কিভাবে একটি স্বাস্থ্যকর উপায় আমার দৈনন্দিন সকাল শুরু করবো?
হরহামেশাই আমরা বলে থাকি, যদি সকালটা সুন্দরভাবে শুরু না করা যায়; পুরো দিনটাই তাহলে মাটি! কথা কিন্তু সত্যি। আপনার দিনের শুরুটা কিভাবে করছেন, তার উপর সারাদিনের অধিকাংশ কার্যক্রম নির্ভর করে। কোনো কারণে যদি সকাল থেকেই আপনার মন-মেজাজ খারাপ কিংবা দুশ্চিন্তায় ভুগেন; তাহলে সারাদিনই তা আপনার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য সকালের রুটিনটা স্বাস্থ্যসম্মত ও সুন্দর হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
অধিকাংশ মানুষেরই সকাল শুরু হয় বিভিন্ন রকম দায়িত্ব পালনের চিন্তা মাথায় নিয়ে। সকালে উঠেই নিজের নাস্তা বানানো, বাচ্চার জন্য খাবার তৈরি করা নয়তোবা পোষা প্রানীটার দেখাশোনা করা কিংবা কর্মস্থলে যাওয়া জন্য নিজেকে তৈরি করা ইত্যাদি। দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে পালিয়ে বাঁচার সুযোগ যেহেতু কারোই নেই; তাই আমাদের সবার প্রয়োজন একটি স্বাস্থ্যসম্মত সকালের রুটিন।
যদি আমরা রুটিন মেনে সব কাজ শেষ করি তাহলে মুক্ত নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ থাকবে। একই সাথে এটি আমাদেরকে মানসিকভাবেও চাঙ্গা করে তুলবে এবং সাথে সাথে নিজের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, প্রতিটা সকালে নিজের জন্য কিভাবে একটি স্বাস্থ্যসম্মত রুটিন শুরু করবেন। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সুস্থ থাকতে চাইলে প্রতিদিনই এর ধারা বজায় রাখতে হবে; একদিন-দুদিন রুটিন অনুসরণ করলেই চলবে না । স্বাস্থ্য অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা এবং লাইফস্টাইল সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই রুটিনকে আরও কার্যকরী করে তুলতে পারেন।
১। সকালের অ্যালার্ম সেট করা
দিনের প্রথম কাজটাই হলো- সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা। সকালে একটু জলদি ঘুম থেকে উঠতে হবে। এর জন্য অ্যালার্ম সেট করুন এমনভাবে যেন আপনি সকালের কাজগুলো করার জন্য যথেষ্ট সময় পান।
ধরুন আপনার বাচ্চারা যদি সাড়ে ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে তাহলে আপনাকে তারও আগে উঠতে হবে। সন্তান না থাকলে আপনি একটু পরে উঠতে পারেন। তবে সাতটার মধ্যে সকালের কাজের জন্য তৈরি হয়ে যাওয়াটা উত্তম। তবে রাতের ঘুমটাও পর্যাপ্ত পরিমাণে হতে হবে। তার জন্যে রাতে আপনাকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে।
২। দিনের আরম্ভ হোক মুক্ত নিঃশ্বাসে
আমারা প্রায় সবাই সকালে ঘুম ভেঙে প্রথম যে কাজটি করি, তা হলো নিজের মোবাইল ফোন হাতে নেওয়া। সকাল সকাল ভার্চুয়াল দুনিয়ার বিচিত্র সব খবর বা মেসেজ চোখে পড়লে আপনার মধ্যে এক ধরনের দুশ্চিন্তা জন্ম নিতে পারে।
তাই মোবাইলের পরিবর্তে দিনের শুরুটা করবেন ছয়বার লম্বা-গভীর শ্বাস নিয়ে । এতে করে আপনার মধ্যে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়বে। আপনি নিজের মধ্যে এক ধরনের ইতিবাচক ক্ষমতা অনুভব করবেন। শুধু তাই নয় এটি আপনার দেহের অঙ্গবিন্যাসও ঠিক রাখে।
৩। কফি নয়, আগে পানি
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই যদি এক গ্লাস পানি খাওয়া যায় তাহলে শরীরের মেটাবলিজম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ঘুমের মধ্যে আমরা নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে পানির পরিমাণ থাকে ৬০ শতাংশ; তাই পানি পান করা অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে মনে করেন গবেষকরা।
৪। অঙ্গসঞ্চালন করা
