Horror Story- Dark Night অন্ধকার রাত্রি ||Part-01||

in LifeStyle3 years ago (edited)

রায় সাহেব থাকেন কলাবাগানে। অনেকখানি ভেতরের দিকে। দেয়ালঘেরা তিন কামরার একতলা একটা বাড়ি। আশেপাশে ছয়-সাততলা বিশাল বাড়ি ঘর উঠে গেছে। সেখানে এরকম ছোট একটা বাড়ি মাঝে মাঝে তার লজ্জাই লাগে। বাড়ি ভেঙে বড় বাড়ি করার মতো টাকা পয়সা তাঁর নেই। ইচ্ছাও নেই। বড় বাড়ি দিয়ে কী করবেন? তিনি একা মানুষ। একজন মানুষের ঘুমাবার জন্যে তো আর পাঁচটা কামরা লাগে না। একটা কামরাই যথেষ্ট। তিনি বাড়ির চারদিকে গাছপালা লাগিয়েছেন। গাছগুলি চোখের সামনে বড় হচ্ছে। দেখতে তাঁর ভালো লাগে। গত বর্ষায় লেবু গাছ লাগালেন–ঝেপে লেবু হলো। এতেই তিনি খুশি। তিনি খুব শান্তিতে আছেন।

ছোট বেলায় যেমন দাদু কিংবা ঠাকুমার কাছ থেকে আমরা নানা ধরনের শুনতাম। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় আমরা সবাই কাজের মধ্যে এত ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছি যে কারো কাছে গল্প শোনানোর সময় হয়ে ওঠেনা।

তাই আজকে আমার আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটি সত্যি কারের ভূতের গল্প। গল্প টিকে ৮ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তারই প্রথম ভাগটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

আজকের গল্প - অন্ধকার রাত্রি ## পর্ব - প্রথম


রায় সাহেব থাকেন কলাবাগানে। অনেকখানি ভেতরের দিকে। দেয়ালঘেরা তিন কামরার একতলা একটা বাড়ি। আশেপাশে ছয়-সাততলা বিশাল বাড়ি ঘর উঠে গেছে। সেখানে এরকম ছোট একটা বাড়ি মাঝে মাঝে তার লজ্জাই লাগে। বাড়ি ভেঙে বড় বাড়ি করার মতো টাকা পয়সা তাঁর নেই। ইচ্ছাও নেই। বড় বাড়ি দিয়ে কী করবেন? তিনি একা মানুষ। একজন মানুষের ঘুমাবার জন্যে তো আর পাঁচটা কামরা লাগে না। একটা কামরাই যথেষ্ট। তিনি বাড়ির চারদিকে গাছপালা লাগিয়েছেন। গাছগুলি চোখের সামনে বড় হচ্ছে। দেখতে তাঁর ভালো লাগে। গত বর্ষায় লেবু গাছ লাগালেন–ঝেপে লেবু হলো। এতেই তিনি খুশি। তিনি খুব শান্তিতে আছেন।

dark night.jpg
source

কিছুদিন হলো তাঁর মনের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। তাঁর বাড়িতে ভূতের উপদ্রব হয়েছে। যে জিনিস তিনি বিশ্বাস করেন না, সেই জিনিস তার ঘরে। ভয় তিনি পাচ্ছেন না। যা পাচ্ছেন তার নাম লজ্জা। এত কিছু থাকতে তাঁর বাড়িতে কিনা ভূতের উপদ্রব। ব্যাপারটা কাউকে বলতেও পারছেন না। যাকে বলবেন সে-ই মুখ বাঁকিয়ে হাসবে। হাসারই কথা। অন্য কেউ তাঁকে ভূতেব কথা বললে তিনিও হাসতেন। হাসাটাই স্বাভাবিক।

উপদ্রবটা গত চাবদিন ধবে চলছে। প্রথম দিনের ঘটনাটা এরকম–রাত এগারোটা, তিনি মশারি খাটিয়ে বাতি নিভিয়ে বিছানায় এসে শুয়েছেন, ওমনি বাতি আপনা আপনি জ্বলে উঠল। তিনি অন্য দশ জনের মতো ভাবলেন সুইচে কোনো গণ্ডগোল। দেশী সুইচগুলি কোনো কাজের না। কিছু না কিছু গণ্ডগোল থাকবেই। মানুষ যে শুধু বিদেশী জিনিস খোঁজ করে এই জন্যেই করে। তিনি আবার উঠে গিয়ে বাতি নেভালেন। বিছানায় এসে শুলেন। শীত শীত লাগছিল চাদরটা গায়ে টেনে দিলেন, ওমনি আবারো বাতি জ্বলে উঠল।

তিনি চাদর ফেলে দিয়ে বিছানায় উঠে বসলেন, তখন একবার মনে হলো ভূতের উপদ্রব না তো? এরকম হাস্যকব একটা কথা তার মনে এসেছে–এই ভেবে তিনি নিজেই নিজের উপর অত্যন্ত বিরক্ত হলেন। বোঝাই যাচ্ছে সুইচে গণ্ডগোল। স্প্রিং ট্রিং কেটে গেছে কিংবা কোনো স্কু ঢিলা হয়ে গেছে। একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রীকে এনে দেখাতে হবে। রায় সাহেব বুঝতে পারছেন না। আবার বাতি নেভাবেন কিনা। লাভ কী, নিভালেই হয়তো আবার জ্বলে উঠবে। এরচে বাতি জলেই থাকুক। তিনি আবার শুয়ে পড়লেন, তখন বাতি আপনা আপনি নিভে গেল। তিনি ডাকলেন, বাহাদুর, বাহাদুর।

