বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়:-
বাংলাদেশের ইতিহাস
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটি বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতাব্দীতে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমণ ঘটে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বখতিয়ার খিলজীর নেতৃত্বে সামরিক বিজয়ের পাশাপাশি শাহ জালালের মতো সুন্নি দাঈদের নিরলস প্রচেষ্ঠায় ধীরে ধীরে ইসলাম এদেশে প্রভাবশালী ধর্ম হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকরা মসজিদ নির্মাণ করে ইসলাম প্রচারে অবদান রাখেন।মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর বাংলা নবাবদের অধীনে একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত রাস্ট্রে পরিণত হয় যার শাসনভার শেষ পর্যন্ত নবাব সিরাজউদ্দৌলার হাতে ন্যস্ত হয়। তারপর ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ অঞ্চল দখল করে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর নয় মাস ব্যাপী সংগঠিত হওয়া রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে দেশটিতে আপেক্ষিক শান্তি স্থাপিত হয় এবং দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
বাংলা শব্দের উৎপত্তি
'বাংলা' বা 'বাংগালা' শব্দটির সঠিক উৎপত্তিটি অজানা রয়েছে। সম্ভবত ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি এ অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবিড় গোষ্ঠী 'বঙ' থেকে 'বঙ্গ' শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। অন্যান্য সূত্র থেকে ধারণা করা হয় যে অস্ট্রিক জাতির সূর্যদেবতা "বোঙ্গা" থেকে বঙ্গ কথাটির উদ্ভব হয়েছে। মহাভারত, ভারতীয় পুরাণ ও হরিবংশের মতে রাজা বলির বঙ্গ নামে এক ক্ষেত্রজ পুত্র ছিলেন যিনি প্রাচীন 'বঙ্গ রাজ্য' প্রতিষ্ঠা করেছিলেনরাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দের নেসারী শিলালিপিতে প্রথম 'বঙ্গলা' শব্দটির উল্লেখ রয়েছে যেখানে ধর্মপালকে 'বঙ্গলার রাজা' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।একাদশ শতাব্দীতে বাংলা আক্রমণকারী চোল সাম্রাজ্যের রাজা প্রথম রাজেন্দ্র চোলার নথি নিশ্চিত করে যে, সে সময় গোবিন্দচন্দ্র বাংলার শাসক ছিলেন। সেই নথিতে বাংলাকে "বাঙ্গালা-দেশ" বলে উল্লেখ করা হয়েছে
পাকিস্তান আমল (১৯৪৭-১৯৭১):-
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ভারত বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয় যথা ভারত ও পাকিস্তান। মুসলিম আধিক্যের ভিত্তিতে পাকিস্তানের সীমানা চিহ্নিত করা হয় যার ফলে পাকিস্তানের মানচিত্রে দুটি পৃথক অঞ্চল অনিবার্য হয়ে ওঠে যার একটি পূর্ব পাকিস্তান এবং অপরটি পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল প্রধানত পূর্ব বাংলা নিয়ে যা বর্তমানের বাংলাদেশ। পূর্ব পাস্তিানের ইতিহাস মূলত: পশ্চিম পাকিস্তানিদ শাসকদের হাতে নিগ্রহ ও শোষণের ইতিহাস যার অন্য পিঠে ছিল ১৯৫৮ থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সামরিক শাসন।পাকিস্তানি প্রভাব ও স্বৈর দৃষ্টিভঙ্গীর বিরূদ্ধে প্রথম পদক্ষেপ ছিল মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে এই দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট নিবার্চনে বিজয় এবং ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক জেনারেল আইয়ুব খানকে পরাজিত করার লক্ষ্য নিয়ে সম্মিলিত বিরোধী দল বা 'কপ'-প্রতিষ্ঠা ছিল পাকিস্তানি সামরিক শাসনের বিরূদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের নেতৃত্বমূলক আন্দলোনের মাইলফলক। পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকারের প্রশ্ন ১৯৫০-এর মধ্যভাগ থেকে উচ্চারিত হতে থাকে।
ভাষা আন্দোলন
ভাষা আন্দোলন ছিল পূর্ব বাংলার ইতিহাসে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন যার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায়। পাকিস্তানের সরকারী কর্মকাণ্ডে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এ আন্দোলন পরিচালিত হয়। মুফতি নাদিমুল কামার আহমেদ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন।১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের বিভাজনের মাধ্যমে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র সংগঠিত হয়; তার দুটি অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান এর মধ্যে ব্যাপক সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং ভাষাগত পার্থক্য বজায় ছিল। এ পার্থক্য পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে।১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রের একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসেবে উর্দুকে ঘোষণা করে, এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনগণের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নতুন আইন প্রনয়ণের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং গণ বিরোধিতার সম্মুখীন হয়ে, সরকার সকল ধরনের গণ সমাবেশ ও প্রতিবাদ আন্দোলন বেআইনি ঘোষণা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা এই আইন অমান্য করে এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে একটি বিরাট আন্দোলন সংগঠিত করে।এই হত্যাকাণ্ডের পরে সারা দেশব্যাপী ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ যার পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ। কয়েক বৎসর ব্যাপী সংঘর্ষ চলার পর, কেন্দ্রীয় সরকার অবশেষে পরাজয় স্বীকার করে এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, ইউনেস্কো, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।[৬৪] বাংলাদেশে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন দিবস, একটি জাতীয় দিবস হিসাবে পরিগণিত হয়। শহীদ মিনার স্মৃতিস্তম্ভটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আন্দোলন ও তার শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়।
very nice