ক্যান্সার নিয়ে কিছু কথা যা সবার জানা থাকা উচিত
১৯৭১ সালের দিকে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ক্যান্সার এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ক্যান্সারের গবেষণাতে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু এর ৪৪ বছর পরেও ক্যান্সার আমেরিকার জনগণের মৃত্যুর অন্যতম কারণ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর যত মানুষ মারা যায় তার মধ্যে ২৫% মানুষ ক্যান্সারে মারা যায়, যুক্তরাজ্যে এই হারটা ২৯%।
১৯৫০-২০০৫ সাল, এই সময়ে ক্যান্সার এ মৃত্যুর হার কমেছে মাত্র ৫% । এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২০১৫ সালে ৫৮৯,৪৩০ মানুষ ক্যান্সারে মারা যাবে। বাংলাদেশে ১২ লক্ষ ক্যান্সার এর রোগী আছে। প্রতিবছর ২ লক্ষ মানুষ ক্যান্সার এ আক্রান্ত হয় এবং ১.৫ লক্ষ মানুষ মারা যায়। ক্যান্সার চিকিৎসার ধাপগুলো এত সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল, এবং কষ্টসাধ্য যে অনেক সময় আমাদের চিন্তায় পড়তে হয় কোনটা বেশি খারাপ – ক্যান্সার নাকি রোগ সনাক্তকরণ পরবর্তী চিকিৎসা? ১৯৭১ সালে, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিপ্লবের আগে ক্যান্সার রোগ একটি রহস্য ছিলো।
তবে এখন বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন যে ক্যান্সার মূলত আমাদের জিনের একটি রোগ। কখনও ভাইরাসের কারণে আবার কখনও রাসায়নিক বিকিরণসহ নানা কারণে ক্যান্সার হতে পারে। ক্যান্সার এর প্রাথমিক পর্যায়ে জিনের মিউটেশন ঘটে। কোষ নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে তাই, কোষের আকার, আয়তন, এবং আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর মারা যায়। এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ এসে জায়গা করে নেয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে যখন এই কোষগুলো কোনো কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়, একে টিউমার বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে আর ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই ক্যান্সার বলে। ক্যান্সার রোগের বিকাশ অনেকটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। উদাহরণ স্বরূপ, বছরের পর বছর সূর্যের আলোয় চামড়া পুড়লে তা এক সময় ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে ।
ক্যান্সার কোষে অন্তঃত পক্ষে ৩ ধরনের জিন রয়েছে- অনকোজিন এবং টিউমার সাপ্রেসর। এই জিনগুলো যথাক্রমে গাড়ির এক্সেলেরেটর এবং ব্রেক- এই দুই জিনিসের মত করে কাজ কাজ করে। অনকোজিনের কাজ অনেকটাই গাড়ির এক্সেলেরেটরে চাপ দিয়ে ধরে রেখে গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যাওয়ার মত! এর ফলে কোষের বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। টিউমার সাপ্রেসর ব্রেকের মত কাজ করে। যখন এই জিন কোনো কারণে কাজ করা বন্ধ করে দেয়, তখন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হার বন্ধ করা আর সম্ভব হয় না। ক্যান্সার জিনোম প্রকল্প ইতিমধ্যে সব ধরনের ক্যান্সার কোষের জিনের ক্রম নির্ধারণের কাজ শুরু করেছে। যেহেতু সব ধরণের ক্যান্সারের ক্ষেত্রেই মানব-জিনের ক্রম নির্ধারণ করতে হয়, এই প্রকল্পটি মানব-জিনোম প্রকপ্লের তুলনায় অনেকটাই উচ্চাভিলাষী।
ক্যান্সার জিনোম প্রোজেক্ট এর প্রথম ফলাফল প্রকাশ করা হয় ২০০৯ সালে। যেটি ছিল ত্বক এবং ফুসফুস এর ক্যান্সার এর উপর গবেষণার কিছু তথ্য। গবেষণার ফল ছিল চমকপ্রদ। ওয়েলকাম ট্রাস্ট সাঙ্গার ইন্সিটিউট এর মাইকেল স্ত্রাটন বলেন “What we are seeing today is going to transform the way that we see cancer. We have never seen cancer revealed in this form before.”
