নিমন্ত্রণ

in Incredible India6 days ago

নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করে নিচ্ছি একটি নিমন্ত্রণের কথা।

শীতকাল আসলেই চারিদিকে বিয়ে আর বিয়ে। তবে সত্যি বলতে এ বছর এখনো অব্দি বিয়ের নিমন্ত্রণ আমি কিন্তু একটাও পাইনি। আমার বাবা যা নিমন্ত্রণ পেয়েছে, সেগুলো সবই শুধুমাত্র বাবারই ছিল। অর্থাৎ আমাদের গোটা পরিবারকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি। তাই আমাদের যাওয়া হয়নি। আমি বেশ আশায় আশায় বসে আছি কবে একটা ভালো নিমন্ত্রণ পাব।

IMG-20241212-WA0037.jpg

আসলে বন্ধু-বান্ধবদের যখন দেখছি কত কত বিয়ে বাড়িতে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন নিজেরও একটু হিংসা হচ্ছে।। যাইহোক এর মধ্যেই হঠাৎ করে একদিন একটা অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণ পেলাম। সেটা নিয়ে আমার সে রকম মাথা ব্যথা ও ছিল না। কারণ সেটা অন্নপ্রাশন বিয়ে বাড়ি নয়।

IMG-20241212-WA0009.jpg

যাইহোক অবশেষে সেই নিমন্ত্রণের দিন চলে আসলো। যিনি আমাদের নিমন্ত্রণ করেছেন তিনি আসলে মাটির jewellery র ব্যবসা করেন। একটা সময় ছিল যে সময়ে সেই কাকু আমার বাবার কাছে এবং আমার সুবীর জেঠুর কাছে কাজ করতেন। আর এখন তিনি ব্যবসাটা বড় করে এতটাই উন্নতি করেছেন যে, তার আন্ডারে এখন প্রায় কুড়িজন মতো স্টাফ কাজ করে। এছাড়াও কাকুর আরো অনেক বিজনেস আছে।

IMG-20241212-WA0021.jpg

যেহেতু পুরনো বন্ধুত্ব এবং কাজের সূত্রে পুরনো সম্পর্ক, তাই সেই কাকু আমাদের গোটা পরিবার এবং সাথে সুবীর জেঠুদের গোটা পরিবারকে নিমন্ত্রণ করেছিল। এবার কথা হল সবাই একসাথে যাব যেহেতু তাই একসাথেই বেরোতে হবে। আমরা আমাদের গাড়ি নিয়ে এবং জেঠুরা জেঠুদের গাড়ি নিয়ে বেরোনোর কথা।

IMG-20241212-WA0010.jpg

সাধারণত যে কোন নিমন্ত্রণ বাড়িতে আমরা সবসময় একটু আগে আগে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে আসি কারণ পরে প্রচন্ড ভিড় হয়ে যায়। আর ওইদিকে অর্থাৎ সুবিজেঠুরা ঠিক যতক্ষণ না পর্যন্ত দশটা বাজবে ওরা কিছুতেই নিমন্ত্রণ বাড়িতে পৌঁছয় না। আর ঠিক ভিড়ের মুহূর্তেই ওরা খাওয়া-দাওয়া সারে।

IMG-20241212-WA0035.jpg

সেদিনকে ওদের পাল্লায় পড়ে আমাদের বাড়ি থেকে বার হতে বার হতে সাড়ে আটটা বেজে গেল। তারপর যেহেতু জায়গাটা অনেক দূরেই ছিল। মানে নবদ্বীপে। নবদ্বীপ ব্রিজ ছেড়ে কিছুটা দূর এগিয়েই, তাই সময়টা একটু বেশি লাগলো। মোটামুটি আধা ঘন্টার বেশি সময় লেগেছে হয়তো।

IMG-20241212-WA0011.jpg

গাড়ি রাখার পরে আমরা পৌঁছে দেখি একটা এলাহি কাণ্ড। মাঠ জুড়ে বেশ সুন্দর করে প্যান্ডেল করে ওরা আয়োজন করেছে। এর আগেও কাকুর বিয়েতে আমার বাবা জেঠুরা খাওয়া দাওয়া করেছে সেই সময়তেও কাকু ভীষণ ভালো আয়োজন করেছিলেন। যাইহোক আমরা সবাই এক এক করে প্রবেশ করলাম।

IMG-20241212-WA0019.jpg

ছোট্ট মেয়ে হয়েছে প্রায় অনেক বছর পর, তাই আনন্দ আরো বেশি। ছোট মেয়েটির নাম মোহর। প্রথমে যে গেটটা সাজানো হয়েছে, তার পাশেই লেখা ছিল ওর নাম বড় করে। ওদের ডেকোরেশন দেখে আমি নিজেও খুব খুশি হয়েছি। এত সুন্দর করে ওরা সমস্ত কিছু সাজিয়েছে।

