ভালোবাসার মিলন হবে যেদিন থাকবে না তোমার অামার মাঝে কোনো বাধা।
অামার নাম শিমুল মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।স্কুলে থাকাকালীন আমার খুব নামডাক ছিল ভাল গান করতাম এজন্য।তো ২০০৭সালে আমি এস.এস.সি পরীক্ষা দেই, সে বছর বিদায় আনুষ্ঠানে আমার বন্ধু ও শিক্ষকদের অনুরোধে আমি একটি গান গাই। অনুষ্ঠানের শেষে যখন জুনিয়ররা আমাদের ফুল দিতে আসে তখন আমাকে যে মেয়েটি ফুলদেয় সে আমাকে সে আমাকে ফিস ফিস করে বলে আপনার গলা অনেক সুন্দর, আপনি গান গাওয়া ছাড়বেন না।আমি অবাক হয়ে যাই মেয়েটির কথা শুনে।ভালমত মেয়েটিকে লক্ষ করি স্নিগ্ধ লাবণ্যময়ী চেহারা বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে শাড়ী পড়েছে খোপায় বেলিফুল, কেমন যেন কিঞ্চিত ব্যাথা অনুভব করলাম।
পড়ে অনেকদিন কোন দেখা সাক্ষাত হলো না এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ হলো আমিও গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরাতে লাগলাম। তো একদিন বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম হাতে সিগারেট ছিল হঠাৎ দেখি মেয়েটি দোকানের বাইরে থেকে হাত ইশারা করে আমাকে ডাকছে।সিগারেট ফেলে দিয়ে আমি বের হয়ে আসলাম।
-জ্বি বল?
-আপনি সিগারেট খান?
-হুম মাঝে মাঝে!
-আর খাবেন না।
-মানে?
-মানে মানে বাদ দিন তো।
-আচ্ছা বাদ দিলাম,কি বলবে বল?
-খুব ব্যাস্ত?
-ব্যাস্ত না তবে ওখানে বন্ধুরা বসে আছে এতক্ষন কথা বলতে দেখলে অন্য কিছু ভাবতে পারে।
-আচ্ছা ঠিকাছে আজকে যান কাল বিকেল চারটায় নদীর পারে বকুল গাছ তলায় অপেক্ষা করব, চলে আসবেন। আপনার সাথে জরুরী কথা আছে।
-মানে কি! কি কথা?
-চিন্তা করবেন না প্রেমের প্রস্তাব দিব না আগামী বছর আমারো পরীক্ষা তাই আপনার সাথে পড়াশোনা বিষয়ে আলাম করব।
-ওহ আচ্ছা ঠিকাছে।
মেয়েটি চলে গেল আমিও দোকানে এলাম আরেকটি সিগারেট হাতে নিয়ে জ্বালাতে গিয়েও কেন যেন জ্বালালাম না। হঠাট আমার ঠোটের কোনায় হাসি ফুটে উঠল মেয়েটিকে কেন যেন আমার খুব ভাল লাগছে।চিন্তাটা বেশিদুর আগালাম না কাল আগে গিয়ে দেখি কি বলে।
এ পর্যায়ে ছেলেটি একটু থামল দেখলাম নিঃশ্বাস নিচ্ছে বুঝলাম টানা কথা বলায় হাপিয়ে পড়েছে।তার সিগারেট খাওয়ার কথা শুনে আমারো সিগারেটের তৃষ্ণা পেয়ে গেল বললাম ভাই পাচ মিনিট বিরতি নেওয়া যাক দেখে বুঝতে পারছি আপনি হাপিয়ে পড়েছেন একটু বিশ্রান নিন আমিও বাইরে থেকে একটা বিষপান করে আসি।
হাসপাতালের বারান্দায় এসে সিগারেট জ্বালালাম।সন্ধ্যা হয়ে আসছে চারপাশের প্রকৃতি খুব শান্ত, শান্ত গাছেরাও খালি ব্যাস্ততা দেখাচ্ছে প্রান কারন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে তাদের যে বাড়ি ফেরার তারা আছে।
সিগারেট শেষ করে ওয়ার্ড এ ঢুকলাম দেখলাম ভাই চায়ের ফ্লাক্স হাতে বসে রয়েছেন, আমি হাসতে হাসতে বললাম চা কোথা থেকে যোগার করলেন? বলল ওয়ার্ড বয় কে দিয়ে আনিয়েছি,মনে হল আপনার ভাল লাগবে।আমি বললাম, এক কাপ চা আপনারো পাওয়া রইল কোন একদিন পেয়ে যাবেন।চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে বললাম, ভাই শুরু করুন।
ভাই লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলা শুরু করলেন-
পরদিন আমি নদীর পারে সময় মত উপস্থিত হলাম, গিয়ে দেখি মেয়েটি আগেই এসে বসে আছে।আমাকে দেখে বিরক্ত গলায় বলল, এতক্ষন কেউ অপেক্ষা করায়?আমি বললাম,
-আমি তো চারটার সময়েই এসেছি তুমি আগে আসলে আমি কি করব?
