প্রেম ও পেট্রোল বোমা

in #dlive7 years ago

tangailtimes-13-2-18-2_jpg.jpg

১৪ ফেব্রুয়ারী বুধবার, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। শেষ বিকেলের দিকে ক্যাপসুল মার্কেটে স্ত্রী ও পুত্র সন্তানকে নিয়ে শপিং করছিল সিয়াম। এমন সময় তার মোবাইলে একটা কল আসে অচেনা নাম্বার থেকে। সে সাধারণত অচেনা নাম্বার রিসিভ করে না। সেদিন করল। একটা মিষ্টি সুরেলা নারী কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, হ্যালো সিয়াম বলছেন?
জী।
কেমন আছেন?
ভালো। কে বলছেন প্লিজ!
আমাকে চিনতে পারছেন না?
না।
কিন্তু আপনি তো আমাকে ভালো করেই চিনেন। আমি আপনার খুব আপনজন।
পরিচয় না দিলে কিন্তু লাইন কেটে দিব।
সত্যিই কি আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না?
না। প্লিজ বলুন না আপনি কে।
বলবো না। সুরেলা কণ্ঠে বলল সে।
সিয়াম লাইন কেটে দিল। কিন্তু তার ভাল লাগল না। আজকের এই বিশেষ দিনে কে তাকে ফোন করতে পারে। অনেক ভাবাভাবি করল সে। কার কণ্ঠ তার কোন কুল-কিনারা সে করতে পারল না।
সন্ধ্যার পরপরই বাড়ি ফিরল সিয়াম। সিয়াম গ্রামে থাকে। এক পিচ্চি-পুত্র ও লী বৌ নিয়ে তার সোনার সংসার। স্ত্রী পুত্রকে বাড়িতে রেখেই বলল, একটু বাজারে যাচ্ছি।
স্ত্রী বলল, হঠাৎ করে বাজারে যাবেন কেন?
দরকার আছে।
সিয়াম সাধারণত বাজারে যায় না। রাত্রে বাড়ির বাইরে বের হয় না। সে বেশ ভীতু টাইপের ছেলে। বাজারের নাম করে সে তাদের বাড়ির পাশের এক বাগানে আসে। তারপর ফোন করে সেই নারী কণ্ঠস্বরকে। হ্যালো আমি সিয়াম। কে বলছেন প্লিজ!
আমি জানতাম তুমি ফোন করবেই করবে। ফোন করার পর থেকেই মোবাইলটা হাতে নিয়ে নিয়ে ঘুরছি।
আপনি এখন কোথায় আছেন?
বারিধারা।
ওরে বাবা ওটাতো বড়লোকদের জায়গা। আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর কেউই তো ওখানে থাকে না। আর আমি স্বপ্নেও তো ওসব জায়গায় যাইনি।
সিয়াম সত্যিই কি তুমি আমাকে চিনতে পারছ না?
আমি কি কোনদিন আপনার সাথে মোবাইলে বা সরাসরি কথা বলেছি?
না।
তাহলে আপনিই বলুন আমি চিনবো কী করে!
তা অবশ্য ঠিক।
আমি রত্না। চিনতে পারছো?
না।
না পারার-ই কথা। ও নামে তো আপনি আমাকে চিনতে পারবেন না। আমার আরেকটি নাম ছিল সালমা। কামুটিয়ার সালমা। বাথুলী সাদী হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি।
সিয়াম ঘোরের মধ্যে চলে যায়। মাথাটা কেমন যেন দোলে ওঠে। হ্যাঁ সালমা! কিশোর বয়সে না বাল্যকালে, সে যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে তখন সালমা ভর্তি হয় ষষ্ঠ শ্রেণিতে। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়া। সে কী প্রেম! প্রতিদিন সালমাকে না দেখলে তার খাওয়া-দাওয়া হয় না, ঘুম হয় না, লেখাপড়া হয় না। সালমার প্রেমে সে পাগলপ্রায়! সবাই তার প্রেম নিয়ে হাসি-তামাসা করে। সিয়াম কাউকে কিছু বলতে পারে না। সালমাকে তো নয়ই। অষ্টম শ্রেণিতে সিয়াম যখন বৃত্তি পায়। আর ঠিক তক্ষুণি ভাবে সালমাকে বলবে। কিন্তু বলার আগেই সালমা চলে যায় জামালপুর। তারপর থেকে কোন যোগাযোগ নেই। যদিও অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে সিয়াম সালমার ঠিকানাটা জোগাড় করেছিল। এর অনেক দিন পর সিয়াম যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র তখন রাস্তায় বন্ধু রেজ্জাকের সাইকেলে সালমাকে দেখে সিয়াম। সালমা ততদিনে আরো সুন্দরী। সিনেমার নায়িকাদের মতন চলন-বলন। সালমাকে আর কিছুই বলা হয় না। তারপর আর কোন খোঁজ-খবর নেই। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর আগের কথা।

