মৃত্যুর ডাক(পর্ব:- ০২)
https://www.pexels.com/photo/person-in-black-coat-standing-in-forest-194917/
দাড়িয়ে থাকা বিশাল গাছটা আমাকে বলতেছে," মৃত্যুর ডাক তোর এতোই পছন্দ? ডাকার সাথে সাথেই তাকাইলি"।
আমার গায়ের কেশ দাঁড়িয়ে গেলো মুহুর্তেই। একটা গাছ আমার সাথে কথা বলছে? অলৌকিক কান্ড। ভয়ে আমি আবার এক দৌড় দিয়েছি। আমি নোটিশ করে যাচ্ছি,আমার চারপাশে থাকা সব কিছুই আমাকে ডাকছে। ওদের কণ্ঠস্বর খুবি ভয়ংকর। ওদের শব্দ শুনেই আমার বুক চিন চিন করে যাচ্ছে। এতোটা ভয়ংকর শব্দ আমি এর আগে কোনো মুভিতেও শুনিনি। দৌড়ার মাঝে হটাৎ একটা পাথরের সাথে হোচট খেয়ে নিছে পড়ে যাই। পাথরটা পিছন থেকে আমাকে ডাক দিয়ে বলতে লাগলো," এদিকে আয় রিয়াজ। তোর মাথা ফাটাই"। ভয়ে আমি আবার উঠে দৌড় দিতে লাগলাম।।আমার চারপাশের সব কিছু জীবিত হয়ে গেছে। পাথর,পাখি,গাছ,পাতা,পিপড়া সব কিছুই আমার সাথে কথা বলে যাচ্ছে। তারা আমাকে ডাকছে। এ যেনো মৃত্যুর ডাক।
দৌড়ে এসে আমি বাসার ভিতর ঢুকে যাই। আমার বউ তাজকিয়া আবার দৌড়ে এসে আমার কাছে দাঁড়ায়। আমি তাজকিয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলাম। তাজকিয়া আমাকে শান্তনা দিচ্ছে। শান্তনা দিয়ে বলল,
- আপনার কি হয়েছে রিয়াজ। বসুন। আমাকে বলুন।
( তাজকিয়া আমাকে বিছানায় বসায়।আমি হাপাচ্ছি। তাজকিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম) - কয়টা বাজে?
- ১১:২৫
- এইটাই আমার সমস্যা। আমি বুঝতেছিনা আমার সাথে কি হচ্ছে তাজকিয়া। সেই ঘুম থেকে উঠার সময় দেখেছি ১১:২৫। এরপর থেকে ১১:২৫ দেখেই যাচ্ছি। সবাই ঠিকঠাক আছে,শুধু আমার সাথে এমন হচ্ছে। আমি সব কিছু জীবিত দেখতে পাচ্ছি। আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে তাজু। সবাই আমাকে ডাকছে।
তাজকিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল," আপনার কি হয়েছে রিয়াজ?" আমি অবাক হয়ে তাজকিয়ার দিকে তাকাই। ধীর কন্ঠে বললাম," তুমি কিছুই শুনোনি? " তাজকিয়া মাথা নাড়িয়ে বলল কিছুই শুনেনি। আমি আবার বললাম," কয়টা বাজে" তাজকিয়া বলল," ১১:২৫"।
আমি বসা থেকে উঠে দাড়াই। বুঝেছি,আমার সাথে কিছু একটা হচ্ছে। আমি একি সময়ের মাঝে আটকে আছি। সব কিছু জীবন্ত হয়ে গেলো। এই ঘটনার সূত্রপাত কোথা থেকে আমি জানিনা। কিন্তু আমার সাথে কেন হচ্ছে এসব। নিশ্চয়ই রনি জানবে সব কিছু। কাওকে কিছু না বলে আমি আবার বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। তাজকিয়া দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকছে। আমি পিছু তাকিয়ে দেখি তাজকিয়া কান্না করছে। আমি চিল্লানি দিয়ে বললাম, কয়টা বাজে? তাজকিয়া বলল," ১১:২৫ "। আমি আর কিছুই না বলে হেটে চলে আসতে লাগলাম। রাস্তার দুই পাশে থাকা গাছগুলো আমাকে ডাকছে। আমি আলাভোলা হয়ে গেছি। কারো কোনো কথায় কান দিচ্ছিনা। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, একটা বিড়াল আমার সামনে সামনে হাটছে আর বলছে," চল,দুজন এক সাথে আত্মহত্যা করি।তোর বেচে থাকার দরকার নেই"। আমি আনমনে হেটে চলে যাচ্ছি। কোনোভাবে হাটতে হাটতে রনিদের বাসার সামনে এলাম।।টিনের ঘর। বাহির থেকে রনিকে ডাক দিতেই রনি দরজা খুলে এসেছে। কোনো কথা না বলেই রনি আমাকে টেনে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। এরপর আমাকে বলল," তোর অনেক বড় বিপদ রিয়াজ"।
