কিছু স্মৃতি কথা আর একটুখানি পাগলামো
নমস্কার,,
ক্লাস থ্রী অথবা ফোরে পড়ি সেই সময়। মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট এর প্রতি মারাত্মক একটা নেশা কাজ করতো। সবচেয়ে বেশি ঝোঁক ছিল বাজনার দিকে। ড্রাম, ঢোল , তবলা এসব। বাড়িতে যেটাই পেতাম সেটা নিয়েই বাজানো শুরু করতাম। সবচেয়ে বেশি বাজাতাম পড়ার টেবিল আর কাপড়ের বাক্স। খাবারের জন্য স্টীলের থালা বা গামলা এসবও বাদ যেত না। টিভিতে জোরে গান ছেড়ে এইসব বাজাতাম আর বলতাম আমিও ড্রাম বাজাচ্ছি। আমার এই ধরনের অত্যাচারে বাবা মা দিদি সবাই অতিষ্ট হয়ে যায় 😅।
আমাদের বাড়ির পাশের স্কুলে সপ্তাহে দুই দিন করে গান, নাচ, আর্ট এসব শেখাতো। তো ঐ মাঠে একদিন খেলছিলাম। হঠাৎ করেই বল চলে যায় গান শেখানোর রুমে। বলটা আনতে গেলে আমাকে এক ভদ্র লোক বলে, "তুমিও কি গান শিখবে নাকি? এসো এখানে বসো।" আমি তো বলটা নিয়েই দৌড়। তো বাড়িতে এসে কথাটা বললাম বাবাকে। বাবা মা তখন বলল ঠিক আছে তোমাকে তবলার ক্লাসে ভর্তি করে দেব আমরা।
তো এর পরের সপ্তাহে আমাকে যখন তবলার ক্লাসে ভর্তি করতে নিয়ে গেল বাবা তখন গিয়ে শুনি তবলার ক্লাস শুরু হতে মাস দুয়েক সময় লাগবে আরো। বাবা আমাকে দুই মাস পরে ভর্তি করতে চাইলেও স্কুলের লোকজন তো নাছোড়বান্দা। বাবাকে বোঝালো যে , সজীব আপাতত গানের ক্লাস করুক কিছুদিন। তারপর তবলা শুরু হলে ওখানে চলে যাবে।
সেই থেকে আমার শুরু। কিন্তু গানের ক্লাসে মন আমার একদম থাকতো না। আমার নজর থাকতো তবলার দিকে সব সময়। গানের স্যার যখন তবলা বজাতো আমি এক মনে তাকিয়ে থাকতাম। বাড়ি এসে অমন করে টেবিলের উপর প্রাক্টিস করতাম। বাবা ভালো করেই জানতো আমার দ্বারা গান শেখা হবে না। তাই বাড়িতে হারমনি আর তবলা দুইটাই কিনে দিল। যখন যেটা ইচ্ছে হবে সেটা যেন শিখি।
সত্যি বলতে আমার আর তবলার ক্লাসে যাওয়া হয় নি কোন দিন। আমি স্যারদের বাজানো দেখে দেখে ঠিক বাজাতাম। হয়তো তবলার বোল জানা ছিল না আমার। কিন্তু বাজানো দেখে কারো বলার উপায় ছিল না যে আমি কখনো তবলা শিখি নি। গানের ক্লাসে গিয়ে আমার কাজ ছিল অন্য সবার গানের সাথে তবলা বাজানো। ওখানে যারা গান শিখতো সবাই ছিল আমার চাইতে বেশ বড়। তাই অনেক আদর পেতাম সবার কাছ থেকে। মাঝে আদর করে ওনারা নিজে থেকেই আমাকে হারমোনিয়াম বাজানো শিখিয়ে দিত। দুষ্টু প্রকৃতির ছিলাম ছোট থেকেই😉 । তাই যে কোন কিছু খুব দ্রুত ক্যাচ করে ফেলতাম।
এবার বাড়িতে গিয়ে ধুলো পরে থাকা সেই হারমোনিয়াম টা বের করেছিলাম। যেটার হাল খারাপ করে ফেলেছে আমার দুষ্টু ভাগ্নে। আর টিউনিং বলতে কিছু নেই হারমোনিয়ামে। ওভাবেই কিছুক্ষণ বাজালাম।
আসলে আমি গান ঠিক ভাবে গাইতে পারি না। কিন্তু বাজানোর ক্ষেত্রে আমি আগে থেকেই বেশ পারি। যে কোন গান নিয়ে পাগলামো করে বাজাতে খুব পছন্দ করি। সেদিন যখন বসলাম হারমোনিয়াম নিয়ে তখন মনে পরলো আমাদের কম্যুনিটির ডিজে পার্টির কথা। ঐ সুর গুলো মাথায় এনে একটু বাজাতে চেষ্টা করলাম। আসলে পাগলামো করে এসব বাজাতে আগে থেকেই আমার বেশ ভালো লাগে। কিন্তু মা খুব বকাবকি করে আবোল তাবোল গান বাজলে 😅। বলে যে ভালো গান দুই একটা না বাজিয়ে যতসব উল্টো পাল্টা গান 🤪।
খুব একটা ভালো বাজাতে না পারলেও আজ এমনি পাগলামো করে দুটো ভিডিও শেয়ার করলাম। আসলে অনেক বছর পর এসব করতে বসেছিলাম। দেখলাম হাত অনেক ভারী হয়ে গেছে। আগের মত আর ফ্রি নেই। অভ্যাস কত বড় একটা জিনিস বেশ ভালোভাবেই আরেকটা বার অনুধাবন করলাম।