রিং টোন বেজে ওঠার পর সিয়াম বুঝতে পারে মোবাইলের লাইন কেটে গিয়েছিল। ফোন রিসিভ করতেই রত্না বলে, ফোন কেটে দিলে কেন? আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।

না ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না। সালমা যার সাথে কথা বলার জন্য দিনের পর দিন রাতের পর অপেক্ষায় থেকেছি। সেই সালমাই আজ আমার জীবনে এলো ঈদের চাঁদ হয়ে। আসলেই বিশ্বাস হচ্ছে না তুমিই সে সালমা কিনা।

এরপর কথা চলতে থাকে। চলতেই থাকে। কত শত কথা হয় ওদের মধ্যে। রত্না সিয়ামকে ভীরু, কাপুরুষ, আনস্মার্ট ইত্যাদি ইত্যাদি বলে গালি দিতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র হয়েও সিয়াম কেন গ্রামে পড়ে আছে তা নিয়েও রত্না কথা বলতে থাকে।রত্না সবশেষে বলে, তুমি যদি সত্যিই আমাকে এখনো ভালোবেসে থাকো তাহলে তুমি এখন থেকে ঢাকা থাকবে, আগের মত লেখালেখি করবে, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে মেতে থাকবে। আমি চাই লেখালেখিতে তুমি শাইন করো।

আমার মত অপদার্থ লোক ঢাকা গিয়ে থাকবে কোথায়, খাবে কী? তাছাড়া ঢাকা শহর আমার ভালো লাগে না। ওখানকার আবহাওয়ার সাথে আমার শরীর মানিয়ে চলতে পারি না।

ওসব আমি দেখব। তুমি শুধু লিখবে লিখবে আর লিখবে। তুমি লেখালেখির জগতে প্রতিষ্ঠা পাবে। আমি সবাইকে দেখিয়ে বলব, ঐ যে আমার বাল্যপ্রেমিক আমার কারণে আবার লেখালেখি শুরু করে কত সুন্দর সুন্দর গল্প নাটক উপন্যাস লিখছে।
ওদের কথার শেষ কথা হচ্ছে: প্রমিজ, সাতদিনের ভেতরে আমাদের দেখা হচ্ছে। আর অবশ্যই একুশে ফেব্রæয়ারী সারাটা দিন আমরা একত্রে থাকবো।

এটা সেই বছরকার কাহিনী যে বছর সারা দেশে পেট্রোল বোমা ছুঁড়া হচ্ছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার জজ কোট সংলগ্ন রাস্তা, বংশাল, গুলিস্তান, শাহবাগ, রামপুরা, খিলগাঁও। সিয়াম নিজেও জানে এই অবস্থায় তার স্ত্রী, তার মা-বাবা কেউ-ই তাকে ঢাকা যেতে দিবে না। সিয়াম তার মা-বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান। সন্তানকে মাটিতে নামতে দেননি পিঁপড়ে খাবে বলে, আবার মাথায়ও ওঠতে দেননি উকুনে কামড়াবে বলে। সিয়াম ঢাকা যাবে বাড়িতে বলতেই মা ও স্ত্রী বাড়াবাড়ি রকমের খারাপ ব্যবহার করলো তার সাথে। স্ত্রী বলল, পেট্রোল বোমায় পোড়ার শখ হয়েছে। মা বললেন, পেট্রোল বোমায় মরার শখ হয়েছে। সিয়াম কোন ভাবেই মা ও স্ত্রীকে বুঝাতে পারলো না যে পেট্রোল বোমা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাছাড়া মৃত্যু থাকলে দুনিয়ার যে যেখানেই থাকুক, মৃত্যু যেখানে হবে সেখানে তাকে যেতেই হবে। তবুও কাজ হলো না। দুদিন সিয়াম বাড়িতে ঠিকমত থাকলো না। ঠিকমত খেলও না। তার মন শুধু ব্যাকুল হয়ে রইলো কখন তার বাল্যকালের প্রেমিকা সালমার সাথে তার দেখা হবে, কথা হবে। সালমার ভাবনায় সে এতটাই মগ্ন যে, যে ছেলেকে সে এক মুহূর্তও না দেখে থাকতে পারতো না, সেই ছেলের সাথেও ঠিকমত কথা বলছে না। অবশেষে একটা বুদ্ধি কাজে লাগলো। তার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক বন্ধু লিটনকে দিয়ে তার মা ও স্ত্রীকে ফোন করালো। লিটন বেশ নামকরা লেখক।

