খারাপ অভিজ্ঞতাঃ- শেষ পর্ব
25-12-2022
১১ পৌষ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
১ম পর্বের পর
বিকাল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো! এখনো ট্রেন ছাড়ার কোনো খবর নেই! অন্যদিন এই টাইমের আগে বাসায় গিয়ে হাজির থাকতাম। আজ যেতে যেতে কয়টা বাজে আল্লাহই ভালো জানে! খুব টেনশন হচ্ছিল। এরই মাঝে ভাইয়ার ফোন! কোন পর্যন্ত আছি জানতে চাইলো! যখনি বললাম ট্রেন এসে আটকে আছে তখন ভাইয়াও টেনশন করছিল! কখন ছাড়বে ট্রেন এই আশায় বসে আছি। তবে আমি বলে রেখেছিলাম কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নেমে ফোন দিবো! কিছু মানুষ দেখি ট্রেন থেকে ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়ছে! বাস দিয়ে হয়তো চলে যাবে ঢাকা! কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার! ঢাকায় এদিন রাস্তায় জ্যামও থাকে প্রচুর। ত্রিশ মিনিটের রাস্তা যেতে যেতে লেগে যায় দুই ঘন্টা। আর বাস জার্নি খুবই বোরিং একটা ব্যাপার! অধিক দূরত্বে কোথাও বেড়াতে গেলে আমি সাজেস্ট করবো ট্রেন দিয়ে যাওয়ার জন্য!
যাত্রী নেমে যাওয়ায় ট্রেনের বগী কিছুটা ফাকাঁ। তবে সব যাত্রী নেমে যায়নি। সিট পেলাম একটা। পাশে এক ভদ্রমহিলা। বয়স আমার নানুর মতো হবে হয়তো। ষাটোর্ধ তো হবেই! ভদ্র মহিলা আমার কাছে জানতে চাইলো কিবলা কোনদিকে? কিবলা কি বুঝতে পারছেন! মানে পশ্চিম কোনদিকে। ভদ্রমহিলা নামাজ পড়বেন। আমি ফোনে কন্পাস এপসটা বের করে দেখি পশ্চিম কোনদিকে! যেদিক ফিরে বসেছিলাম ঠিক তার বিপরীত দিকে ছিল পশ্চিম! ভদ্রমহিলা নামাজ পড়লেন। আসলে এ দৃশ্যগুলো ভালোই লাগে দেখতে! ট্রেনে বসেও সৃষ্টিকর্তার কথা স্মরণ! সন্ধ্যা ঘনিয়েছে, ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছিলও বেশি! আমার পাশেই আরেকজন ভদ্রলোক বসেছিলেন। চুল দাড়ি সব সাদা! বয়স হয়েছে ভদ্রলোকের! তবে টেকনোলোজি সম্পর্কে দেখছি ভালো জ্ঞান ভদ্রলোকের!
জ্ঞান থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির যুগে সবাই অনেকটা এগিয়ে গেছে। ভদ্রলোক ফোনের ডাটা অন করেই জানতে পারেন টঙ্গী মালবাহী ট্রেনের একটি বগী পড়ে গিয়েছে। সেটা ঠিক করার জন্য কাজ করছে। তবে রাত নয়টার আগে হয়তো কাজ শেষ হয়ে যাবে! ইতোমধ্যে দেখলাম ঢাকা থেকে ট্রেন ছেড়ে আসছে। তার মানে লাইন ক্লিয়ার হচ্ছে। ঢাকা থেকে আগত ট্রেনগুলো ছাড়ার পর হয়তো চট্রলা এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়বে! উরাকুল এক্সপ্রস চলে গেল পাশ দিয়ে। কিন্তু চট্রলা এক্সপ্রেস যে লাইনে ছিল, সেই লাইন ক্লিয়ার পায়নি এখনও! ঘড়িতে তখন সাড়ে সাতটা বাজে। ট্রেন ছাড়তে তাহলে দশটা বেজে যাবে। কিন্তু কমলাপুর থেকে আবার যেতে হবে অনেকটা পথ! রাতের বেলা ঢাকাশহরও তেমন সেইফ না!
ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে! বাস দিয়ে চলে যাবো ঢাকা। সামনে দেখা হলো এক ভদ্রলোকের সাথে! টঙ্গী স্টেশনের আগে নাকি তিতাস ট্রেনও দাড়িঁয়ে আছে সেই কখন থেকে! সেটা ছাড়লে তারপর চট্রলা এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়বে। এতোক্ষণ এখানে বসে থাকাও কঠিন ব্যাপার! স্টেশনের পাশেই হাইওয়ে সড়ক! সড়কে যানবাহনের সিরিয়াল দেখে মাথা ঘুরে গেল! মনে হয় তিন কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে জ্যাম! বাস দিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে মিটে গেল! আর বাসে গেল অনেকটা পথ ঘুরে যাওয়া লাগতো! সেই মহখালী থেকে যাত্রাবাড়ী। অনেকটা পথ বলা চলে! বাসে যাওয়া র আর সাহস হয়নি। বাসের জন্যই দাড়িঁয়েছিল আরেক ভদ্রলোক। পরিবারকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। কিন্তু জ্যামের অবস্থা দেখে আমার মতোই যাওয়ার ইচ্ছে বাদ দিয়ে দিল!
