জেনারেল রাইটিং - ডাক্তারদের ধরণ।
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমি লিখব ডাক্তার সম্পর্কে।

বর্তমান সময়ে ডাক্তারের কাছে যায় না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে এখনও প্রয়োজনীয় তুলনায় ডাক্তারের সঙ্গে অনেক কম, তবুও আগের তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা বেড়েছে। যার কারনে বলা যায়, বর্তমানে মানুষ খুব সহজেই মানুষ একজন ডাক্তার দেখাতে পারে। কিন্তু তারপরও ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, যারা অভিযোগ করে তাদের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষই চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে কোন ধারণা রাখেনা। এতে করে লজকিল সমালোচনার চেয়ে ইলজিক্যাল প্রতিবাদ বেশি দেখা যায়।
আমি একটি ফার্মেসিতে কাজ করি। যার কারণে ব্যক্তিগতভাবে অনেক ডাক্তারকে খুব ভালো করেই জানি। উনাদের সম্পর্কে ধারণা রাখি। আমি এখানে ডাক্তারদের নাম প্রকাশ করব না তবে তাদের নিয়ে আলোচনা করব।
আমি একজন বিডিএসকে চিনি। তিনি খুবই ধার্মিক লোক। স্বনামধন্য এই মহান সেবক উনার নিজস্ব রোগীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। উনার বেশিরভাগ প্যাশেন্ট কারো না কারো মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ওনার কাছে আসে। ওনার আচরণ খুবই অমায়িক, কাজের মান অনেক ভালো। উনি কেবল নামেই ধার্মিক নয়, কাজেও ধার্মিক। ডেন্টাল ট্রিটমেন্ট যারা করে থাকেন তারা জানেন ডেন্টাল ট্রিটমেন্টে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। উনি কখনোই উনার কোন পেশেন্ট এর কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেনি। তাছাড়া উনি কোন কোম্পানির সাথে চুক্তিতে যাননি। রোগীর জন্য যে ওষুধটি প্রয়োজন তিনি কেবল সেটি লিখেন। কাউকে অতিরিক্ত কোন ঔষধ লিখেন না। বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি দিয়ে উনার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসে। কিন্তু উনি কখনোই কোন কোম্পানির সাথে চুক্তিতে যাননি।
আমার পরিচিত আরেকজন বেশ বড় ডাক্তার আছে। তিনি বাংলাদেশের একটি সরকারি হসপিটালের ENT বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। কিন্তু উনার স্বভাব চরিত্র ওই BDS ডাক্তারের ঠিক উল্টো। উনি চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির বাহিরে কোন মেডিসিন লেখেন না। মোটামুটি বিত্তবান যেসব রোগী উনার কাছে সরকারি হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট নিতে যায় উনি তাদেরকে উনার প্রাইভেট চেম্বারে আসতে বলেন। বহু রোগী উনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে যে উনি রোগীর সাথে ঠিকমত সব কথা বলেন নাম কিছুটা উগ্র মেজাজের। আমি ব্যক্তিগত ভাবে উনাকে চিনি। আমি এই বিষয়টা আমি নিশ্চিত করতে পারি।
আমি আর একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে চিনি। উনার সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় নেই, কিন্তু উনার অনেক প্রেসক্রিপশন আমাদের হাতে আসে। উনার সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো উনি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ লিখেন। এমনও হয় তিনি একটি বাচ্চাকে এন্টিহিস্টামিন গ্রুপেরই তিনটি সিরাপ লিখে দেন। কিন্তু সেখানে তিনি একটি সিরাপ লিখলেই পারতেন। জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য তিনি শিশুদেরকে স্টোরয়েড ওষুধ লিখে দেন যা সেবনে ওই শিশুর দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কোম্পানির প্রতিনিধিগণ স্টোরয়েড মেডিসিন প্রমোশন এর ক্ষেত্রে এই তথ্যটা সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু তারপরও উনার প্রেসক্রিপশনে একটি স্টোরয়েড ওষুধ থাকবেই। একটি শিশু যখন অল্প বয়সেই স্টোরয়েডের শরণাপন্ন হয়, তখন তার ভবিষ্যতের জন্য কিছুটা খারাপ প্রভাব থেকে যায়। ডাক্তার হিসেবে উনি তা জানার পরও সে ধরনের ওষুধ লিখে দেয়।
উপরে উল্লেখিত তিনজন ডাক্তারের-ই প্রচুর পরিমাণে রোগী রয়েছে নিজ নিজ ক্ষেত্রে। উনারা তিনজনই সফল। কিন্তু একজন মানবিক ডাক্তার হিসেবে BDS ডাক্তারটি সবার উপরে বাকি দুজনের মধ্যে ENT ডাক্তারটি রোগীর ক্ষতি না করলেও নিজের লাভের কথা চিন্তা করেন। শেষের জন দ্বিতীয় জনের মতো কোম্পানির সাথে চুক্তিভিত্তিক ওষুধ লিখে থাকেন, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঔষধ লিখা এবং শিশুদেরকে স্টোরয়েডের মত ক্ষতিকর ওষুধ লিখে দেন যার দীর্ঘমেয়াদি সেবন মানুষকে জটিল রোগে আক্রান্ত করে দেয়।

একজন ডাক্তারের সবচাইতে ভালো গুণ তার ব্যবহার। তার ব্যবহার যদি ভালো হয় অনেক ক্ষেএে পেসেন্ট আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। আর বাংলাদেশের অধিকাংশ ডাক্তার এমন যারা নির্দিষ্ট কোম্পানির ঔষধ লিখে থাকে। এটা আমার থেকে আপনি আরও ভালো জানেন। আর অতিরিক্ত ঔষধ লেখে তাদের ডাক্তারি জ্ঞানের অভাব আছে আমি মনে করি। অতিরিক্ত ঔষধ শরীরের পক্ষে বেশ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
আমরা বলে থাকি, মানুষের রোগ অর্ধেক ভালো হয় ডাক্তারের আচরণে। যাইহোক, খুবই মূল্যবান মন্তব্য করেছেন ভাই। ধন্যবাদ।