গল্প পোস্ট- ভালোবাসেলেও সবার সাথে ঘর বাধা হয় না এর শেষ পর্ব

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম

চলছে চারদিকে পবিত্র ঈদুল আযহার আমেজ। আর সেই সাথে চলছে আষাঢ়ের বৃষ্টির ঘনঘটা। বৃষ্টির জোরে কোথাও একটু বের হওয়ার জোর নেই। তবুও ঈদের আমেজ বলে কথা। আশা করি প্রিয় পরিবারের সকলের ঈদের আমেজ বেশ ভালোই কাটছে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও কিন্তু আমি বেশ ভালোই সময় কাটাচ্ছি।আমি @maksudakawsar। যুক্ত আছি আপনাদের সাথে বাংলাদেশ হতে।

ভালোবাসা হলো একটি অনুভুতির নাম। যে অনুভূতি প্রিয় মানুষটিকে আরও বেশী ভালো বাসতে শিখায়। বুঝতে শিখায় ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ। ভালোবাসার বিরহ বা মিলন যেটাই হউক না কেন। যুগ যুগ ধরে ভালোবাসা যেন আমাদের হৃদয়ের সাথে মিশে আছে। প্রিয় বন্ধুরা আপনারা যারা নিয়মিত আমার পোস্ট পড়েন তারা জানেন যে গত সপ্তাহে আমি আপনাদের সাথে ”ভালোবাসলেও সবার সাথে ঘর বাধা হয় না” গল্পটির ১ম পর্ব শেয়ার করেছি। আজ আমি গল্পটির শেষ পর্ব আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো। আশা করি আপনাদের সবার বেশ ভালো লাগবে আমার গল্পটির শেষ পর্ব। তবে যারা সময়ের কারনে গল্পটির প্রথম পর্ব মিস করে গেছেন তাদের জন্য গল্পটির প্রথম পর্বের লিংক দিয়ে দেওয়া হলো।

Add a heading (4).png

ছবি সোর্স
Made By-@maksudakawsar

ভালোবাসেলেও সবার সাথে ঘর বাধা হয় না প্রথমপর্ব

রাতে অভি এবং তমা তাদের দুজনে দুজনার গিফট বক্স যখন খোলে তখন দুজনেই একই রকমের দুটি রঙিন খাম পায় গিফট বক্সের মধ্যে। আর সেই রঙিন খামে ছিল দুজনের প্রতি দুজনার ভালোবাসার বহি প্রকাশের হাজারও না বলা কথা। বেশ আবেগ দিয়ে লেখাছিল রঙিন খামে মুড়ানো খামের মধ্যে সে চিঠিতে। আর এই চিঠি পড়ে তারা এতটাই আবেগ ঘন হয়ে পড়ে যে তারা দুজনেই সারা রাত আর ঘুমাতে পারেনি। দুজন এরই যেন ভাবনা গুলো একই রকমের । পরদিন তমা অভির সাথে দেখা করার জন্য অভিকে ফোন দেওয়ার আগেই অভি তোমাকে ফোন করে। অভির ফোন পেয়ে তমা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। এরই মধ্যে অভি তাকে দেখা করার কথা বলে। তমা আর অভির কথায় একটি বারের জন্য না করে না। বিকেলে বান্ধবীর বাসার কথা বলে তমা বেশ সুন্দর করে সেজে গুজে অভির সাথে দেখা করতে যায়। আর এটাই ছিল অভি আর তমার ভালোবাসার প্রথম দেখা। সেদিন বেশ সময় কাটায় তারা। হাত হাত রেখে অনেক কথা হয় তাদের। অনেক প্রতিশ্রুতি দেয় একে অপরকে। দুজনের চোখের গভীরে এত ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল যে কেউ যেন কাউকে ছাড়া বাচঁবে না। বেশ সুন্দর আর মধুর কিছু সময় কাটানোর পর দুজনে ফিরে যায় তাদের নিজ ঘরে।