ফুসফুসের ক্যান্সার কোষে ২৩,০০০ পৃথক মিউটেশন ঘটে। যেখানে মেলানোমা ক্যান্সার কোষে ঘটে ৩৩,০০০ মিউটেশন। একজন ধূমপায়ী এর ১৫টি সিগারেট ১টি মিউটেশনের জন্য দায়ি। ফুসফুসের ক্যান্সার এর কারণে প্রতি বছর পৃথিবীতে ১ মিলিয়ন লোক মারা যায় যার অন্যতম প্রধান কারণ ক্যান্সার। ক্যান্সার জিনোম এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জিনগতভাবে সব ধরনের ক্যান্সার এর কারণ খুঁজে বের করা। এছাড়া এ প্রোজেক্ট ক্যান্সার এর প্রতিশেধক নিয়েও কাজ করছে। বিভিন্ন নিত্যনতুন চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা চলছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে –
আঞ্জিওজেনেসিস : এ প্রক্রিয়ায় টিউমারে রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয় যাতে এর বৃদ্ধি না ঘটে।
ন্যানো পার্টিকেল : অনেকটা স্মার্ট বোমের মত যা ক্যান্সার কোষগুলো ধ্বংস করে দেয়।
জিনথেরাপি : ক্যান্সার চিকিৎসায়ে জিন থেরাপি এর নানাবিধ ব্যাবহার রয়েছে। যেমন –
- এটি ব্যাবহার করে টিউমার এর অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করা হয়।
- অনাক্রম্য কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয় যাতে এরা টিউমার এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
- এর দ্বারা টিউমার এ সংবেদনশীল অথবা আত্মঘাতী জিন প্রবেশ করান হয়।
- অঙ্কজিনের স্ফুটন রোধ করতে।
- পি ৫৩ জিনএর জন্যে বিশেষত জিন থেরাপি কাজে লাগানো
- স্টেম সেল গুলোকে কেমো থেরাপি এর বিষক্রিয়া থেকে সুরক্ষা দিতে।
ক্যান্সার চিকিৎসায়ে আমাদের এখন ও অনেক কিছু করা বাকি। সত্যি বলতে আমরা এখন কোন নির্দিষ্ট সমাধানে আসতে পারিনি। তবে ডিএনএ চিপস নিয়ে যে গবেষণা চলছে সেটি যদি আলোর মুখ দেখে তবে ক্যান্সারে মৃত্যুর হার অনেক কমে আসবে বলে মনে করা হয়। তখন হয়তো টিউমার আমাদের শরীরে সৃষ্টি হওয়ার আগেই আমরা জানতে পারবো এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো। নোবেল বিজয়ী ডেভিড বালটিমোর বলেছেন – “Cancer is an army of cells that fights our therapies in ways that I’m sure will keep us continually in the battle.”
বিজ্ঞানের দুনিয়াতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। কোনো গবেষণার ফল আমরা দেরিতে পাই, কোনো গবেষণার ফল পাই খুব দ্রুত। সেদিন খুব দূরে নয় যেদিন ক্যান্সারের মত রোগের বিরুদ্ধে আমরা সফলতার সাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবো।
আপনার পরিচিত কেউ যদি ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন বলে মনে করেন তাহলে আর দেরি না করে আজই ডাক্তারের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিন ।
শালা সব কিছু কপি করে করে পোস্ট দেস............ যাই হোক কমেন্টে এ রিপ্লাই দিস..... না দিলে কিন্তু শালা খবর আছে........
You got a 4.50% upvote from @bdvoter courtesy of @maniksarker!
Delegate your SP to us at @bdvoter and earn daily 100% profit share for your delegation & rewards will be distributed automatically daily.
500 SP, 1000 SP, 2500 SP, 5000 SP, 10000 SP.
If you are from Bangladesh and looking for community support, Join BDCommunity Discord Server & If you want to support our service, please set your witness proxy to BDCommunity.