বাহাদুর তার কাজের ছেলে। পাশের ঘরে সে ঘুমুচ্ছে। সামান্য ডাকে তার ঘুম ভাঙবে এরকম মনে করার কোনোই কারণ নেই। তার দশ গজের ভেতর মাঝারি সাইজের কোনো এটম বোমা ফাটলে ঘুম ভাঙলেও ভাঙতে পারে। এই সাধারণ তথ্য জেনেও রায় সাহেব বাহাদুর কেন ডাকলেন নিজেই বুঝতে পারছেন না। তিনি কি ভয় পাচ্ছেন? ছিঃ ছিঃ কী লজ্জার কথা। বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি কি না ভূতের ভয়ে ভীত হয়ে তাঁর কাজের ছেলেকে ডাকছেন! ভাগ্যিস ব্যাপারটা আর কেউ শুনে ফেলে নি। কোনোদিন কারো সঙ্গে আলোচনা করাও ঠিক হবে না। বাহান্ন বছরের একজন মানুষ ভূতের ভয়ে তার কাজের ছেলেকে ডাকাডাকি করছে–কোনো মানে হয়?

রায় সাহেব শুয়ে পড়লেন। মনস্থির করলেন বাতি জ্বলতে থাকুক নিভতে থাকুক। তিনি ঘুমিয়ে পড়বেন। তাঁকে সকালে উঠতে হবে। ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রদের সঙ্গে তাঁর সকাল আটটায় ক্লাস। তিনি তাদের কোঅর্ডিনেট জিওমেট্রি পড়ান। কাল তাকে সার্কেলের ইকোয়েশন বুঝাতে হবে। নতুন চ্যাপ্টার। সকাল সকাল উঠতে না পারলে ক্লাস মিস হয়ে যাবে। ছাত্ররা ক্লাস মিস করতে পারে, শিক্ষকরা পারে না। তাঁর ঘুমের কোনো সমস্যা নেই। বিছানায় যাওয়া মাত্র তিনি ঘুমাতে পারেন। আজ ঘুম চটে গেছে। তিনি একাত থেকে ওকাত হলেন। তাঁর খানিকটা পিপাসাও পেল। জল খাওয়ার জন্যে এখন উঠলে ঘুম পুরোপুরি চটে যাবে। কাজেই তিনি পিপাসা নিয়েই চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলেন। তাঁর মনে হলো বালিশে কোনো সমস্যা। বালিশটা আরেকটু উঁচু হলে ভালো ছিল। তিনি বালিশ উল্টে দিলেন আর তখন শুনলেন তার মশারির কাছে এসে কে যেন কাশল। একবার দুবার। দৃষ্টি আকর্ষণ করা জাতীয় কাশি। কে কাশবে তার মশারির কাছে?

স্যার কি ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?
কে?
স্যার আমি।
আমিটা কে?

আমাকে স্যার চিনবেন না। আমি জনৈক বিপদগ্ৰস্ত ভুত। গভীর রাতে আপনাকে বিরক্ত করার জন্যে আন্তরিক লজ্জিত। ক্ষমাপ্রার্থী! স্যার, দয়া করে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন। ক্ষমা মানব ধর্ম।

রায় সাহেব ধরেই নিলেন তিনি ব্যাপারটা স্বপ্নে দেখছেন। Vuter ভয় পেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন বলেই ভৌতিক স্বপ্ন। আর কিছুই না। ভূত বিশ্বাস না করলেও স্বপ্নে ভূতেব সঙ্গে কথা বলা যায়। তাতে অস্বস্তি বা লজ্জা বোধ করার কিছু নেই। এখন তার একটু মজাই লাগল।

তুমি তাহলে ভূত?
জি স্যার। বিপদগ্ৰস্ত ভৃত। অপারগ হয়ে আপনার কাছে এসেছি।!
তুমিই কি বাতি জ্বালাচ্ছিলে নিভাচ্ছিলে?
ইয়েস স্যার।
ইংরেজি জানো নাকি?
সামান্য জানি স্যার। ভেরি লিটল। চর্চা নেই বলে মাঝে মাঝে ভুল হয়।
তুমি বিপদগ্ৰস্ত বলছিলে, বিপদটা কী?
সে এক লম্বা ইতিহাস, সময় নিয়ে বলতে হবে। স্যারেব কি সময় হবে?
না, সময় হবে না। আমাকে সকালে উঠতে হবে। সকাল আটটায় আমার একটা ক্লাস আছে। সময়মতো ঘুমাতে না পারলে ক্লাস মিস করব। আগের দুটা ক্লাস হরতালের জন্যে হয় নি।
তাহলে তো স্যার আর বিরক্ত করা ঠিক হবে না।

অবশ্যই ঠিক হবে না।
স্যার শুভ রাত্রি।
শুভ রাত্রি।
গুড নাইট স্যার।
গুড নাইট।
স্যার গুটেন নাখাট, স্লেপেনজি গুট।
এইটা আবার কী?
জার্মান ভাষায় শুভ রাত্রি, সুনিদ্ৰা হোক।
তুমি জার্মান জানো নাকি?

না জানার মতোই স্যার। জার্মান কালচারাল ইন্সটিটিউটে কিছুদিন ঘোরাঘুরি করে যা শিখেছি। একেবারেই চর্চা নেই। বিদেশী ভাষা, চর্চা না থাকলে দুদিনেই ভুলে যেতে হয়। তাহলে যাই স্যার। কাল আবার দেখা হবে।
আচ্ছা। ভালো কথা, ঘরে ঢুকেছ কোন দিক দিয়ে?
জানালা দিয়ে ঢুকেছি। স্যার যদি অনুমতি দেন তাহলে চলে যাই।
যাও।


চলবে ...

Thanks for read My story

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 67644.39
ETH 3483.63
USDT 1.00
SBD 2.65