কলেজের পিকনিক আর কিছু অব্যক্ত অনুভূতি
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। গতকাল কলেজের পিকনিক নিয়ে আমি একটি পোস্ট করেছিলাম এবং আজকে তার বাকি মুহূর্তগুলো শেয়ার করছি।
আমি জানিয়েছিলাম রান্না যেহেতু বাকি ছিল তাই দুপুরের খাওয়া-দাওয়া লেট হচ্ছিল। এ কারণে আমি আর আমার এক বন্ধু মিলে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। কলেজটা এমন একটা জায়গায় যেখানে চারপাশে কেমন গ্রাম্য এলাকা। পাশে রয়েছে শ্মশান,মন্দির, ঘাটের ধার।
আমি কোনদিনও ওই দিকে যাইনি। কলেজের সামনে বরাবর সোজা গেলেই ওই মন্দিরের এলাকা। সবুজের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাওয়া যায় ওখানে। আমি ও প্রকৃতির দৃশ্য উপভোগ করতে করতে মন্দিরের মধ্যে প্রবেশ করলাম।
তবে অনেকদিন আগে থেকেই শুনি ওখানে নাকি কবর খানা রয়েছে। এর আগে আমি স্কুল থেকে একবার সরস্বতী ঠাকুর বিসর্জন দিতে মন্দিরের ঘাটটিতে গিয়েছিলাম। তখন অনেক জন মিলে গিয়েছিলাম। তখনই এসব শুনেছিলাম।
শুনেছিলাম কোন বাচ্চা মারা গেলে, অথবা সদ্যোজাত শিশু মারা গেলে, কিংবা কারোর পোষ্য মারা গেলে, ওখানে কবর দেওয়া হয়। এসব আদৌ সত্য কিনা তা আমি জানতাম না। তবে বেশিরভাগ মানুষই এসব বলতো । ঘাটের ধারে এরকম অনেক জায়গায় কবর দেওয়া থাকতেই পারে।
যাইহোক প্রথমত আমি যেতে চাইছিলাম না ঐদিকে, তবে আমার বন্ধুর আবদারে আমাকে যেতে হলো। মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করার আগেই দেখলাম , মন্দিরটা বেশ রেস্ট্রিক্টসনে রেখে দিয়েছে। চারিদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। যাতে কোনোভাবেই এখানে বেআইনি কোনরকম কাজকর্ম কেউ না করতে পারে। এটা দেখে খুবই ভালো লাগলো। মোটামুটি দেড়টা নাগাদ আমরা মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছিলাম। ঢুকেই দেখি একটি শিবলিঙ্গ। আবার বাঁদিকে মন্দিরে রয়েছেন মা কালীর প্রতিমা।
সুন্দর করে শান বাঁধানো ঘাট। আর ঘাটের পাশে বসতেই মনটা শান্তিতে ভরে গেল। হালকা হিমেল হাওয়াতে মন পুরো ঠান্ডা হয়ে গেল। চারিদিকটা অপূর্ব লাগছিল। দূর থেকে কৃষ্ণনগরের ব্রিজ দেখা যাচ্ছিল। নদীর তে একজন মাছ ধরছিলেন। আমি চারিদিকটা দেখছিলাম। আর ফটোগ্রাফি করছিলাম। সাথে নিজেরও কয়েকটা ছবি তুললাম। এসব দেখতে দেখতেই কখন অনেকক্ষণ সময় টা কেটে গেল বুঝতে পারিনি।।
তারপর ভাবলাম এবার কলেজের দিকে ফেরা যাক। কিন্তু তার আগে আশেপাশে আর একটু দেখি। আমি তখনও ভাবি নি কবরস্থান এর আশেপাশেই রয়েছে। যে ঘাটে বসেছিলাম তার একটু দূরে এগোতেই কিছু গাছ অপূর্ব দেখতে লাগছিল। গাছের পাতা ঝরে গেছে বলে দুর্দান্ত ফটোগ্রাফি হচ্ছিল। ফটোগ্রাফি করতে করতে যখন এগিয়ে গিয়েছি। বাঁদিকে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি কবর।
প্রত্যেকটি কবরের দিকে চোখ পড়তে এক একটা নাম দেখতে পারলাম। কোথাও লেখা টফি, জুলি, কুটুস, আরো কত কত নাম। ছোট্ট ছোট্ট কবর গুলো দেখে আমি খুব আঁতকে উঠলাম। আস্তে আস্তে মনটা ভারি হয়ে যেতে লাগল। একটা কবরের গায়ে লেখা আছে - সোনা ভালো থেকো।
যে কটা কবর ছিল, সবকটি কবরের নাম চোখে পড়তে বুঝলাম, এগুলো সব বাড়ির পোষ্যদের কবর। অনেকেই খুব ভালোবেসে বাড়িতে কুকুর বিড়াল পুষে থাকে। কুকুর বিড়াল এভাবে মারা গেলে এভাবে কবর দিয়ে যায় এখানে।
যেটুকু বুঝতে পারলাম শোনা কথা একদম সঠিক।, এটাও মনে হল যে আরেকটু এগোলে হয়তো বাচ্চাদের কবরও রয়েছে। তাই ওদিকে আর পা বাড়ালাম না। কারণ ততক্ষণে আমি ইমোশনাল হয়ে গিয়েছি। ভেতরটা কেমন যেন খা খা করছিল। আর মনে হচ্ছিল এই প্রানের কোন দাম নেই। আমরা কে কখন কিভাবে চলে যাব। তাকেও জানেনা। সবথেকে খারাপ লাগছিল এটাই ভেবে, প্রত্যেকটি কবরের সাথে, তাদের বাড়ির লোকজনের শোক জড়িয়ে আছে। কত কষ্ট করেই নাহ এই কবরগুলো নিজে হাতে দিতে হয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে আমার মন মেজাজ এতটাই খারাপ হয়ে গেল যে, আমি রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলাম। তারপর কিছুতেই পুনরায় আমি আমার আগের মুড ফিরে পাচ্ছিলাম না। মন্দির প্রাঙ্গণে এসে মা কালীর মন্দিরে সামনে দাঁড়িয়ে শুধু একটাই প্রার্থনা করলাম।, তিনি যেন সকলকে সুস্থ রাখে ,ভালো রাখে। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। আমি নিজেকে যতটা চিনি, তাতে বুঝতে পেরেছি, অন্য কারোর কষ্ট দেখলে বা বুঝতে পারলে আমি কিছুতেই নিজেকে সামলে রাখতে পারি না। এ কারণেই হয়তো এত ইমোশনাল হয়ে যাই।
