রাধাকুঞ্জ। (১ম পর্ব)
নমস্কার বন্ধুরা! আশা করি সবাই ঈশ্বরের কৃপায় ভালো আছেন। আজকে আপনাদের মাঝে আমি এক ভিন্ন ধরনের গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। গল্পটি দুইটি পর্বের আজকে আপনাদের মাঝে আমি প্রথম পর্ব শেয়ার করবো। চলুন আর বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক.......
মাধবীলতা আজ পনেরো বছর পর তার বাবা-মা এবং ছোট ভাই অপুর সাথে তাদের গ্রামের বাড়িতে এসেছে। মাধবীলতা এই দ্বিতীয়বার তার গ্রামের বাড়িতে আসলেও অপু এই প্রথমবার তার গ্রামের বাড়িতে আসলো। মাধবীলতার বিয়ে উপলক্ষে তারা স্বপরিবারে আজ "রাধাকুঞ্জে" এসেছে। মাধবীলতাদের গ্রামের বাড়িটির নাম রাধাকুঞ্জ।
প্রথমবার যখন মাধবীলতা এই গ্রামের বাড়িতে এসেছিল তখন তার বয়স মাত্র সাত বছর। মাধবীলতা অনেক ছোটবেলা থেকে তার ঠাকুমার কাছে এই বাড়িটি নিয়ে পূর্বপুরুষদের নিয়ে অনেক গল্প শুনেছে। কিন্তু মাধবীলতার সেসব গল্প শুনে কখনো ভয় হয়নি। বরং তার কৌতুহল আরো বেড়েছিল এই বাড়িটি নিয়ে। তাই প্রথমবার যখন মাধবীলতা রাধা কুঞ্জ এসেছিল তখন তার স্বভাবসুলভ আচরণের কারণেই হোক বা কৌতুহল বসেই হোক, তার ঠাকুমা যেগুলো তাকে করতে মানা করেছিল সেগুলো সে করেছিলো।
রাধাকুঞ্জে একটি সান বাঁধানো পুকুর আছে। সবাই বলে তাদের কোন এক পূর্বপুরুষের স্ত্রী নাকি এই পুকুরে ডুবে মারা গেছিল। সেখান থেকে এই পুকুরে যাওয়া নিষেধ ছিল। কিন্তু মাধবীলতা তার কৌতূহলের কারণেই একদিন দুপুরে সবাই যখন ভাত ঘুম দিচ্ছিল তখন এই পুকুর পাড়ে গিয়েছিল পুকুরটাকে কাছ থেকে দেখবে বলে। সেদিন মাধবীলতার প্রথমটায় খুব ভয় হলেও কিছুক্ষণ পর সে এই থমথমে পরিবেশটার সাথে মানিয়ে নিয়েছিল নিজেকে।
প্রথমে মাধবীলতা ভেবেছিল সে শুধুমাত্র পুকুরটাকে কাছ থেকে দেখে চলে আসবে। কিন্তু সেই ছোট্ট মাধবীলতার কেমন যেন হঠাৎ করেই মনে প্রশান্তির অনুভূতি হতে লাগলো এই পুকুর পাড়ে। হঠাৎ মাধবীলতা কি যেন মনে করে শান বাঁধানো সিড়িতে গিয়ে তার পা দুটো একটু ভিজিয়ে বসলো। প্রথমটায় কোন ক্ষতি না হলেও হঠাৎ কি যেন তার পা ধরে টেনে তাকে পুকুরে আলতো গভীরে নিয়ে গেল। ছোটবেলা থেকে বাইরে থাকার কারণে মাধবীলতার কখনো সাঁতার শেখা হয়ে ওঠেনি।
সেই দিনটার কথা মাধবীলতা কিছুই মনে নেই এখন আর শুধু মনে আছে সে ঐ পুকুর পাড়ে গিয়ে বসেছিল। সেদিন সবার ঘুম ভাঙার পর পুরো বাড়িতে মাধবীলতা কে তন্নতন্ন করে খোঁজার পরও যখন কেউ তাকে খুঁজে পায়নি, তখন তার ঠাকুমার নির্দেশে তাদের গ্রামের ডুবুরিদের অনেক টাকার বিনিময়ে সেই পুকুরে নামিয়ে মাধবীলতাকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
তবে আশ্চর্যজনক কথা হলো টানা তিন ঘন্টা পুকুরে ডুবে থাকলেও মাধবীলতা বেঁচে ছিল। সে শুধু অজ্ঞান হয়ে গেছিল এবং জ্ঞান ফেরার পরও এক সপ্তাহ কারো সাথে কোন কথা বলেনি। কিন্তু সেদিনের পরে মাধবীলতা অনেক শান্ত স্বভাবের হয়ে গেছিলো। আজ তাদের এই বাড়িতে আসার কারণ হচ্ছে তাদের বংশের সব মেয়েদেরই এই রাধাকুঞ্জেই বিয়ে হতে হবে এমনটাই প্রথা প্রচারিত আছে।
এর আগে যে মেয়েদের এই বাড়িতে বিয়ে হয়নি বিয়ের দিনই হয়তো তাদের স্বামী মারা গেছে, নয়তো এমন কোন কিছু সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের যে আর সংসার করা হয়ে ওঠেনি। তাই কারো আবার রাধাকুঞ্জে আবার আসার কোন ইচ্ছা না থাকলেও এক প্রকার জোরবশত মাধবীলতার কথা ভেবেই তাদের আবার ও রাধাকুঞ্জে আসতে হলো।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
গল্পটি সত্যিই মুগ্ধকর। মাধবীলতার পুকুরে ডুবে যাওয়ার অভিজ্ঞতা এবং তার পরবর্তী পরিবর্তন খুবই আকর্ষণীয়। রাধাকুঞ্জের রহস্য আর ঐতিহ্য জানিয়ে অনেক কিছু শিখলাম। আশা করি পরবর্তী পর্ব আরও রোমাঞ্চকর হবে।