-দেখেছ উনি দোষ করেছে আবার তর্কও করছে
রাগী গলায় বলল মেয়েটি কিন্তু তার মুখে আমি আলোয় ঝলমল করতে দেখলাম।তারপর সে বলল বসুন গাছের গুড়িতে বসে পড়লাম তারপর সেও এসে পাশে বসল আমার হাত ধরল।বুঝতে পারলাম আমরা দুজনেই ভালবাসার বাধনে বাধা পড়েছি।
এর পরের অংশটা খুব ছোট আমাদের ঠিক গল্পের মত প্রেম শুরু হয়,কদিন পড়েই জানতে পারি ও হিন্দু। আমি একটু চিন্তায় পড়ে আমারে এই সম্পর্কের ভবিষ্যত কি,কিন্তু ওর ভালবাসা আমার এসব চিন্তাকে কই যেন দূরে ঠেলে দেয়। কিছুদিন আগে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব আসে, আমরা দুজনেই বাসায় জানাবার সিদ্ধান্ত নেই কিন্তু ধর্ম নামক বাধার কারনে কারো বাসা থেকেই সম্মতি পাইনা বরং ওর বাসা থেকে আমাদের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়,অনেক কষ্টে একদিন লুকিয়ে ওর বাড়ি গিয়ে দেখা করি সিদ্ধান্ত নেই দুজনে একসাথে বিষ খাব আর তার ফল সরূপ আজ আমাই এই বেডে, আর মহিলা ওয়ার্ডে ও আছে।বাসা থেকে আমাদের বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে।এই ছিল আমার গল্প।
আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তার কথাগুলো শুনছিলাম,তার কথায় জ্ঞান ফিরে এল অনুভক করলাম চোখের কোনায় পানি জমে উঠল।বললাম ভাই আমি বারান্দায় আছি একটু আসছি।বারান্দাড়িয়ে আরেকটা সিগারেট জ্বালালাম। মনে মনে ভাবলাম যাক অন্তত দুটি মানুষ পেলাম যারা ধর্মের বাইরে গিয়ে সত্যকে অনুভব করতে পেরেছে।হঠাৎ করে পিছনে একটা হাতের স্পর্শ পেলাম ঘুরে দেখি একজন প্রায় বৃদ্ধ লোক আমাকে ডাকছে তার চোখ ভর্তি পানি,বললাম চাচাজি কিছু বলবেন?
বলল, বাবা যার সাথে তুমি গল্প করছিলে আমি ওর বাবা।
ওহ চাচা আপনি খুব সৌভাগ্যবান তার মত সাহসী ছেলে পেয়েছেন, জলদি বাড়ি ফিরে দুজনের বিয়ের ব্যাবস্থা করেন।আচ্ছা আমি কি মেয়েটির সাথে কথা বলতে পারি?
ভদ্রলোক ডুকরে কেদে উঠলেন আমি বললাম কি হয়েছে চাচা?
বলল বাবারে মেয়েটা মারা গেছে এই হাসপাতালের মর্গেই ওর লাশ আছে আমার ছেলেরে সত্যটা বলার সাহস আমার হয়নাই।
বাবা তুমি তারে সত্যিটা বলবে না। লোকটি কাদতে কাদতে চলে গেলেন,আমি হতভম্ব হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম।আবারো মানুষে জাত, ধর্ম দুটি জীবন নষ্ট করে ফেলল। আচ্ছা সৃষ্টিকর্তা কি এমনটা চাইবেন যে তারই দুটি সৃষ্টি একে অপরকে ভালবাসা থেকে দূরে থাকবে?এটি একটি কাল্পনিক গল্প হতে পারে অাবার কারো জীবনের সাথে মিলে যেতে পারে যদি তাই হয় তাহলে অামি অাপনার চোখের অশ্রু ঝড়ানোর জন্য অামি নিজেই অপরাধী।