নিলির ডায়েরী..... এইসব কোলাহলে
আড়ং এর সামনে থেকে সাভার পরিবহণের একটা বাসে উঠেছি, ক্যাম্পাসে ফিরতে কয়টা বাজবে কে জানে! ওঠার একটু পরেই টের পেলাম, এরচেয়ে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করে ভার্সিটি বাসে ফিরলেই পারতাম। বাসের এক ইঞ্চি জায়গা খালি থাকলেও এরা জায়গা থেকে বাস নড়াবেনা। তারওপর প্রতিটা স্টপেজে গিয়ে তো যাত্রী কুড়িয়ে নেওয়া আছেই।
মেজাজটা ভয়াবহ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। একটু পরই দেখলাম বয়স্ক এক লোক উঠে দাঁড়িয়ে আছে, পাঞ্জাবী পাজামা পরা। দরদর করে ঘামছে। অদ্ভুত! একটা কেউ উনার বসার ব্যবস্থাও করছেনা।
অগত্যা আমিই উঠে দাঁড়ালাম, উনি আমার সিটে বসতেই চাচ্ছিলেন না, জোর করে একটু চোখ রাঙানি দিয়ে বসিয়ে দিলাম। দাঁড়িয়ে হঠাৎ মনে হলো, আমার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা বোধহয় আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়েই মনে হলো, আমি এক্ষুনি বেহুঁশ হয়ে যাবো।
স্বচ্ছ! আমার দিকে তাকিয়ে আছে হাসিমুখে। হাসিটা ওর চশমাপরা চোখেও ছড়িয়ে পড়েছে।
উফফ্!! ভালো কাজের মূল্য পাওয়া যায়না এটা কোন গাধা বলেছে? তাকে পেলেই আমি মাথায় কষে কয়েকটা গাট্টা মারতাম। দাদুটাকে বসতে দিয়েছিলাম বিবেকের টানে, কিন্তু তাতে করে যে স্বচ্ছ এমন ইমপ্রেসড হয়ে যাবে, ভাবতেও পারিনি। আর ও এই বাসে উঠলো কখন?
- ক্যাম্পাসে যাচ্ছিস?
ওর কথায় বাধ্য হয়ে কল্পনার দুনিয়া থেকে ফেরত আসতে হলো। আমার পক্ষে যতটা সম্ভব ততটা মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে মাথা নাড়লাম। মুখে কিছু বললাম না। বলতে গেলেই ওকে ভাইয়া বলে ডাকতে হবে। কেন যে ও আমার সিনিয়র হতে গেলো!
দুইঘন্টা পার হয়ে যাওয়ার পর সবে মিরপুর পৌঁছেছি ; অথচ আমার একটুও বিরক্ত লাগছে না। বরং মনে হচ্ছে, বাসটা বোধহয় আজকে একটু তাড়াতাড়ি চলছে। গাধার মত ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে, লজ্জায় সরাসরি ওর দিকে না তাকিয়ে যতটা সম্ভব আড়চোখে তাকাচ্ছি। কিন্তু এই ভদ্রলোক এত লম্বা, ওর মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে গেলেও ঘাড় ব্যথা হয়ে যায়।
হঠাৎ করেই ফোনের ভাইব্রেশন টের পেলাম। অনেক কায়দা কসরত করে ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে গিয়ে দেখি আসলে স্বচ্ছ ভাইয়ার ফোনে রিং হচ্ছিলো। উনিও অনেক কায়দা করেই ফোনটা বের করেছেন। - হ্যাঁ পাখি, বলো। হু, আমিও তোমাকে অনেক মিস করি....
অসম্ভব! এসব কি? পাখিটা আবার কোথেকে এলো? উফফ্! মনে হচ্ছে আমি এক্ষুনি টুপ করে মারা যাবো। এই বাসটা এত আস্তে টানছে কেন? গাবতলি থেকে সাভার আসতে চল্লিশ মিনিট লাগে?
আমরা যখন ক্যাম্পাসে পৌঁছালাম তখন রাত এগারোটা। বৃহস্পতিবারের রাত বলে মানুষজন নেই। স্বচ্ছ ভাইয়ার দিকে তাকাতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা। দূর! ওই কি মনে করে ডাকলো আমায়, - নিলি?
- হু।
- তোর এমনিতে বাচ্চাদের ব্যাপারে আইডিয়া কেমন? মানে ওদের গিফট টিফট এর চয়েজ কেমন, আইডিয়া আছে?
- মোটামুটি।
- চার বছরের মেয়ে বাচ্চার জন্য কি গিফট নিলে ভালো হয় বলতো।
- পুতুল। পিংক কালার টেডিবিয়ার।
- তুই সিউর?
- কার জন্য কিনবেন? আপনার বাচ্চাকাচ্চা আছে জানতাম না তো।
ও দেখলাম আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকানোর একটু চেষ্টা করেই হেসে ফেললো। ইশ্! মানুষটা এত সুন্দর করে কিভাবে হাসে? - আমার বাচ্চাকাচ্চা যখন হবে তখন তোকেই আগে জানাবো। এটা আমার খালামণির বাচ্চার জন্য, মানে আমার কাজিন। তখন বাসে যে কথা বলছিলাম না?
- ওর নাম পাখি?
শিট! আমি এত গাধা কেন। - হু। পাখি। অনেক দুষ্টু। জানিস, একবার কি হয়েছে শোন, আমি ওদের বাসায় গেছি। ও আমাকে দেখে.. ....
ওর কোন কথাই আমার কানে ঢুকছে না। আমিও না! কিসব ভেবে নিয়ে একা একাই মন খারাপ করে ফেলি।
আমি জানি, ও এখন আগে আমাকে হলে পৌঁছে দিয়ে তারপর যাবে। হঠাৎ মনে পড়লো, বাসে পুরোটা সময় ও আমাকে কভার করে দাঁড়িয়ে ছিলো; আগলে রাখতে চাইছিলো ও আমাকে?
হাতে পানির ফোটাটা পরতেই মুখ তুলে তাকালাম, বৃষ্টি নামছে।
আমার ইচ্ছে হচ্ছে ওর হাতটা ধরে ছুটতে। তা না করে একটা ছেলেমানুষি করে বসলাম, ওকে হুট করে বললাম, " আমি জানি আপনার ব্যাগে ছাতা আছে, কিন্তু আপনি প্লিজ ছাতাটা বের করবেন না।"
ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়েই আবার হেসে ফেললো। তখনই আমি আরেকটা ছেলেমানুষি করে ফেললাম। ওকে পেছনে ফেলে বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ ছুটতে শুরু করলাম। পেছন থেকে ওর গলা শোনা যাচ্ছে, - নিলি, এই নিলি...
Resteemed your article. This article was resteemed because you are part of the New Steemians project. You can learn more about it here: https://steemit.com/introduceyourself/@gaman/new-steemians-project-launch