তালপাতার পুঁথি লিখে বিজ্ঞ পাঠক-মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে। বইমেলা উপলক্ষ্যে টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে তার সাক্ষাতকার দেখানো হচ্ছে। লিটন সিয়ামের মা ও স্ত্রীকে বলল, আমি অস্ট্রেলিয়া থেকে পনেরো বছর পরে এসেছি শুধু বই মেলার জন্য। আর আমি সিয়ামের লেখারও খুব বড় একজন ভক্ত। সিয়ামের সাথে দেখা না করে গেলে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে একটা আফসোস থেকেই যাবে। লিটনের কথায় কাজ হলো। সতেরো তারিখেই সিয়াম বাড়ি হতে রওয়ানা হলো ঢাকার পথে।

ঢাকা হতে টাঙ্গাইলের দুরত্ব ৯৯ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগার কথা দুই ঘন্টা। লাগে তিন ঘন্টা। অনেক সময় জ্যামের কারণে পাঁচ ঘন্টাও লাগে। নিরালা বাসে উঠেই সিয়াম সালমাকে ফোন করল, বাসে উঠেছি। বাস ছাড়লে ফোন করল, এইমাত্র বাস ছাড়লো। বাস করটিয়া কলেজ ক্রস করল। একটু পরেই ফোন করল, মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ ক্রস করছি। বাইপাইলের জ্যামে পড়লে সিয়াম বলল, এটা কোন দেশ হলো। আধঘন্টা ধরে বাস থেমে আছে। বাসে না মনে হয় চুলোর ভেতর বসে সিদ্ধ হচ্ছে। ঢাকা আজ এতদুর কেন? আগে তো ঢাকা যেতে এত সময় লাগেনি। আবদুল্লাহপুর পৌঁছাতে দুটো বেজে গেল। সিয়াম বলল, না না আমার জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই। তুমি লাঞ্চ সেরে নাও। .... না না আমার অনেক সময় লাগবে। তুমি খেয়ে নাও। সিয়াম অস্থির হয়ে আছে কখন সালমার সাথে দেখা হবে। ওদিকে সালমাও অস্থির। বারবার মোবাইলে খবর নিচ্ছে সিয়াম এখন কোথায়। সিয়াম মহাখালী বাস টার্মিনালে নামল। কিভাবে যাবে পুরনো ঢাকার জজকোর্ট। বাসে গেলে অনেক সময় লাগবে। আবার সিএনজিতে গেলে অনেক টাকাও লাগবে। ওদিকে সালমার আবার হাইকোর্টে একটা হিয়ারিং আছে। সিয়াম গেলেই ওর সাথে লাঞ্চ করেই হাইকোর্টে চলে আসবে। সিয়ামের সামনে প্রথম যে সিএনজিটা থামলো সেটাই সে ভাড়া করলো। ভাড়া তিনশ টাকা। সিএনজি চালকের কথা, ওেিদক কেউই যাবার চায় না। কখন ক্যারা কুনদিক দিয়া পেট্রোল বোমা মারে তার কি ঠিক আছে?

সিএনজি চলছে বেশ জোরেই। সাত রাস্তার মোড়ে এসেই বিশাল একটা জ্যাম। মগবাজার এসেও তাই। সালমা সিয়ামকে জজকোর্ট যাবার সহজ রাস্তা বলে দিল। সেই মোতাবেকই চলতে লাগলো সিএনজি। সিএনজি কাকরাইল হয়ে হাইকোর্টের পাশ দিয়ে কার্জন হলের পূর্ব দিক দিয়ে যাচ্ছে। রেলওয়ে হাসপাতালের পাশ দিয়ে সিএনজি যাচেছ। সিএনজির সামনে একটা সাত নম্বর বাস। সদরঘাট যাচ্ছে। হঠাৎই সিয়াম দেখতে পায় দুতিনটা কোকের বড় বড় বোতল উড়ে আসছে তার দিকে। তারপর ...... । না সিয়ামের আর তারপর নেই। তারপরের তারপর হচ্ছে সাত নম্বর বাসটা পুড়ছে। তার পাশে পুড়ছে সিয়ামদের সিএনজি। ড্রাইভারের মাথাটা পিচঢালা পথে পড়ে আছে। পুড়ছে তার বুকপকেট। ঝলসে গেছে সিয়ামের মুখের একপাশ। বাম পায়ের অর্ধেকটা নেই। ডানপাশটা পরে আছে সিএনজির সিটের উপরেই। কানের নিচে

