পহেলা বৈশাখ কে ঘিরে ছোটবেলার মজার কিছু স্মৃতি।
আজ - ০২ বৈশাখ, | ১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | শুক্রবার| গ্রীষ্মকাল |
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন।
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।
বৈশাখ আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গিয়েছে কালবৈশাখীর তাণ্ডব। কাল থেকেই আকাশটা একটু মেঘলা এবং বাতাস ও বইছে প্রচন্ড হালকা বৃষ্টি ও হয়েছিল রাতে। তবে সকাল থেকে আকাশটা এখনো গম্ভীর হয়ে আছে রোদের কোন দেখা নেই। তবে বেশ ভালই লাগে এমন একটি আবহাওয়ায়। এই কয়েকদিন তো প্রচন্ড রোদের তাপে জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল।
নববর্ষের প্রথম দিনটি হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। পুরানো দুঃখ কষ্ট সবকিছুকে দূরে ফেলে নতুন বছরের নতুন করে সব কিছু শুরু করা। আমাদের বাঙালিরা এই নববর্ষটাকে বেশ আনন্দ উল্লাস এর সাথে বরণ করে নিয়। এই নববর্ষটাকে ঘিরে রয়েছে বাঙালির অনেক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। নববর্ষকে ঘিরে বাঙালি চিরচেনা কিছু সংস্কৃতি সচরাচর দেখা যায় যেমন নর-নারী লাল সাদা পাঞ্জাবী পড়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ, রাস্তাঘাটগুলো রংতুলিতে নতুন করে সাজিয়ে তোলা, বৈশাখী মেলা বসা যে মেলাগুলোতে সাধারণত নাগরদোলা, মাটির পুতুল, বিভিন্ন গ্রামীণ সব জিনিসপত্র দেখা যায, এছাড়া ও দোকানগুলো সেজে ওঠে নতুন সাজে পুরনো সব দেনা পাওনার হিসেব চুকিয়ে নতুন করে হালখাতা খোলা হয়, গ্রাম গঞ্জের বাড়িগুলোতে নতুন ধানের আগমন ঘটে রান্না করা হয় বিন্নি চালের পায়েস।
যদিও এসব সংস্কৃতির কিছু সংস্কৃতি আজও বিরাজমান তবে কিছু সংস্কৃতি সময়ের পরিক্রমায় বিলুপ্ত হতে বসেছে।
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।
ছোট বেলায় এ নববর্ষকে ঘিরে আমার জীবনে অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু স্মৃতি রয়েছে। তো চলুন সেসব মজার কিছু স্মৃতি আপনাদের সাথে শেয়ার করি। আর হ্যাঁ আমার ছোট বেলায় সে সব স্মৃতি গুলোর কিছু স্মৃতি হয়তো আপনাদের সাথে ও মিলে যেতে পারে।
নববর্ষ হচ্ছে নতুন একটি বছর আর পহেলা বৈশাখ হচ্ছে বছরের প্রথম দিন। ছোটবেলায় আমাদেরকে বলা হতো বছরের প্রথম দিনটি যেভাবে কাটে সারা বছর নাকি ঠিক সেভাবে কাটে। তাই বছরের প্রথম দিনটি অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিনটি একটু বিশেষভাবে পালন করা হতো খুব সকাল করে ঘুম থেকে উঠে যেতাম যাতে সারা বছরই সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারি এরপর গোসল করতাম যাতে পুরনো বছরের সব রোগবালাই ধুয়ে মুছে যায়। এরপর বই নিয়ে বসে যেতাম পড়ি কিনবা না পড়ি অবশ্যই বই নিয়ে বসতে হতো যাতে সারা বছর পড়া হয়। এরপর বাহিরে হেঁটে আসতাম এবং চালভাজা খেতাম। আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় চালভাজাটাকে আমরা কড়ি বলে। তখন আমাদের গ্রামে প্রচলিত ছিল যে বছরের প্রথম দিন কড়ি খেলে নাকি আর সারা বছর শরীরে কোন বিচি উঠে না। যদিও এসব কথার কোন ভিত্তি নেই। তবে ছোটবেলায় তখন ঐ সকল বিষয় গুলোকে খুব উপভোগ করতাম এবং সে সব বিষয়গুলো মানার চেষ্টা করতাম।
ছবি এখান হতে নেওয়া হয়েছে।
এরপর তো আছেই সকালে উঠে ইলিশ ভাজা এবং বিভিন্ন রকমের ভর্তা দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া। এরপর দুপুরে পাঁচন রান্না করা হতো গরম গরম সেসব যেগুলো খাওয়া । গতকাল @emranhasan ভাইয়ের পাঁচন রান্নার রেসিপিটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে এবং খেতে ইচ্ছে করছিল। আসলে এই পাঁচন রান্নাটা যেমন ঝামেলা তেমনি সুস্বাদু খেতে। পাঁচনের সবজিগুলোর মধ্যে আমার সবথেকে পছন্দের তিনটি সবজি হচ্ছে কাঁচা কাঁঠাল, শুকনা শিমের বিচি এবং বুগুলি (কলা গাছের ভিতরে সাদা অংশটি)। আমাদের বাসায় মোটামুটি সকলেই এই সব্জিটি পছন্দ করে তাই প্রত্যেক বছর পহেলা বৈশাখে সময় এটি রান্না করা হয় তবে এবছর রমজান মাস হওয়ায় রান্না করা হয়নি।
ছোটবেলায় পহেলা বৈশাখের সময় সব থেকে মজার বিষয়টি ছিল বিকেলে মেলায় ঘুরতে যাওয়া। আমি মেলা থেকে বেশির ভাগ সময়ই লাটিম, ঘুড়ি এবং গুলি কিনতাম । ছোটবেলায় এই তিনটি জিনিস আমার খুব প্রিয় ছিল।
ছোটবেলার বেশিরভাগ পহেলা বৈশাখে আমার এভাবে কাটানো হয়েছে। তবে এখন পহেলা বৈশাখ গুলো একটু ভিন্নভাবে উদযাপিত হয়। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভাইরাসের কারণে আগের মত বড় পরিসরে পহেলা বৈশাখ হয়নি।
