লেখায় লেখায় ছবি
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আমিও সুস্থ আছি। গতকাল ভীষণ ব্যস্ত থাকার জন্য আমি পোস্ট লিখতে পারিনি। আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার ফটোগ্রাফির সাথে কিছু লেখা শেয়ার করছি। আজকে সকালেই এই ফটোগ্রাফি গুলি করেছিলাম। আগামীকাল যেহেতু গণেশ ঠাকুরের পূজা। অর্থাৎ আগামীকাল যেহেতু গণেশ চতুর্দশী। তাই বাবার সাথে সকালবেলায় বাজার করতে বেরিয়েছিলাম। এই বাজারটা কৃষ্ণনগরের অনেক পুরনো বাজার। বাজার করার সময়তেই এই ফটোগ্রাফি গুলো করি। আর তখনই লেখাগুলো হালকা হালকা করে মাথায় আসতে থাকছিল।
কিছু পুরোনো বই এর পাতা তোমার স্পর্শ পেয়ে লুকিয়ে গেছে আমার অগোছালো লাইব্রেরীর কোনো এক কোণায়। আমি বহুদিন ধরে খুঁজে যাচ্ছি , কিন্তু তার দেখা মেলে না।বইয়ে ময়লা জমে, জমেছিল শত শত বন্দী গন্ধ। সবকটা পাতা উল্টে গিয়েছি গতকাল। ঠাকুমার ঘরে এক বাক্স পাঁচালীর বই, কবেকার কাগজগুলো সাদা থেকে থেকে হাপিয়ে অবশেষে রং বদলেছে।কালো হরফে ঘুন ধরেনি একটুও। আমি ভাবি পুরোনো বইগুলো রং বদলালো না কেন। কেন বদলে গেল না পাঁচালীর বই এর মত। পুরোনো গন্ধে ঠাকুমা খুঁজি। খুঁজি আমার ছেলেবেলা। ঠাকুমার পাঁচালী গান গাওয়া। লক্ষ্মী পুজোর আঁড়ি ভরা ধান। ধান উপচে পড়ছে। উপচে পড়ছে পুরোনো পুরোনো ধান। আমি খুঁটে খুঁটে তুলে আবার আঁড়িতে রাখছি।
পুরোনো কবিতা হাতে বাজার এ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায় অমল। আমার মতন সেও কিছু কাগজ হারিয়ে ফেলে বাতাসে। কিছু কাগজ খুঁজে বেড়ায় সারা বাজার জুড়ে।কাগজের মালা, বাজারের ব্যাগ, ঠাকুরের আসন, মাটির সরা, সাজিয়ে বসে থাকে শ্রী হরির মালিক। দশকর্মার দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হবে খুব শিগগিরই। আজ বড্ড বিক্রি হয়। সকাল থেকে রোদের সাথে আজ মানুষ এসেছে । আজ কারি কারি টাকা। এরই মধ্যে কেউ বস্তার উপর কিছু আমের পাতা আর ফুল সাজিয়ে মেলে ধরে খদ্দেরের জন্য। আস্তানা না থাকলেও সাজিয়ে নেয় চারিদিক গাঁদা ফুলের মালা, রজনীগন্ধার মালা, পদ্মফুল আরো কত কিছু দিয়ে। ওখানে একটা মুদির দোকান আছে। দশকর্মা ফর্দ শেষ হলে আর এক ফর্দ হাতে মুদির দোকানে ছুটতে হয় । এ বাজারে কেউ কাউকে ডাকে না। মানুষ নিজেই আসে। গলির দুই পাশ দিয়ে সারি সারি দোকান হেঁটে যায়। হেঁটে যায় কত কত মানুষের মুখ। আর তারপর আবার বাজারের রাস্তা ফাঁকা হয়। ফাঁকা হয়ে যায় বস্তার উপর পড়ে থাকা শেষ মালাটা। ঝোলা ভর্তি করে বৃদ্ধ পিসি বাড়ি ফেরে। তখন শুধু কুকুর ডাকে। বাজার ডাকে টাকার লোভে, খাবারের লোভে, মানুষের লোভে ।
এ বাজারের অলি গলিতেই ধোঁয়াশা কেটে গেলে তোমাকে নিয়ে হেঁটে বেড়াই আমি। বাজারের পাশের রাধা মাধব মন্দিরে একসাথে প্রণাম করে আসি দুজনে। ফলের দোকানে হাজারো ফলের ভিড়ে আমরাও কত কত কর্মফলের আশা করি। চারিদিকের উটকো গরমে , বাজারের ভারী ব্যাগ এ তোমার আমার প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। তুমি একটু ভালোবেসেই আমার হাত থেকে বাজারের ব্যাগ কেড়ে নাও। কেড়ে নাও আমার সমস্ত চিন্তা, সমস্ত ভার। ঝির ঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়, বৃষ্টিতে ঢেকে যায় গোটা বাজার। ঢেকে যায় বহু পুরনো দেওয়াল। শাটার নামিয়ে দেয় গোটা পাঁচের দোকান। আমরা বৃষ্টি নিয়েই বাড়ি ফিরি।
আশা করছি আমার আজকের পোস্ট আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। অনেকদিন পর একটু অন্য ধরনের পোস্ট করার চেষ্টা করলাম। প্রত্যেকটা লেখার ধরন আলাদা। সবাই আমাকে পড়ে জানাবেন কেমন লাগলো। সকলে ভালো থাকবেন।
আপনার সাদাকালো ছবির ফটোগ্রাফি দেখে পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল, পূর্বের সময় এনালগ ক্যামেরায় এরকম সাদাকালো ছবি তোলা যেত, আপনার লেখায় লেখায় ছবিটা খুব ভালো লাগলো, অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আমি যতটা না ছবি খেয়াল করছি তার সেই লেখার গভীরতা খুঁজে পেয়েছি। চেষ্টা করি আপনার মত করে লেখার তবে হয়ে ওঠে না। ছোটবেলার স্মৃতি গুলো আসলেই ভুলে থাকা যায় না । যখনই সেই পথ দিয়ে হাঁটা হয় তখনই মনে পড়ে যাই।
সাদাকালোর মাঝে লুকিয়ে আছে আমাদের প্রতিটা স্মৃতি। যদি আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ছবিগুলোর সাথে সাথে এত সুন্দর লেখা আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য।
আমাদের দিকে বরাবরই আপনার পোস্টের অনেক প্রশংসা করে থাকে সত্যি আপনার পোস্ট অসাধারণ লেখার ভঙ্গিমা ও শব্দ সবগুলো খুবই সাবলীল।।
পুজো থাকায় সকালেই বাজার করেছেন আসলে আপনাদের পূজো সম্পর্কে আমার খুব বেশি ধারণা নেই প্রায় শুনতে পাই আপনাদের পূজা হচ্ছে।।