প্রথম দর্শনে আমার মনের প্রথম চিন্তা।
'মেয়েটার হাইট কি আমার চেয়ে বেশী হবে?'
প্রথম দর্শনে আমার মনের প্রথম চিন্তা।
চট্টগ্রাম কলেজে দুইবছর একসাথে পড়া সও্বেও বোরিং আঁতেল মেয়েটা আর চটপটে আঁতেল ছেলেটার কখনও দেখা বা কথা হয়নি। আমি প্রথমবার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে মাইগ্রেশন করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে এসে নিজে এক হামবড়া ভাব ধরে ফেললাম। আর তখন শ্রেষ্ঠা দ্বিতীয়বার কোচিং করছিল,আর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে আমার ছবি দেখে দলবেধে আমাকে গালাগালি করত। অবশেষে পরের বছর রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে মাইগ্রেশন করে সেও ঘুরেফিরে চট্টগ্রাম মেডিকেলেই আসলো।
ফেসবুকে কথা শুরু। প্রথমে খুব সিনিয়রসুলভ আচরণ করতে লাগলাম। দেখলাম তেমন পাত্তা পেলাম না। খুব দরকার ছাড়া সে কথা বলত না, জবাবও দিত না। আপার লেকচার গ্যালারীর সামনের দেয়ালে আমার একটা ছবি আছে। একদিন সে নিজ থেকে জানতে চাইলো ছবিটা আমার আঁকা কিনা? সেই থেকে মনে হলো,নাহ্ বরফ বোধহয় গলছে। বুঝলাম সৃজনশীল ব্যাপারগুলো ও একটু বেশী পছন্দ করে।
কিন্তু মেয়েটা যে একটু বেশীই কাটখোট্টা। কথাও বেশী বলে না। একদিন সাহস করে ভালো লাগার কথা বলে ফেললাম।
২০১৩ সালের ১৯ মে।
ওমা, সাথে সাথে হ্যাঁ না কিছু না বলে সে অফলাইন। কোনো কথা নেই-বার্তা নেই। ক্যাম্পাসে দেখলে এড়িয়ে চলতো। মাঝখানে আর কোনো যোগাযোগ নেই। হঠাৎ সে একদিন, জুলাই মাসের ১৮ তারিখে, আমাকে নক দেয়। বুঝতে পারি সেও বোধহয় ভেতর ভেতর কিছু অনুভব করছে। কিন্তু আমিও সেদিন না বোঝার ভাণ করে থাকি, বলি পরদিন দেখা করতে। পরদিন সে আমাদের সেসময়কার শিমু লাইব্রেরীতে আসে। আসার সাথে সাথে তাকে আমি একটা কথাও বলতে দিই নি। শুধু মনে আছে ওখানকার একটা টেবিলে লিখি, 'Will you be Mrs Roy?'
সেই থেকে আমাদের প্রেম শুরু অথবা 'ছোট্ট বন্ধু'ত্বের! ও খুব চিঠি লিখতে ভালোবাসে। মনে হয় এখনও ৬০-৭০ টি চিঠি জমা আছে। সময় পেলে মাঝে মাঝে এখনো পড়ি,হাসি। ইচ্ছা আছে বুড়ো বয়সে যখন বুড়ো বেকার ডাক্তার হবো তখন দুজন খালি চিঠি লিখেই কথা বলবো।
আমাদের দুজনের কিছুই মিলে না! আমি খুব শান্ত পরিবেশে কোনে রেস্তোরাঁয় খেতে পছন্দ করি আর ও ভালোবাসে মেজবানে ধাক্কাধাক্কি করে খেতে। আমি সিএনজিতে যেতে চাই আর ওর পছন্দ রিকশা। আমি প্রচুর চলচ্চিত্র দেখি, আর ও দেখে ক্রিকেট। শুধু আমাদের ছোট্ট মিল "ভালোবেসে একসাথে অনেক বছর বাচতে চাই,আর মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে চাই"। হয়তো এগুলোই সব অমিলকে ঢেকে রেখেছে।
হ্যাঁ,আমাদের ঝগড়া হয়,কথা বন্ধ হয় কিন্তু খুব বেশী হলে চব্বিশ ঘন্টা।
এভাবেই পাঁচটা বছর চলে গেলো। শিমু লাইব্রেরী থেকে লাইব্রেরী এখন নতুন ভবনে। সেই টেবিলটাও আর অনেক খুজেঁ পাইনি, কিন্তু আমাদের ভালোবাসা-বন্ধুত্ব চলছে অবিরাম। দুজনের বন্ধুত্বটাকে নিয়েই আজীবন একসাথে থাকতে চাই।
Be happy with friendship and love each others.