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা আড়মোড়া ভাঙি। এর পেছনেও একটি কারণ রয়েছে। সারা রাত একই অবস্থানে শুয়ে থাকার পর আমাদের দেহ আড়ষ্ট হয়ে যায়। তখন শরীরের নড়াচড়ার প্রয়োজন হয়, তাই এই সহজাত প্রবৃত্তিকেই রুটিন বানানো উচিত।
ঘুম ভাঙার সাথেসাথেই কাজ করতে না গিয়ে, কিছুক্ষণ এদিক সেদিন হালকা হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করা যেতে পারে। শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়া নিশ্চিত করতে হবে। চাইলে চটজলদি একটু যোগব্যায়ামও করে নিতে পারেন।
৫। ব্যায়ামের জন্য সময় বের করা
আমাদের অনেকের পক্ষেই সকালবেলা ব্যায়াম করার সময় মেলে না। কিন্তু তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে আপনার দৈনন্দিন কিছু অভ্যাসের মধ্য দিয়েই শরীরচর্চার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নিতে পারেন।
সকালে গোসলে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ পুশ-আপ দিতে পারেন। একবার ব্যায়াম করার ব্যাপারটা আপনার অভ্যাস হয়ে গেলে, আপনি আর তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না।
৬। সঠিকভাবে মনস্থির করা
সকালে ঘুম ভাঙার পর কয়েক মিনিটের মেডিটেশন বা 'ধ্যান' করার মাধ্যমে আপনি সারাদিনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মনস্থির করতে পারেন। এর ফলে দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয় এবং মন থেকে বিক্ষিপ্ত ভাব দূর হয়ে যায়।
১০ মিনিটের মধ্যে মেডিটেশন আপনাকে দিনের বাকি কাজ সম্পর্কে মনস্থির করতে সাহায্য করবে। ইন্টারনেটে অসংখ্য অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো আপনাকে মেডিটেশন করার উপায় জানিয়ে দিবে।
৭। কৃতজ্ঞতা স্বীকার
নিজের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ স্বীকারের চর্চা করলে অনেক কষ্ট কমে যায়। এটি আপনাকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে বেশ কার্যকরী। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙে, সূর্যোদয় দেখার জন্য হেঁটতে যেতে পারেন। জীবনে যা যা পেয়ে আপনি কৃতজ্ঞ, সেগুলো লিখে রাখতে পারেন। মেডিটেশনের সময়ও নিজের জীবনের এই পাওয়াগুলো জন্য কৃতজ্ঞতা বোধ স্বীকার করতে পারেন।
৮। নিজের বিছানা গুছানো
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নিজের বিছানা নিজেই গুছানোর চেষ্টা করুন। এর ফলে আপনার মধ্যে দায়িত্ববোধ চলে আসবে। সেই সাথে নিজের ব্যক্তিগত জায়গাটুকু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও থাকবে।
৯। রুটিনের পুনরাবৃত্তি
সবচেয়ে কঠিন কাজটি হলো রুটিন 'পুনরাবৃত্তি করা'। কখনো কখনো যদি রুটিনের কিছু অংশ বাদ পড়ে যায়,তা নিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। পরদিন সকালে আবার নতুন উদ্যমে শুরু করুন।
১০। সফলতার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষকে রুটিন মাফিক চলার দিকে ধাবিত করে যে মনোভাবটি, তা হলো- আমাকে সফল হতেই হবে।
সকালে নিজের জন্য সময় বের করতে চাইলে, রাতের রুটিনটাও সেভাবেই মেনে চলতে হবে। কাজের চাপ কমিয়ে ফেলার জন্য রাতেই কিছু পরিকল্পনা করুন। যেমন- পরদিন সকালে তৈরি হওয়ার জন্য কাপড় গুছিয়ে রাখা অথবা সকালের নাস্তার আয়োজন এগিয়ে রাখা। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন কাজ, কিন্তু অসাধ্য নয়!
প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের জীবনে মূল্যবান। তাই আপনি যদি একটি স্বাস্থ্যকর সকালের রুটিন মেনে চলতে চান। তাহলে আগামীকাল থেকেই শুরু করে দিন!
nice