ভাইয়া আপনার লেখাটা পড়ে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো । দেখে দেখে তবলা বাজানো শিখে গিয়েছেন সত্যি অবাক কান্ড । আসলে যার ভেতর যে গুনটা থাকে সেটা আপনা আপনি প্রকাশ পেয়ে যায়, সেটা তাকে শেখানো লাগে না। খুব চমৎকার হারমোনিয়াম টা বাজিয়েছেন ।আপনি সম্ভবত যে দুটি গান বাজিয়েছেন তার প্রথমটা - তুঝে দেখা তুহে জানা সানাম ।
আর দ্বিতীয়টি - ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না । ভুল হলে দুঃখিত ।
আপু আমারও তাই মনে হয়েছে গান এই দুইটি হবে। খুব সুন্দর বাজিয়েছে। একদম বোঝা যাচ্ছে গান দুটি। খুব ভাল লাগলো।
হ্যাঁ আপু একদম ঠিক বলেছেন। ঐ দুটি গানই বাজানোর চেষ্টা করেছি 😊। অনেক দিন পর সেদিন হারমোনি টা নিয়ে একটু পাগলমো করতে বসেছিলাম। খুব ভালো লাগলো সত্যি আপনার কাছে থেকে এত সুন্দর একটা মন্তব্য পেয়ে। অনেক ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকবেন।
আপনার পুরো লেখাটা খুব মনোযোগ সহকারে পড়লাম। আপনার ভাগ্নে তো সত্যিই হারমোনিয়ামের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। হা হা হা... গান শেখা বা তবলা বাজানো নিয়ে ছোটবেলায় আপনার বেশ সুন্দর কিছু অভিজ্ঞতা পড়ে খুব ভালো লাগলো। আমি তো তবলা বাজাতে পারি না বা ছোটবেলা থেকেই পারতাম না। তবে ক্লাস রুমে বসে অনেকবার বেঞ্চ বাজিয়েছি।
আরে ব্রেঞ্চ বাজানোর অনেক কাহিনী আছে আমার। কতবার প্রিন্সিপালের কাছে পর্যন্ত নিয়ে গেছে ধরে 😅। বন্ধুরা মিলে গান বাজনা দিয়ে এমন চিল্লাচিল্লি করতাম যে পাশের কয়েক রুমে আর ক্লাস নিতে পারতো না। 😉
ভাই হ্যাং আউটে এসব নিয়ে বসলে সবাই আমার মত পাগল যায় যাবে হিহিহিহি। আমি সচারাচর বসি না এই হারমোনিয়াম নিয়ে। ঐ দিন মজার ছলে বসেছিলাম একটু। অনেক ধন্যবাদ ভাই।
আপনার থালাবাসন বাজানোর অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য আপনার বাবা আপনাকে তবলা ক্লাসে ভর্তি করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা তো আর হলো না । সেজন্য বাড়িতে হারমোনিয়াম আর তবলাই কিনে দিলেন। যাতে একটু রক্ষে পাওয়া যায় আপনার থেকে। আপনি আসলেই অনেক ট্যালেন্টেড। তা না হলে অন্যের তবলা বাজানো দেখে দেখে এত সুন্দর বাজানো শিখে গিয়েছেন। সাথে একটি গান গেলে মনে হয় আরো জমে যেত ভিডিও দুইটি।
আপু সত্যি বলতে অন্য একটা গান পোস্ট করার জন্য হারমোনি বাজিয়ে রেকর্ড করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখি কেমন একটা যেন লাগছে,, আর অভ্যাস নেই যে একদম। আর ভাই টা কার দেখতে হবে না!! গুণ কি আর এমনি এমনি পেয়েছি 😉
ভাই আপনার সুর উঠা থেকে আমি মুগ্ধ ।
আপনি অনেক সুন্দর ভাবে একটি বাংলা ও একটি হিন্দি গানের সুর আমাদের মাঝে উঠিয়ে শেয়ার করেছেন।
এত সুন্দর প্রতিভা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া
অনেক ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্য করে আমার পাশে থাকার জন্য। অনেক ভালো থাকবেন।
একটা কথা আছে মানুষ অভ্যাসের দাস। অভ্যাস না থাকলে অনেক বিদ্যা ভুলে যাওয়া লাগে। আপনার গান শেখার ইতি বৃওান্তটা পড়ে ভালো লাগল।।
প্রথম ভিডিওতে তু জে দেখা তো এ জানা সানাম এই টিউনটা তুলেছিলেন সম্ভবত।
এবং দ্বিতীয় টা ছিল ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না।
যাইহোক দারুণ ছিল ভাই। নিয়মিত প্রাকটিস করলে আবার ভালো কিছু হবে আশাকরি।।
আসলে নানান দিকে আজেবাজে কাজ নিয়ে অনেক সময় নষ্ট করি কিন্তু ভালো কাজে একদম সময় দেওয়া হয় না। এবার থেকে মাঝে মাঝে চেষ্টা করব অবশ্যই। অনেক ধন্যবাদ ভাই।