সুন্দরবনের কিছু স্মৃতি! (Some memories of the Sundarbans!)

in Incredible India3 days ago
1000048517.png

ইতিমধ্যে সুন্দরবন নিয়ে বেশ কিছু লেখা আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করেছি, যারমধ্যে ছিল সেখানে অতিবাহিত দিনগুলো কিভাবে অতিবাহিত করেছি, সাথে কোন জায়গা গুলো পরিদর্শন করেছিলাম ইত্যাদি।

আজকে লেখা আমরা যে নব নির্মিত হোটেলে উঠেছিলাম, তার পাশাপাশি ঐ স্থানের মানুষের জীবন নির্বাহের কিছু কথা।

বেশিরভাগটা আমাদের লঞ্চ চালকের থেকে শোনা, আর খানিক চাক্ষুষ করার সুযোগ পেয়েছি।

প্রথমদিন হোটেল পৌঁছতে এতটাই রাত হয়ে গেছিল যে, কোন গুহায় ঢুকছি সেটা বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিল না, বৈদ্যুতিক সংযোগ হোটেলের বাইরে প্রায় ছিল না বললেই চলে।

যাইহোক, ভেতরে প্রবেশ করে বেশ সন্তুষ্ট হয়েছিলাম রুম দেখে, যার ছবি আপনাদের মাঝে ভাগ করে নিয়েছি আগেই।

IMG_20250129_223642.jpg
IMG_20250129_223654.jpg
IMG_20250129_223708.jpg

পরের দিন সকালে বেরোনোর সময়, হোটেলের বাইরেটা সূর্যালোকে দেখার সুযোগ হয়েছিল।
সাথে দেখলাম অর্ধনির্মিত হোটেলের সামনে অনেকখানি জায়গা জুড়ে নানা সবজির চাষ করা হয়েছে।

জানতে পারলাম, হোটেল মালিক সুন্দরবনে থাকেন না, উনি বারুইপুর নামক একটি জায়গায় থাকেন।

কাজেই, হোটেলে কর্মরত কর্মচারীদের পেটের দায় মেটাতে হোটেলের সামনের জায়গাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজনের খানিক মেটানো, কারণ বাজার থেকে ডাক্তার কোনো কিছুই হাতের কাছে নেই!

সবজায়গায় যেতেই জলপথ আর ঐ লঞ্চ ভরসা।
তাও দূরত্ব বেশ খানিক! শহরে হাতের কাছে সব পেয়ে যাই বলে, আমরা জীবনের সংঘর্ষের অনেকটাই উপলব্ধি করতে পারি না।

IMG_20250129_224844.jpg
IMG_20250129_225035.jpg
IMG_20250129_225022.jpg
IMG_20250129_224826.jpg

দেখলাম, পেঁয়াজ গাছ, বেগুন, ফুলকপি আরো না জানি কত কিছু!

লঞ্চের চালক জানালেন, হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার এর কাছে পৌঁছনো সবচাইতে কঠিন বিষয়, যিনি লঞ্চ চালক তিনি নিজেই দুদিন ধরে শহরে যাবার সুযোগ করে উঠতে পারছেন না পর্যটকের ভিড় থাকে তাই আগে পেট পরে চিকিৎসা যেটা ওনার কথায় বুঝলাম।

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যটকের ভিড় থাকে তাই, অনেক কষ্টের মধ্যেও ডাক্তারের কাছে না গিয়ে পর্যটক দের ভ্রমণ করানোর দায়িত্ব পালন করে থাকে।

IMG_20250129_224239.jpg

যেটা জানতে পারলাম, সেটা হল, যদি কোন লঞ্চের মালিক যদি যেতে অস্বীকার করে, তাহলে অন্য কোন লঞ্চকে হোটেল কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য ব্যবস্থা করে দেয়।