তো এই ছিল আমার ছোটবেলায় পহেলা বৈশাখ কে ঘিরে মজা কিছু স্মৃতি। এবং পহেলা বৈশাখকে ঘিরে আমার আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। সকলে ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
সকলকে ধন্যবাদ অনুচ্ছেদ টি পড়ার জন্য।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
পহেলা বৈশাখকে ঘিরে ছোটবেলার অনেক মধুর স্মৃতি রয়েছে আমাদের। যে স্মৃতি গুলো মনে পড়লে এখনো অনেক ভালো লাগে। আপনার লেখাগুলো পড়ে সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল। আসলে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তাই পুরনো স্মৃতিগুলো আজ অনেক অতীত হয়ে গেছে। অনেক সুন্দর ভাবে আপনি আপনার পুরনো স্মৃতিগুলো আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ভাই আপনার পোস্ট পড়ে অনেক কিছুই মিলে গেলো জীবনের সেই ফেলে আসা মুহুর্তগুলোর কিছু স্মৃতি। পহেলা বৈশাখে আমি সকালে ঘুম থেকে উড়েই ফ্রেশ হয়ে টাকা কালেকশন করা শুরু করতাম 🤣। যে যে সেদিন টাকা দিবে তারা পুরো এক বছর ঔ ভাবে টাকা দিয়েই যাবে। আর পান্তা ভাত দিয়ে ইলিশ ভাজি খাইতাম। অনেক মজার ছিলো দিনগুলো।
Hi @moh.arif,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Please consider to approve our witness 👇
Come and visit Italy Community
ঠিক ভাইয়া,আমাদের ও ধারনা ছিলো,বছরের প্রথম দিন যেভাবে যায়,সারা বছর ঠিক সেই ভাবে যায়।তাই আগের দিন ঘর পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখা হতো।বাবা ইলিশ আনতো।মনে পরে গেলো সেই সব স্মৃতি। ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
ঠিক তাই, আম্মুকে ও দেখতাম ঘরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখত।
আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় কড়ই বলে।আমার ও বেশ মজা লাগে।
স্মৃতি গুলো মধুর।
কড়ই কড়ি নামটা বেশ কাছাকাছি।
ঠিক বলেছেন ভাই। আমাকেও ছোটবেলা এমনটাই বলা হতো। এজন্য সেদিনটা খুব সাবধানে থাকতাম হা হা।
আর গতকাল আমাদের দিকেও মেঘলা একটা আকাশ ছিল রাতে ঝড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টিও হয়েছে। এ যেন শুরুর ইঙ্গিত।।
কোথায় সেই পহেলা বৈশাখের মেলা বলেন। এখন অনেক কম হয় আমাদের দিকে। মুছে যাক জড়া মুছে যাক গ্লানি নতুন বছর আপনার জীবনে আনুক অনেক শান্তি সেই কামনা করি।
আমাদের শহর অঞ্চলগুলোতে এখন ও মোটামুটি কয়েক জায়গায় মেলা বসে।
জেনে অনেক ভালো লাগল। 🙂🙂
আরিফ ভাই প্রথমেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।
আজ আপনার ছোট বেলার নববর্ষ উদযাপনের বেশ কিছু গল্প শুনছিলাম আর আমার ছেলেবেলা মনে করছিলাম। যাক দিনগুলো সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে। আমার পাঁচন রান্না আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে সত্যিই ভালো লাগছে। এটা আমরা প্রতিবছর করে থাকি। ছোট বেলায় মা করতেন তখন থেকেই চলে আসছে। যাক দাওয়াত রইল 🤗
যদি ভাগ্যে থাকে হয়ত কোন একদিন একসাথে বসে খেতে পারবো।
ভালো থাকুন দোয়া রইল 🥀
অবিরাম ভালোবাসা আপনার জন্য।
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
পহেলা বৈশাখ একেক জায়গায় একেক রকম ভাবে পালিত হলেও, মূলত সবজায়গাতেই কিছু কমন বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন মেলা, হালখাতা, নতুন জামা-কাপড় আর খাওয়া-দাওয়া। তবে আপনার পোষ্ট থেকে করি এবং পাচন সম্পর্কে নতুন জানতে পারলাম। ইমরান ভাইয়ের পাচন তৈরির পোস্টটি আমার দেখা হয়নি। আশাকরি এখন দেখে নেব। যাইহোক আপনার ছোটবেলার কিছু অনুভূতি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালোবাসা রইলো।
ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে ছোটবেলায় সেই মেলায় ঘুরতে যাওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। মাটির পুতুল বা খেলনা কেনা, নাগরদোলায় ওঠা সবকিছুই আজ অনেক বেশি মনে পড়ছে। এছাড়াও পহেলা বৈশাখে দেখা যেত দোকানে দোকানে হালখাতা শুরু হতো। বাবার সাথে সাথে হালখাতায় যেতাম। আপনার লেখা পড়ে আমার সেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার। আগের সেই সময়গুলো এখন আর নেই। এখন সবকিছু বদলে গেছে। অনেক সুন্দর করে আপনি আপনার শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এবং আমাদেরকে জানার সুযোগ করে দিয়েছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।💖💖💖