দ্বীনি ইসলাম
"কত বার এমন হয়েছে যে, ছোট একটা দল বড় বাহিনীকে পরাজিত করতে পেরেছে আল্লাহর অনুমতিতে" — আয়াতের এই অংশটি উগ্রপন্থী দলরা অপব্যবহার করে মুসলিমদের মিথ্যা আশ্বাস দিতে। তারা তাদের অবৈধ মারামারিতে সরল প্রাণ মুসলিমদের বাগিয়ে নেওয়ার জন্য আয়াতের এই অংশ ব্যবহার করে। আয়াতে এই অংশ কোট করার আগে আমাদেরকে দেখতে হবে, তারা আমাদেরকে যেই যুদ্ধে অংশ নিতে বলছে, তার সাথে এই আয়াতে তালুত-এর যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের কতখানি মিল রয়েছে। এই আয়াতের প্রেক্ষাপটের অনুরূপ অবস্থা তৈরি হয়েছে কি? মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে কি কোনো কাফির বাহিনী যুদ্ধ করতে এসেছে? আমরা কি সত্যিই আত্মরক্ষায় যুদ্ধ করছি? মুসলিম বাহিনীর নেতা কি রাসুল ﷺ এর এক আদর্শ অনুসারী? যিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি নিশ্চয়ই কোনো নবী বা রাসুল নন। তাহলে তিনি কি তালুত-এর মতো একজন মুসলিম রাজা, যাকে আল্লাহ ﷻ এবং রাসুল পরিষ্কার কর্তৃত্ব দিয়েছেন? মুসলিম জাতি কি তার আনুগত্য মেনে নিয়েছে? —এই সব শর্ত পূরণ না করে কেউ এই আয়াতের দোহাই দিয়ে কোনো ধরনের হামলা করতে বললে বুঝতে হবে, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজের কোনো উদ্দেশ্য হাসিল করা। না হয় সে নিজেই ব্যাপক বিভ্রান্ত। ইসলামের সঠিক জ্ঞান তার মধ্যে নেই, অথবা তার ব্যক্তিগত আক্রোশ তাকে অন্ধ করে দিয়েছে।
এই কথাগুলো যিনি লিখেছেন, আমি যদি বলি ঠিক একই কথা উনি যাকে উস্তাদ মানেন, সেই কাব্বানিও লিখেছেন। এবং সেই লেখাটি ইউএস আর্মি ফতওয়া আকারে ইরাকি জনগণের মাঝে বিতরণ করেছে। আপনারা কি বিশ্বাস করবেন?
ইরাক যুদ্ধে মুসলিমদের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য একক কোন আমীর ছিল না। তাই আমরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ আসলে জিহাদ না। একক কোন আমীর যদি থাকত, তাহলে প্রশ্ন আসত সে যোগ্য আমীর কিনা, কিন্তু আমরিকার ডিসিট্রবিউশন করা ফতওয়া কি কখনো আমরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত যোগ্য আমীর খুঁজে পাবে? ধরে নিলাম একজন যোগ্য আমীর পাওয়া গেল, তাহলে তার কি জনগণের উপর তামকীন আছে? তার কি রাষ্ট্র আছে? সে কি রাষ্ট্রপ্রধান? তার রাষ্ট্রকে কি জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃতি দিয়েছে? কারণ জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি ছাড়া কি রাষ্ট্র হয়? আর আপনারা কি মনে করেন জাতিসঙ্ঘ কোন সহীহ ইসলামী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিবে? অথবা কোন ইসলামী রাষ্ট্রের যদি আদৌ জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে?
ইরাক যুদ্ধে মুসলিমদের একক কোন আমীর ছিল না। যারা যারা ছিল, তারাও হয়ত সাহাবাদের আমলের মানুষগুলোর মত নয়। তারা কি আসলেই আত্মরক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছে? আমরিকা কি আসলেই ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল? মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল? যদি আসত তবে তারা কেন ইসলামের ফতওয়া প্রচার করবে মুসলিমদের মাঝে?
ফাতিমা, আবীরের মত আরো নাম না জানা মুসলিমদের সাথে অন্যায় তো আমরিকার উদ্দেশ্য ছিল না। এর নামে মুসলিমদের জোর করে জিহাদের প্রতি কি আহবান করা যায়? সেটা কি আদৌ জিহাদ হবে? কারণ আমরিকা তো ইসলাম আর মুসলিমদের বিরুদ্ধে না। বিরুদ্ধে হলে তো তারা কাব্বানীদের তাফসীর ফতওয়া এভাবে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে প্রচার করত না।
অসৎ জিহাদীরা এসব আয়াত তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের জন্য ব্যবহার করে। ইউএস আর্মি খুব মহৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে। কাব্বানীও খুব মহৎ উদ্দেশ্যে এরকম তাফসীর আর ফতওয়া লিখে ইউএস আর্মির হাতে তুলে দেয়। যেন ইউএস আর্মির সামনে অসৎ জিহাদিরা সাধারণ মুসলিমদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার না করতে পারে, সাধারণ যুবকদের জিহাদের নামে মাঠে নামিয়ে ইউএস আর্মির ক্ষতি না করতে পারে। আর কাব্বানীর শিষ্যরা আরো মহৎ উদ্দেশ্যে সেই একই ভাষা একই টোন বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে অসৎ জিহাদিদের কূটরাজনীতি নাস্যাৎ করে দ্বীন-দুনিয়ার অশেষ নেকী হাসিল করছেন।