আচ্ছা, এই লঞ্চের সাথে হোটেলের আর্থিক লেনদেন থাকে, সবটাই লঞ্চের মালিক পায় এমনটা নয়, তাই ব্যক্তিগত ভাবে পর্যটকদের থেকে কিছু বকশিশ চেয়ে থাকে।

আমরা যেমন সকলে মিলে ভারতীয় ১৭০০ রুপি দেওয়া হয়েছিল।
ভাবুন স্বাস্থ্যকে তোয়াক্কা না করে, পেটের দায়ে সারাদিন, রাত জলে পড়ে থাকা কতখানি কষ্টকর বিশেষ করে এই শীতের সময়, যখন পর্যটকদের আধিক্য অধিক থাকে।

IMG_20250129_225529.jpg

কোন কোন পর্যটক হোটেল পর্যন্ত নেই না, তারা রাতেও লঞ্চে থাকে।
একটি লঞ্চ দেখেছিলাম যার প্রতি রাতের ভাড়া ভারতীয় মুল্যে ৮০,০০০;
২০ জনের থাকার ব্যবস্থা সহ, এসি আছে লঞ্চে।

1000046650.jpg

তবে, এটা যারা ক্ষণিকের জন্য ঘুরতে যায় তাদের কাছে মনোরঞ্জনের সাধন হলেও, ভেবে দেখার বিষয়, সেই চালকের যাকে গোটা বছর একই কাজ করে যেতে হচ্ছে বিভিন্ন ঋতুর তোয়াক্যা না করে!

এদের দেখার পর সত্যি নিজেদের সুখী মনে হয়, মনে হয় অনেক সুবিধা নিয়ে ভালভাব বেচে থাকার সুযোগ সৃষ্টিকর্তা দিয়েছেন, এরজন্য আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।

তবে এত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও হেসে দিয়ে চালক জানালেন, ম্যাডাম আপনাদের কিছু দিতে না পারলেও বিশুদ্ধ হওয়া দিতে পারবো।

সত্যি তো, এখনও শহরের কালো ধোঁয়া এখনও পৌঁছয়নি সুন্দরবনের পরিবেশকে কলুষিত করতে! কত দামী কথা, তাই না?

অল্পেতেই খুশি থাকা সম্ভব এই বিষয়টি এদের থেকেই বোধহয় সবচাইতে ভালো শেখা যায়।
যদিও যা দেখে আসলাম, তাতে আর কতবছর এই বিশুদ্ধতা বজায় থাকবে জানিনা, কারণ রাজনীতিবিদ সহ, বড় বড় ব্যবসায়ীদের নজর পড়ে গেছে এই সুন্দরবনে।

তাই একটু ছাড়া ছাড়াই গড়ে উঠছে হোটেল, একটার চাইতে আরেকটির অভিনবত্ব দেখার মতো।

সব মিলিয়ে বর্তমানে জমির দাম শুনলাম ভারতীয় মুল্যে বিঘায় ১৭লক্ষ!

মানুষের থাবা বাঘের চাইতেও সাংঘাতিক কাজেই, এই দামের পরিবর্তন খুব কম সময়ের মধ্যেই হয়ে যাবে এই গ্যারান্টি চোখ বন্ধ দিতে পারি।
একদিকে কিছু মানুষের জীবিকার সংস্থান হবে, আরেকদিকে হারিয়ে যাবে প্রকৃতি সাথে তার বিশুদ্ধতা!

আচ্ছা! কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলুন তো?

