শ্রীরামপুরে বইয়ের দোকান খোলবার দাবীতে আছড়ে পড়লো প্রতিবাদের আগুন
।।শ্রীরামপুর স্টেশনে বইয়ের দোকান খোলবার দাবীতে আছড়ে পড়লো প্রতিবাদ।।
আপনাদের আগেই বলেছি, হুগলি জেলার শ্রীরামপুর স্টেশনে রেল কোম্পানির তরফে পুরনো বইয়ের দোকান তুলে দিল রেল কোম্পানি৷ সেখানে বসালো খাবারের দোকান। বিষয়টা প্রথম থেকেই খুব পীড়া দান করেছিল আমায়। বই ভালোবাসি৷ সেই স্থানে অন্য কিছুকে বসাতে পারিনি কোনোদিন। নরম পানীয় হোক বা কেক বিস্কুট হোক, সেসব দোকান এক একটি স্টেশনে অসংখ্য। কিন্তু বইয়ের দোকান কটি আছে? প্রায় নেই বললেই চলে৷ রেল স্টেশনে গিয়ে একটা নরম পানীয়ের বোতল কিনতে আপনাকে হাতড়ে বেড়াতে হয় কি? কখনোই না। কিন্তু কটা বইয়ের দোকান পান? তাও এক আধটা থাকলেও রেল কোম্পানি তা তুলে দিতে দুবার ভাবছে না৷ বইয়ের দোকান তুলে খাবারের দোকান খোলবার আগ্রাসী সিদ্ধান্ত আমাকে যারপরনাই অবাক করেছে৷ রেলের উচ্চপদস্থ কর্মচারীগণ শিক্ষিত ও চিন্তাশীল বলেই জানতাম৷ কারণ নির্দিষ্ট যোগ্যতা প্রমাণ দিয়েই তাঁরা যোগ্য ব্যক্তি হিসাবে নিজেদের আসনে বসেছেন। রেল একটি পাবলিক সেক্টর৷ সেখানে জনবিরোধী ও স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নেবার আগে আপনাদের আরও স্পর্শকাতর হওয়া দরকার ছিল বলে মনে হয়েছে। জানিনা এই মনে হওয়ায় কিছু ভুল আছে কিনা।
আমি বিষয়টা নিয়ে কিঞ্চিৎ সোচ্চার হয়েছিলাম। কারণ সোচ্চার হওয়াটা আশু কর্তব্য বলেই মনে হয়েছিল৷ এটিকে আমার সামাজিক দায়িত্ব বলেও মনে হয়েছিল। তাই নিজের একমাত্র শক্তি কলমকে ব্যবহার করে মুখ খুলেছিলাম কিছু সামাজিক মাধ্যমের বুকে৷ প্রথমেই পোস্ট দিয়েছিলাম এই স্টিমিট প্ল্যাটফর্মেই। তারপর নিজের মনের প্রতিবাদটুকু তুলে আনি ফেসবুকের পাতায়। সেখানে আছড়ে পড়ে প্রচুর মানুষের প্রতিবাদ৷ ফেসবুকের পাতায় যে প্রতিবাদের আগুন ঝরে পড়ে, তা আজ গণ আন্দোলনের মত এসে পড়ে শ্রীরামপুর স্টেশন চত্ত্বরে টিকিট কাউন্টারের সামনে৷ বইয়ের স্টলের দাবীতে সবাই সোচ্চার হয়ে ওঠেন৷ আমার পোস্টে কমেন্ট শেয়ার করে প্রচুর মানুষ নিজেদের প্রতিবাদী প্রতিক্রিয়া জানান।
বইয়ের দোকান আবার তৈরি হবে কিনা জানা নেই৷ কিন্তু বাংলার প্রতিবাদী মানুষ আজও হেরে যাননি৷ কলকাতা শহর প্রতিবাদ, প্রতিরোধের শহর। এই শহর যেমন গান্ধীজির দিনের পর দিন অনশন দেখেছে, তেমনি দেখেছে গণহত্যার বিরুদ্ধে মোমবাতি মিছিল। সুভাষ চন্দ্র বোসের শহর আজও হেরে যেতে শেখেনি৷ বাঙালী আজও গর্জে ওঠে প্রতিবাদে। পিছিয়ে যেতে শেখেনি তারা। বইয়ের দোকান পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবীতে আজ প্রতিবাদের আগুন পৌঁছে গেছে দিল্লীতে মাননীয় রেলমন্ত্রীর দপ্তরেও৷ তাঁকে অবগত করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিষয়টি৷ একটা জাতিসত্ত্বার পিছনে যে বই সরাসরি মৌলের ভূমিকা নেয়, সেই বইয়ের প্রাপ্তিকেন্দ্রকে সমূলে উৎপাটন করে কোন অভিমুখে আমাদের ঠেলে দিচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাবলিক সেক্টর ভারতীয় রেল?
