শৈশবের চাঁদ রাতের অনুভূতি

in আমার বাংলা ব্লগ6 days ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের রোজার কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের রোজার কিছু স্মৃতি।

আসলে শৈশবকাল আমাদের সবার জীবনে একটি স্মৃতিমধুর। আমি মনে করি শৈশবের স্মৃতি আমাদের সবার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা আমাদের প্রতিটিদিন প্রতিটি মুহূর্ত ফিরিয়ে নিয়ে যায় সেই শৈশবের দিনগুলোর মাঝে। শৈশবে আমাদের ছিল না কোন ভাবনা, ছিলনা কোন দুঃশ্চিন্তা বা কোন দায়িত্ববোধ। তখন আমাদের প্রতিটি দিন ও মুহূর্ত ছিল একদম সাদাসিদে ও আনন্দ পূর্ণ। এখনো সেই দিনগুলোর প্রতিটা সময় ও মুহূর্তগুলো মনে পড়লে মনে হয় যেন সেদিনের সেই দিন গুলোই অনেক সুন্দর ছিল। এখন ভাবী কেন বড় হতে গেলাম। চাইলেও ফিরে যেতে পারবো না সেই শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলোতে। তাইতো আজও চলে গিয়েছিলাম শৈশবের কিছু মধুর স্মৃতিতে। আর সেই মধুর স্মৃতির কিছু অংশ আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এলাম।

ai-generated-8815073_1280.jpg

Source

ছোটবেলাতে ঈদের আগের রাত, মানে চাঁদ রাত ছিল আমাদের জন্য সারা বছরের সবচেয়ে আনন্দময় রাতগুলোর একটি। ঈদের প্রস্তুতির উত্তেজনা, নতুন জামার গন্ধ, মেহেদির রঙ, আর চারপাশে চলাফেরা করা আনন্দে মাতোয়ারা মানুষ সব মিলিয়ে এক অন্যরকম মায়ার জগত। আমাদের কোয়ার্টারে চাঁদ রাতের আমেজ শুরু হতো বিকেল থেকেই। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই মা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন পায়েস, সেমাই, আর অন্যান্য মজাদার খাবার বানাতে। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা ঘি আর দুধের মিষ্টি গন্ধ যেন সবাইকে মোহিত করে রাখত। আমরাও তখন খুব ব্যস্ত। কেউ বোনের চুলে মেহেদি লাগাচ্ছে, কেউ নতুন জামা বারবার পরে আয়নার সামনে যাচ্ছি, কেউবা আবার বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে ঈদের বাজার নিয়ে আলোচনা করছে।

চাঁদ দেখার অপেক্ষা ছিল আমাদের সেই রাতে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ। আকাশে যখন সূর্যটা একটু একটু করে ডুবে যেত, তখন আমরা মাঠে নেমে যেতাম। কে আগে চাঁদ দেখতে পায়, এই প্রতিযোগিতা চলত সবার মধ্যে। আর যেই চাঁদ দেখা যেত, সঙ্গে সঙ্গে ‘চাঁদ উঠেছে! চাঁদ উঠেছে!’ বলে হৈচৈ। চাঁদ দেখা মানেই ঈদের ঘোষণা। মুহূর্তেই যেন পুরো এলাকা আলোয় ঝলমল হয়ে উঠত। বড় আপা মেহেদী নিয়ে বসতেন আর আমাদের হাতের তালুতে নানা রকম নকশা করতেন। কখনো ফুলের পাপড়ি, কখনো তারকা, আবার কখনো আমাদের নামের আদ্যাক্ষর। সেই মেহেদির গন্ধ ছিল চাঁদ রাতের অপরিহার্য অংশ। ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে হাতে পলিথিন পেঁচিয়ে রাখতাম, যাতে রঙ গাঢ় হয়।

চাঁদ রাতের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল নতুন জামা-কাপড় পরার মহড়া।আর হ্যাঁ, আমরা ছোটরা তখন ঈদ মানেই ‘ঈদির’ স্বপ্নে বিভোর। চাঁদ রাতেই বড়দের কাছ থেকে কিছু আগাম ঈদি পেয়ে যেতাম, আর সেটা হাতে পেয়েই দৌড়ে দোকানে গিয়ে পছন্দের চকোলেট আর খেলনা কিনে আনতাম। দোকানগুলো তখন খোলা থাকত মধ্যরাত পর্যন্ত। চারপাশে লাইটিং, বাচ্চাদের হুল্লোড় সব মিলিয়ে পুরো এলাকায় যেন একটা আনন্দমেলায় পরিণত হতো।

রাত যত গভীর হতো, ততই মনটা আরও একবার ঈদের সকালের কল্পনায় ভরে উঠত। মনে হতো,আর কটা ঘুম, তারপরই সেই কাঙ্ক্ষিত ঈদের সকাল। কিন্তু ঘুমোতে ইচ্ছে করত না একদমই। মনে হতো, এই রাতটা শেষ না হোক। চাঁদের আলোয় ভরা এই রাত, মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধুবান্ধব আর খুশির কোলাহলে ভরা এই মুহূর্তগুলো যেন চিরকাল থেকে যাক।

আজ যখন বড় হয়ে গেছি, ঈদের চাঁদ রাত আর আগের মতো হয় না। কাজের চাপ, আর জীবনযাপনের জটিলতায় সেই নির্ভেজাল আনন্দ হারিয়ে গেছে অনেকটাই। কিন্তু মনের এক কোণে এখনো জমে আছে সেই ছোটবেলার চাঁদ রাতের আলো, মেহেদির গন্ধ, নতুন জামার খুশি আর আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ দেখার প্রতীক্ষা। চাঁদ রাত তাই শুধু একটি রাত নয়, এটা একটা আবেগ। যা সময়ের ভাঁজে হারিয়ে গেলেও হৃদয়ের গভীরে চিরকাল জ্বলজ্বল করে জ্বলে।

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অানেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

❤️❤️ধন্যবাদ সকলকে❤️❤️

image.png

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.24
JST 0.031
BTC 85216.39
ETH 1596.20
USDT 1.00
SBD 0.86