আমি চট করে মাথা তুলে রনির দিকে তাকাই। একমাত্র একজনকে পেলাম,যে আমার সমস্যা ধরতে পেরেছে। আমি আত্মহারা হয়ে বললাম,
- আমাকে বাচা রনি। আমি আর নিতে পারছিনা। কি হচ্ছে এসব। আমার অপরাধ কি। আমি কিছুই বুঝতেছিনা।
- তুই কি করেছিস আমি জানিনা। তবে এইটা জানি,সে তোকে নিতে এসেছে। সে তোকে নিয়েই যাবে।
- সে টা কে। কার কথা বলছিস,আর আমাকেই কেন।
- সে কে আমি জানিনা।
- তাহলে জানিস কি। আমাকে খোলসা কর প্লিজ। উদ্ধার কর আমাকে।
- গতকাল রাত ১ টায় হুট করে আমার ঘুম ভাঙ্গে। তুই জানিস গত ৪ বছত যাবত প্যারানরমাল নিয়ে পড়ে আছি আমি। আমার শরীরে এমন একটি শক্তি আছে। যার দ্বারা আমি অশরীরীদের উপস্থিতি টের পাই। রাত ১ টায় ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে আমি উঠে বসি। এই গ্রামে এক ভয়ংকর ও অসীম শক্তির অধীনে থাকা একটি অশরীর প্রবেশ করেছে। আমি মায়াছাল দিয়ে মায়াবী আয়নায় দেখেছি। সেখানে তোকে দেখতে পেয়েছি। বুঝে গেছি অশরীরীটা তোর জন্যেই এসেছে। তার চোখে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে।
- আমি তাকে নিজের চোখে দেখেছি। সে একটা বাচ্চা ছেলে।
- ভুল। কোনো বাচ্চা ছেলে নয়। অশরীরিণী ওটা। একটা মেয়ে।
- মেয়ে? কিন্তু কে সে। আর বাচ্চাটাও বা কে। মেয়েটার সাথে আমার কি শত্রুতা। আমি তো আজ অব্দি কোনো মেয়ের সাথে কিছুই করিনি।
- কাল রাতে তুই কোথায় ছিলি?
- ইয়ে মানে
- তুতলিয়ে লাভ নেই।
- কিন্তু আমি তো ওর সাথে কিছুই করিনি। লাইফের একটা ভুল কাজ হয়তো করতে গেছি। তাও তো করিনি। ওটার সাথে এইটার কি সম্পর্ক।
- আছে রিয়াজ আছে। এরকম আর কোথায় কি করেছিস ভেবে দেখ। এই অশরীরী মেয়েটার সাথে তোর কোনো না কোনো সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে।
- আমি তোরে কেমনে বুঝাইতাম। তাজকিয়ার আগে আমার লাইফে কোনো মেয়েই ছিল না। ৬ বছর রিলেশনের পর তাকেই বিয়ে করলাম। বিয়ে করেছি আজ ১ বছর পার হতে যাচ্ছে। এর মাঝেও কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে যাইনি। তবে কে এই মেয়ে। আমাকে কি একবার দেখাবি? দেখাতে পারবি?
- দাড়া,আমি মায়াবী আয়নাটায় তোকে দেখাচ্ছি মেয়েটাকে। দেখ চিনতে পারস কিনা।
এ বলে রনি ব্যাগ থেকে আয়নাটা বের করে। আয়না নিচে রেখে একটা মোমবাতি আয়নার পাশে রাখে। এরপর কি যেনো বিড়বিড় করতে লাগলো রনি। কিছুক্ষণ পর আমি খেয়াল করতে লাগলাম রনির নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। আমি অবাক হয়ে যাই। তখনি চোখ যায় আয়নার দিকে। আয়নাতে আমি যে মেয়ের ছবি দেখেছি, ওটা দেখার পর আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি আমি। এই মেয়েটার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।কিন্তু আমি এই মেয়েটাকে জানি। কোথায় যেনো দেখেছিলাম। এরই মাঝে হুট করে রনি শুয়ে পড়ে। আমি লাফিয়ে উঠে রনিকে ডাকতে লাগলাম। এরপর ওর মাথা তুলতেই দেখি, রনির চোখটা কেও খুলে নিয়ে গেছে। আর রনির নাক বেয়ে রক্ত ঝরছে। সবচেয়ে বড় কথা,রনি মারা গেছে।
চলবে...?