যেমন মন মেজাজ নিয়ে মন্দির দেখতে ঢুকেছিলাম। ঠিক তার উল্টো মেজাজ নিয়ে ব্যাক করলাম। কলেজে আসার পরেই দেখি দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষণ শরীরের মধ্যে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই এক জায়গায় বসেছিলাম। আমি না পাচ্ছিলাম হাউ মাউ করে কাঁদতে। না কান্না থামাতে। বুকে যে যন্ত্রণাটা হচ্ছিল তার ডেফিনেশন আমি বুঝতে পারি না। কাউকে বোঝাতেও পারবো না। আমার বন্ধু আমাকে অনেকবার জল খাওয়ালো। ধীরে ধীরে ওর সাথে নানান কথোপকথন এর মধ্যে দিয়ে আস্তে আস্তে ঠিক হতে লাগলাম।
এসব হওয়াতে, খাওয়া-দাওয়া দেরি হয়ে গেল। ততক্ষণে প্রথম ব্যাচ খেতে বসে গেছে। আমরা বসে ছিলাম দ্বিতীয় ব্যাচে। যাই হোক আপনাদের সাথে মুহূর্তগুলো শেয়ার করতে পেরে, আরো হালকা লাগছে। যে জায়গায় কবরগুলো ছিল, সেখানকার ছবি তোলা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ আমি ছবি তুলতেও পারতাম না। আপনারা সকলে ভাল থাকুন। ঈশ্বর আপনাদের সকলের ভালো করুক। আমাদের সকলকে সুস্থ রাখুক। এটাই আমার প্রার্থনা।
সত্যিই আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই পৃথিবীর বুকে মানুষ তো চিরকাল বেঁচে থাকবে না! একদিন সবাইকে যেতে হবে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। আপনার পোস্টটি পড়ে খুবই কষ্ট হচ্ছিল, যখন আপনি বলেছিলেন বাচ্চাদের কবর গুলো ওই পাশে। এই একটা স্থানে, মানুষ আসলে উপলব্ধি করতে পারে নিজের অস্তিত্ব , এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বস্তু নিয়ে, আজকে আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। এর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Congratulations, your post has been upvoted by @scilwa, which is a curating account for @R2cornell's Discord Community. We can also be found on our hive community & peakd as well as on my Discord Server
Felicitaciones, su publication ha sido votado por @scilwa. También puedo ser encontrado en nuestra comunidad de colmena y Peakd así como en mi servidor de discordia
🤗 encouraging your fantastic content @isha.ish! 🌈
Hey friend! 🎉 Come check out your awesome post on my shiny new front-end! It's still a work in progress but I'd love to hear what you think! View your post here ✨
TEAM 2
Congratulations! Your post has been upvoted through @steemcurator04. Good post here should be..আপনার পোস্টটি পড়ে আমিও ইমোশনাল হয়ে পরলাম। শ্মশান এমন একটি জায়গা ,যেখানে গেলে মন শান্ত হয়ে যায় আর নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়। তখন মনের মধ্যে এলোমেলো ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়। যা নিজেকে খুব বেশি ইমোশনাল করে তুলে।একদিন দিনশেষে আমাদের সকলকে এখানে এসে একত্রিত হতে হবে। তারপরও মানুষের যে কেন এত অহংকার?, এত তড়াই বড়াই করে তা বুঝি না!
পোষা প্রাণীদের যে সমাধিস্ত করা হয় এ কথাটা আমি প্রথম শুনলাম ।যাইহোক, আপনার পোষ্টটি খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।ভাল থাকবেন।
আপনার অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা খুবই আন্তরিক এবং গভীর। প্রকৃতির মাঝে এবং সেই মন্দির প্রাঙ্গণে আপনি যে শান্তি ও শোক অনুভব করেছেন, তা খুবই মানবিক। কবরের জায়গা এবং তার সাথে সম্পর্কিত শোকের ভাবনা মানুষের মনের গভীরে এক ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করে, যা আপনি খুব সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। সবশেষে মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করা, এক ধরনের শান্তি খুঁজে পাওয়া, আমাদের জীবনের অসহায়ত্ব এবং অন্যদের কষ্ট অনুভব করার অনেক বড় শিক্ষা দেয়। ধন্যবাদ, আপনার অনুভূতিগুলো শেয়ার করার জন্য।