অনবরত রিংটোন বেজে চলেছে সিয়ামের। সেখানে লেখা উঠছে: সরৎধপষব ষড়াব. সাইরেন বাজিয়ে আসছে ফায়ার সার্ভিস। আসছে পুলিশ। মুহুর্তেই পুরো জায়গাটাই ঘিরে ফেলল পুলিশ। সিয়ামের ঝলসে যাওয়া মুখ ধারণ করছে টিভির ক্যামেরাগুলো। ফায়ার সার্ভিসের লোক উঠাচ্ছে সিয়ামকে। কেউ বলছে, আছে। কেউ বলছে, না নেই। কেউ বলছে তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্সে উঠাও। যদিই বাঁচানো যায়।

রত্না অস্থির হয়ে আছে। সিয়ামের ফোন বাজছে, কেউ ধরছে না কেন? টিভির দিকে চোখ যায়, এই মাত্র পেট্রোল বোমায় থেমে গেল আরো তিনটি প্রাণের স্পন্দন। রত্নার রুমটা এসি করা। সে এসির ভলিউম বাড়িয়ে দেয়। তবুও ঘামতে থাকে। মোবাইলটা নিয়ে হ্যালো বলতেই তাকে বলা হয়, মোবাইলের ভদ্রলোককে নিয়ে আমরা ঢাকা মেডিক্যালের বার্ণ ইউনিটে যাচ্ছি।
রত্নার নিজস্ব প্রাইভেট কার আছে। সে ড্রাইভারকে বলে, তুমি গাড়ি নিয়ে আসো। আমি সিএনজি বা রিক্সা নিয়ে ঢাকা মেডিক্যালে যাচ্ছি। গাড়িতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

রত্না ঢাকা মেডিক্যালে আসে। সিয়ামের মোবাইলটা বন্ধ। রত্না পাগলের মত ছোটাছুটি করে ঢাকা মেডিক্যালের ইর্মাজেন্সি ইউনিট, বার্ণিং ইউনিট। ঐতো ট্রলির উপর একটা লাশ! ওটাই কি সিয়াম! বিভৎস মুখ। বাম পাটা নেই। ওটাই কি তার সিয়াম! বাল্যকালে তাকে দেখেছিল রত্না। বাল্যকালে সিয়ামের মুখটা ছিল নিষ্পাপ। আর এখন! কেমন হয়েছে ওর মুখ! সে লাশের কাছে যায়। সিস্টারকে বলে, এর নাম কী সিয়াম?
পরিচয় জানা যায় নি। সিএনজিতে যাচ্ছিল।

তাহলে এটাইতো সিয়াম! যে আমাকে পাগলের মতো ভালোবেসেছে! কিন্তু কোনদিন মুখ খুলে বলতে পারেনি। আজ তার বলার কথা ছিল। আজো সে বলতে পারলো না। ভিড়ের মধ্যে কেউ একজন রত্নাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। তবুও সে এক চুলও নড়ল না।
এই তো সিয়ামের হাত। সিয়ামের খুব শখ ছিল রত্নার হাতটা ধরার। রত্না তার হাতটা সিয়ামের হাতের দিকে বাড়িয়ে দিতেই দুজন ওয়ার্ডবয় দ্রুত এসে লাশের ট্রলিটি ধরতে ধরতে বলল, আরো লাশ আসছে। এটাকে মর্গে পাঠাতে হবে। রত্নার আর সিয়ামের হাতটি ধরা হলো না। তার চোখের সামনে শুধু পেট্রোল বোমা, আগুন আর সিয়ামে ঝলসে যাওয়া মুখ ভেসে উঠতে লাগল। সারা পৃথিবীটা তার চোখের সামনে ভ‚মিকম্পের মতো দোলে উঠলো। আর সেই দুলুনিতে সে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ণ ইউনিটের সামনে নিরব নিথর হয়ে এলোমেলোভাবে পড়ে রইলো।

টাঙ্গাইলটাইমস

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.20
JST 0.035
BTC 97105.70
ETH 3328.65
USDT 1.00
SBD 3.16