আজ যে প্রতিবাদের ভাষা ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে, যেভাবে প্রতিবাদী মানুষ দূর দূরান্তে থেকেও এগিয়ে আসছেন এই বিষয়কে কেন্দ্র করে, তা শক্তি বাড়ায় সকলের। বাঙালী আজও মরেনি। রেল কোম্পানির এই সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করবার আর্জি জানিয়ে হলফনামা পর্যন্ত জমা দেওয়া হয়েছে দপ্তরে৷ বাংলা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের দেশ। বাংলা রাসবিহারী বসুর দেশ৷ তাই এখানে সংগ্রামী রক্ত আজও বহমান। আমরা বইয়ের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করব। আজ যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, তা অবশ্যই ধনাত্মক ও আশাপ্রদ। বাকিটা অপেক্ষা৷ তবে হাল ছাড়তে শেখেনি বাঙালী। নিজের স্বার্থ মানে নিজের ঘরটুকু নয়৷ এই স্বার্থে জড়িয়ে আছে বৃহত্তর সমাজ ও তার ব্যবস্থাপনা। আমরা বিশ্বাস করি, এখানে রাষ্ট্রও যা, একজন মেহনতি কৃষকও তাই৷ ফারাক শুধু অর্থনৈতিক। রক্তের রঙ যে অভিন্ন৷
বই নিয়ে এই লড়াইয়ের সর্বশেষ আপডেটটুকু আপনাদের সামনে তুলে আনতে চেষ্টা করলাম৷ আশা করি নৈতিক ভাবে সকলের সমর্থন পাব। আপনারা পাশে থাকলে আবার সমস্ত বইয়ের দোকান রমরমিয়ে চলবে সমস্ত জায়গায়৷
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 3/9) Get profit votes with @tipU :)
প্রতিবাদ চলুক, গর্জে উঠুক বর্তমান। তবেই বাঙালি তার ঐতিহ্যের বই বন্দনা ধরে রাখতে পারবে। আসলে ভারতবর্ষের অন্যান্য সমস্ত রাজ্যে বই নিয়ে এত মাতামাতি কারণ নেই । তারা পড়াশোনা বলতে সামান্য পুঁথিগত বিদ্যাটুকুই বোঝে কারণ চাকরি পেয়ে ইনকাম করার জন্য ওইটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু বাঙালির আবেগ বাঙালি শিক্ষা একেবারেই আলাদা। রেল কোম্পানি তো আর বাঙালির নয় তাই ওরা এসব বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে জায়গা অনুপাতে মর্যাদাও দিতে হয় এটুকুও সরকারি দপ্তরের জানা উচিত। প্রতিবাদ চলুক ফিরে আসুক আমাদের রেলস্টেশনের প্রিয় বই দোকানগুলি।
সত্যিই তো। বাঙালির সত্ত্বা যেন বই। আমরা বই ভালোবাসি। আর সেই বইয়ের দোকানে আগ্রাসনের হাত পড়লে বাঙালি তো ক্ষেপে যাবি। এভাবে সবকিছুর ওপর আগ্রাসন চলতে পারেনা।