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
 3 days ago (edited)

আপনার সুন্দরবনের অভিজ্ঞতা এবং সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার বর্ণনা সত্যিই হৃদয়স্পর্শী। আপনার লেখায় যে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্ক, তাদের সংগ্রাম এবং জীবনযাত্রার কঠোর ভাবে ফুটে উঠেছে, আমি মনে করি, তা আমাদের কাছে একটি গভীর অনুভূতির সৃষ্টি করেছে । সুন্দরবনে থাকার পরিবেশ, যাত্রা, এবং কাজের ধরন নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ সত্যিই অসাধারণ হয়েছে ।

মানুষের থাবা বাঘের চাইতেও সাংঘাতিক কাজেই, এই দামের পরিবর্তন খুব কম সময়ের মধ্যেই হয়ে যাবে এই গ্যারান্টি চোখ বন্ধ দিতে পারি।

আপনার উপরে এই কথাটুকু তাৎপর্য অনেক বেশি ছিল। আপনি সত্যিই বলেছেন, বাঘের চাইতেও সাংঘাতিক মানুষের থাবা, যা একটি মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলে।

একদিকে কিছু মানুষের জীবিকার সংস্থান হবে, আরেকদিকে হারিয়ে যাবে প্রকৃতি সাথে তার বিশুদ্ধতা!

আপনার উপরের এই কথাটুকু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা যেভাবে গাছপালা প্রকৃতি জিনিস ধ্বংস করে ফেলছি! শুধু নিজের বিলাসিতার জন্য বা কর্মের জন্য। হয়তো অতি শীঘ্রই হারিয়ে যাবে বিশুদ্ধতা!
আপনার পোস্টে আরেকটি বিষয় খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।
বিশেষ করে, লঞ্চ চালকের কথা এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমের বর্ণনা, যারা মানুষের সুখ-দুঃখ একসাথে কাজ করে, তা আমাদের মতো শহরের মানুষদের জন্য একটি বড় শিক্ষা। প্রকৃতির এই বিশুদ্ধতা এবং একমুঠো খুশি পাওয়ার চেষ্টা, এমনকি কঠিন পরিস্থিতিতেও, একেবারে জীবনের অমূল্য শিক্ষা। আপনার এই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিদি, এটি আমাদের নিজের জীবনের মূল্য বুঝতে সাহায্য করে ইত্যাদি। খুব ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আপনার জন্য সব সময় শুভকামনা রইল দিদি।

 2 days ago (edited)

Thank you so much @wirngo mam for supporting me 💕

 2 days ago 

বাস্তব জীবন খুব কাছ থেকে বুঝতে হলে, হয় নিজেকে সেই পথ ধরে হাঁটতে হবে বোল সেই মানুষগুলোর সংস্পর্শে আসতে হবে যারা সেই পথে হাঁটছেন!

জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এতটাই ঊর্ধ্বগামী যে, মানুষ এখন থাবা বসিয়েছে প্রাণীদের আশ্রয় স্থলে!
এটা দুর্ভাগ্যজনক, কারণ পশুরা কিন্তু কোনোদিন শহর দখলের মনোবাঞ্ছা রাখে নি!
তাহলে বলতে হয়, পশুদের বুদ্ধিজীবীর তকমা দেওয়া উচিৎ!

 3 days ago 

আপনার সুন্দরবন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অসাধারণ ছিল! হোটেল, লঞ্চের জীবনযাত্রা, স্থানীয় মানুষের সংগ্রাম সব কিছুই বাস্তবচিত্র তুলে ধরেছে। প্রকৃতির বিশুদ্ধতা ও মানুষের লোভের টানাপোড়েন সত্যিই ভাবনার বিষয়।

লঞ্চ চালকের কথাটি হৃদয় ছুঁয়ে গেল বিশুদ্ধ হাওয়া দিতে পারবো। সত্যিই, শহরের ধোঁয়া-ময়লা থেকে দূরে থাকা এখন বিলাসিতা হয়ে গেছে। আশা করি, সুন্দরবনের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও পরিবেশ সংরক্ষিত থাকবে। চমৎকার স্মৃতিচারণা, দিদি।

Loading...
Loading...

The beauty of Sundarbans is actually much more enchanting. Beyond the modern mechanized life, the life of Sundarbans people is different.

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.25
JST 0.039
BTC 101987.32
ETH 3242.23
SBD 3.99