদের ধুতির রং হলুদে পরিপূর্ণতা পাচ্ছে।

20240901_220300.jpg

অষ্টম ধাপ

অষ্টম ধাপে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সাদা রং দিয়ে আমি চাঁদের আলো যেখানে পড়ছে, সেটাকে হাইলাইট করেছি।।

20240901_084255.jpg

তৈরী

আর এই ভাবেই তৈরি হয়ে গেছে একটা দুর্দান্ত ওয়াল আর্ট মিউরাল। আশা করছি আমি আপনাদের সকলকে বোঝাতে পেরেছি কিভাবে আলো-ছায়ার ব্যাপারটা সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে হলো। এই কারণে প্রথমের বেস রংটা কালো দিয়ে করা হয়েছিল। কালোর ওপরেই আমরা সমস্ত রঙের খেলা দেখিয়েছি।

20240903_215525.jpg

এই আর্ট গুলোই এবার কাঁচের ফ্রেম এর মধ্যে আমরা কারিগরদের দ্বারা লাগিয়ে দেব। এবং তারপর এগুলো আমাদের শোরুমে বিক্রি হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাবে।এরকম অনেক অনেক ওয়ালার্ট প্রোডাকশন আমাদের কারখানায় হতে থাকে। আর আমার এগুলো করতে সত্যিই খুব ভালো লাগে। আজকে আপনাদের সাথে এই টোটাল ব্যাপারটা শেয়ার করতে পেরে আমার প্রচন্ড ভালো লাগলো। আশা করছি আমার আজকের পোস্ট আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।

Sort:  

💯⚜2️⃣0️⃣2️⃣4️⃣ This is a manual curation from the @tipu Curation Project.

@tipu curate

Loading...
 23 days ago 

আমি আপনার প্রতিভা থেকে আশ্চর্য হই, আপনি অসম্ভব সুন্দরভাবে ফাইবার মিউরাল আর্ট করেছেন, এবং স্টেপ বাই স্টে প সেটার বর্ণনা খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন, আপনার আর্ট পোস্ট দেখে খুব ভালো লাগলো, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

"আর এই ভাবেই তৈরি হয়ে গেছে একটা দুর্দান্ত ওয়াল আর্ট মিউরাল! 😊 আশা করছি আপনাদের সকলকে বোঝাতে পেরেছি কিভাবে আলো-ছায়ার ব্যাপারটা সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে হলো! 💡

এই কারণে প্রথমের বেস রংটা কালো দিয়ে করা হয়েছিল। 🖌️ কালোর ওপরেই আমরা সমস্ত রঙের খেলা দেখিয়েছি! 👀

এই আর্ট গুলোই এবার কাঁচের ফ্রেম এর মধ্যে আমরা কারিগরদের দ্বারা লাগিয়ে দেব। 🎨 এবং তারপর এগুলো আমাদের শোরুমে বিক্রি হওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যাবে! 🛍️

এরকম অনেক অনেক ওয়ালার্ট প্রোডাকশন আমাদের কারখানায় হতে থাকে। 🏭 আর আমার এগুলো করতে সত্যিই খুব ভালো লাগে! 😊

আজকে আপনাদের সাথে এই টোটাল ব্যাপারটা শেয়ার করতে পেরে আমার প্রচন্ড ভালো লাগলো! 😊

এখন, অবশ্যই সকলের উপর থেকে আমাদের নিজেদের ভালো হতে হবে! 😊

ধন্যবাদ, সকলে! 🙏 #walleArtProduction #SteemCommunity"

 21 days ago 

ফাইবার মিউরাল আর্ট এত চমৎকার ভালো করা যায় সেটা আমার জানা ছিল না।। আসলে যারা গুনি হয় তারা সব দিক থেকেই হয়তো গুনি হয়।। আপনি যেমন গান পরিবেশন করেন তেমনি আপনার তাকে প্রতিভা গুলো ততটাই সুন্দর। আগে এরকম অংকন অনেক দেখতে পেতাম বর্তমান সময়ে দেখতে পাই না বললেই চলে।।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 66181.33
ETH 2700.56
USDT 1.00
SBD 2.88