প্রতিদিনের মত আজও তমা রাতের খাবার খেয়ে ‍ঘুমাতে যাবে। এরই মধ্যে বাবা তমা কে ডেকে পাঠায়। বাবা ডাকলে যেন গলা শুকিয়ে আসে তমার। যাই হউক, তমা বাবার সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু সেখানে তো বাবা একা নয়। আজ ড্রয়িং রুমে পরিবারের সবাই। তমার বাবা তমাকে দেখে সুজাসুজি বলে দেয় কাল থেকে আর কলেজে যাওয়া লাগবে না। কারন আগামী পরশু তোমার বিয়ে। ছেলে আমাদের সবার পরিচিত। পরিবারের সবাই একথা জানতো, কিন্তু তমাকে জানানো হয়নি। যাতে তমার পড়াশুনায় কোন ব্যঘাত না ঘটে। আর ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সবার কথা শুনে তমা বুঝতে পারে যে ছেলে আর কেউ নয়, তমার চাচাতো ভাই। যে কিনা গত পরশু নিউওয়ার্ক থেকে দেশে এসেছে। আর বিযের পরে তো তাহলে তমা আর এ দেশেও থাকতে পারবে না। সব মিলিয়ে তমা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। পরিবারের সিদ্ধান্তের বাহিরে যাওয়ার কোন ক্ষমতাই তমার নেই। তমা কি তাহলে সুসাইড করবে। বুঝতে পারছে না কিছুই। কি বলবে সে অভিকে। আর এ মূহূর্তে কি অভি পারবে তমা কে নিয়ে আলাদা সংসার করতে? অনেক ভেবে চিন্তে তমা রাতে বাড়ির ছাদে উঠে অভিকে ফোন করে সব জানায়। এমন কি তমা অভিকে বলে তুমি যদি চাও আমি এক কাপড়ে চলে আসবো। কিন্তু অভি তো বেকার। মাত্র পড়াশুনা করে। তার পক্ষেও এসময়ে তমা কে নিয়ে কোথাও চলে যাওয়া সম্ভব নয়।

অভি অনেক চিন্তু ভাবনা করে তমা কে সব বুঝিয়ে বলে। অভি তমা কে বলে সে তার মায়ের একমাত্র ছেলে। বাবা বেচেঁ নেই। তাই পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশনি করে তার পরিবারকে তাকেই দেখতে হয়। সে তমা কে বিয়ে করে এসময়ে কি খাওয়াবে? তমা যদি পারে তাহলে তার বাবা মাকে সব যেন বুঝিয়ে বলে। কিন্তু তমার পক্ষে তার বাবা কে এসব কথা বরা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই আজকের রাতের পর আর অভির সাথে তমার কোন কথা হয় না। রীতিমতো তমার বিয়ের দিন চলে আসে এবং যথারীতি বাবার পছন্দের ছেলের সাথে তমার বিয়ে হয়ে যায়। তমা শুধু মাত্র তার মোবাইল থেকে অভি কে শেষ একটি ম্যাসেজ পাঠায় ভালো থেকো। এরপর হতে অভি শত বার ফোন করেও তমাকে আর ফোনে পায় না। আর পাবেই বা কি করে। তমা তো ততদিনে দেশে নেই স্বামীর সাথে চলে গেছে নিউওয়ার্ক। এদিকে অভি তমার কোন খোজঁ না পেয়ে তার বোন কে সব কথা খুলে বলে এবং তার বোন কে তমাদের বাড়িতে পাঠায়। অভির বোন তমাদের বাসায় যেয়ে সব জানতে পারে এবং অভি কে জানায়।