20241206_215515.jpg

যেহেতু অনেকটা দেরি হয়ে গেছিল তাই কাকুর সাথে দেখা করে উপহার গুলো দিয়ে দেওয়ার পরেই আমরা সোজা চলে গেছিলাম খাবার জায়গায়। যদি অনেক স্টল ছিল। যেমন থাকে অর্থাৎ কফি ,পকোড়ার। কিন্তু সেগুলোর দিকে আমরা যাওয়ার সুযোগ পাইনি। খাওয়ার জায়গায় গিয়ে দেখি প্রচণ্ড ভিড় হয়ে গেছে।

20241212_205543.jpg

তাও কোন মতে আমার বাবা এবং জেঠু ম্যানেজ করে জায়গা ধরে ফেলল। আমরা খেতে বসে পড়লাম। খাওয়ার জায়গায় সব থেকে অস্বস্তিকর ব্যাপার ছিল লাল নীল সবুজ হলুদ লাইট। খাবার জায়গায় এরকম লাইট বসানো একদম ঠিক হয়নি ওদের। বাকি সমস্ত কিছুর কোন তুলনাই হয় না। কিন্তু খাবার জায়গায় এই লাইট সিস্টেম টা করে সত্যিই খুব বাজে করেছে।

20241212_205610.jpg

আমরা যখন খেতে বসেছি তখন মাঝেমধ্যে পিছনে ফিরে দেখছিলাম খাবার জায়গার গেটে ঢোকার পথে কত ভিড়। ভাগ্যিস আমরা বসতে পেরেছিলাম না হলে আমাদেরও অনেক লেট হয়ে যেত। প্রথমেই খুব সুন্দর ভাবে আমাদের পরিবেশন করা হলো চিকেন সাটে, আমি আর দিদি মিলে একটি পনির সাটেও খেয়েছি। এছাড়া তার পরপর যা খাওয়া দাওয়া করেছি সমস্ত কিছু মেনু কার্ডে তো দেখতেই পাচ্ছেন।

IMG-20241212-WA0027.jpg

প্রত্যেকটা রান্না এত সুন্দর ছিল! পরে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ওনারা চন্দননগর থেকে রাধুনী নিয়ে এসেছিলেন। সত্যিই রান্না গুলো খুবই ভালো খেতে ছিল। এর সাথে যারা পরিবেশন করছিলেন তাদের পরিবেশনার ধরন অনেক সুন্দর ছিল। আসলে কিছু কিছু ক্যাটারিং সিস্টেমে খুব বাজেভাবে পরিবেশন করে। যেমন ধরুন খুব তাড়াতাড়ি খাবার দিয়ে দেয়। অথবা ঠিকভাবে যাচাই করে না। এছাড়াও খাবার নষ্ট করারও একটা প্রবণতা থাকে।

তবে এনারা যেভাবে পরিবেশন করছিলেন এই সমস্ত কোনটাই কারোর সাথে ঘটেনি। সত্যি বলতে উনাদের আতিথেয়তা আমার খুব ভালো লেগেছে। শুধু আমার নয় আমাদের সকলেরই ভালো লেগেছে। মোটামুটি সমস্ত কিছু শেষ করে এসে লাস্টের দিকে আইসক্রিমটা আমি আর নিলাম না। কারণ তারপর পরপর আমার কয়েকটা প্রোগ্রাম ছিল। তবে পান নিয়েছি। এরকম অনুষ্ঠান বাড়িতে খাবার শেষে মিষ্টি পান খেতে বেশ ভালই লাগে।

20241206_215459.jpg

তারপর বেশি দেরি না করে , কাকুর সাথে আবার দেখা করে নিয়ে এবং ছোট্ট মোহরকে টাটা জানিয়ে আবার গাড়িতে রওনা দিয়েছিলাম। মোটামুটি রাত বারোটা নাগাদ বাড়িতে পৌঁছেছি। এইটা শুধুমাত্র জেঠুর জন্যই হয়েছিল। না হলে এত দূরে নিমন্ত্রণ আমরা কখন বেরিয়ে যেতাম। আরো তাড়াতাড়ি আসতে হতো।

সব থেকে বড় কথা, মানুষকে সুন্দরভাবে পরিষেবা দেওয়াটা সবাই পারেনা। সবার টাকা থাকলেও সেটা সম্ভব নয়। বড় একটা মন থাকা দরকার। টাকা আছে বলে হরেক রকম খাবারের আইটেম রাখলাম, এবং সেটা মানুষকে ঠিকভাবে পরিবেশন করতে পারলাম না এবং তার সাথে খাবার নষ্ট হল, এরকম প্রায়শই দেখা যায়। কিন্তু আজকালকার যুগে এরকম সুন্দর পরিবেশনা এবং আতিথিয়তা খুবই কম পাওয়া যায়। তাই সত্যিই আমি সেদিনকে খুবই শান্তি পেয়েছি।

Sort:  
Loading...
 5 days ago 

যাই হোক অবশেষে নেমন্তন্ন পেয়ে তাও খেতে গিয়েছে। কিন্তু এ বছর শেষ হতে আসলো আমি একটাও বিয়ের নেমন্তন্ন পেলাম না। নেমন্তন্ন খেতে যাওয়ার সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.26
JST 0.040
BTC 101854.93
ETH 3674.01
USDT 1.00
SBD 3.18