ফাইনালি ট্রেনেই যেতে হবে! স্টেশন মাস্টারের কাছে জিজ্ঞেস করলাম কখন ছাড়বে ট্রেন! ৩০ মিনিটের মধ্যে লাইন ক্লিয়ার করে দিলে ছেড়ে দিবে! যাক, কিছুটা স্বস্তি পেলাম। টং এর দোকান থেকে এক কাপ গরম চা খেয়ে নিলাম! পানির দামও বেড়ে গেছে? রং চা খেতাম পাচঁ টাকা দিয়ে, এখানে দশটাকা করে! কি আর করার আছে! বাঙালি বলে কথা! সুযোগ পেলেই সেটা সুন্দর করে কাজে লাগাতে বাঙালি দক্ষ! যায়হোক, এক কাপ গরম চা হাটঁতে হাটঁতে খেয়ে নিলাম! শরীরটাও কিছুটা গরম হলো। ঘড়িতে তখন সাতটা বেজে পঞ্চাশ মিনিট! আর দশমিনিট পরেই ট্রেন ছেড়ে দিবে। দোকান থেকে আরেকটা চিপসের প্যাকেট কিনে নিলাম। দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে কিছুক্ষণ খাওয়া যাবে!
একেবারে সামনের সারির বগীতে উঠে গেলাম। কোনে সিট পেলাম না! দাড়িঁয়েই থাকতে হলো। চিপসের প্যাকেটটা ছিঁড়ে চিপস খেতে লাগলাম! ঠিক তখনই ট্রেনের হর্ণ! ট্রেন তাহলে ছাড়বে এখন! সব যাত্রী দৌড়েঁ ট্রেনে উঠছিল। অবশেষে ট্রেন ছাড়লো! দীর্ঘ চারঘন্টা বসে থাকার পর ট্রেন ছাড়লো! কমলাপুর যেতেও বেশিক্ষণ লাগেনি! সাড়ে নয়টার আগেই চলে এলাম কমলাপুর স্টেশনে। স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাইকে করে সোজা চলে এলাম বাসায়। বাইকের ভাড়াটাও বেশি রেখেছিল। তবে সেইফলি আসতে পারলাম বাসায়!
Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অবশেষে সেইফলি বাসায় আসতে পারলেন। এই রকম খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে তো ভালোই। আপনি যে সেইফলি বাসায় আসতে পেরেছেন এটাই সবকিছু। রাত্রি বেলায় তো ঢাকা একেবারেই সেইফ না। আমার মনে হয় আপনি বাসে করে যাননি তাই ভালো হয়েছে। কারণ বাসে যেহেতু আপনি এত বেশি যাওয়া আসা করেননি এবং অভিজ্ঞতা নেই আর সাহস ও করেননি। তাই ভালো হয়েছে। আমার মনে হয় যত দেরি হোক না কেন সেইফ ভাবে যেতে পারলেই হবে। আপনার খারাপ অভিজ্ঞতা পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
জি ভাইয়া ফাইনালি সেইফলি বাসায় আসতে পেরেছি! বাসে জার্নি করতে আমার মোটেও ভালো লাগে না। ধন্যবাদ আপনাকে
আসলে মানুষের জীবনে খারাপ অভিজ্ঞতা প্রয়োজন রয়েছে। আমিও এধরনের পরিস্থিতিতে পরেছিলাম কারন ট্রেনে আগে প্রচুর যাতায়াত করতাম।
যাক কেবলা দেখিয়ে একজন মানুষের উপকার করেছেন, আর তিনি নামাজ আদায় করতে পেরেছেন। আর ট্রেনটা শেষ পর্যন্ত লাইন ক্লিয়ার পেয়ে ঢাকা আসতে পারলো। আপনার ট্রেন জার্নির এই অভিজ্ঞতা শুনে ভালো লাগলো।
জি ভাইয়া। মাঝে মাঝে খারাপ অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼
শেষ পর্যন্ত সেইফলি বাসায় পৌঁছাতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো। আপনার অভিজ্ঞতাটা আসলেই অনেক খারাপ ছিল। এতক্ষন অপেক্ষা করতে করতে নিশ্চয়ই অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিল। যাইহোক শেষ পর্যন্ত চার ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর ট্রেন ছেড়ে দিল এবং সাড়ে নয়টার মধ্যে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন জেনে ভালো লাগলো। তারপর একটা বাইক নিয়ে সেফ ভাবে বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছেন এটাই অনেক। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে এই তিক্ত অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া, মন্তব্য করার জন্য 🌼
আমি তো ভাবছিলাম আরো বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে মনে হয়। এখন তো দেখছি এত বেশি দেরি হয়নি বেশি রাত হওয়ারর আগেই ফিরে এসেছেন বাড়িতে। আসলে ঠিকই বলেছেন রাত্রিবেলায় ঢাকা একেবারে সেইফ না। শেষ পর্যন্ত তাহলে ট্রেন ছাড়লো। অনেক টেনশন হওয়ারই কথা কারণ ফেরার কথা একসময় ফিরলেন আরেক সময়। আপনার ভাইয়াকে ফোন দিয়ে ভালই করেছেন না হলে আরো বেশি টেনশন করত। আমার মতে বাসে না যাওয়াটাই বেটার হয়েছে। বাসে যাওয়ার ফলে অনেক ট্রাফিক জ্যাম দেখা দেয়। আসলেই এখন তো বৃদ্ধ ছোট ছেলে মেয়ে সবাই অনেক জ্ঞানী।
জি আপু! বাসে গেলে জ্যামের কবলে পরে যেতাম। একটু বসে থাকতে হয়েছিল।