বোনের মুখে সব শোনার পর হতে অভি দিনে দিনে কেমন যেন হয়ে যায়। ঠিক মত খাওয়া দাওয়া কিছুই করে না। দিনের পর দিন অভি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এভাবে প্রায় তিন বছর সময় পার হয়ে যায়। তমা আজ দুটি সন্তানের মা। আজ তমা দেশে এসেছে বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে। তমা কিন্তু একটি বারের জন্য অভিকে ভুলেনি। তাই নিজের ফোন হতে অভির সে পুরানো নম্বর বের করে তাকে একটি ফোন করে। কিন্তু সে তো অনেক দেরী হয়ে গেল। আজ অভি তো আর এপারের না ওপারের বাসিন্দা। যেখান থেকে অভি আর কখনও ফিরে আসবে না। তাই ওপার হতে ভেসে আসে তমার বান্ধবীর কন্ঠ। সে তমা কে পরিস্কার জানিয়ে দেয় যে, অভি কে খুজঁতে হলে সেল ফোনে নয়। ওপারে কল দিতে। বান্ধবীর মুখে এ ধরনের কথা শুনে তমা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে। নিজেকে কিছুতেই সে আর ক্ষমা করত পারে না। আর আজও তমা নিজেকে ক্ষমা করতে পারনি। অভিকে মনে করে আজও তমা অনেক রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। যা পৃথিবীর কেউ দেখে না। আর কেউ বুঝে না।

কেমন লাগলো আপনাদের কাছে আমার আজকের গল্পটির? অপেক্ষায় রইলাম আপনাদের অনূভূতি গুলো জানার।

সবাই ভাল এবং সুস্থ্য থাকবেন।

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeF5StuMqDPqgYjRhUxqFbXTvH2r2mDgNbWweA4YGBo825oLh4oqEqeynn5EZL11LdCrppngkM.gif

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

@maksudakawsar

image.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

আপনার গল্পটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। সত্যিই আসলে ভালবাসলে নিয়তির কারণে সবার সাথে ঘর বাধা যায় না। তমা ও অভির ভালোবাসার পূর্ণতা পেল না। সত্যিকারের ভালোবাসা যখন পূর্ণতা পায় না তখন তা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। আপনি ঠিকই বলেছেন ভালোবাসার মানুষের জন্য কষ্টের অনুভূতি গুলো পৃথিবীর কেউ বুঝে না এত সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 

মাঝে মাঝে বিরহ কিন্তু মানুষ কে চলতে শেখায়। ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

তমা আজও হয়তো অভির জন্য চোখের পানি জল ফেলে। হয়তো সেই কান্না কেউ দেখে না। হয়তো নিরবে নিভৃতে চোখের কোনে ঝরে পড়ে। এভাবেই হয়তো চলছে জীবন। আপু আপনার গল্পটি দারুন হয়েছে। আপনার লেখার ধরন অনেক ভালো। অনেক দক্ষতার সাথে আপনি এই গল্পটি লেখার চেষ্টা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

তমার মত আসে পাশে হাজারও তমা পাওয়া যাবে আপু যারা অভিদের কথা মনে করে প্রতি রাতে বালিশ ভিজায়। ধন্যবাদ সুন্দর আর সাবলীল মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন আপু, ভালবাসা হল একটা অনুভূতির নাম। আর এই অনুভূতি যার মনের ভেতরে গেঁথে রয়েছে, সে তো ভালোবাসা ছাড়া কিছুই বুঝবে না। আর তাই এখানে দেখা গেছে অভি ও তমার গভীর ভালোবাসা তাদের কতটা বেদনা দিয়েছে। যারা সত্যি কারের ভালোবাসে তারা কখনো ভালবাসার পরাজয় মেনে নিতে পারে না। তাই অভি, তমার ভালোবাসা হারিয়ে দিনে দিনে অসুস্থ হয়ে একদিন পরলোক গমন করেছে। আর অন্যদিকে তমা আজও গভীর রাতে চুপিসারে নিঃশব্দে কেদে মরে। তাই আমি মন থেকে চাই, গল্পে হোক কিংবা বাস্তবে প্রতিটি ভালোবাসার যেন জয় হয়। আপনার গল্পটি দারুন ছিল আপু, শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাইয়া সবাই কিন্তু ভালোবাসার জয় চায়। কিন্তু সে জয় যে বড়ই কঠিন। আর সহজে পাওয়া ভালোবাসা গুলো কিন্তু অন্যরকম। ধন্যবাদ সুন্দর এবং সাবলীল মন্তব্য করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.14
TRX 0.24
JST 0.032
BTC 90813.06
ETH 2255.77
SBD 0.84