বাসের অনিয়ম দেখেও দেখে না পুলিশ
যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা, পথ আটকে পেছনের গাড়ির চলাচলে বাধা দেয়া, বিপজ্জনকভাবে চলা বা বাসে আইন অমান্যের আরও যেসব চিত্র নিত্যদিন চোখে পড়ে তার সঙ্গে পরিবহন আইন অমান্যে পুলিশের মামলার পরিসংখ্যান মেলে না।
বাহিনীটির কর্মকর্তারা যত মামলা দেন তার মধ্যে এই বাসের চালক বা মালিকের বিরুদ্ধে মামলা সবচেয়ে কম। মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার আর বাণিজ্যিক বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনের বিরুদ্ধেই মামলার সংখ্যা বেশি।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে যখন পরিবহন খানে বিশৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তখন বাসকে কেন পুলিশ এত ছাড় দেয়, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অভিযোগ আছে, ফিটনেস সনদ আর লাইসেন্সের বিষয়টি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু প্রকাশ্যে ঘটা অনিয়মের ঘটনায় ছাড় পেয়ে যাওয়ায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এখন থোরাই কেয়ার করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে প্রতিদিন যানবাহনের বিরুদ্ধে তিন হাজার মামলা করা হয়। এর মধ্যে বাস লেগুনাসহ গণপরিবহনের বিরুদ্ধে কত মামলা হয়, এমন প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা কেউ জানাননি, তবে এটা নিশ্চিত করেছেন যে, বাস ও হিউম্যান হলারের বিরুদ্ধেই মামলা কম।
সড়কে বরাবর চোখে পড়ে মোড় আটকে যাত্রী তুলছে বাসগুলো। নির্ধারিত জায়গার বদলে প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বাম পাশের লেন তো বটেই এমনকি রাস্তার মাঝের লেনে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। কিন্তু পুলিশ উপেক্ষা করছে।
সড়ক নিরাপত্তা ও যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতিও গত ১৫ বছর ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলছে, বাসের অনিয়ম নিয়ে পুলিশের এই উপেক্ষাই পরিবহন খাতে নৈরাজ্যেও অন্যতম কারণ।
সমিতির পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে ঢাকায় প্রতিদিন যত মামলা করে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ, তার সিংহভাগ মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেটকারের বিরুদ্ধে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, পুলিশ সব সময়ে সাধারণ যাত্রীদের স্বার্থ না দেখে পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থ দেখেছে সব সময়ে। সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আজকের এই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঠে নামার দৃশ্য।
বাস, লেগুনাসহ গণপরিবহনের অনিয়ম নিয়ে পুলিশের অনীহার কী কারণ থাকতে পারে-এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল বলেন, ‘আমরা সবাই জানি প্রতিদিন লেগুনা বাস থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। এই চাঁদার ভাগ পুলিশও পেয়ে থাকে। ফলে অভিযোগের পাহাড় থাকলেও বাস লেগুনার বিরুদ্ধে মামলা করে না পুলিশ।
পুলিশ অবশ্য এই চাঁদার ভাগ পাওয়ার কথা কখনও স্বীকার করে না। যদিও নানা সময়ই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেই দেখা যায়, গাড়ির চালকের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে পুলিশ।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে আসা ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলামের কাছে এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রাখা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বাসের বিরুদ্ধে কত মামলা হয় তা সঠিক ভাবে এই মুহূর্তে আপনাকে বলতে পারব না। তবে আগে বাসের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হত এখন তার চেয়ে বেশি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/এএ/ডব্লিউবি